leadT1ad

আমি চলে গেলে আমার সন্তান লড়বে, বলেছিলেন হাদি

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক

‘আমি চলে গেলে আমার সন্তান লড়বে, তার সন্তান লড়বে।’ সংগৃহীত ছবি

‘মৃত্যুর ফয়সালা জমিনে না, আসমানে হয়। আমি চলে গেলে আমার সন্তান লড়বে, তার সন্তান লড়বে।’– কথাগুলো চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বলেছিলেন শরিফ ওসমান হাদি, যিনি শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির জনপ্রিয় বক্তৃতার মধ্যে রয়েছে, ‘যুগ হতে যুগান্তরে আজাদির সন্তানেরা স্বাধীনতার পতাকা সমুন্নত রাখবেই। মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই! আমরা তো শাহাদাতের জন্যই মায়ের উদর হতে পৃথিবীতে পা রেখেছি।’

হাদির সাহসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ অনুসারীরা। আওয়ামী লীগের সমর্থকদের কাছে তিনি চক্ষুশূল। সব কিছু মিলিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে আলোচিত নাম হাদি।

অভ্যুত্থানের যোদ্ধা শেখ হাসিনার পতনের পর জনপরিসর থেকে সরে যাননি। বরং দিনে দিনে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান আরও স্পষ্ট এবং জনপ্রিয় করে তুলেছেন। রাজপথে নানা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরব থেকেছেন।

হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটিতে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকার জন্য তিনি পরিচিতি পান। জুলাই অভ্যুত্থানের পরিচিত মুখদের নিয়ে গঠন করা হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। এর সদস্য ছিলেন হাদি। যদিও পরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন হলেও সেখানে যাননি তিনি।

অভ্যুত্থানের পর হাদি নিজেই ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা, জুলাইয়ে হামলাকারীদের বিচার ও অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে নানা সময়ে মিছিল, সমাবেশ এবং অনশনের মতো কর্মসূচি হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে। এসব কর্মসূচির সামনে থেকেছেন ওসমান হাদি।

সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ এই প্ল্যাটফর্মের ঘোষিত লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ হাদি ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বলেছিলেন, ‘এই রায় পুরো পৃথিবীর জন্য নজির স্থাপন করেছে।’

গত জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বলেছিলেন, বিএনপি যদি ‘পুরনো ধারায়’ রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসে, তবে তারা দুই বছরও ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। এর বাইরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা এবং দৃশ্যত পরিবর্তনের ঘাটতির সমালোচনা করে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন।

ওসমান হাদি লেখালেখি করেন সীমান্ত শরিফ নামে। ‘লাভায় লালশাক পুবের আকাশ’ নামে একটি কবিতার বই আছে তাঁর। কোচিং সেন্টার সাইফুরসের শিক্ষক ছিলেন হাদি। সাইফুরস প্রকাশনী থেকেও একটি ইংরেজির বই বের হয়েছে তাঁর।

চলতি বছর এনসিপির ডাকা মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে হামলা হলে হাদি তীব্র ভাষায় বক্তব্য দেন, যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে তিনি এও বলেন, ‘এগুলো গালি নয় মুক্তির মহাকাব্য।’ পাশাপাশি দুঃখপ্রকাশও করেন।

গত নভেম্বরে ফেসবুকে হাদি লিখেছিলেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি ফোন নম্বর থেকে তিনি হত্যার হুমকি পেয়েছেন। ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, আওয়ামী লীগের খুনি সমর্থকরা তাঁকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখছে। জীবননাশের আশঙ্কা সত্ত্বেও তিনি ইনসাফের লড়াই থেকে পিছিয়ে যাবেন না।

ঢাকা-৮ আসনে (মতিঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, রমনা ও শাহবাগ থানা) হাদি ছাড়াও নির্বাচনের প্রচারে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। জামায়াত থেকে দলের নায়েবে ড. হেলাল উদ্দিন এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

Ad 300x250

সম্পর্কিত