leadT1ad

তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিষয়ক আলোচনা

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনসহ পাঁচ বিকল্প প্রস্তাব বিএনপির

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৫: ৩৪
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক। ১৩ জুলাই, ফরেন সার্ভিস একাডেমি। পিআইডির ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সভায় একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। তাঁদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন রাষ্ট্রপতি। এরপর সংবিধানের ৫৮ এর গ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের উপযুক্ত নাগরিকদের মধ্যে থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেবেন। এটিসহ আরও বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

গতকাল রোববার (১৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের সভার দ্বাদশ দিনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ প্রস্তাব দেন।

জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রক্রিয়া এবং প্রধান বিচারপতির নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়। পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে একটি সমন্বিত প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

ঐকমত্য কমিশনের এই আলোচনায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর দ্বিতীয় পর্বের এ আলোচনায় এখন পর্যন্ত আটটি বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে।

প্রস্তাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এখানে ত্রুটি আছে। আগের প্রস্তাবগুলোর কী হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। এর মধ্যে এই নতুন প্রস্তাব আনা হয়েছে। জামায়াতও প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু সেটা এখানে আনা হয়নি। – হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

বিএনপির অন্যান্য প্রস্তাব

গত বৃহস্পতিবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন নিয়ে নতুন দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করে ঐকমত্য কমিশন। রোববার (১৩ জুলাই) ওই দুই প্রস্তাবের সমন্বয়ে একটি প্রস্তাব আনা হয়। এটি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রস্তাব করেন। সালাহউদ্দিন আহমদের প্রস্তাব লিখিতভাবে দলগুলোর প্রতিনিধিদের দেওয়া হয়।

বিএনপির দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাবটি হলো— প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের (যেহেতু ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদল থেকে হবে) সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটির সভাপতি হবেন রাষ্ট্রপতি, তবে তিনি ভোট দিতে পারবেন না। এভাবে গঠিত কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

অথবা রাষ্ট্রপতি ভোট দিতে পারবেন সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের সঙ্গে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলের একজন প্রতিনিধি মিলে কমিটি হবে। এটি বিএনপির তৃতীয় বিকল্প প্রস্তাব।

চতুর্থ বিকল্প প্রস্তাবে বিএনপি আগে উল্লিখিত প্রস্তাবিত কমিটি থেকে ডেপুটি স্পিকারকে বাদ দিয়ে যে সব রাজনৈতিক দল নূন্যতম ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে তাদের প্রত্যেক দলের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি রাখার কথা বলেছে। এখানেও রাষ্ট্রপতি ভোট দিতে পারবেন।

ওপরের চারটি প্রস্তাবে একমত হওয়া না গেলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে আসা যায় বলে লিখিতভাবে জানিয়েছে বিএনপি। এক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাবের গঠিত কমিটির। অর্থাৎ বিএনপি যে দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে সেখানকার প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের (যেহেতু ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদল থেকে হবে) সমন্বয়ে গঠিত কমিটি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে।

এক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে এমন কেউ যাঁর বয়স ৭৫ পার হয়নি। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের ব্যাপারে আলোচনার পথ খোলা রেখেছে বিএনপি।

প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের (যেহেতু ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদল থেকে হবে) সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটির সভাপতি হবেন রাষ্ট্রপতি, তবে তিনি ভোট দিতে পারবেন না। এভাবে গঠিত কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে

জামায়াতের আপত্তি

সালাহউদ্দিন আহমদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে জামায়াতের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, প্রস্তাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এখানে ত্রুটি আছে। আগের প্রস্তাবগুলোর কী হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। এর মধ্যে এই নতুন প্রস্তাব আনা হয়েছে। জামায়াতও প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু সেটা এখানে আনা হয়নি।

এর আগে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর আলোচনায় এনসিসির প্রস্তাব বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার রূপরেখার সুপারিশও বাদ হয়ে যায়।

২ জুলাই ঐকমত্য কমিশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেখানে সংবিধানে আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান ছিল, তা এবং আরও দু-একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। সেদিন বিচার বিভাগ এবং রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে না রাখার বিষয়ে বেশির ভাগ দল মত দেয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত