
.png)

‘আমরা বর্ষার অপেক্ষায় আছি… তাঁরা পানিকে ভয় পায়, আর আমরা হচ্ছি জলের রাজা। প্রকৃতি হবে আমাদের দ্বিতীয় বাহিনী।’ নিউইয়র্ক টাইমসের খ্যাতিমান সাংবাদিক সিডনি শনবার্গের ‘ডেটলাইন বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছিলেন এক বাঙালি অফিসার।

কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের দুটি জরাজীর্ণ বোটকে মডিফাই করে বানানো হয় ‘বিএনএস পদ্ম’ ও ‘বিএনএস পলাশ’। এতে বসানো হয় বিমানবিধ্বংসী কামান। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর খুলনায় এই গানবোট দুটির ওপর ভুলবশত মিত্রবাহিনী বিমান হামলা চালায়।

১৯৭১ সালের গণহত্যার প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিলেন পাকিস্তানি সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস। সামরিক জান্তার নিয়ন্ত্রণে ঘেরা পাকিস্তান থেকে বের হয়ে লন্ডনে গিয়ে তিনি প্রকাশ করেন সেই ঐতিহাসিক রিপোর্ট—“Genocide”।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি রিপোর্ট করেছিলেন নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতা সিডনি এইচ শনবার্গ। ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের ভয়াবহ গণহত্যার তিনি ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী।

২৮ বছর বয়সী এক ফরাসি যুবক, যার চোখেমুখে এক অদ্ভুত উন্মাদনা, নিরাপত্তার সব বাধা টপকে আচমকা ককপিটে ঢুকে পড়লেন। তার এক হাতে একটি লোডেড ৯ এমএম রিভলবার, অন্য হাতে একটি কালো সুটকেস—যার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে কিছু বৈদ্যুতিক তার। তিনি পাইলটের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে শান্ত কিন্তু ইস্পাতকঠিন গলায় বললেন, ‘এই বিমান

দুপুর সোয়া বারোটা। যশোর রোড ধরে ধুলো উড়িয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ল ওমেগার গাড়ি। কিন্তু বেশিদূর যাওয়া গেল না। কয়েকশ গজ ভেতরে ঢুকতেই পাকিস্তানি সেনারা পথ আটকে দাঁড়াল। শুরু হলো তর্ক।

করিমপুর সীমান্তের পথে নেমে দেখলেন মাইলের পর মাইলজুড়ে মানুষের স্রোত। তাঁরা কেউ পর্যটক নন, তাঁরা শরণার্থী। পেছনে ফেলে এসেছেন নিজেদের ভিটামাটি, সাজানো সংসার আর প্রিয়জনের লাশ।

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চেয়েছিলেন যুদ্ধবিমান
‘ফাঁকা বুলি আওড়াবার অভ্যাস আমার নেই। ট্যাংক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমার আছে। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর অধীনে একটি ট্যাংক ইউনিটে অংশগ্রহণে আমি অটল।’ হুঙ্কার ছাড়লেন ৭০ বছর বয়সী অঁদ্রে মালরো। ওয়াশিংটন নিউজ পত্রিকায় ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে প্রকাশিত হলো এ প্রসঙ্গে একটি সম্পাদকীয়।

সাধারণত পথশিশুরা মানুষের কাছে হাত পাতে, সাহায্য চায়। কিন্তু সেদিন তাঁরা ছিল দাতা। সারা দিন তাঁরা যাত্রীদের জুতা পলিশ করল, হাঁকডাক করে লোক জড়ো করল, সবাইকে বাংলাদেশের মানুষের দুঃখের কথা বলল। দিনশেষে তাঁদের ছোট ছোট হাতে জমেছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর একাধিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি। মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেপ্তার করা অথবা তাঁদের যাতে নিশ্চিতভাবে ধরা যায় এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে তথ্য দিলে ১৪ মণ আমন চালের সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যেত।

লন্ডনভিত্তিক ‘দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ’-এর রিপোর্টার সায়মন ড্রিং। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের সেই বিভীষিকা যখন শুরু হয়, তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী সকল বিদেশি সাংবাদিকদের বন্দুকের মুখে ঢাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজন সাংবাদিক থেকে গেলেন এই মৃত্যুপুরীতে। তিনি সায়মন ড্রিং।

‘ফাদার, আপনি চলে যান। ওরা আপনাকে মেরে ফেলবে।’ শেলাবুনিয়ার গ্রামবাসী অনুরোধ করেন তাঁকে। শান্ত চোখে তাকালেন তিনি। ভাঙা ভাঙা বাংলায় বললেন, ‘আমার সন্তানেরা বিপদে, আর আমি বাবা হয়ে পালিয়ে যাব? আমি কোথাও যাব না। তোমাদের সঙ্গেই থাকব, তোমাদের সঙ্গেই মরব।’

১৯৭১ সালের জুন মাসে লাইফ ম্যাগাজিনের সাংবাদিক জন সার এবং ফটোগ্রাফার মার্ক গডফেরি সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা। করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগর—রাস্তার ধারের সেই মৃত্যুর মিছিল, কলেরার মহামারী এবং পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতার শিকার অসহায় মানুষের

৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১। প্যারিসের অরলি বিমানবন্দর। হাড়কাঁপানো শীতের দুপুর। রানওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বিশাল বোয়িং ৭২০ বিমান, ফ্লাইট ৭১২। গন্তব্য করাচি হয়ে ঢাকা। সিটবেল্ট বেঁধে তৈরি যাত্রীরা। ইঞ্জিনে থ্রাস্ট দেওয়ার অপেক্ষায় পাইলট।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের এক অবিশ্বাস্য নায়ক উইলিয়াম এ এস ওডারল্যান্ড। যিনি দিনের আলোতে ছিলেন বাটা সু-কোম্পানির দাপুটে ম্যানেজিং ডিরেক্টর, আর রাতের আঁধারে কাঁধে তুলে নিতেন স্টেনগান!

১৯৭১ সাল। ঢাকা সেনানিবাস। ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর। বিলাসবহুল ড্রয়িংরুমে বসে আছেন এক শ্বেতাঙ্গ ভদ্রলোক। পরনে দামী স্যুট, হাতে জ্বলন্ত সিগার। আর সামনে ধোঁয়া ওঠা কফি। তার ঠিক উল্টো দিকে বসে আছেন পাকিস্তানের কোনো জেনারেল।