৬ মাসে ১৫ হত্যা
সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতের বারবার প্রতিশ্রুতি এবং বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তা বন্ধ হচ্ছে না। অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের ঘটনায় গ্রেপ্তার কিংবা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে সীমান্তে বিএসএফ প্রায়ই গুলি চালায়।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লিতে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সীমান্তহত্যার বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশ।
বৈঠক শেষে বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী বলেন, 'সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার নীতি থেকে বিএসএফ সরেনি।' কিন্তু পরের মাসেই পঞ্চগড়ের ভিতরগড় সীমান্তের ওপারে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক আল আমিন (৩৬) নিহত হন। তখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রতিবাদ জানালে বিএসএফ ঘটনাটিকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করে।
এভাবে বছরের পর বছর ধরে ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্তহত্যা বন্ধে শুধু আশ্বাসই দেওয়া হয়েছে। আর বিএসএফের গুলিতে লম্বা হয়েছে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর মিছিল। এক্ষেত্রে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বক্তব্য হলো, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সীমান্তের ঘটনাগুলোর সুরাহা করা গেলে এই হত্যা থামানো সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন ভারতের সদিচ্ছা।
আজ শনিবারও (১২ জুলাই) সীমান্তে দুজন হত্যা করেছে বিএসএফ। তাঁরা হলেন ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের আসকার আলী এবং সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার বাগানবাড়ি সীমান্তে শফিকুল ইসলাম। ভোর চারটার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে আর সুনামগঞ্জের ঘটনা শুক্রবার রাতের ।
ভারত যখন বাংলাদেশ সীমান্তে আতঙ্ক তৈরি করতে চায়, তখন হত্যাকাণ্ড চালায়। প্রতিদিনই চোরাচালান হয়, কিন্তু প্রতিদিন তো হত্যা করছে না। এটি মূলত দুই দেশের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ধরনের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড কাম্য নয়। মাবরুক মোহাম্মদ, উপদেষ্টা, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন বিএসএফের গুলিতে। বাকি পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে ভারতীয়দের নির্যাতনে।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সীমান্তহত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি আর বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পরও তা বন্ধ হচ্ছে না। অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের ঘটনায় গ্রেপ্তার বা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় দুটি প্রটোকল হলো, ‘জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইন্স ফর বর্ডার অথরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ-১৯৭৫’ এবং ‘দ্য ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান-২০১১’।
জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইন্স ফর বর্ডার অথরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ প্রটোকলের ধারা ৮ (আই) অনুসারে, এক দেশের নাগরিক যদি বেআইনিভাবে অন্য দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে বা কোনো অপরাধে জড়ায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আত্মরক্ষায় যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে। তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করাটাই বাঞ্ছনীয়।
আর্টিকেল ৮ (এম) অনুযায়ী, সীমান্ত দিয়ে যদি গরু পাচার করা হয়, তাহলে গরু ও পাচারকারীর সম্পর্কে তথ্য অপরপক্ষের সীমান্তরক্ষীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। কাছাকাছি থানার পুলিশের কাছে মামলা করে গরু উদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ এ বিষয়ে স্ট্রিমকে বলেন, ‘সীমান্তহত্যা বন্ধে প্রয়োজন ভারতের সদিচ্ছা। আশ্বাস দিলেও তারা একরকম ইচ্ছাকৃতভাবে এসব হত্যা পরিচালিত করছে। এসব ঘটনায় চোরাচালান একটি অজুহাতমাত্র।’
এ সময় মাবরুক মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘সীমান্তহত্যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে রাষ্ট্রীয় নীতি। ভারত যখন বাংলাদেশ সীমান্তে আতঙ্ক তৈরি করতে চায়, তখন হত্যাকাণ্ড চালায়। প্রতিদিনই চোরাচালান হয়, কিন্তু প্রতিদিন তো হত্যা করছে না। এটি মূলত দুই দেশের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ধরনের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড কাম্য নয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্তহত্যা বন্ধ করতে ভারতকে বারবার বলা হচ্ছে। এটি আসলে ভারত সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যানেলে বাংলাদেশকে আরও শক্তভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
আসকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালে সীমান্তে মারা গেছেন ৪৮ জন। এর মধ্যে শুধু গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ৪২ জনকে। এরপর ২০২২ ও ২৩ সালে শুধু গুলিতে ১৬ জন করে মারা গেছেন। এরপর ক্রমান্বয়ে বেড়েছে সীমান্ত হত্যা।
গণমাধ্যমের খবরের বরাতে তৈরি পরিসংখ্যানে এইচআরএসএস জানিয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক কমপক্ষে ৩০৫ জন বাংলাদেশি নিহত এবং অন্তত ২৮২ জন আহত হয়েছেন।
দুই দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষের পেছনে ভারতের উসকানি ও স্থানীয়দের ক্ষোভ কাজ করে থাকতে পারে। বাংলাদেশের নাগরিকেরা আগে হয়তো সরকারের কারণে কিছু বলতে পারেননি। তবে পটপরিবর্তনের পর তাঁরা মনে করেছেন, এখন প্রতিবাদ করা যাবে। আগে দেখা যেত ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে উল্টো তাঁদের ওপরই নিপীড়ন চলত। অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জড়াচ্ছে দুই দেশের বাসিন্দারাও
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মাঝেমধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যমতে, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সীমান্তে ৯ বাংলাদেশির লাশ পাওয়া গেছে, যারা ভারতীয় নাগরিক ও খাসিয়াদের হামলায় নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক ও খাসিয়াদের হামলায় তিনজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
এ বছরের জানুয়ারিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে তিন দিন ধরে উত্তেজনা চলে। ১৮ জানুয়ারি এতে যুক্ত হয় দুই দেশের স্থানীয় জনতা।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি ভারতের মালদা জেলার সুখদেবপুর বিএসএফের ক্যাম্পের সদস্যরা সীমান্ত ঘেঁষে রাস্তা ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শুরু করলে বাধা দেয় বিজিবি। তারপরেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বিএসএফ। এ নিয়ে সীমান্তে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
সীমান্তের বাসিন্দাদের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়াকে অবশ্য ভারতের প্রতি ‘পুঞ্জিভূত ক্ষোভের’ বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘ভারতীয় বাহিনী সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশিদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। যে কারণে তাদের প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ রয়েছে।’
মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষের পেছনে ভারতের উসকানি ও স্থানীয়দের ক্ষোভ কাজ করে থাকতে পারে। বাংলাদেশের নাগরিকেরা আগে হয়তো সরকারের কারণে কিছু বলতে পারেনি। তবে পটপরিবর্তনের পর তারা মনে করেছে, এখন প্রতিবাদ করা যাবে। যেহেতু আগের সরকার সীমান্ত হত্যা নিয়ে কোনো জোরালো প্রতিবাদ করত না, তাই জনমনে এমন ধারণা হয়েছিল যে ওই সরকার ভারতপন্থী। ফলে তখন ভারতের বিরুদ্ধে কেউ তেমন কিছু বলত না। বললে উল্টো সীমান্তের বাসিন্দাদের ওপরেই নিপীড়ন চলত।’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লিতে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সীমান্তহত্যার বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশ।
বৈঠক শেষে বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী বলেন, 'সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার নীতি থেকে বিএসএফ সরেনি।' কিন্তু পরের মাসেই পঞ্চগড়ের ভিতরগড় সীমান্তের ওপারে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক আল আমিন (৩৬) নিহত হন। তখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রতিবাদ জানালে বিএসএফ ঘটনাটিকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করে।
এভাবে বছরের পর বছর ধরে ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্তহত্যা বন্ধে শুধু আশ্বাসই দেওয়া হয়েছে। আর বিএসএফের গুলিতে লম্বা হয়েছে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর মিছিল। এক্ষেত্রে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বক্তব্য হলো, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সীমান্তের ঘটনাগুলোর সুরাহা করা গেলে এই হত্যা থামানো সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন ভারতের সদিচ্ছা।
আজ শনিবারও (১২ জুলাই) সীমান্তে দুজন হত্যা করেছে বিএসএফ। তাঁরা হলেন ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের আসকার আলী এবং সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার বাগানবাড়ি সীমান্তে শফিকুল ইসলাম। ভোর চারটার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে আর সুনামগঞ্জের ঘটনা শুক্রবার রাতের ।
ভারত যখন বাংলাদেশ সীমান্তে আতঙ্ক তৈরি করতে চায়, তখন হত্যাকাণ্ড চালায়। প্রতিদিনই চোরাচালান হয়, কিন্তু প্রতিদিন তো হত্যা করছে না। এটি মূলত দুই দেশের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ধরনের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড কাম্য নয়। মাবরুক মোহাম্মদ, উপদেষ্টা, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন বিএসএফের গুলিতে। বাকি পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে ভারতীয়দের নির্যাতনে।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সীমান্তহত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি আর বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পরও তা বন্ধ হচ্ছে না। অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের ঘটনায় গ্রেপ্তার বা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় দুটি প্রটোকল হলো, ‘জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইন্স ফর বর্ডার অথরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ-১৯৭৫’ এবং ‘দ্য ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান-২০১১’।
জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইন্স ফর বর্ডার অথরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ প্রটোকলের ধারা ৮ (আই) অনুসারে, এক দেশের নাগরিক যদি বেআইনিভাবে অন্য দেশে প্রবেশের চেষ্টা করে বা কোনো অপরাধে জড়ায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আত্মরক্ষায় যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে। তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করাটাই বাঞ্ছনীয়।
আর্টিকেল ৮ (এম) অনুযায়ী, সীমান্ত দিয়ে যদি গরু পাচার করা হয়, তাহলে গরু ও পাচারকারীর সম্পর্কে তথ্য অপরপক্ষের সীমান্তরক্ষীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। কাছাকাছি থানার পুলিশের কাছে মামলা করে গরু উদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ এ বিষয়ে স্ট্রিমকে বলেন, ‘সীমান্তহত্যা বন্ধে প্রয়োজন ভারতের সদিচ্ছা। আশ্বাস দিলেও তারা একরকম ইচ্ছাকৃতভাবে এসব হত্যা পরিচালিত করছে। এসব ঘটনায় চোরাচালান একটি অজুহাতমাত্র।’
এ সময় মাবরুক মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘সীমান্তহত্যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে রাষ্ট্রীয় নীতি। ভারত যখন বাংলাদেশ সীমান্তে আতঙ্ক তৈরি করতে চায়, তখন হত্যাকাণ্ড চালায়। প্রতিদিনই চোরাচালান হয়, কিন্তু প্রতিদিন তো হত্যা করছে না। এটি মূলত দুই দেশের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ধরনের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড কাম্য নয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্তহত্যা বন্ধ করতে ভারতকে বারবার বলা হচ্ছে। এটি আসলে ভারত সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যানেলে বাংলাদেশকে আরও শক্তভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
আসকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালে সীমান্তে মারা গেছেন ৪৮ জন। এর মধ্যে শুধু গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ৪২ জনকে। এরপর ২০২২ ও ২৩ সালে শুধু গুলিতে ১৬ জন করে মারা গেছেন। এরপর ক্রমান্বয়ে বেড়েছে সীমান্ত হত্যা।
গণমাধ্যমের খবরের বরাতে তৈরি পরিসংখ্যানে এইচআরএসএস জানিয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক কমপক্ষে ৩০৫ জন বাংলাদেশি নিহত এবং অন্তত ২৮২ জন আহত হয়েছেন।
দুই দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষের পেছনে ভারতের উসকানি ও স্থানীয়দের ক্ষোভ কাজ করে থাকতে পারে। বাংলাদেশের নাগরিকেরা আগে হয়তো সরকারের কারণে কিছু বলতে পারেননি। তবে পটপরিবর্তনের পর তাঁরা মনে করেছেন, এখন প্রতিবাদ করা যাবে। আগে দেখা যেত ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে উল্টো তাঁদের ওপরই নিপীড়ন চলত। অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জড়াচ্ছে দুই দেশের বাসিন্দারাও
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মাঝেমধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যমতে, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সীমান্তে ৯ বাংলাদেশির লাশ পাওয়া গেছে, যারা ভারতীয় নাগরিক ও খাসিয়াদের হামলায় নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক ও খাসিয়াদের হামলায় তিনজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
এ বছরের জানুয়ারিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে তিন দিন ধরে উত্তেজনা চলে। ১৮ জানুয়ারি এতে যুক্ত হয় দুই দেশের স্থানীয় জনতা।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি ভারতের মালদা জেলার সুখদেবপুর বিএসএফের ক্যাম্পের সদস্যরা সীমান্ত ঘেঁষে রাস্তা ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শুরু করলে বাধা দেয় বিজিবি। তারপরেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বিএসএফ। এ নিয়ে সীমান্তে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
সীমান্তের বাসিন্দাদের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়াকে অবশ্য ভারতের প্রতি ‘পুঞ্জিভূত ক্ষোভের’ বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘ভারতীয় বাহিনী সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশিদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। যে কারণে তাদের প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ রয়েছে।’
মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষের পেছনে ভারতের উসকানি ও স্থানীয়দের ক্ষোভ কাজ করে থাকতে পারে। বাংলাদেশের নাগরিকেরা আগে হয়তো সরকারের কারণে কিছু বলতে পারেনি। তবে পটপরিবর্তনের পর তারা মনে করেছে, এখন প্রতিবাদ করা যাবে। যেহেতু আগের সরকার সীমান্ত হত্যা নিয়ে কোনো জোরালো প্রতিবাদ করত না, তাই জনমনে এমন ধারণা হয়েছিল যে ওই সরকার ভারতপন্থী। ফলে তখন ভারতের বিরুদ্ধে কেউ তেমন কিছু বলত না। বললে উল্টো সীমান্তের বাসিন্দাদের ওপরেই নিপীড়ন চলত।’
এনসিপির কর্মসূচিকে ঘিরে গোপালগঞ্জ তৈরি হয়েছিল রণক্ষেত্রে। শহরের প্রতিটি রাস্তায় রয়ে গেছে তার চিহ্ন। ভেঙে ফেলা তোরণ গেট, ব্যানার, ফেস্টুন, ইট পাটকেলসহ ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করেছে গোপালগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ।
২০ দিন আগেগোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আয়োজিত রাজনৈতিক সমাবেশে বুধবার দুপুরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। চারদিক থেকে গাড়ি আটকে রেখে তারা হামলা চালালে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
২১ দিন আগেএমন সমস্যায় পড়েছে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টুটুল, নাহিদুল ইসলাম নয়ন, লিমনসহ প্রায় ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী। তারা বলছে, সমস্যার কথা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জানালেও কোনো সমাধান দিতে পারছেন না। তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকেরাও।
২২ দিন আগেপ্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের (যেহেতু ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদল থেকে হবে) সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটির সভাপতি হবেন রাষ্ট্রপতি, তবে তিনি ভোট দিতে পারবেন না। এভাবে গঠিত কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে
২৩ দিন আগে