সালেহ ফুয়াদ
‘এবার যারা ইসলামের পক্ষে ভোট দেবে তাদেরই ইমান থাকবে, যারা ইসলামের পক্ষে ভোট দেবে না, তাদের ইমান থাকার কোনো সুযোগ নাই।’ ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মন্তব্য করেছেন জামায়াত নেতা হিফজুর রহমান। তিনি গাজীপুরের টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষও। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলেম-ওলামা ও খতিবদেরও এই কথা মানুষকে বলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে এই ১৬ বছর আজান দিতে দেয়নি জালেমরা। ছাত্রলীগের ভাইদের নাকি ঘুমের ডিস্টার্ব হবে, এ জন্য ফজরের আজান হইতো না। এবার ডাকসুতে শিবির প্যানেল পাস করার পরের দিন মাইকে আজান আরম্ভ হয়েছে। আল্লাহু আকবার।’ কুষ্টিয়ায় জামায়াতের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মুফতি আমির হামজার এমন বক্তব্য নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। মুহসীন হলের শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে এই বক্তব্য ভিত্তিহীন বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
গত কয়েক মাসে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতার এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব নেতাদের অনেকেই আবার জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পদেও রয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে নেতাদের দেওয়া এমন ধর্মীয় বক্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ধর্মকে ব্যবহার করে জনগণকে 'ব্ল্যাকমেইল' করার শামিল হিসেবে দেখছেন। নির্বাচনের আগে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বয়ানকে একাকার করে ফেলাকে ইসলামের জন্য ক্ষতিকর বলছেন আলেম ও বিশেষজ্ঞরাও।
অনুকূল আবহাওয়ার কারণেই বাংলাদেশে শীতকালে ওয়াজ মাহফিল জমে ওঠে। সচরাচর নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে সারা দেশেই ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন হয়ে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ অনেক দলই তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। অনেক প্রার্থী নিজের এলাকায় জনসংযোগের কাজে নেমেও পড়েছেন। বিশেষ করে ধর্মীয় বিভিন্ন আয়োজনে তাঁদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। শীতকালের মতো প্যান্ডেল সাজিয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন না করা হলেও এসব আয়োজনে সুপরিচিত বক্তারা বক্তব্য দিচ্ছেন। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব বক্তব্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে। জামায়াতের বক্তাদের আলোচনায় ইসলাম ও রাজনৈতিক বয়ান একাকার হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ ধর্মভিত্তিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন আলেমরা। এসব দলের প্রায় সবগুলোতেই রয়েছেন ওয়াজ মাহফিলের জনপ্রিয় বক্তা—এমন অনেক নেতাকর্মী। আবার সনদধারী আলেম নন, এমন নেতাদের মুখেও ইসলামের ওয়াজ-নসিহত প্রায়ই শোনা যায়। দলের অনুসারী, সমর্থক ও নেতাকর্মী তৈরির পেছনে দলীয় অনুসারী ওয়ায়েজদের (বক্তা) বড় ভূমিকা রয়েছে। একারণে প্রায়শই দলীয় সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে নেতাদের ওয়াজ বা ধর্মীয় নসিহত শোনা যায়।
ওয়াজ মাহফিলের জনপ্রিয় বক্তা মুফতি আমির হামজা গত ২৯ আগস্ট কুষ্টিয়ায় বলেছেন, ‘সামনে যে যুদ্ধ আসছে, এটাকে যদিও আমরা ভোট যুদ্ধ বলি। বদরের ময়দান আমরা দেখি নাই, উহুদের ময়দান দেখি নাই, সামনে কিন্তু উহুদ-বদর চলে আসতেছে। দেড় হাজার বছরের ভেতরে তো ওগুলো অনেক সময় বাস্তবে দেখা হয়নি, এবার আপনি দেখবেন।’
মুফতি আমির হামজা কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে জামায়াতের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী। গত ২৯ আগস্ট জুমার নামাজের পরে অনুষ্ঠিত পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের কর্মী ও সুধী সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর বিধান পুরোপুরি পালন করতে হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দরকার।’ এই উদ্দেশ্যেই তিনি জামায়াতে যোগ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমিও ওই উদ্দেশ্য নিয়েই এই রাস্তায় এসেছি। আল্লাহর কসম, আমরা যে রাস্তায় ছিলাম (সেটা ছিল)... ওবিখা, কাবিখা একটা আছে না—কাজের বিনিময়ে খাদ্য? আর আমাদেরটা ছিল ওয়াজ কইরে খা। তা তো ভালোই ছিলাম। এই রাস্তায় এসেছি শুধু এবাদত মনে করে। কারণ আমি কোরআন পড়ে এখন এটাই বুঝতে পারলাম যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিন কায়েম করা ছাড়া আল্লাহর দরবারে মুমিন হওয়া সম্ভব না।’
সিলেটে নিজের নির্বাচনী এলাকায় আরেক জামায়াত নেতা সেলিম উদ্দীন বলেছেন, ‘দল-মতের ঊর্ধ্বে ওঠে এবার দাঁড়িপাল্লা মার্কায় আপনারা ভোট দিয়া একবার আল্লাহরে খুশি করবার লাগি, বেহেশতে যাইবার লাগি, দোজখ থাকি বাঁচবার লাগি, নিজের উন্নয়নের লাগি আমরা হখলে (সবাই) চেষ্টা করতাম ইনশাআল্লাহ। রাজি আছইন তো?’
আসলে আমি জানি না উনারা কী হিসেবে এসব বলেন, এগুলো তো মারাত্মক বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে। আমার মতের বিপক্ষে গেলেই ইসলাম চলে গেল, আর আমার মতের পক্ষে হলেই ইসলাম এলো; এই জাতীয় চিন্তা-ভাবনা তো খুব খারাপ জিনিস। ইসলামকে স্বার্থে ব্যবহার করা।ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া মজুমদার, অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন সেলিম উদ্দিন। বর্তমানে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন। সিলেট-৬ আসনে (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী তিনি। স্ট্রিমের পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান।
জামায়াতের আরেক পরিচিত মুখ ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের একটি বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা সৃষ্টি হয়। ‘কেন্দ্রভিত্তিক ছাত্রী ও মহিলা দায়িত্বশীলা সমাবেশ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর জমানায় সেই সময় হয়েছে বুলেটের যুদ্ধ, সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে তাঁরা অংশগ্রহণ করেছেন। এখন তো আধুনিক যুগ। আধুনিক যুগে আমরা বলি, এখন হচ্ছে ব্যালটের যুদ্ধ। তো নির্বাচনটা আমাদের শুধু নির্বাচন না। এটা হচ্ছে আমাদের ব্যালটের একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধ তো আমাদের নর-নারী প্রত্যেক ভাই-বোনদের জন্য আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন। সুতরাং ফরজ কাজ মনে করে, আমরা সালাত যেমন আদায় করি, আন আকিমুদ্দিন, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করার কাজটাকেও ঠিক একইভাবে আমাদের দায়িত্বশীল যারা, আমাদের কর্মী যারা, সহযোগী যারা তাদের একইভাবে ধারণ করতে হবে।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন শফিকুল ইসলাম মাসুদ। বর্তমানে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন। পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে সংসদ সদস্য পদে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী তিনি।
শফিকুল ইসলাম মাসুদের এই মন্তব্যের বিপরীতে আরেক ইসলামী বক্তা ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী শুক্রবারের জুমার নামাজের বয়ানে বলেছেন, ‘ব্যালট দিয়ে জিহাদ হয় না, বুলেট দিয়েই জিহাদ হয়।’ তাঁর এই বয়ানও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
‘মাওলানা মওদূদীর রাষ্ট্রচিন্তা: একটি পর্যালোচনা’ বইয়ের লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ স্ট্রিমকে বলেন, ‘নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার নির্বাচনী বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। কিন্তু তারা তো এখন থেকেই ধর্মের ব্যবহার শুরু করেছে। বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। এখানে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে নির্বাচন করাটা আমাদের দেশের বাজে ঐতিহ্য। এটা অনেক আগে থেকেই আছে। পাকিস্তান আন্দোলনেও ছিল। তখন অনেক দল বলেছে যে, ইসলাম কায়েম করতে হলে পৃথক রাষ্ট্র লাগবে। আবার মুক্তিযুদ্ধের সময় বলেছে, পাকিস্তান সরকারের পক্ষে না থাকলে সেখানে ইসলাম হারিয়ে যাবে। এরপরের সকল নির্বাচনেই এই রকম দলগুলো ধর্মকে ব্যবহার করছে। নির্বাচনে মুসলিমদের ধর্ম অনুভূতি ব্যবহার করা একেবারেই আইনের লঙ্ঘন।’
আলতাফ পারভেজের মতে, এই ধরনের প্রচারণা ধর্ম দিয়ে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করা। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা প্রচার করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে এতদিন আজান হতো না, ডাকসুতে শিবির জেতার পর আজান হচ্ছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ঢাকা ইউনিভার্সিটির সব জায়গায় আজান হতো। অনেক প্যানেল মসজিদগুলোতে নামাজ শেষ করে ডাকসু নির্বাচনের প্রচারও করেছে। হলে আমাদের সময় আমি নিজেও নামাজ পড়েছি। প্রত্যেক হলে নামাজ হয়, আজান হয়। সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা কথা তারা প্রচার করছে। এটা দিয়ে তারা প্রচার করতে চায় যে, শিবির ওইখানে ইসলাম কায়েম করেছে এখন সারা দেশে জামায়াত ইসলাম কায়েম করবে। ডাকসুকে তারা ধর্মের পক্ষের বিজয় হিসেবে প্রচারণায় কাজে লাগাচ্ছে।’
অন্যদিকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া মজুমদার স্ট্রিমকে বলেন, ‘আসলে আমি জানি না উনারা কী হিসেবে এসব বলেন, এগুলো তো মারাত্মক বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে। আমার মতের বিপক্ষে গেলেই ইসলাম চলে গেল, আর আমার মতের পক্ষে হলেই ইসলাম এলো; এই জাতীয় চিন্তা-ভাবনা তো খুব খারাপ জিনিস। ইসলামকে স্বার্থে ব্যবহার করা।’
নির্বাচনকে যাঁরা বদর-উহুদ যুদ্ধের সঙ্গে সাদৃশ্য করেছে তাঁরা মারাত্মক গুনাহ (পাপ) করেছেন বলে মনে করেন এই ইসলামি পণ্ডিত। খ্যাতিমান এই আলেম বলেন, ‘প্রত্যেককেই ইসলামিক হতে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, ইসলামকে সমর্থন করতে হবে। কিন্তু কোন ইসলামকে সমর্থন করবে, সেটা কতটুকু ইসলাম, ক্ষমতায় গেলেই ওরা ইসলাম বাস্তবায়ন করবে এটাও তো বলে না।’
অধ্যাপক ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া মজুমদার বলেন, ‘কেউ কোনো দলকে ভোট না দিলে ইসলাম থাকবে না এই জাতীয় কথাবার্তা বলা জায়েজ নাই। এটা বলতে পারে না, এটা অন্যায়। সর্বোচ্চ বলতে পারে, আপনি ইসলামিক হোন। ইসলামের পক্ষে থাকুন। কিন্তু আমাকে ভোট না দিলে বা অমুক দলকে ভোট না দিলে ইমান থাকবে না, এগুলো হচ্ছে মারাত্মক বাড়াবাড়ি, এগুলি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
এদিকে আমির হামজার বক্তব্যের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুহসীন হলের ২০২০-২১ সেশনের আবাসিক একজন শিক্ষার্থী জানান, ২০২২ সাল থেকে তিনি মুহসিন হলে থাকেন। সব সময়ই তাঁরা হলের মসজিদে আজান শুনে নামাজে গেছেন। ছাত্রলীগের সময়েও হলে যাঁরা তাবলীগ করতেন, তাঁরা নির্বিঘ্নে তাঁদের দাওয়াত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, অন্যদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। হলে আজান দিতে না দেওয়ার তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। হলের আবাসিক ছাত্ররা প্রশাসনের কাছে এই ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা প্রচার করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে এতদিন আজান হতো না, ডাকসুতে শিবির জেতার পর আজান হচ্ছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ঢাকা ইউনিভার্সিটির সব জায়গায় আজান হতো।আলতাফ পারভেজ, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
জামায়াতের বক্তব্য
দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ‘ওয়াজের’ ব্যাপারে সাংগঠনিক মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের স্ট্রিমকে বলেন, নেতারা এমন বক্তব্য দিয়েছেন কি না, তা তাঁর জানা নেই। দিয়ে থাকলে সেগুলো তাঁদের ব্যক্তিগত বক্তব্য। কোনোভাবেই সেগুলো জামায়াতের সাংগঠনিক বক্তব্য নয়।
এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন,‘এটা উনাদের ব্যক্তিগত বক্তব্য। এটা জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য না। আমাদের স্থায়ী কর্মসূচী আছে। সেগুলো নিয়ে আমরা মানুষের কাছে যাই। জনগণের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আমরা কী করবো, কত দূর করতে পারবো, সেটা কীভাবে করবো সেটাই আমরা জনগণকে বলি। সামনে আমাদের ম্যানোফেস্টো আসবে, সেখানে আমাদের বক্তব্য, কৌশল, নীতি, কর্মসূচী বিস্তারিত আসবে। সেটাই হবে আমাদের অফিসিয়াল বক্তব্য।’
জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা যখন এই ধরনের বক্তব্য দেন তখন জামায়াত কী করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের বক্তব্য যখন আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে অথবা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারি তখন তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে সংশোধন করি যে, আপনার অবস্থান থেকে যেন এই ধরনের বক্তব্য আর না আসে। অনেক সময় না চাইতেও বলে ফেলেন।’
অনেক সময় দীর্ঘ বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ সামনে আনা হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সতর্ক করার পর সাধারণত নেতারা পরবর্তীতে আর ওই ধরনের বক্তব্য দেন না। কেউ কেউ ইমোশনাল। সবাই তো আর ব্যালেন্সড না। ইমোশনাল বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই ধরনের কথা বলে ফেলেন, যা নিয়ে পরবর্তীতে স্বাভাবিকভাবেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’
এই ধরনের বক্তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয় এবং সংশোধন না হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলেও স্ট্রিমকে জানান তিনি।
‘এবার যারা ইসলামের পক্ষে ভোট দেবে তাদেরই ইমান থাকবে, যারা ইসলামের পক্ষে ভোট দেবে না, তাদের ইমান থাকার কোনো সুযোগ নাই।’ ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মন্তব্য করেছেন জামায়াত নেতা হিফজুর রহমান। তিনি গাজীপুরের টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষও। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলেম-ওলামা ও খতিবদেরও এই কথা মানুষকে বলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে এই ১৬ বছর আজান দিতে দেয়নি জালেমরা। ছাত্রলীগের ভাইদের নাকি ঘুমের ডিস্টার্ব হবে, এ জন্য ফজরের আজান হইতো না। এবার ডাকসুতে শিবির প্যানেল পাস করার পরের দিন মাইকে আজান আরম্ভ হয়েছে। আল্লাহু আকবার।’ কুষ্টিয়ায় জামায়াতের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মুফতি আমির হামজার এমন বক্তব্য নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। মুহসীন হলের শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে এই বক্তব্য ভিত্তিহীন বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
গত কয়েক মাসে জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতার এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব নেতাদের অনেকেই আবার জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পদেও রয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে নেতাদের দেওয়া এমন ধর্মীয় বক্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ধর্মকে ব্যবহার করে জনগণকে 'ব্ল্যাকমেইল' করার শামিল হিসেবে দেখছেন। নির্বাচনের আগে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বয়ানকে একাকার করে ফেলাকে ইসলামের জন্য ক্ষতিকর বলছেন আলেম ও বিশেষজ্ঞরাও।
অনুকূল আবহাওয়ার কারণেই বাংলাদেশে শীতকালে ওয়াজ মাহফিল জমে ওঠে। সচরাচর নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে সারা দেশেই ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন হয়ে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ অনেক দলই তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। অনেক প্রার্থী নিজের এলাকায় জনসংযোগের কাজে নেমেও পড়েছেন। বিশেষ করে ধর্মীয় বিভিন্ন আয়োজনে তাঁদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। শীতকালের মতো প্যান্ডেল সাজিয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন না করা হলেও এসব আয়োজনে সুপরিচিত বক্তারা বক্তব্য দিচ্ছেন। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব বক্তব্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে। জামায়াতের বক্তাদের আলোচনায় ইসলাম ও রাজনৈতিক বয়ান একাকার হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ ধর্মভিত্তিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন আলেমরা। এসব দলের প্রায় সবগুলোতেই রয়েছেন ওয়াজ মাহফিলের জনপ্রিয় বক্তা—এমন অনেক নেতাকর্মী। আবার সনদধারী আলেম নন, এমন নেতাদের মুখেও ইসলামের ওয়াজ-নসিহত প্রায়ই শোনা যায়। দলের অনুসারী, সমর্থক ও নেতাকর্মী তৈরির পেছনে দলীয় অনুসারী ওয়ায়েজদের (বক্তা) বড় ভূমিকা রয়েছে। একারণে প্রায়শই দলীয় সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে নেতাদের ওয়াজ বা ধর্মীয় নসিহত শোনা যায়।
ওয়াজ মাহফিলের জনপ্রিয় বক্তা মুফতি আমির হামজা গত ২৯ আগস্ট কুষ্টিয়ায় বলেছেন, ‘সামনে যে যুদ্ধ আসছে, এটাকে যদিও আমরা ভোট যুদ্ধ বলি। বদরের ময়দান আমরা দেখি নাই, উহুদের ময়দান দেখি নাই, সামনে কিন্তু উহুদ-বদর চলে আসতেছে। দেড় হাজার বছরের ভেতরে তো ওগুলো অনেক সময় বাস্তবে দেখা হয়নি, এবার আপনি দেখবেন।’
মুফতি আমির হামজা কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে জামায়াতের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী। গত ২৯ আগস্ট জুমার নামাজের পরে অনুষ্ঠিত পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের কর্মী ও সুধী সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর বিধান পুরোপুরি পালন করতে হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দরকার।’ এই উদ্দেশ্যেই তিনি জামায়াতে যোগ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমিও ওই উদ্দেশ্য নিয়েই এই রাস্তায় এসেছি। আল্লাহর কসম, আমরা যে রাস্তায় ছিলাম (সেটা ছিল)... ওবিখা, কাবিখা একটা আছে না—কাজের বিনিময়ে খাদ্য? আর আমাদেরটা ছিল ওয়াজ কইরে খা। তা তো ভালোই ছিলাম। এই রাস্তায় এসেছি শুধু এবাদত মনে করে। কারণ আমি কোরআন পড়ে এখন এটাই বুঝতে পারলাম যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিন কায়েম করা ছাড়া আল্লাহর দরবারে মুমিন হওয়া সম্ভব না।’
সিলেটে নিজের নির্বাচনী এলাকায় আরেক জামায়াত নেতা সেলিম উদ্দীন বলেছেন, ‘দল-মতের ঊর্ধ্বে ওঠে এবার দাঁড়িপাল্লা মার্কায় আপনারা ভোট দিয়া একবার আল্লাহরে খুশি করবার লাগি, বেহেশতে যাইবার লাগি, দোজখ থাকি বাঁচবার লাগি, নিজের উন্নয়নের লাগি আমরা হখলে (সবাই) চেষ্টা করতাম ইনশাআল্লাহ। রাজি আছইন তো?’
আসলে আমি জানি না উনারা কী হিসেবে এসব বলেন, এগুলো তো মারাত্মক বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে। আমার মতের বিপক্ষে গেলেই ইসলাম চলে গেল, আর আমার মতের পক্ষে হলেই ইসলাম এলো; এই জাতীয় চিন্তা-ভাবনা তো খুব খারাপ জিনিস। ইসলামকে স্বার্থে ব্যবহার করা।ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া মজুমদার, অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন সেলিম উদ্দিন। বর্তমানে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন। সিলেট-৬ আসনে (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী তিনি। স্ট্রিমের পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান।
জামায়াতের আরেক পরিচিত মুখ ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের একটি বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা সৃষ্টি হয়। ‘কেন্দ্রভিত্তিক ছাত্রী ও মহিলা দায়িত্বশীলা সমাবেশ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর জমানায় সেই সময় হয়েছে বুলেটের যুদ্ধ, সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে তাঁরা অংশগ্রহণ করেছেন। এখন তো আধুনিক যুগ। আধুনিক যুগে আমরা বলি, এখন হচ্ছে ব্যালটের যুদ্ধ। তো নির্বাচনটা আমাদের শুধু নির্বাচন না। এটা হচ্ছে আমাদের ব্যালটের একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধ তো আমাদের নর-নারী প্রত্যেক ভাই-বোনদের জন্য আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন। সুতরাং ফরজ কাজ মনে করে, আমরা সালাত যেমন আদায় করি, আন আকিমুদ্দিন, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করার কাজটাকেও ঠিক একইভাবে আমাদের দায়িত্বশীল যারা, আমাদের কর্মী যারা, সহযোগী যারা তাদের একইভাবে ধারণ করতে হবে।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন শফিকুল ইসলাম মাসুদ। বর্তমানে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন। পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে সংসদ সদস্য পদে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী তিনি।
শফিকুল ইসলাম মাসুদের এই মন্তব্যের বিপরীতে আরেক ইসলামী বক্তা ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী শুক্রবারের জুমার নামাজের বয়ানে বলেছেন, ‘ব্যালট দিয়ে জিহাদ হয় না, বুলেট দিয়েই জিহাদ হয়।’ তাঁর এই বয়ানও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
‘মাওলানা মওদূদীর রাষ্ট্রচিন্তা: একটি পর্যালোচনা’ বইয়ের লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ স্ট্রিমকে বলেন, ‘নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার নির্বাচনী বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। কিন্তু তারা তো এখন থেকেই ধর্মের ব্যবহার শুরু করেছে। বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। এখানে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে নির্বাচন করাটা আমাদের দেশের বাজে ঐতিহ্য। এটা অনেক আগে থেকেই আছে। পাকিস্তান আন্দোলনেও ছিল। তখন অনেক দল বলেছে যে, ইসলাম কায়েম করতে হলে পৃথক রাষ্ট্র লাগবে। আবার মুক্তিযুদ্ধের সময় বলেছে, পাকিস্তান সরকারের পক্ষে না থাকলে সেখানে ইসলাম হারিয়ে যাবে। এরপরের সকল নির্বাচনেই এই রকম দলগুলো ধর্মকে ব্যবহার করছে। নির্বাচনে মুসলিমদের ধর্ম অনুভূতি ব্যবহার করা একেবারেই আইনের লঙ্ঘন।’
আলতাফ পারভেজের মতে, এই ধরনের প্রচারণা ধর্ম দিয়ে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করা। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা প্রচার করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে এতদিন আজান হতো না, ডাকসুতে শিবির জেতার পর আজান হচ্ছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ঢাকা ইউনিভার্সিটির সব জায়গায় আজান হতো। অনেক প্যানেল মসজিদগুলোতে নামাজ শেষ করে ডাকসু নির্বাচনের প্রচারও করেছে। হলে আমাদের সময় আমি নিজেও নামাজ পড়েছি। প্রত্যেক হলে নামাজ হয়, আজান হয়। সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা কথা তারা প্রচার করছে। এটা দিয়ে তারা প্রচার করতে চায় যে, শিবির ওইখানে ইসলাম কায়েম করেছে এখন সারা দেশে জামায়াত ইসলাম কায়েম করবে। ডাকসুকে তারা ধর্মের পক্ষের বিজয় হিসেবে প্রচারণায় কাজে লাগাচ্ছে।’
অন্যদিকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া মজুমদার স্ট্রিমকে বলেন, ‘আসলে আমি জানি না উনারা কী হিসেবে এসব বলেন, এগুলো তো মারাত্মক বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে। আমার মতের বিপক্ষে গেলেই ইসলাম চলে গেল, আর আমার মতের পক্ষে হলেই ইসলাম এলো; এই জাতীয় চিন্তা-ভাবনা তো খুব খারাপ জিনিস। ইসলামকে স্বার্থে ব্যবহার করা।’
নির্বাচনকে যাঁরা বদর-উহুদ যুদ্ধের সঙ্গে সাদৃশ্য করেছে তাঁরা মারাত্মক গুনাহ (পাপ) করেছেন বলে মনে করেন এই ইসলামি পণ্ডিত। খ্যাতিমান এই আলেম বলেন, ‘প্রত্যেককেই ইসলামিক হতে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, ইসলামকে সমর্থন করতে হবে। কিন্তু কোন ইসলামকে সমর্থন করবে, সেটা কতটুকু ইসলাম, ক্ষমতায় গেলেই ওরা ইসলাম বাস্তবায়ন করবে এটাও তো বলে না।’
অধ্যাপক ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া মজুমদার বলেন, ‘কেউ কোনো দলকে ভোট না দিলে ইসলাম থাকবে না এই জাতীয় কথাবার্তা বলা জায়েজ নাই। এটা বলতে পারে না, এটা অন্যায়। সর্বোচ্চ বলতে পারে, আপনি ইসলামিক হোন। ইসলামের পক্ষে থাকুন। কিন্তু আমাকে ভোট না দিলে বা অমুক দলকে ভোট না দিলে ইমান থাকবে না, এগুলো হচ্ছে মারাত্মক বাড়াবাড়ি, এগুলি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
এদিকে আমির হামজার বক্তব্যের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুহসীন হলের ২০২০-২১ সেশনের আবাসিক একজন শিক্ষার্থী জানান, ২০২২ সাল থেকে তিনি মুহসিন হলে থাকেন। সব সময়ই তাঁরা হলের মসজিদে আজান শুনে নামাজে গেছেন। ছাত্রলীগের সময়েও হলে যাঁরা তাবলীগ করতেন, তাঁরা নির্বিঘ্নে তাঁদের দাওয়াত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, অন্যদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। হলে আজান দিতে না দেওয়ার তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। হলের আবাসিক ছাত্ররা প্রশাসনের কাছে এই ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা প্রচার করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে এতদিন আজান হতো না, ডাকসুতে শিবির জেতার পর আজান হচ্ছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ঢাকা ইউনিভার্সিটির সব জায়গায় আজান হতো।আলতাফ পারভেজ, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
জামায়াতের বক্তব্য
দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ‘ওয়াজের’ ব্যাপারে সাংগঠনিক মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের স্ট্রিমকে বলেন, নেতারা এমন বক্তব্য দিয়েছেন কি না, তা তাঁর জানা নেই। দিয়ে থাকলে সেগুলো তাঁদের ব্যক্তিগত বক্তব্য। কোনোভাবেই সেগুলো জামায়াতের সাংগঠনিক বক্তব্য নয়।
এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন,‘এটা উনাদের ব্যক্তিগত বক্তব্য। এটা জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য না। আমাদের স্থায়ী কর্মসূচী আছে। সেগুলো নিয়ে আমরা মানুষের কাছে যাই। জনগণের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আমরা কী করবো, কত দূর করতে পারবো, সেটা কীভাবে করবো সেটাই আমরা জনগণকে বলি। সামনে আমাদের ম্যানোফেস্টো আসবে, সেখানে আমাদের বক্তব্য, কৌশল, নীতি, কর্মসূচী বিস্তারিত আসবে। সেটাই হবে আমাদের অফিসিয়াল বক্তব্য।’
জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা যখন এই ধরনের বক্তব্য দেন তখন জামায়াত কী করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের বক্তব্য যখন আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে অথবা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারি তখন তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে সংশোধন করি যে, আপনার অবস্থান থেকে যেন এই ধরনের বক্তব্য আর না আসে। অনেক সময় না চাইতেও বলে ফেলেন।’
অনেক সময় দীর্ঘ বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ সামনে আনা হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সতর্ক করার পর সাধারণত নেতারা পরবর্তীতে আর ওই ধরনের বক্তব্য দেন না। কেউ কেউ ইমোশনাল। সবাই তো আর ব্যালেন্সড না। ইমোশনাল বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই ধরনের কথা বলে ফেলেন, যা নিয়ে পরবর্তীতে স্বাভাবিকভাবেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’
এই ধরনের বক্তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয় এবং সংশোধন না হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলেও স্ট্রিমকে জানান তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বলেছেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারের পতনের কয়েক দিন পরেই আমি বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সঙ্গে সভা করে বলেছিলাম, স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, কিন্তু অদৃশ্য শক্তি দিনে দিনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সেই কথা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে।’
২ ঘণ্টা আগেআগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয় লাভ করার লক্ষ্যে আর্থিক কুরবানিসহ সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য দলের সকল নেতাকর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বরং লড়াই সংগ্রাম করেই বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
৭ ঘণ্টা আগেনাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে এনসিপির কিছু নেতার শিবিরের পক্ষে কাজ করার বিষয়টি তাঁরা শুনেছেন। তবে তাঁরা কোনো প্রমাণ পাননি। প্রমাণ পেলে দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
১ দিন আগে