leadT1ad

শিবির-সমর্থিত প্যানেলের জয় নিয়ে যা বললেন সাবেক ডাকসু নেতা মান্না-মুশতাক-খোকন

মো. ইসতিয়াক
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ০১
শিবির-সমর্থিত প্যানেলের জয় নিয়ে যা বললেন সাবেক ডাকসু নেতা মান্না-মুশতাক-খোকন। স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শীর্ষ তিন পদসহ ২৮টি পদের ২৩টিতেই জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। ডাকসুর ইতিহাসে একবারই প্রথম জয় পেল শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে সবার মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে কী ভাবেছেন ডাকসুর সাবেক নেতারা? জানার চেষ্টা করেছে স্ট্রিম।

শিক্ষার্থীরা কেন কাকে বেছে নিল, সেটা তারাই ভালো জানে: মান্না

শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে দুইবারের সাবেক ভিপি (১৯৭৯ ও ১৯৮০) মাহমুদুর রহমান মান্না স্ট্রিমকে বলেন, ‘এটা নিয়ে আমার কোনো বিশেষ প্রতিক্রিয়া নেই। কারণ তারা এখনো দায়িত্ব নেয়নি। কোনো কাজও শুরু করেনি। কাজেই এখনই প্রতিক্রিয়া জানানোর মতো কিছু দেখি না।’

দুইবারের ডাকসুর সাবেক ভিপি (১৯৭৯ ও ১৯৮০) মাহমুদুর রহমান মান্না। সংগৃহীত ছবি
দুইবারের ডাকসুর সাবেক ভিপি (১৯৭৯ ও ১৯৮০) মাহমুদুর রহমান মান্না। সংগৃহীত ছবি

মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ‘অনেকে বলছে শিবিরের জয়কে কেউ নেগেটিভলি দেখছে, কেউ পজিটিভলি দেখছে। কিন্তু আমি নিজে এখনো কোনো মিডিয়ায় এরকম কিছু দেখিনি। জামায়াত-শিবির ঐতিহ্যগতভাবে একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা বটে। তবে এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা কেন কাকে বেছে নিল, সেটা তারাই ভালো জানে।’

মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, শিক্ষার্থীদের রায়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভোট দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই। জনগণই তো সবার ওপরে, আর এখানে জনগণ মানে শিক্ষার্থীরা। তারা যাদের নির্বাচন করেছে, তারাই দায়িত্ব নেবে, সমস্যাগুলো দেখবে, আন্দোলন সামলাবে।’

এই ডাকসু নির্বাচনকে মাহমুদুর রহমান মান্না ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু ভোট হয়েছে—এটাই বড় অর্জন। দেশে তো অনেক ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে ভোট হয় না, অবিশ্বাস তৈরি হয়। কিন্তু এখানে অন্তত ভোটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের রায় দিয়েছে। এই দিক থেকে বিষয়টিকে আমি ইতিবাচক দেখি।’

সবশেষে মান্না বলেন, ‘যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, তারা সবাই জাতির সম্পদ। এ ধরনের নির্বাচনই দেশকে ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে নিতে সহায়তা করতে পারে।’

মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে কোনো বিভ্রান্তিকর অবস্থান না নিলেই তারা টিকতে পারবে: মুশতাক হোসেন

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচিত হওয়া মুশতাক হোসেন গতকালের নির্বাচনে জয়ী হওয়া ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’কে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে শিবিরপন্থীদের অংশগ্রহণ ও জয়কে আমি একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দখলদারত্ব, অবিচার ও সমস্যার ভেতর দিয়ে গেছে। সেই জায়গা থেকেই হয়তো তারা ভেবেছে শিবিরকে একটা সুযোগ দেওয়া যায়। তাদের যুক্তি ছিল, শিবির ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী, তারা কথা দিয়ে কথা রাখে এবং ক্যাম্পাসে একটা ‘শ্রেয়’ বা নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে।’

১৯৮৯ সালে নির্বাচিত ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মুশতাক হোসেন। সংগৃহীত ছবি
১৯৮৯ সালে নির্বাচিত ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মুশতাক হোসেন। সংগৃহীত ছবি

২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিবিরের ভুমিকা ছিল উল্লেখ করে মুশতাক হোসেন বলেন, ‘অতীতে (২০২৪ সালে) গণঅভ্যুত্থানেও শিবিরের ভূমিকা ছিল। ছাত্ররা মনে করেছে, এবার তাদের দিয়ে চেষ্টা করা যাক। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জঞ্জালমুক্ত একটা পরিবেশ তৈরি হয়, সমস্যাগুলোর সমাধান হয়। আমি এটাকে ছাত্রদের এক ধরনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ বলব।’

মুশতাক হোসেন আরও বলেন, ‘তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে তাদের জন্য সবচেয়ে নাজুক বিষয় মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন আর জাতীয় সম্মানের প্রশ্ন। এই জায়গাগুলোতে তারা যদি কোনোভাবে আঘাত হানে বা ক্ষুণ্ন করে, তাহলে তারা দ্রুতই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। কারণ সাংগঠনিক শক্তি যত বড়ই হোক না কেন, ক্যাম্পাসে নৈতিক শক্তির সামনে দাঁড়ানো কঠিন। অতীতে আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরি হলে ছাত্ররা একত্রে প্রতিবাদ করেছে। তাই শিবিরপন্থী নেতৃত্বের জন্য এটাই সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা।’

মুশতাক হোসেন নব নির্বাচিত প্যানেলকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, তারা যেনো নির্বাচনের সময় যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো পূরণ করে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করলে তারা নিজেদের একটি নতুন, ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করতে পারবে। আর মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় সম্মানের প্রশ্নে কোনো বিভ্রান্তিকর অবস্থান না নিলেই তারা টিকতে পারবে এবং শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পারবে।

ছাত্রদের রায়ই সবচেয়ে বড় কথা: খায়রুল কবির খোকন

ডাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে ২৩ জন নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গে ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক (১৯৯০) খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম ডাকসু নির্বাচনটি হবে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, এটা হবে একটি সুশৃঙ্খল ও অবিসংবাদিত নির্বাচন, যেখানে বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা চেয়েছিলাম একটি সুষ্ঠ নির্বাচন।’

ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক (১৯৯০) খায়রুল কবির খোকন। সংগৃহীত ছবি
ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক (১৯৯০) খায়রুল কবির খোকন। সংগৃহীত ছবি

খায়রুল কবির খোকন আরও বলেন, ‘নির্বাচনে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভোটাধিকার হরণ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। অনেক প্রার্থী বলেছে—গণনা প্রক্রিয়ায় কারচুপি হয়েছে, আগেভাগেই ব্যালটে ভোট দেওয়া ছিল, আবার ভোটকেন্দ্রে প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের পর্যবেক্ষক ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’

নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নানা অভিযোগ তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে খায়রুল কবিরের বলেন, ‘অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতাই নির্বাচনের প্রাণ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন থেকে গেছে।’

খায়রুল কবির খোকন স্মরণ করিয়ে দেন ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের কথাও। ‘সেই নির্বাচনেও বহু বিতর্ক হয়েছিল, যদিও নুরুল হক নুর জয়ী হয়েছিল। ছয় বছর পর যখন আবার ডাকসু নির্বাচন হলো, তখন আমাদের প্রত্যাশা ছিলো আরও সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু এবারও অভিযোগ থেকে গেছে। উপাচার্য ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ শিক্ষার্থীরা তুলেছে, যেটা দুঃখজনক।’

শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হওয়া প্রসঙ্গে খায়রুল কবির আরও বলেন, ‘তারা সরাসরি জামায়াত-শিবিরের ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেনি। ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ নামে একটি প্যানেল থেকে তারা অংশ নিয়েছে। কাজেই আনুষ্ঠানিকভাবে শিবির ব্যানারে জয়ী হয়নি। এটা একটি বাস্তবতা।’

শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন আরও স্বচ্ছ হোক। শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত হোক। ছাত্রদের রায়ই সবচেয়ে বড় কথা। যদি সত্যিই শিক্ষার্থীরা তাদের নির্বাচিত করে থাকে, তবে সে সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতেই হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায় এড়ানো যাবে না—তাদের নিরপেক্ষতা নিয়েই বড় প্রশ্ন থেকে গেছে।’

Ad 300x250

আংশিক রপ্তানিকারকদের জন্য ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে বন্ড সুবিধা দেবে সরকার

দক্ষিণ এশিয়ায় ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় নেতা হয়েছিলেন যাঁরা

তিন দিন পেরোতেই ক্ষুব্ধ নেপালের জেনজিরা—‘আন্দোলন হাইজ্যাক হয়ে গেছে’

দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মহিলা পরিষদের বিবৃতি

জাকসু: রাতভর নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের অবরুদ্ধ রাখল ‘সম্প্রীতির ঐক্য’

সম্পর্কিত