leadT1ad

জামায়াত নেতার বক্তব্য ঘিরে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ২০
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের একটি বক্তব্য নিয়ে ফেসবুকে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নিজ দলের অনেক নেতা-কর্মীর সমালোচনার মুখেও পড়েছেন তিনি।

গত ১১ আগস্ট সোমবার পটুয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রশিবির। সেখানে তাঁর বক্তৃতায় শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘ইসলাম গ্রহণ করার আগে উমার (রা.) কী ছিল? সবচেয়ে জঘন্য মানুষ ছিল, পশু ছিল।’

আজ ১৬ আগস্ট দুপুর দেড়টায় ফেসবুকে এ ঘটনা নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশ্লেষক ও কলাম লেখক আরজু আহমেদ। তিনি লিখেছেন, ‘ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি। তাঁর একটা বক্তব্য দেখলাম, তিনি বলছেন, “ইসলাম গ্রহণ করার আগে উমার (রা.) কী ছিল? সবচেয়ে জঘন্য মানুষ ছিল, পশু ছিল।” তিনি সেই জঘন্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে উমার (রা.) কে প্রকারান্তরে স্বভাবজাত ডাকাত ও ধর্ষক প্রতীয়মান করছেন। যেন তার কাছ থেকে কোনও নারীর রেহাই ছিল না। সে বলছে, তাই এক নারী যখন তাকে দেখলো সে থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছে। নিজের ইজ্জত বাঁচাতে গহনাদি দিয়ে নিস্তার পেতে চাইছে।’

আরজু আহমেদ জাতীয় নাগরকি পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্যও। ওই ঘটনার উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘এই বানানো কিচ্ছাকে এই জামাত নেতা উমার (রা.) এঁর ইসলাম গ্রহণের “কিছুক্ষণ পরের” ঘটনা হিসেবে অভহিত করছে। অথচ ইসলাম গ্রহণের পর উমার (রা.) সাহাবিদের নিয়ে প্রথম প্রকাশ্যে কা'বার দিকে রওনা দেন। রাসুল সা. কে সামনে রেখে দুই ভাগে সাহাবাগণ বিভক্ত ছিলেন। এক ভাগের সম্মুখে ছিলেন উমার (রা.) অপরভাগে হামযা (রা.)। প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা ও কা'বা প্রান্তরে সত্যের এই উন্মোচনের জন্য উমার (রা.) কে রাসুল সা. আল ফারুক হিসেবে উপাধি দেন।’

আরজু আহমেদ তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এই বয়সেই তিনি কুরাইশদের দূত ছিলেন। গোত্রে গোত্রে বিরোধের মীমাংসায় বিচারক ছিলেন। আরবদের মধ্যে এই সম্মান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কারণ তিনি ছিলেন অন্যদের থেকে আলাদা। আরবদের যে সামাজিক অবক্ষয় ছিল তা থেকে তিনি দূরে থাকতেন। ইতিহাসের হিলয়াহ আল আওলিয়া, সিফাত আস সাফওয়াহ গ্রন্থগুলোতে এসব উল্লেখ আছে ‘

আরজু আহমেদের মতে, শফিকুল ইসলাম মাসুদের ওই বক্তব্যের মাধ্যমে ‘কেবল উমারকে অসম্মানিতই করা হয় নি। বরং এই বক্তা ইসলামের নামে উমারের উপর মিথ্যাচার আরোপ করেছেন। বলেছেন, উমার (রা.) মুসলিম হওয়ার পরও তাঁর “শয়তানি প্রবৃত্তি রয়ে গেছে।” অথচ আল্লাহর রাসুল সা. বলছেন, “উমার যে পথে যায়, সে পথে শয়তান যায় না।” এই হাদীস বুখারী ও মুসলিম উভয় গ্রন্থে আছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহ যোবায়ের ১৪ আগস্ট ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন, ‘জনাব শফিকুল ইসলাম সাহেবের বক্তব্য শুনলাম। আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে কথা বলি না। রাজনৈতিক আলাপ থেকে দূরে থাকতে চাই এজন্য। কিন্তু তিনি যেটা বলেছেন, ধর্মীয় কারণে তার প্রতিবাদ করা কর্তব্য মনে করছি। আশা করি, তিনি তার বক্তব্য থেকে ফিরে আসবেন এবং এটা যে জামায়াতে ইসলামী এবং তাঁর অনুসারীদের বক্তব্য নয়, এটা প্রমাণ করবেন।’

হজরত উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণের পূর্বেও একজন সম্মানিত ও নামজাদা তেজস্বী পুরুষ ছিলেন উল্লেখ আব্দুল্লাহ যোবায়ের বলেন, ‘তিনি (উমর) এলাকার পাতি গুণ্ডা বা মাস্তান ছিলেন না। হ্যাঁ, তিনি অত্যন্ত রাগী ছিলেন, কঠোর আচরণ করেছেন কখনো কখনো, এমনকি ইসলাম গ্রহণ করার জন্য অন্যদের মারধর করেছেন। তিনি কোনো ছিনতাইকারী ছিলেন না কিংবা নারীদের সম্ভ্রমের উপর আঘাতকারী ছিলেন না-ইসলাম গ্রহণের আগেও না পরেও না। উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এমন মানুষ যার কথা তাওরাতেও আছে। তাঁরা প্রত্যেকে আল্লাহ তায়ালার ডিভাইন প্ল্যানের অংশ। আল্লাহ তাঁকে এমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন, যে ইসলামের ইতিহাসে মহানবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিত্ব হবেন। সেই উমরকে জঘন্য মানুষ ও পশু বলা মারাত্মক গোস্তাখী হয়েছে।’

নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ও তরুণ আলেম আশরাফ মাহদি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ওমর (রা.)-এর ব্যাপারে যখন এ ধরনের বানোয়াট কিচ্ছাকাহিনি সমাবেশের বক্তৃতার জোর গলায় বলে ফেলেন একটি ইসলামি দলের সিনিয়র দায়িত্বশীল, তখন তার ইসলামী জ্ঞানের দীনতাই ধরা পড়ে। ইতিহাসের কোন গ্রন্থ থেকেই হযরত ওমরের ব্যাপারে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যায় না। এটা সুস্পষ্টভাবে সাহাবাদের শানে বেয়াদবী।’

সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে বানোয়াট কথাবার্তা বলে তাঁদের শানে বেয়াদবি করার পর ভুল ধরিয়ে দিলে শর্তহীন ক্ষমা চাইতে হবে জানিয়ে তিনি আরও লিখেন, ‘এটাই ঈমানের তাক্বাযা। এভাবে হঠকারী বক্তব্য দিয়ে যদি কেউ পার পেয়ে যায়, তাহলে "বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা"র অজুহাতে আবার সাহাবাদের শানে অযাচিত মন্তব্যের চর্চা শুরু হতে পারে। যার ফলে মিয়ারে হকের মানদণ্ডকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে ও আক্বায়েদ ও ফিকহী মাসায়েলের ক্ষেত্রে আবারও অক্ষরবাদীতার ফিতনা মাথাচাড়া দেওয়ার পরিবেশ তৈরির আশঙ্কা থেকে যায়।’

খোদ জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরাও ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের বক্তব্যের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। নিজের সঙ্গে শফিকুল ইসলামের পুরনো ছবি যুক্ত করে দেওয়া পোস্টে ফেসবুকে জামায়াতের পরিচিত অ্যাক্টিভিস্ট আসলাম হোসাইন লিখেছেন, ‘মুখের যে ভাষা, বাগ্মিতা ও বক্তব্যের সুসামঞ্জস‌্য কৌশল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ভাইকে হিরো বানিয়েছে, মুখের সেই ভাষাই তাঁকে জিরো বানাবে। মাসুদ ভাইয়ের শুধু বক্তব্যের প্রেমে পড়ে লক্ষ লক্ষ তরুণ তাঁকে ভালোবেসেছে। তাঁর বক্তব্য গতানুগতিক ধারার ছিল না। উপস্থাপনার কৌশল, স‌ঠিক তথ‌্যনির্ভর ও যুক্তিভিত্তিক আলোচনা সবাইকে মুগ্ধ করত। তাঁর ঈমানি বক্তব্যগুলো যুব সমাজে ইতিবাচক প্রভাব প্রতিক্রিয়া কর‌তে বিরাট ভূমিকা রাখত। নতুনভাবে কর্মীদের ম‌ধ্যে প্রাণ সঞ্চার হতো। তাঁর ব্যতিক্রমী বক্তব্য শোনার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ দাঁড়িয়ে থাকত।’

আসলাম হোসাইন আরও লিখেছেন, ‘হজরত উমর (রা.)-কে নিয়ে তিনি যা বলেছেন, তা খুব‌ই জঘন্য এবং মিথ্যাচার‌ও ব‌টে। অসংখ্য সাহাবি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে জাহেলি যুগেও উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত ছিলেন। এমন ব্যক্তিদের মধ্যে হজরত উমর (রা.) একজন। তিনি তৎকালীন সময়ে সমাজের সবচেয়ে শিক্ষিত ও সম্মানিত লোক ছিলেন। তাই "উমর (রা.) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে জঘন্য লোক ছিলেন, পশু ছিলেন" এমন কথা যেই বলবে সে মিথ্যা বলবে। তার উপর তাওবা আবশ্যক হবে।’

এমন আরও অনেক পোস্ট, শেয়ার আর মন্তব্যে সয়লাব হয়ে গেছে ইসলামপন্থীদের ফেসবুকে। হাজার হাজার মন্তব্য পড়েছে এসব স্ট্যাটাসে।

জামায়াতের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্য থেকে জানা যায়, শফিকুল ইসলাম মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) এবং পিএইচডি (ডক্টরেট) সম্পন্ন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন দায়িত্বে ও সর্বশেষ নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাশী

Ad 300x250

সিলেটে লুটের আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ

কক্সবাজারে যাওয়া দলীয় শৃঙ্খলার ব্যত্যয় নয়, ৫ নেতার বিরুদ্ধে শোকজ প্রত্যাহার এনসিপির

প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনের ওহীতে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছেন: নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী

শেখ হাসিনার সংবিধান থাকলে প্রত্যেকেই ফাঁসির দড়িতে ঝুলবে: ফরহাদ মজহার

অধিকাংশ ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার বসব: বদিউল আলম

সম্পর্কিত