leadT1ad

কোর্ট মার্শালের এখতিয়ার ও আইনগত বাস্তবতা

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ সাজ্জাদ সিদ্দিক
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ সাজ্জাদ সিদ্দিক
স্ট্রিম গ্রাফিক

সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এঁদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত কিছু সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার-বিচার সম্পর্কে সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এছাড়া, বেশ কিছু টকশোতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখানে অনেকেই সেনাবাহিনীর আইন সম্পর্কে অনুমাননির্ভর বক্তব্য দিচ্ছেন।

আমি একজন আইনের ছাত্র। সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ ৩১ বছর আইন বিভাগে (যা ‘জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল’ বিভাগ নামে পরিচিত) চাকরি করেছি। সেই সুবাদে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে এই বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে যেসব কথা আলোচিত হচ্ছে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনে কী বলা আছে, এই লেখায় সেটি স্পষ্ট করার চেষ্টা করব।

সামরিক আইন ও সেনা আইন

প্রথমেই বলে রাখা দরকার, ‘সামরিক আইন’ (মার্শাল ল’) এবং সেনা আইন এক বিষয় নয়। ‘সামরিক আইন’ কোনো আইন নয়, এটি একটি শাসন ব্যবস্থা। সামরিক আইন বলতে সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ নাগরিক কার্যক্রমের ওপর সরাসরি সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ বোঝানো হয়। সাধারণত সামরিক বাহিনী যখন রাস্ট্র ক্ষমতা দখল করে, তখন এই সামরিক আইন জারি করা হয়। তবে অনেক দেশে বেসামরিক সরকার কর্তৃকও এই ব্যবস্থা জারির নজির আছে। এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সামরিক আইন বা মার্শাল ল’ আরোপের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিধান না থাকলেও প্রায় প্রতিটি প্রদেশেই সরকারকে মার্শাল ল’ আরোপের ক্ষমতা অনুমোদনের সাংবিধানিক বিধান রয়েছে। সামরিক আইন সাময়িক হলেও সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইনগুলো সম্পূর্ণ আলাদা। এগুলোকে সংবিধানের আলোকে প্রণীত স্থায়ী শৃঙ্খলামূলক আইন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বেসামরিক পাঠক্রমে প্রতিরক্ষা আইন

এবার আসা যাক প্রতিরক্ষা বাহিনীর আইন বিষয়ে। বাংলাদেশের পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা আইন কলেজগুলোতে কোনটিতেই প্রতিরক্ষা বাহিনী অর্থাৎ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর জন্য প্রযোজ্য শৃঙ্খলামূলক আইন নিয়ে কোনো পাঠ্যক্রম নেই। দেশের ফৌজদারি আদালতেও প্রতিরক্ষা বাহিনীসংক্রান্ত আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। সংগত কারণে সাধারণ নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য দেশের প্রচলিত ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারক বা আইনজীবীদের এই আইন সম্পর্কে জানার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তা ছাড়া, প্রয়োজন না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষকেরাও এই বিষয়ে সাধারণভাবে অবহিত নন।

‘সামরিক আইন’ (মার্শাল ল’) এবং সেনা আইন এক বিষয় নয়। ‘সামরিক আইন’ কোনো আইন নয়, এটি একটি শাসন ব্যবস্থা। সামরিক আইন বলতে সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ নাগরিক কার্যক্রমের ওপর সরাসরি সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ বোঝানো হয়।

এখানে বলা দরকার যে কেবল ওয়েবসাইটে লভ্য আইন পড়ে বাহিনীর আইন ও বিচারব্যবস্থার কাঠামো বোঝা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন বাহিনীগুলোর ‘কমান্ড স্ট্রাকচার’ ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, প্রতিরক্ষা আইন সম্পর্কে স্বীকৃত ও অনুমোদিত ব্যাখ্যা, বিভিন্ন রেগুলেশন্স এবং বাহিনীর প্রচলিত রীতিনীতি ও অভ্যন্তরীণ নীতিমালা সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা।

প্রতিরক্ষা বাহিনীর আইন সম্পর্কে সম্যক জানতে হলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীতে উল্লেখযোগ্য সময় চাকরির অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নেই। এই আইনের প্রয়োগিক বিষয়ের সঙ্গে কমিশন্ড অফিসারদের সম্পৃক্ততা থাকায় তাঁরা সেই আইনের ব্যবহারিক দিকগুলোর সঙ্গে অনেকাংশে পরিচিত। তবে আইনের স্বাভাবিক ভাষাগত জটিলতা এবং জুরিসপ্রডেন্স (লিগ্যাল ফিলোজফি অ্যান্ড থিওরি), থিওিরিজ অব পানিশমেন্ট, লিগ্যাল ম্যাক্সিমস অ্যান্ড প্রিন্সিপালস, স্ট্যাচুয়েটরি লজ, এলিমেন্টস অব ক্রাইম ইত্যাদি মৌলিক বিধান সম্পর্কে জানার সুযোগের সীমাবদ্ধতার কারণে বাহিনীগুলো আইন বিভাগের অফিসার ছাড়া অন্য অফিসারদের পক্ষে সেই আইনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে আলোচনা বা বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়াও সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, বাহিনীর আইন বিভাগ অর্থাৎ জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল বিভাগ/শাখায় কমিশন্ড অফিসার হিসাবে যোগদানের যোগ্যতা হলো আইন শাস্ত্রে স্নাতক ও মাস্টার্স। তাই বাহিনীগুলোর আইন বিভাগের অফিসারেরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আইন বিষয়ে পড়ে সেই যোগ্যতা নিয়েই বাহিনীতে যোগ দেন।

প্রতিরক্ষা আইন মূলত একটি স্বতন্ত্র ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী, অর্থাৎ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য শৃঙ্খলামূলক আইন। বস্তুত এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থা। অর্থাৎ এই আইনে, সংঘটিত অপরাধের তদন্ত, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার, অভিযোগনামা প্রণয়ন, বিচার, শাস্তি আরোপ ও কার্যকর ইত্যাদি সব আবশ্যকীয় বিধান বিদ্যমান।

সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর জন্য শৃঙ্খলামূলক আইন প্রত্যেকটি আলাদা। এগুলো হলো, দ্য আর্মি অ্যাক্ট ১৯৫২, দ্য নেভি অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ ও এয়ারফোর্স অ্যাক্ট ১৯৫৩—এই আইনগুলো প্রয়োগের জন্য প্রত্যেকটির অধীনে আলাদা বিধিমালা রয়েছে। এগুলো অনেক বিশদ।

সেনা, নৌ বা বিমান বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় বাহিনীর কোনো সদস্য অপরাধ করলে তার বিচার কোন আইনের অধীনে হবে? দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আদালত (অসামরিক আদালত), নাকি বাহিনীর আইনের অধীনে ‘কোর্ট মার্শাল’-এ?

এই আলোচনা সেই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। আলোচনা শুধু সেনাবাহিনীর আইনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই করা হবে। আইন ভিন্ন হলেও নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ক্ষেত্রেও বিধান একই।

বাংলাদেশের পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা আইন কলেজগুলোতে কোনটিতেই প্রতিরক্ষা বাহিনী অর্থাৎ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর জন্য প্রযোজ্য শৃঙ্খলামূলক আইন নিয়ে কোনো পাঠ্যক্রম নেই। দেশের ফৌজদারি আদালতেও প্রতিরক্ষা বাহিনীসংক্রান্ত আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। সংগত কারণে সাধারণ নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য দেশের প্রচলিত ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারক বা আইনজীবীদের এই আইন সম্পর্কে জানার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

কর্মরত সেনা সদস্য ও আইনের অধিভুক্ততা

মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে একটি বিষয় আগেই স্পষ্ট করে রাখা যাক, সেনা আইনে ‘কর্মরত সেনা সদস্য’ (সার্ভিং মিলিটারি পার্সন) বলে কিছু নেই। যা আছে তা হলো, ‘এই আইনের অধিভুক্ত কোনো ব্যক্তি’ (এনি পার্সন সাবজেক্ট টু দিস অ্যাক্ট)। তবে আলোচনার সুবিধার্থে এখানে ‘কর্মরত সেনা সদস্য’ পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে।

অপরাধ সংঘটিত হলে কোথায় বিচার হবে

অনেকেই প্রশ্ন করেন, কর্মরত কোনো সেনা সদস্য কর্তৃক কোনো অসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বা সেনানিবাসের বাইরে অপরাধ সংঘটিত হলে সেটা সেনা আইনের অধীনে বিচার করা যায় কি না। উল্লেখ্য, অসামরিক ফৌজদারি আদালতের মতো সেনা আদালত অর্থাৎ কোর্ট মার্শালের জন্য কোনো ভৌগোলিক পরিসীমা নির্ধারিত নেই। কর্মরত কোনো সেনা সদস্য কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ, তিনটি ছাড়া সব ক্ষেত্রে স্থান, কাল, পাত্রনির্বিশেষে সেনা আইনের অধীনে বিচারযোগ্য।

সামরিক অপরাধ ও বিচার

সংঘটিত অপরাধটি সেনা আইন, ১৯৫২-এর ২৪ থেকে ৫৮ পর্যন্ত ধারাগুলোর কোনো একটির অধীনে হয়ে থাকলে সেটি কেবল সেনা আইনের অধীনেই বিচারযোগ্য। ধারা ২৪ থেকে ৫৮ এই ৩৫টি ধারায় উল্লিখিত অপরাধগুলো সাধারণভাবে ‘সামরিক অপরাধ’ (মিলিটারি অফেন্স) হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে এখানে কিছু ব্যতিক্রম আছে। যেমন নিম্নলিখিত অপরাধগুলো সেনা আইনে বর্ণিত হলেও অপরাধের প্রকৃতির কারণে এগুলো দেশের প্রচলিত আইনের অধীনে অপরাধ হিসেবে অসামরিক ফৌজদারী আদালতেও বিচার করা যায়:

১. সেকশন ২৯ (ক)—কোনো গৃহ অথবা অন্য কোনো স্থানে লুণ্ঠনের উদ্দেশে যাওয়া;

২. সেকশন ৩২ (২) (ক)—উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপরে শারীরিকভাবে আক্রমণ অথবা তাঁদের ওপর অপরাধী শক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া;

৩. সেকশন ৪০—অসৎ অপব্যবহার, চৌর্যবৃত্তি, অপরাধমূলক আস্থা ভঙ্গ করা, চুরিকৃত সম্পত্তি নিজের অধিকারে রাখা;

৪. সেকশন ৫৩—অধীনস্তদের অঘাত বা দুর্ব্যাবহার করা।

কোনো সেনা সদস্য যদি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমান বাহিনীর অধিভুক্ত নন, এ রকম কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা বা অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড বা ধর্ষনের মতো অপরাধ করেন, তবে তা সেনা আইনের অধীনে বিচার করা যাবে না; এটি ফৌজদারি আদালতে বিচারযোগ্য।

কোর্ট মার্শালে অসামরিক অপরাধের বিচার

এখন দেখা যাক সেনা আইনের ৫৯(১) এর বিধান হলো, ‘উপধারা (২)-এর শর্ত অনুযায়ী, এই আইনের আওতাভুক্ত কেউ যদি বাংলাদেশে বা বাংলাদেশের বাইরে কোনো অসামরিক অপরাধ করেন, তাহলে সেটা এই আইনের অধীনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ওই অপরাধে অভিযোগ আনা হলে তাঁকে এই আইন অনুযায়ী বিচার ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে…’।

এই উপধারায় এর পরের অংশে অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেনা আইনের ধারা ৮-এ অনুযায়ী, “অসামরিক অপরাধ বা ‘সিভিল অফেন্স’ বলতে দেশের ফৌজদারি আদালতে বিচারযোগ্য অপরাধ বোঝায়।

এই ৫৯(১) ধারার বিধান অনুযায়ী, কর্মরত সেনা সদস্য কর্তৃক সংঘটিত দেশের প্রচলিত আইনে বর্ণিত সব ফৌজদারি অপরাধ সেনা আইনের অধীনে বিচার করা যায়। আগেই বলা হয়েছে, ‘তিনটি ছাড়া’ সব ক্ষেত্রে স্থান, কাল, পাত্রনির্বিশেষে সংঘটিত অপরাধ সেনা আইনের অধীনে বিচারযোগ্য। তাই এখন দেখা দরকার এই তিন ক্ষেত্র কী কী?

কোনো কোনো অসামরিক অপরাধ কোর্ট মার্শালে বিচারযোগ্য নয়।

সেনা আইনের ৫৯ (২) ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘(২) এই আইনের আওতায় কেউ যদি এমন কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে, বা হত্যার মতো গুরুতর না হলেও দণ্ডনীয়ভাবে ক্ষতি করে, বা ধর্ষণ করে—যে ব্যক্তি এই আইন, ১৯৫৩ সালের বিমান বাহিনী আইন বা ১৯৬১ সালের নৌবাহিনী অধ্যাদেশের অধীনে নয়—তাহলে তাকে এই আইনের অধীনে অপরাধী ধরা হবে না এবং এই আইনে তার বিচারও হবে না।

তবে, যদি সে এই কাজগুলোর যেকোনোটি করে—

(ক) দায়িত্বে থাকা অবস্থায়, বা

(খ) বাংলাদেশের বাইরে কোথাও, বা

(গ) সরকার যেসব সীমান্ত চৌকি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, সেসব জায়গায়—

তাহলে সেই অপরাধের বিচার এই আইনের অধীনে করা যাবে।’

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী, অর্থাৎ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য শৃঙ্খলামূলক আইন। বস্তুত এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থা। অর্থাৎ এই আইনে, সংঘটিত অপরাধের তদন্ত, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার, অভিযোগনামা প্রণয়ন, বিচার, শাস্তি আরোপ ও কার্যকর ইত্যাদি সব আবশ্যকীয় বিধান বিদ্যমান।

ওপরের ওই বিধান হলো সেই তিন ক্ষেত্র। এখানে মূলত দুটি ব্যতিক্রম আছে। প্রথমটি, কোন কোন অপরাধ সেনা আইনের অধীনে বিচার করা যাবে না। দ্বিতীয়, প্রথমোক্ত ব্যতিক্রমে উল্লিখিত অপরাধগুলো ক্ষেত্রবিশেষে সেনা আইনের অধীনে বিচারযোগ্য।

প্রথম বিধান হলো, কোনো সেনা সদস্য যদি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমান বাহিনীর অধিভুক্ত নন, এ রকম কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা বা অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড বা ধর্ষনের মতো অপরাধ করেন, তবে তা সেনা আইনের অধীনে বিচার করা যাবে না; এটি ফৌজদারি আদালতে বিচারযোগ্য। এই বিধানের ব্যতিক্রমও রয়েছে, যদি সেই অপরাধ যুদ্ধাবস্থায় বা বাংলাদেশের বাইরে বা সরকার কর্তৃক ঘোষিত ফ্রন্টিয়ার পোস্টে সংঘটিত হয়, তবে তা সেনা আইনের অধীনে বিচার করা যাবে। অ্যাক্টিভ সার্ভিস’ বা যুদ্ধাবস্থার সংজ্ঞা ধারা ৮-এ বিস্তারিত রয়েছে।

কোর্ট মার্শালে প্রদত্ত শাস্তি কার্যকর

কোর্ট মার্শালে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হলে, তা কোথায় কার্যকর করা হবে?

কোর্ট মার্শালে প্রদত্ত মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা ফায়ারিং স্কোয়াডে কার্যকর করা যায়। ফাঁসির মাধ্যমে কার্যকরের ক্ষেত্রে অসামরিক কারাগারে এবং ফায়ারিং স্কোয়াডে কার্যকরের ক্ষেত্রে সেনা তত্বাবধানে কার্যকর করা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত সহ সশ্রম কারাদণ্ড কার্যকর করা হয় অসামরিক কারাগারে। আর বরখাস্ত ব্যতীত অন্য সব শাস্তি চাকরিতে বহাল রেখেই কার্যকর করা হয়।

লেখক: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রাক্তন জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল

Ad 300x250

সম্পর্কিত