leadT1ad

আপনি জম্বি-জগতে বাস করছেন না তো

জম্বির সঙ্গে আমাদের নিত্যকার জীবনের পার্থক্য আসলে কতটুকু? জম্বিদের ঠিক ‘মস্তিষ্ক’ বলতে কিছু নেই। তারা কোনো কিছু ভাবতে পারে না। সত্যি বলুন তো, আমরাই কি পারি? সারাদিনে কতটুকু সময় আমরা চিন্তার জন্য বরাদ্দ রাখি আর কতটুকু সময় অর্থহীন একঘেয়ে কাজে ব্যয় করি? কেউ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জম্বিদের কার্যকলাপে মিল খুঁজে পেলে তাঁকে বোধহয় খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না।

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৪৬
আপনি জম্বি-জগতে বাস করছেন না তো। স্ট্রিম গ্রাফিক

জম্বিরা শেয়ার বাজারের ‘ভ্যালু স্টক’। জম্বিরা কথা বলে না, শরীর থেকে রস চুঁইয়ে পড়ে আর মগজটাও অকেজো। কিন্তু ওরা এমন এক বস্তু, যার বাজারদর কখনো কমে না। এর যেন কোনো সীমা-পরিসীমা নেই।
আপনি ওদের শরীর গুলিতে যত ঝাঁঝরা করবেন, ওরা ততই আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। যেমন ধরুন, এএমসি চ্যানেলে ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’-এর প্রথম পর্ব প্রায় ৫৩ লক্ষ মানুষ দেখেছিল। এই সংখ্যাটা ‘ম্যাড মেন’-এর চতুর্থ সিজনের প্রথম পর্বের দর্শক সংখ্যার (যা ছিল ২৯ লক্ষ) চেয়ে ৮৩ শতাংশ বেশি। এর মানে হলো, ক্যাবল সংযোগ আছে, এমন অন্তত ২৪ লক্ষ মার্কিন দর্শক সম্ভবত ক্রিস্টিনা হেন্ড্রিকসকে (ম্যাড মেনের অভিনয়শিল্পী) একজন চলন্ত লাশ হিসেবে দেখতেই বেশি পছন্দ করবে।

জম্বিদের জনপ্রিয়তা বাড়ার ব্যাপারটা কিন্তু বেশ অদ্ভুত। কারণ জম্বিসুলভ বৈশিষ্ট্যের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এরা এমন এক প্রাণী, যারা কথা বলতে পারে না, ভাবতে পারে না, আর যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো মাংস খাওয়া—এ হেন চরিত্রে আর কতটুকুই বা গভীরতা যোগ করা যায়? আপনি পারবেন কোনো জম্বিকে মানবিক করে তুলতে? আর যদি তা করেন, তাহলে সে আর জম্বি থাকবে না।

সৌন্দর্য আর পরিসংখ্যানের এই দা-কুমড়ো সম্পর্কের কথা শুনতে বেশ অস্বাভাবিক শোনায়। কিন্তু হয়তো এমনটা ভাবা ঠিক নয়। গত ৪০ বছরে মার্কিনিদের মধ্যে জম্বিদের নিয়ে আগ্রহ ক্রমাগত বেড়েছে। জম্বিরা এমন এক পণ্য, সময়ের সাথে যাদের মধ্যে বড় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। কিন্তু গুটি গুটি পায়ে জনপ্রিয়তা ঠিকই বেড়েছে।

জম্বিদের জনপ্রিয়তা বাড়ার ব্যাপারটা কিন্তু বেশ অদ্ভুত। কারণ জম্বিসুলভ বৈশিষ্ট্যের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এরা এমন এক প্রাণী, যারা কথা বলতে পারে না, ভাবতে পারে না, আর যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো মাংস খাওয়া—এ হেন চরিত্রে আর কতটুকুই বা গভীরতা যোগ করা যায়? আপনি পারবেন কোনো জম্বিকে মানবিক করে তুলতে? আর যদি তা করেন, তাহলে সে আর জম্বি থাকবে না।
কিছু জম্বি আছে ধীরগতির, আর কিছু আছে বেশ দ্রুত। জম্বিদের মধ্যে বৈচিত্র্য বলতে মূলত এটুকুই।

জম্বিদের সাথে সব যুদ্ধই হলো টিকে থাকার লড়াই। এটা আসলে একটা সংখ্যার খেলা। আর লড়াইটা জটিল নয়, বরং একঘেয়ে। এক কথায় বললে, জম্বি মারা অনেকটা সোমবার সকালে বসে অফিসের ৪০০টি ই-মেইল পড়া আর ডিলিট করার মতো। যেকোনো জম্বি আক্রমণের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, জম্বিরা কখনও আপনার দিকে ধেয়ে আসা থামাবে না। আর জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আপনি যা-ই করুন না কেন, আপনার কাজ কখনও শেষ হবে না। ইন্টারনেট যেন রোজ আমাদের এই কথা মনে করিয়ে দেয়।

ব্যাপারটা এমন নয় যে জম্বিরা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের বদলাচ্ছে। বরং মনে হচ্ছে, আমাদের এই দুনিয়ার অবস্থাই দিন দিন জম্বি অ্যাটাকের মতো হয়ে উঠছে। জম্বিদের মধ্যে এমন একটা কিছু আছে, যা তাদেরকে আমাদের কাছে আগের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় করে তুলছে। আর আমার মনে হয়, আমি জানি সেই জিনিসটা কী।

আমরা যখন দানবদের নিয়ে একটু গভীরভাবে ভাবি, তখন দেখি, আমাদের ভেতরের ভয়গুলোই আসলে ওদের রূপ ধরে ফিরে আসে। যেমন ধরুন, ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব। ওটা দেখিয়েছিল, বিজ্ঞান যদি হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়, তাহলে কী হতে পারে। অ্যাটম বোমার ভয় থেকেই জন্ম হয়েছিল গডজিলার। ভ্যাম্পায়ার আর জম্বি—এই দুটোকে দেখলেই রোগ-বালাই নিয়ে আমাদের মনের গভীরে পুষে রাখা ভয়টা বেরিয়ে আসে। জম্বিদের সাথে র‍্যাবিস (বা আজকের দুনিয়ার ভোগবাদের) একটা মিল টানা খুব সহজ। ঠিক তেমনই, ভ্যাম্পায়ারদের সাথে এইডসের মিল খুঁজে পাওয়াও কঠিন কিছু না। গল্প লেখার সময় ভয়ের এই প্রজেকশনই কিন্তু কাহিনির মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

কিন্তু দর্শকরা যদি এর থেকে একদম অন্যরকম মানে বের করে?
যদি এমন হয় যে, আজকালকার মানুষ তাঁদের মনের ভেতরের ভয়গুলোকে পর্দায় দেখতে চায় না? বরং তাঁরা এমন গল্প দেখতে চায়, যা তাঁদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের মতো? ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’-এর প্রথম পর্ব কেন এত লোক দেখেছিল, তার কারণ হয়তো এটাই। দর্শকেরা জানত, এই গল্পের সাথে তাঁরা নিজেদেরকে মেলাতে পারবে।

দ্য ওয়াকিং ডেড-এর এক জম্বি
দ্য ওয়াকিং ডেড-এর এক জম্বি

আধুনিক জীবনের অনেকটাই আসলে জম্বি মারার মতো। জম্বি মারার ব্যাপারে একটা কথা আমরা সবাই জানি—কাজটা নেহাতই সোজা। একেবারে কাছ থেকে মাথায় গুলি করা (শটগান হলে সবচেয়ে ভালো)।

এটা হলো প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপ হলো, ঠিক একই কাজ পরের জম্বিটার সাথে করা। তৃতীয় ধাপটাও দ্বিতীয়টার মতোই, আর চতুর্থ ধাপটাও তৃতীয়টার থেকে আলাদা কিছু নয়। এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না (ক) আপনি নিজে মারা যান, অথবা (খ) সব জম্বি শেষ হয়ে যায়।

জম্বিদের সাথে সব যুদ্ধই হলো টিকে থাকার লড়াই। এটা আসলে একটা সংখ্যার খেলা। আর লড়াইটা জটিল নয়, বরং একঘেয়ে। এক কথায় বললে, জম্বি মারা অনেকটা সোমবার সকালে বসে অফিসের ৪০০টি ই-মেইল পড়া আর ডিলিট করার মতো। যেকোনো জম্বি আক্রমণের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, জম্বিরা কখনও আপনার দিকে ধেয়ে আসা থামাবে না। আর জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আপনি যা-ই করুন না কেন, আপনার কাজ কখনও শেষ হবে না। ইন্টারনেট যেন রোজ আমাদের এই কথা মনে করিয়ে দেয়।

এই যুদ্ধ জেতা হয়তো সম্ভব না, কিন্তু সামলানো যায়। যতক্ষণ আমরা আমাদের ঠিক সামনের জিনিসগুলোকে বাতিল করতে থাকব, ততক্ষণ আমরা টিকে থাকব। আমরা বেঁচে থাকি আগামীকালের জম্বিদের শেষ করার জন্য। আমরা অন্তত কিছু সময়ের জন্য মানুষ হয়ে থাকতে পারি। আমাদের শত্রু বিশাল আর নাছোড়বান্দা, এটি ঠিক। তবে তারা একইসঙ্গে বোকা ও নির্বোধও।

অ্যালিস গ্রেগরি নামে এক সাহিত্যিকের কথা বলি। তিনি সাহিত্য পত্রিকা এন+ওয়ান-এ গ্যারি স্টাইনগার্টের ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস সুপার স্যাড ট্রু লাভ স্টোরি নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি লিখছেন, ‘যতবার আমি ইন্টারনেটে যাই, ততবারই আমার ‘ডেথ ড্রাইভ’ বা নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছার কথা মনে হয়। সাফারি (ব্রাউজার) খোলাটা যেন ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে ধ্বংস করার একটা সিদ্ধান্ত। আমি যেন চাইছি, আমার চেতনাটা কেউ কেড়ে নিক।’

এই যে গ্রেগরির নিজেকে নিয়ে ভয়, সেটার সাথে জম্বি মস্তিষ্কের একটা দারুণ মিল আছে। ম্যাক্স ব্রুকস নামে একজন লেখক আছেন, যিনি ‘ওয়ার্ল্ড ওয়ার জি’ নামে একটি কাল্পনিক ইতিহাস এবং দ্য জম্বি সারভাইভাল গাইড নামক বই লিখেছেন। তিনি জম্বিদের মস্তিষ্কের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে: ‘ভাবুন তো, একটা কম্পিউটারকে শুধু একটাই কাজ করার জন্য প্রোগ্রাম করা হয়েছে। এই কাজটা থামানো যায় না, বদলানো যায় না, বা মুছেও ফেলা যায় না। কোনো নতুন তথ্য এতে জমা রাখা যায় না। কোনো নতুন কমান্ডও দেওয়া যায় না। এই কম্পিউটারটা শুধু ওই একটাই কাজ বারবার করতে থাকবে, যতক্ষণ না এর পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায়।’

এটাই হলো আমাদের সবার মনের ভয়: যে আমরা হারিয়ে যাব, আমাদের গিলে ফেলা হবে। জম্বিরা হলো ইন্টারনেট, মিডিয়া আর সেই সব কথাবার্তার মতো, যা আমরা বলতে চাই না। এগুলো সবই অবিরাম (এবং কোনো ভাবনাচিন্তা ছাড়াই) আমাদের দিকে ধেয়ে আসে। আর যদি আমরা হার মেনে নিই—তাহলে এগুলো আমাদের গিলে খাবে।

এই যুদ্ধ জেতা হয়তো সম্ভব না, কিন্তু সামলানো যায়। যতক্ষণ আমরা আমাদের ঠিক সামনের জিনিসগুলোকে বাতিল করতে থাকব, ততক্ষণ আমরা টিকে থাকব। আমরা বেঁচে থাকি আগামীকালের জম্বিদের শেষ করার জন্য। আমরা অন্তত কিছু সময়ের জন্য মানুষ হয়ে থাকতে পারি। আমাদের শত্রু বিশাল আর নাছোড়বান্দা, এটি ঠিক। তবে তারা একইসঙ্গে বোকা ও নির্বোধও।

তবে জম্বিদের সাথে ভ্যাম্পায়ারদের একটা বড় পার্থক্য আছে। আপনি চাইলে কোনো নির্দিষ্ট ভ্যাম্পায়ারকে কিছু সময়ের জন্য পছন্দ করতে পারেন। কিন্তু জম্বিদের বেলায় এই সুযোগটা নেই। ‘টোয়াইলাইট’-এর এডওয়ার্ড কুলেন, অ্যান রাইসের লেস্ট্যাট, এমনকি কাউন্ট ড্রাকুলার মতো চরিত্রেরও নানা লেয়ার থাকতে পারে। ওরা আকর্ষণীয়ও হতে পারে। ওরা এখন কেমন, বা আগে কেমন ছিল—সেটা জানা যায়।

জম্বিদের সাথে লড়াই করা মানে আসলে যে কোনো কিছুর সাথে লড়াই করা... বা বলা ভালো, সবকিছুর সাথেই লড়াই করা। ‘টোয়াইলাইট’ সিরিজটা দেখে অনেকেই হয়তো বলবেন, জম্বিদের দিন শেষ, এখন ভ্যাম্পায়ারদের যুগ। কিন্তু এই ভাবনাটা আসলে ভ্রান্ত। সম্প্রতি ভ্যাম্পায়ারদের নিয়ে যে এত মাতামাতি, তার পুরোটাই কেবল ‘টোয়াইলাইট’-এর সাফল্যের কারণে। আর সত্যি বলতে, ‘টোয়াইলাইট’ ব্র্যান্ডটা ঠিক ভ্যাম্পায়ারদের নিয়েও না। এর আসল কাহিনি হলো টিনেজ বয়সের যৌন সংযম নিয়ে এক ধরনের নস্টালজিয়া, সুন্দর চেহারার নায়ক-নায়িকা, আর আজকালকার পাঠকদের লম্বা, কিস্তিতে লেখা উপন্যাস পড়ার ঝোঁক।

তবে এর একটা চেইন রিঅ্যাকশনও আছে। ২০০৮ সালের সুইডিশ ভ্যাম্পায়ার ছবি লেট দ্য রাইট ওয়ান ইন ছিল অসাধারণ। কিন্তু ‘টোয়াইলাইট’ না এলে আমেরিকায় হয়তো এই ছবিটার রিমেক করা হতো না। এবিসি চ্যানেলের ‘দ্য গেটস’ সিরিজটা তো বানানোই হয়েছিল ‘টোয়াইলাইট’-এর ঘরে বসে থাকা টিনেজ দর্শকদের জন্য।

তবে জম্বিদের সাথে ভ্যাম্পায়ারদের একটা বড় পার্থক্য আছে। আপনি চাইলে কোনো নির্দিষ্ট ভ্যাম্পায়ারকে কিছু সময়ের জন্য পছন্দ করতে পারেন। কিন্তু জম্বিদের বেলায় এই সুযোগটা নেই। ‘টোয়াইলাইট’-এর এডওয়ার্ড কুলেন, অ্যান রাইসের লেস্ট্যাট, এমনকি কাউন্ট ড্রাকুলার মতো চরিত্রেরও নানা লেয়ার থাকতে পারে। ওরা আকর্ষণীয়ও হতে পারে। ওরা এখন কেমন, বা আগে কেমন ছিল—সেটা জানা যায়।

ভ্যাম্পায়ারের প্রতি ভালোবাসাটা হতে পারে একজনের জন্য। কিন্তু জম্বিদের প্রতি ভালোবাসাটা সব সময় সবার জন্য, দলগত। জম্বিরা কীসের প্রতীক, সেটা আপনার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগে। ওদের হাঁটাচলার ভঙ্গিটা আপনার ভালো লাগে। আর ওদের থামাতে কী করতে হয়, সেটাও আপনি জানেন। এই আকর্ষণ মনে একটা স্বস্তি দেয়। কারণ এই ব্যাপারগুলো আসলে বদলায় না।

হ্যালোউইনের কয়েক দিন আগে, আমি আরও তিনজনের সঙ্গে আপস্টেট নিউ ইয়র্কে ছিলাম। আর কীভাবে কীভাবে যেন আমরা ‘বার্ন অফ টেরর’ (আতঙ্কের খামারবাড়ি) নামে এক জায়গায় গিয়ে হাজির হলাম। জায়গাটা ছিল লেক ক্যাট্রিনের ঠিক বাইরে। খামারবাড়িটার ভেতরে কিছুটা গা ছমছমে ভাব ছিল বটে। তবে আসল ভূতুড়ে খামারবাড়িতে ঢোকার চেয়ে ২০ ডলার দিয়ে এখানে ঢোকা ঢের ভালো।

যদি কোমা থেকে উঠে দেখেন, হাসপাতালের কোনো কর্মচারী আশেপাশে নেই, ধরে নেবেন, আপনি অজ্ঞান থাকতেই জম্বিরা সব দখল করে নিয়েছে।

সে যাই হোক, সবচেয়ে মজা লেগেছিল যখন আমরা ওই ভয়ংকর খামারবাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম আর সাথে সাথেই আমাদের প্রায় ঠেঙিয়ে একটা স্কুল বাসে তোলা হলো। বাসটা আমাদের প্রায় সিকি মাইল দূরের একটা ভুট্টার ক্ষেতে নিয়ে গেল। ক্ষেতটা আনাড়ি অভিনেতায় ভরা ছিল; কেউ সেজেছিল মিলিটারি, আর বাকিরা ছিল, তাদের ভাষায়, ‘ইনফেক্টেড’ বা সংক্রমিত।

আমাদের বলা হলো, যদি বাঁচতে চাই, তাহলে চাঁদের আলোয় ভরা সেই ভুট্টার গোলকধাঁধা দিয়ে দৌড়ে পালাতে হবে। আমরা যখন দৌড়াচ্ছিলাম, তখন সৈনিকেরা উল্টাপাল্টা নির্দেশ দিচ্ছিল, আর ওদিকে ভুট্টা গাছের অন্ধকার থেকে হিসহিস করতে করতে জম্বিরা বেরিয়ে আসছিল। ব্যাপারটা মজা করার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। আর মজা ছিলও। কিন্তু ওই ভুট্টা ক্ষেতে ঢোকার ঠিক আগেই, আমার এক সঙ্গী টিপ্পনী কেটে আমাদের এই পরিস্থিতির বাস্তবতা তুলে ধরল:

‘আমি জানি, এটা ভয় দেখানোর জন্য করা হয়েছে,’ সে বলল। ‘কিন্তু সত্যি বলতে, একটা জম্বি অ্যাপোক্যালিপ্স সামলানোর ব্যাপারে আমার নিজের ওপর পুরো ভরসা আছে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই ধরনের পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, তা যেন আমি ভালোই জানি।’

ওর সাথে আমি দ্বিমত করতে পারলাম না। সত্যি বলতে, কে-ই বা না জানে?

আমরা সবাই জানি, ব্যাপারটা কীভাবে হয়। যদি কোমা থেকে উঠে দেখেন, হাসপাতালের কোনো কর্মচারী আশেপাশে নেই, ধরে নেবেন, আপনি অজ্ঞান থাকতেই জম্বিরা সব দখল করে নিয়েছে। রাতে কোথাও যাবেন না আর জানালার পর্দা টেনে রাখবেন। জম্বিদের থুতু গায়ে লাগতে দেবেন না। একটা জম্বিকে মাটিতে ফেলে দেওয়ার পর, দ্বিতীয় গুলিটা সোজা ওর মাথার পেছনে করবেন। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, কখনও ভাববেন না যে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে, কারণ যুদ্ধ কখনও শেষ হয় না। কিন্তু আপনি এটা পারবেন। ব্যাপারটা কিন্তু কঠিন নয়। ট্রিগারে আঙুল রাখুন আর বিশ্বাস করা থামাবেন না। ডিলিট করা থামাবেন না। ভয়েস মেইলগুলোর উত্তর দিন আর মাথা নেড়ে সম্মতি জানান। এই দুনিয়াটা এখন জম্বিদের, আমরা শুধু এখানে বাস করছি। তবে আমরা কিন্তু চাইলে এর চেয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারি।

* লেখাটি ‘মাই জম্বি, মাইসেলফ: হোয়াই মডার্ন লাইফ ফিলস র‍্যাদার আনডেড’ নামের লেখার অনুবাদ। পপ স্ট্রিমের জন্য লেখাটি তর্জমা করেছেন কৌরিত্র পোদ্দার তীর্থ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত