মারুফ মল্লিক
দীর্ঘদিন পর গণমাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাঁর এই সাক্ষাৎকার নিয়ে কথা বলার শুরুতেই যেটি বলতে হবে তা হলো, সাক্ষাৎকারটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিশেষ তাৎপর্য তৈরি করেছে। এই সাক্ষাৎকারকে যদি আমরা সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করি, তাহলে একে দুই দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়—প্রথমত, তারেক রহমানের ভাষা, শব্দচয়ন ও উপস্থাপন ভঙ্গি; দ্বিতীয়ত, সাক্ষাৎকারের বিষয়বস্তু এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর নীতিগত অবস্থান। আর বেশ কিছু কারণে তারেক রহমানের এ সাক্ষাৎকার আমাদের আশাবাদী করে। এ লেখায় বিভিন্ন প্রসঙ্গ ও তারেক রহমানের বক্তব্য তুলে ধরে এবং তা বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে সাক্ষাৎকারটি কেন আমাদের আশাবাদী করে, সেটি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
দুই পর্বের সাক্ষাৎকারে সার্বিকভাবে তারেক রহমানের বক্তব্য ছিল খুব সাবলিল, মার্জিত আর পরিণত। এতে ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট রূপকল্প বা ভিশন ছিল। তিনি শুধু বর্তমান নিয়ে নয়, বরং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও তাঁর দলকে কোন অবস্থানে দেখতে চান, সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে একটি সহজাত প্রবণতা হলো, গণমাধ্যম বা জনসভায় কথা বলার সময় তাঁরা আক্রমণাত্মক ভঙ্গি গ্রহণ করেন। প্রতিপক্ষকে কঠোর ভাষায় ঘায়েল করার একটি চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু তারেক রহমানের বক্তব্যে সেই প্রচলিত ধারার অনুপস্থিতি ছিল। তিনি খুব সহজ ও সাবলীল ভাষায় কথা বলেছেন, যা জনগণের সঙ্গে দ্রুত সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম।
সাক্ষাৎকারজুড়ে তিনি নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো কটূ শব্দ ব্যবহার করেননি। যদিও তিনি উল্লেখ করেছেন যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হয়েছে এবং তাঁর পরিবারের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে প্রতিহিংসার ছাপ ছিল না। বরং তিনি বলেছেন, সবকিছুর ন্যায়ভিত্তিক বিচার হবে, যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারেক রহমান নিজের পরিবারের ওপর হওয়া নির্যাতনকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা দেশের মানুষের কষ্টের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন। গত ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনে দেশের সাধারণ মানুষ যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সেই গল্পের সঙ্গে তিনি তাঁর পরিবারের গল্পকে এক করে দেখেছেন। এর মাধ্যমে আসলে তিনি জনগণের আরও কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন।
তাঁর বক্তব্যে বারবার জনগণের সার্বভৌমত্বের কথা উঠে এসেছে। ‘জনগণ যদি চায়’ বা ‘দেশের মানুষ যদি চায়’—এ কথাগুলোর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে তিনি জনগণের নেতৃত্বকে স্বীকার করেছেন, পাশাপাশি জনগণকে সম্মানও জানিয়েছেন।
তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে বিশেষভাবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভূমিকা নিয়ে তাঁর অবস্থান। দীর্ঘ সময় গণমাধ্যমে তাঁকে প্রচার করা হয়নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞার অজুহাতে তাঁর বক্তব্যগুলো সচেতনভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনকি কয়েকটি গণমাধ্যমে বিএনপি, খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমান— এই রাজনৈতিক পরিবারকে নিয়ে যত নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, ততটা আর কোনো রাজনৈতিক পরিবারকে নিয়ে হয়েছে কি না সন্দেহ।
তবু তারেক রহমানের কণ্ঠে গণমাধ্যমের প্রতি কোনো বিরাগ বা প্রতিশোধের মনোভাব দেখা যায়নি। বরং তিনি বলেছেন, বিএনপি যদি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসে, গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করবে। সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কার্টুন, কৌতুক বা মিম নিয়ে তাঁর অবস্থান কী? তিনি হাসিমুখে বলেছেন, ‘আমি এগুলো দেখি এবং গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই।’
তিনি আরও বলেছেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি বসতে চান, কথা বলতে চান এবং যেসব কালো আইন আছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করতে চান। তাঁর এই বক্তব্য শুধু রাজনীতিক প্রতিশ্রুতি নয়, বরং এক নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রগঠনের অংশীদার হিসেবে দেখা হয়েছে।
তারেক রহমানের বক্তব্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক) রাজনীতির রূপরেখা স্পষ্টভাবেই দেখা গেছে। তিনি বারবার বলেছেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ হবে যেখানে জাতিগত, ধর্মীয় বা অর্থনৈতিক বিভেদ থাকবে না।
বিএনপি যেভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করেছিল, তিনি যে তার ধারাবাহিকতাকেই সামনে টেনে নিতে চান, তাঁর সাক্ষাৎকারে তা স্পষ্ট। তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রে আছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। বলা দরকার, এটি এমন এক চেতনা যা ভৌগোলিক সীমানার ভেতরে থাকা সবাইকে একই জাতীয় পরিচয়ে এক করে।
সাক্ষাৎকারে সবচেয়ে আলোচিত অংশগুলোর একটি ছিল ভারত বিষয়ে তাঁর অবস্থান। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মহল থেকে বলা হচ্ছিল, বিএনপি ভারতপন্থী হয়ে যাচ্ছে। এ প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি করবে।’
অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে পরস্পরের স্বার্থের ভিত্তিতে। তবে বাংলাদেশের স্বার্থই পাবে অগ্রাধিকার। সাক্ষাৎকারে ফেলানী হত্যার কথা উল্লেখ করে সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, ‘এটা আমরা মেনে নেব না।’
তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, গত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে’ পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ভবিষ্যতে সেটা হবে সমমর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক, যেখানে বাংলাদেশের সার্বভৌম স্বার্থই হবে মূল মানদণ্ড।
তারেক রহমান সাক্ষাৎকারে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে বলেন, এগুলোর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার হবে। শুধু ব্যক্তি নয়, দল হিসেবেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালু হবে—তাঁর এই বক্তব্যটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব ও নায়কত্ব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বিতর্ক থাকলেও তারেক রহমান এ বিষয়ে অসাধারণ উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এ অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়েছেন জনগণের। বলেছেন, ‘এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হলো বাংলাদেশের জনগণ।’ প্রকৃতপক্ষে এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি এটিও স্পষ্ট করেছেন যে জনগণই রাজনীতির চূড়ান্ত শক্তি, জনগণই রাষ্ট্রের মালিক। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনে যে রাষ্ট্র জনগণের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তারেক রহমানের বক্তব্যে স্পষ্ট।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের দলের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় শুধু দলীয় জনপ্রিয়তা নয়, সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতাও গুরুত্ব পাবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলের সমর্থনের বাইরেও একজন প্রার্থী সাধারণ মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য, তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।’ বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার প্রকাশ। রাজনীতিতে একক সিদ্ধান্ত নয়, জনগণকেই তিনি ক্ষমতার উৎস করেছেন, পুরো জাতির জন্য এটি একটি আশার বার্তা।
সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক ছিল তারেক রহমানের দেশে ফেরার ইচ্ছা সম্পর্কিত ঘোষণা। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য খুবই স্পষ্ট, ‘আমি দ্রুতই দেশে ফিরব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’ তাঁর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যেমন নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি জনগণও বার্তা পেয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ, বিএনপির শীর্ষ নেতা হিসেবে তাঁর প্রত্যাবর্তনই এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত প্রত্যাশা।
তারেক রহমানের দুই পর্বের সাক্ষাৎকারকে শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নীতিগত নকশা বলা যায়। এখানে আছে স্বপ্ন, তবে সেই স্বপ্ন বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে গড়া। তিনি বলেছেন, রাতারাতি পরিবর্তন হবে না, কিন্তু পরিবর্তনের সদিচ্ছা যে তাঁর আছে, তা বেশ পরিস্কার। ফলে নানাবিধ কারণে সাক্ষাৎকারটি আমাদের আশাবাদীই করে।
সর্বোপরি, সাক্ষাৎকারে কখনোই তিনি ‘আমি’ নয়, বারবার ‘আমরা’ বলেছেন। আমার মতে, এই ‘আমরা’র রাজনীতিই হয়তো ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নতুন দিকনির্দেশনা হতে পারে।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
দীর্ঘদিন পর গণমাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাঁর এই সাক্ষাৎকার নিয়ে কথা বলার শুরুতেই যেটি বলতে হবে তা হলো, সাক্ষাৎকারটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিশেষ তাৎপর্য তৈরি করেছে। এই সাক্ষাৎকারকে যদি আমরা সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করি, তাহলে একে দুই দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়—প্রথমত, তারেক রহমানের ভাষা, শব্দচয়ন ও উপস্থাপন ভঙ্গি; দ্বিতীয়ত, সাক্ষাৎকারের বিষয়বস্তু এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর নীতিগত অবস্থান। আর বেশ কিছু কারণে তারেক রহমানের এ সাক্ষাৎকার আমাদের আশাবাদী করে। এ লেখায় বিভিন্ন প্রসঙ্গ ও তারেক রহমানের বক্তব্য তুলে ধরে এবং তা বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে সাক্ষাৎকারটি কেন আমাদের আশাবাদী করে, সেটি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
দুই পর্বের সাক্ষাৎকারে সার্বিকভাবে তারেক রহমানের বক্তব্য ছিল খুব সাবলিল, মার্জিত আর পরিণত। এতে ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট রূপকল্প বা ভিশন ছিল। তিনি শুধু বর্তমান নিয়ে নয়, বরং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও তাঁর দলকে কোন অবস্থানে দেখতে চান, সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে একটি সহজাত প্রবণতা হলো, গণমাধ্যম বা জনসভায় কথা বলার সময় তাঁরা আক্রমণাত্মক ভঙ্গি গ্রহণ করেন। প্রতিপক্ষকে কঠোর ভাষায় ঘায়েল করার একটি চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু তারেক রহমানের বক্তব্যে সেই প্রচলিত ধারার অনুপস্থিতি ছিল। তিনি খুব সহজ ও সাবলীল ভাষায় কথা বলেছেন, যা জনগণের সঙ্গে দ্রুত সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম।
সাক্ষাৎকারজুড়ে তিনি নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো কটূ শব্দ ব্যবহার করেননি। যদিও তিনি উল্লেখ করেছেন যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হয়েছে এবং তাঁর পরিবারের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে প্রতিহিংসার ছাপ ছিল না। বরং তিনি বলেছেন, সবকিছুর ন্যায়ভিত্তিক বিচার হবে, যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারেক রহমান নিজের পরিবারের ওপর হওয়া নির্যাতনকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা দেশের মানুষের কষ্টের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন। গত ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনে দেশের সাধারণ মানুষ যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সেই গল্পের সঙ্গে তিনি তাঁর পরিবারের গল্পকে এক করে দেখেছেন। এর মাধ্যমে আসলে তিনি জনগণের আরও কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন।
তাঁর বক্তব্যে বারবার জনগণের সার্বভৌমত্বের কথা উঠে এসেছে। ‘জনগণ যদি চায়’ বা ‘দেশের মানুষ যদি চায়’—এ কথাগুলোর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে তিনি জনগণের নেতৃত্বকে স্বীকার করেছেন, পাশাপাশি জনগণকে সম্মানও জানিয়েছেন।
তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে বিশেষভাবে উঠে এসেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভূমিকা নিয়ে তাঁর অবস্থান। দীর্ঘ সময় গণমাধ্যমে তাঁকে প্রচার করা হয়নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞার অজুহাতে তাঁর বক্তব্যগুলো সচেতনভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনকি কয়েকটি গণমাধ্যমে বিএনপি, খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমান— এই রাজনৈতিক পরিবারকে নিয়ে যত নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, ততটা আর কোনো রাজনৈতিক পরিবারকে নিয়ে হয়েছে কি না সন্দেহ।
তবু তারেক রহমানের কণ্ঠে গণমাধ্যমের প্রতি কোনো বিরাগ বা প্রতিশোধের মনোভাব দেখা যায়নি। বরং তিনি বলেছেন, বিএনপি যদি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসে, গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করবে। সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কার্টুন, কৌতুক বা মিম নিয়ে তাঁর অবস্থান কী? তিনি হাসিমুখে বলেছেন, ‘আমি এগুলো দেখি এবং গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই।’
তিনি আরও বলেছেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি বসতে চান, কথা বলতে চান এবং যেসব কালো আইন আছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করতে চান। তাঁর এই বক্তব্য শুধু রাজনীতিক প্রতিশ্রুতি নয়, বরং এক নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রগঠনের অংশীদার হিসেবে দেখা হয়েছে।
তারেক রহমানের বক্তব্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক) রাজনীতির রূপরেখা স্পষ্টভাবেই দেখা গেছে। তিনি বারবার বলেছেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ হবে যেখানে জাতিগত, ধর্মীয় বা অর্থনৈতিক বিভেদ থাকবে না।
বিএনপি যেভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করেছিল, তিনি যে তার ধারাবাহিকতাকেই সামনে টেনে নিতে চান, তাঁর সাক্ষাৎকারে তা স্পষ্ট। তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রে আছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। বলা দরকার, এটি এমন এক চেতনা যা ভৌগোলিক সীমানার ভেতরে থাকা সবাইকে একই জাতীয় পরিচয়ে এক করে।
সাক্ষাৎকারে সবচেয়ে আলোচিত অংশগুলোর একটি ছিল ভারত বিষয়ে তাঁর অবস্থান। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মহল থেকে বলা হচ্ছিল, বিএনপি ভারতপন্থী হয়ে যাচ্ছে। এ প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি করবে।’
অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে পরস্পরের স্বার্থের ভিত্তিতে। তবে বাংলাদেশের স্বার্থই পাবে অগ্রাধিকার। সাক্ষাৎকারে ফেলানী হত্যার কথা উল্লেখ করে সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, ‘এটা আমরা মেনে নেব না।’
তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, গত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে’ পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ভবিষ্যতে সেটা হবে সমমর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক, যেখানে বাংলাদেশের সার্বভৌম স্বার্থই হবে মূল মানদণ্ড।
তারেক রহমান সাক্ষাৎকারে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে বলেন, এগুলোর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার হবে। শুধু ব্যক্তি নয়, দল হিসেবেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালু হবে—তাঁর এই বক্তব্যটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব ও নায়কত্ব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বিতর্ক থাকলেও তারেক রহমান এ বিষয়ে অসাধারণ উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এ অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়েছেন জনগণের। বলেছেন, ‘এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হলো বাংলাদেশের জনগণ।’ প্রকৃতপক্ষে এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি এটিও স্পষ্ট করেছেন যে জনগণই রাজনীতির চূড়ান্ত শক্তি, জনগণই রাষ্ট্রের মালিক। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনে যে রাষ্ট্র জনগণের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তারেক রহমানের বক্তব্যে স্পষ্ট।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের দলের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় শুধু দলীয় জনপ্রিয়তা নয়, সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতাও গুরুত্ব পাবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলের সমর্থনের বাইরেও একজন প্রার্থী সাধারণ মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য, তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।’ বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার প্রকাশ। রাজনীতিতে একক সিদ্ধান্ত নয়, জনগণকেই তিনি ক্ষমতার উৎস করেছেন, পুরো জাতির জন্য এটি একটি আশার বার্তা।
সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক ছিল তারেক রহমানের দেশে ফেরার ইচ্ছা সম্পর্কিত ঘোষণা। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য খুবই স্পষ্ট, ‘আমি দ্রুতই দেশে ফিরব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’ তাঁর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যেমন নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি জনগণও বার্তা পেয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ, বিএনপির শীর্ষ নেতা হিসেবে তাঁর প্রত্যাবর্তনই এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত প্রত্যাশা।
তারেক রহমানের দুই পর্বের সাক্ষাৎকারকে শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নীতিগত নকশা বলা যায়। এখানে আছে স্বপ্ন, তবে সেই স্বপ্ন বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে গড়া। তিনি বলেছেন, রাতারাতি পরিবর্তন হবে না, কিন্তু পরিবর্তনের সদিচ্ছা যে তাঁর আছে, তা বেশ পরিস্কার। ফলে নানাবিধ কারণে সাক্ষাৎকারটি আমাদের আশাবাদীই করে।
সর্বোপরি, সাক্ষাৎকারে কখনোই তিনি ‘আমি’ নয়, বারবার ‘আমরা’ বলেছেন। আমার মতে, এই ‘আমরা’র রাজনীতিই হয়তো ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নতুন দিকনির্দেশনা হতে পারে।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহিদুল আলম। এ সংবাদে তাঁর সহকর্মীরাই শুধু নন, উদ্বিগ্ন সমগ্র বাংলাদেশ। শহিদুলের কাজ ও ব্যক্তিত্বের ধরন প্রসঙ্গে লিখেছেন তাঁর সহকর্মী তানভীর মুরাদ তপু।
৫ ঘণ্টা আগেআমি সবসময়ই একজন আশাবাদী মানুষ। তাই ভেবেছিলাম, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলা ও গাজার অবরোধ ভাঙার ঘটনাটি হয়তো ইসরায়েলকে ফিলিস্তিন নীতির পুনর্বিবেচনায় বাধ্য করবে।
১০ ঘণ্টা আগে২০২৬ সালের এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে ধরা হচ্ছে। কারণ গত বছরের এক ব্যাপক আন্দোলনের পর গঠিত এক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই আন্দোলনে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন শেষ হয় এবং তাঁকে দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে চলে যেতে হয়।
১ দিন আগেগত রোববার রাতে আফগানিস্তানকে দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ। এদিকে মেয়েদের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ মাত্রই পাকিস্তানকে হারিয়ে দারুণ শুরু করেছে।
১ দিন আগে