leadT1ad

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় জবানবন্দি

‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এগিয়ে আনার কারণ জানালেন নাহিদ ইসলাম

নাহিদ জানান, পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে তাঁরা নতুন সরকার গঠনের জন্য ৪ আগস্ট ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন, তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

গত বছরের ৬ আগস্ট আন্দোলনকারীরা ঢাকা অভিমুখে মার্চ করার কথা থাকলেও সেই কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আনার কারণ জানিয়েছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে এক দফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম। 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচি বানচাল করতে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল, মন্তব্য করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। নাহিদ বলেন, আমিসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য নেতাদের হত্যা বা গুম করা হতে পারে, এমন তথ্য পাওয়ার পরই মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিকে ৫ আগস্টে এগিয়ে আনা হয়।

তিনি জানান, পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে তাঁরা নতুন সরকার গঠনের জন্য ৪ আগস্ট ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন, তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) গণহত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দিতে তিনি এসব কথা বলেন। নাহিদ ইসলাম এ মামলায় প্রসিকিউশনের ৪৭তম সাক্ষী।

জবানবন্দিতে নাহিদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যান্য সমন্বয়ক এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বামপন্থী কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকার পতনের ১ দফা ঘোষণা করি। ১ দফায় আমরা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আহবান জানাই। এক দফার দাবিতে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করি।

এর পরদিন শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন বলে জানান নাহিদ। তিনি বলেন, ওই দিনই ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সরকার কারফিউ জারি করে, দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। এর মধ্যে আমরা জানতে পারি, মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ব্যর্থ করতে সরকার মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধ করবে। আমাদেরও হত্যা বা গুম করা হতে পারে। তাই মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আনা হয়।

এনসিপি নেতা বলেন, এই কর্মসূচি সফল করতে সমন্বয়কদের পক্ষে মাহফুজ আলম অন্যান্য ছাত্রসংগঠন ও নাগরিক সমাজের সাথে লিয়াজোঁ করছিলেন। পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমরা নতুন সরকার গঠনের জন্য ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করি, তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দেই। ৫ আগস্ট সারাদেশের মানুষ ঢাকায় আসতে থাকে, আমরা শাহবাগে অবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি। কর্মসূচি বানচাল করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী শহীদ মিনার ও চানখারপুল এলাকায় গুলি করে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী রাস্তা ছেড়ে দিলে আমরা শাহবাগে প্রবেশ করি। কিছুক্ষণের মধ্যে শাহবাগ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

নাহিদ আরও বলেন, আমরা শুনতে পাই সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকার প্রবেশমুখগলো দিয়ে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেছে। শাহবাগ থেকে আমরা মিছিল নিয়ে গণভবনের দিকে রওনা হই। পথিমধ্যে জানতে পারি হাসিনা পদত্যাগ করে হ্যালিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আরো শুনতে পাই ছাত্রজনতা গণভবনে প্রবেশ করেছে।

তিনি জানান, এরপর তাঁরা সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে রাজবন্দীদের মুক্তি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি করেন। তাঁরা কোনো ধরনের সেনা শাসন বা সেনা সমর্থিত শাসনও মানবেন না, তাও ঘোষণা দেন। ৫ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে সরকারের নির্দেশে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের সংবাদ পাওয়া যায়। সেদিন অনেক ছাত্রনেতা আহত ও শহীদ হন।

জবানবন্দিতে নাহিদ উল্লেখ করেন, পুরো আন্দোলনজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। হেলিকপ্টার থেকেও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। আওয়ামী লীগ ও তাঁর অঙ্গ-সংগঠনের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করে। ব্লক রেইড দিয়ে গণগ্রেফতার করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসাগ্রহণে বাধা দেওয়া হয়। শহীদদের দাফনে বাধা দেওয়া হয়। লাশ গুম ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শহীদও আহত পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়।

এসব ঘটনায় হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা এবং যাঁরা হত্যা ও নির্যাতনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের দায়ী করেন নাহিদ। সরকারপ্রধান হিসেবে হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কামাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তাদের নির্দেশে এসব হত্যা ও নির্যাতন হয়েছে। তাঁরা ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ ও পাকাপোক্ত করতে এসব হত্যা করেছেন। পরে বিভিন্ন মিডিয়া থেকে জানতে পারি, হাসিনা হেলিকপ্টার ও লেথাল উইপেন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতা বন্ধে সরকার ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রধানরা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। আমি এই হত্যাকাণ্ড, নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার ও কঠোর শাস্তি দাবি করছি। ভিকটিমরা যাতে ন্যায়বিচার পায়, সেই আবেদন করছি।

মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর জেরা শুরু হয়। নাহিদকে জেরা করেন এই মামলায় পলাতক আসামি হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় শুনানি আগামী রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনের মতো জবানবন্দি দেন নাহিদ। এরপর জবানবন্দি গ্রহণ অসমাপ্ত অবস্থায় শুনানি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আজ নাহিদ অবশিষ্ট জবানবন্দি দেন।

মামলার অন্য আসামি পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন পরে রাজসাক্ষী হয়েছেন। তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত