leadT1ad

ঘোড়া নিয়ে কবর খুঁড়তে যেতেন মনু মিয়া, ৩ হাজার কবর খোঁড়ার পর মৃত্যু হলো তাঁর

৬৭ বছরের জীবনে ৩ হাজারেরও বেশি খবর খুঁড়েছেন কিশোরগঞ্জের মনু মিয়া। আজ নিজেই কবরবাসী হলেন তিনি। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বাহাউদ্দিন ঠাকুর জানান, আজ শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টায় আলগাপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা গেছেন মনু মিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫, ১৫: ১৫
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, ১৮: ৪১
গোরখোদক মনু মিয়া। ছবি: স্ট্রিম ভিডিও থেকে নেওয়া

কারও মৃত্যুসংবাদ কানে এলেই হলো, তখনই ঘোড়া ছুটিয়ে কবর খুঁড়তে যেতেন মনু মিয়া! কি ঝড়, কি বৃষ্টি, কি শীত, কি তাপদাহ—কোনো কিছুই আটকাতে পারত না তাঁকে।

৬৭ বছরের জীবনে ৩ হাজারেরও বেশি কবর খুঁড়েছেন কিশোরগঞ্জের মনু মিয়া। আজ নিজেই কবরবাসী হলেন তিনি। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বাহাউদ্দিন ঠাকুর জানান, আজ শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টায় আলগাপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা গেছেন মনু মিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মনু মিয়ার মৃত্যুতে সত্যিকার অর্থেই এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এলাকায় তাঁর পরিচয় ছিল ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে। জীবনের প্রায় ৫০ বছর ব্যয় করেছেন কবর খোঁড়ার কাজে। আশেপাশে কোথাও কারও মৃত্যুসংবাদ পেলেই ঘোড়া নিয়ে ছুটে যেতেন তিনি। কবর খোঁড়া থেকে শুরু করে দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সব কাজ সেরে তারপর বাড়ি ফিরতেন। এই কাজের বিনিময়ে কখনো কিছু চাননি মনু মিয়া।

স্থানীয় আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা বলেন, ‘মাত্র ১৮ বছর বয়সে কবর খোঁড়া শুরু করেছিলেন মনু মিয়া। আমরা তাঁর ডায়েরি থেকে জানতে পেরেছি, তিনি অন্তত ৩ হাজার ৫৭টি কবর খুঁড়েছেন।’

আজ আসরের নামাজের পর স্থানীয় গোরস্থানসংলগ্ন মাঠে যখন তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, তখন শোকাবহ এলাকাবাসীর ঢল নেমেছিল ওই মাঠে। জানাজা শেষে ওই কবরস্থানেই দাফন করা হয় মনু মিয়াকে।

একটি ঘোড়া ও মনু মিয়ার আক্ষেপ

মাঝে মাঝেই দূরবর্তী কোনো গ্রামে মৃত্যুর খবর পেতেন মনু মিয়া। সেখানে পায়ে হেঁটে পৗঁছাতে দেরি হয়ে যেত। তাই এক সময় একটি ঘোড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এই গোরখোদক। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ বলেন, নিজের জমি বিক্রি বিক্রি করে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন মনু মিয়া। কেউ বলেন, নিজের একটি ছোট্ট দোকান ছিল মনু মিয়ার, সেটিই বিক্রি করে ঘোড়া কিনেছিলেন তিনি।

যেভাবেই হোক, ঘোড়াটি কেনার পর তাঁর যাত্রা সহজ হয়েছিল। ঘোড়াটি সচল রেখেছিল তাঁকে। কিন্তু বার্ধক্যজনিতকারণে গত মে মাসে অসুস্থ হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মনু মিয়া। আর সেই সুযোগে গত ১৬ মে কে বা কারা ঘোড়াটিকে নির্মমভাবে হত্যা করে মিঠামইন উপজেলার কাঠখাল ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামে ফেলে রাখে।

এ ঘটনা নিয়ে তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। মনু মিয়ার ঘোড়াকে মেরে ফেলার খবরটি দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হলে অনেকেই তাঁকে ঘোড়া কিনে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু আত্মমর্যাদার কাছে কখনো মাথা না নোয়ানো মনু মিয়া কারও কাছ থেকে ঘোড়া নিতে অস্বীকৃতি জানান।

এলাকাবাসী জানান, দুর্বৃত্তরা প্রিয় ঘোড়াটিতে মেরে ফেলার পর মানসিকভাবে মুষড়ে পড়েছিলেন মনু মিয়া। নিঃসন্তান মনু মিয়ার প্রিয়জন বলতে ছিল স্ত্রী ও সেই ঘোড়া। প্রিয়জন হারানোর বেদনার সঙ্গে শরীরে জেঁকে বসে নানা অসুখ। আজ অসুস্থতা কেড়ে নিল তাঁর জীবন।

জীবনের শেষ পর্যায়ে অসুস্থ মনু মিয়া গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাব। তোমরা সবাই দোয়া কর। আমার কোনো টাকা-পয়সা চাই না, আমি শুধু দোয়া চাই। আমার একটাই ইচ্ছা, সুস্থ হয়ে হজে যাব, তবে নিজের টাকায় যাব।’

সেই ইচ্ছে পূরণ হলো না মনু মিয়ার। আক্ষেপ নিয়েই অন্যভুবনে পাড়ি জমালেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত