স্ট্রিম ডেস্ক

হামলার মাত্র কয়েক দিন আগেও বহু দেশি-বিদেশি নম্বর থেকে মৃত্যুর হুমকি পাওয়ার কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ঘটনাটি শুধুই একজন প্রার্থীকে টার্গেট করার চেষ্টা নয়, বরং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।
হাদির বিরুদ্ধে হুমকি, তাঁর আগের রাজনৈতিক অবস্থান, বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ এবং সমর্থকদের ক্ষোভ—সব মিলিয়ে হামলার সম্ভাব্য কারণগুলো এখন আলোচনায়। তদন্ত চলছে, পাশাপাশি রাজনৈতিক উত্তাপও বাড়ছে। ঠিক কী কারণে এই হামলা, তা বুঝতে তার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ভূমিকা ও হুমকির ইতিহাস থেকে ধারণা করা যেতে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সমালোচনা
হাদি ক্ষমচাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তিনি দুর্নীতি, স্বৈরশাসন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে নিয়মিত বক্তব্য রেখেছেন। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে তিনি গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সংস্কার ও বিচার দাবি নিয়ে সরব ছিলেন। ঢাকা-৮ একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন, যেখানে তার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নানা পক্ষকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। তফসিল ঘোষণার মাত্র এক দিন পর এ হামলা হওয়ায় রাজনৈতিক আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ
হাদি ও তাঁর সমর্থকরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছেন, ভারতে অবস্থানকারী কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন। হাদি ভারতীয় প্রভাব ও দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেন, যা তাঁকে সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে বলে তার সমর্থকেরা দাবি করেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের নির্বােন ঘিরে বিদেশি অপপ্রচার বিশেষ করে ভারতের গণমাধ্যমে তথ্যবিকৃতির প্রসঙ্গ আলোচনায় রয়েছে।
ব্যক্তিগত শত্রুতা বা স্থানীয় বিরোধ
২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানে ‘ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত হওয়ায় হাদির শত্রু তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, দাপুটে রাজনৈতিক তৎপরতা বা দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণেও শত্রু তৈরি হতে পারে। কিন্তু হামলার ধরন—মোটরসাইকেলযোগে এসে লক্ষ্য করে গুলি করা ইঙ্গিত দেয় এটি একটি সুসংগঠিত হামলা, সাধারণ অপরাধ নয়। তবে উল্লেখিত কারণগুলো এখনো নিশ্চিত নয়; তদন্ত চলমান।
হাদির নিজের বক্তব্য: হামলার আশঙ্কা ও পূর্বের হুমকি
হাদি বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তাঁকে হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত ১৪ নভেম্বর ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, প্রায় ৩০টি দেশি-বিদেশি নম্বর থেকে তিনি মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এসব হুমকিদাতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা থাকতে পারে।
তিনি জানান, তাঁকে হত্যা করা, বাড়িতে আগুন দেওয়া, এবং মা–বোন–স্ত্রীসহ পরিবারকে ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবুও তিনি ঘোষণা করেন, ভয় না পেয়ে তিনি ঢাকা-৮ আসনে লড়বেন এবং দুর্নীতিবিরোধী লড়াই চালিয়ে যাবেন।
ভারতীয় ফোন নম্বর থেকে পাওয়া হুমকি
হাদি বলেন, যেসব ফোন নম্বর থেকে হুমকি এসেছে, তার অনেকগুলোই বিদেশি এবং কিছু ভারতের বলে শনাক্ত করা গেছে। তিনি দাবি করেন, ভারতে থাকা কিছু আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী এসব হুমকির পেছনে থাকতে পারে। যদিও এসব ফোন নম্বরের উৎস স্বতন্ত্রভাবে যাচাই হয়নি। তবে তাঁর অভিযোগ বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক। কারণ বাংলাদেশকে ঘিরে বিদেশি অপপ্রচার ও তথ্য-হস্তক্ষেপের অভিযোগ এখন আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচিত।
হাদির সমর্থকরা কী বলছেন
হাদির সমর্থকরা, বিশেষত ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা হামলার জন্য প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী লীগ–সম্পৃক্ত ‘হিটম্যানদের’ দায়ী করছেন। তাদের দাবি, নির্বাচন–পূর্ব সময়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে।
তারা হাদিকে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের ‘ফ্রন্টলাইন ফাইটার’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং মনে করেন, দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড ও ভারতীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের প্রতিশোধ হিসেবেই হামলা করা হয়েছে।
সমর্থকদের দাবি, বিদেশি সম্পৃক্ততা থাকলে তা তদন্তের মাধ্যমে পরিষ্কার হওয়া উচিত। কেউ কেউ অতীতের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার সঙ্গে এর তুলনা টেনে ঐক্যের আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক দলগুলো কী বলছে
হামলার পর রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা ঘটনাটিকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এবং নির্বাচন ব্যাহত করার সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
বিএনপি ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং একে সামগ্রিক অস্থিতিশীলতার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এটি ‘একটি নীলনকশা, যার উদ্দেশ্য সুষ্ঠু নির্বাচন বানচাল করা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করা।’
বিএনপি শনিবার (১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) দেশব্যাপী প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। তাদের দাবি, হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। দলটি মনে করে, নির্বাচনের আগে সহিংসতা বাড়ার মাধ্যমে তাদের শক্তিশালী অবস্থান দুর্বল করার চেষ্টা হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামী
জামায়াত-ই-ইসলামীও হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ঘটনার পূর্ণ তদন্ত দাবি করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত পরিবেশে কর্মী ও নেতাদের ওপর লক্ষ্যভেদী সহিংসতা উদ্বেগজনক। দলটি মনে করে, সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন সংঘর্ষ—বিশেষত বিএনপির সঙ্গে তাদের সমর্থকদের সংঘর্ষ—রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এবি পার্টি
হাদির ওপর গুলির ঘটনায় আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। দলটি বলেছে, তফসিল ঘোষণার পরপরই একজন সম্ভাব্য প্রার্থীর ওপর হামলা দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত নাজুক বলে প্রমাণ করে।
তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টাও পার হয়নি, এর মধ্যেই জুলাই গণআন্দোলনের অন্যতম নেতা ও ঢাকা–৮ আসনের এমপি প্রার্থী হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন—যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।
এবি পার্টি বলছে, রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন করতে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া কোনো সভ্য দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। হাদীর ওপর হামলা গণতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত। তাদের দাবি, সন্ত্রাসীরা শক্তিশালী মহলের ছায়ায় থাকায় এ ধরনের হামলার সাহস পাচ্ছে।
দলটির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন—তফসিল শুরুর আগেই যদি এমন ঘটে, তবে নির্বাচন কমিশন আদৌ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এনসিপি
ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। এনসিপি একে শুধু একজন ব্যক্তির ওপর হামলা নয়, বরং গণঅভ্যুত্থানের পর পুনরুদ্ধার হওয়া গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ওপর আঘাত হিসেবে দেখেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলার আগেই হাদি প্রকাশ্যে হুমকির কথা জানিয়েছিলেন, কিন্তু সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এনসিপি দাবি করেছে, এর আগেও তাদের কার্যালয়ের সামনে ককটেল হামলা ও প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার পরও সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি—যা দায়িত্বহীনতা ও অদক্ষতার প্রমাণ।
এনসিপি অভিযোগ করেছে, নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত আওয়ামী লীগ জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়ে এসেছে এবং তাদের অবশিষ্ট সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। দলটি সতর্ক করে বলেছে, এই নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর অভিযান না হলে গণতান্ত্রিক উত্তরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
দলটি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে—হামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, অপরাধীদের গ্রেপ্তার, হুমকির উৎস শনাক্তকরণ, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং সব প্রার্থী ও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা কী বলছেন
বাংলাদেশি সব গণমাধ্যম এ ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। সাংবাদিকেরা সাধারণত তিনটি মূল বিষয়ে বিশ্লেষণ করছেন—রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, বিদেশি সম্পৃক্ততার অভিযোগ এবং নির্বাচনী পরিবেশের ওপর প্রভাব।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ঘটনাটিকে গুরুতর হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা উল্লেখ করেছে যে তফসিল ঘোষণার পরপরই এ হামলা হওয়ায় রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তাপের মুখে পড়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে হাদীকে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির কর্মী’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে তাকে চুপ করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
কিছু প্রতিবেদনে হাদীর পূর্বেকার বক্তব্য, বিশেষত ভারতীয় নম্বর থেকে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। সাংবাদিকেরা সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উল্লেখিত বিদেশি অপপ্রচার ও তথ্য-হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেছেন, এ হামলা সেই বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে।
বেশ কয়েকজন সাংবাদিক সতর্ক করে বলেছেন, এমন সহিংসতার ঘটনা বাড়তে থাকলে নির্বাচনী পরিবেশ আরও বিঘ্নিত হতে পারে। অনেক প্রতিবেদক বলেছেন, প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সরকারের জন্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের নির্দেশকে তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক এবং সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া, সবই বাংলাদেশের গভীর রাজনৈতিক বিভাজন, অবিশ্বাস এবং নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনার প্রতিফলন। তদন্তের অগ্রগতি আরও তথ্য উন্মোচন করতে পারে এবং এ ঘটনার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।

হামলার মাত্র কয়েক দিন আগেও বহু দেশি-বিদেশি নম্বর থেকে মৃত্যুর হুমকি পাওয়ার কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ঘটনাটি শুধুই একজন প্রার্থীকে টার্গেট করার চেষ্টা নয়, বরং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।
হাদির বিরুদ্ধে হুমকি, তাঁর আগের রাজনৈতিক অবস্থান, বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ এবং সমর্থকদের ক্ষোভ—সব মিলিয়ে হামলার সম্ভাব্য কারণগুলো এখন আলোচনায়। তদন্ত চলছে, পাশাপাশি রাজনৈতিক উত্তাপও বাড়ছে। ঠিক কী কারণে এই হামলা, তা বুঝতে তার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ভূমিকা ও হুমকির ইতিহাস থেকে ধারণা করা যেতে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সমালোচনা
হাদি ক্ষমচাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তিনি দুর্নীতি, স্বৈরশাসন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে নিয়মিত বক্তব্য রেখেছেন। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে তিনি গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সংস্কার ও বিচার দাবি নিয়ে সরব ছিলেন। ঢাকা-৮ একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন, যেখানে তার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নানা পক্ষকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। তফসিল ঘোষণার মাত্র এক দিন পর এ হামলা হওয়ায় রাজনৈতিক আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ
হাদি ও তাঁর সমর্থকরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছেন, ভারতে অবস্থানকারী কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন। হাদি ভারতীয় প্রভাব ও দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেন, যা তাঁকে সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে বলে তার সমর্থকেরা দাবি করেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের নির্বােন ঘিরে বিদেশি অপপ্রচার বিশেষ করে ভারতের গণমাধ্যমে তথ্যবিকৃতির প্রসঙ্গ আলোচনায় রয়েছে।
ব্যক্তিগত শত্রুতা বা স্থানীয় বিরোধ
২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানে ‘ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত হওয়ায় হাদির শত্রু তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, দাপুটে রাজনৈতিক তৎপরতা বা দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণেও শত্রু তৈরি হতে পারে। কিন্তু হামলার ধরন—মোটরসাইকেলযোগে এসে লক্ষ্য করে গুলি করা ইঙ্গিত দেয় এটি একটি সুসংগঠিত হামলা, সাধারণ অপরাধ নয়। তবে উল্লেখিত কারণগুলো এখনো নিশ্চিত নয়; তদন্ত চলমান।
হাদির নিজের বক্তব্য: হামলার আশঙ্কা ও পূর্বের হুমকি
হাদি বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তাঁকে হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত ১৪ নভেম্বর ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, প্রায় ৩০টি দেশি-বিদেশি নম্বর থেকে তিনি মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এসব হুমকিদাতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা থাকতে পারে।
তিনি জানান, তাঁকে হত্যা করা, বাড়িতে আগুন দেওয়া, এবং মা–বোন–স্ত্রীসহ পরিবারকে ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবুও তিনি ঘোষণা করেন, ভয় না পেয়ে তিনি ঢাকা-৮ আসনে লড়বেন এবং দুর্নীতিবিরোধী লড়াই চালিয়ে যাবেন।
ভারতীয় ফোন নম্বর থেকে পাওয়া হুমকি
হাদি বলেন, যেসব ফোন নম্বর থেকে হুমকি এসেছে, তার অনেকগুলোই বিদেশি এবং কিছু ভারতের বলে শনাক্ত করা গেছে। তিনি দাবি করেন, ভারতে থাকা কিছু আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী এসব হুমকির পেছনে থাকতে পারে। যদিও এসব ফোন নম্বরের উৎস স্বতন্ত্রভাবে যাচাই হয়নি। তবে তাঁর অভিযোগ বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক। কারণ বাংলাদেশকে ঘিরে বিদেশি অপপ্রচার ও তথ্য-হস্তক্ষেপের অভিযোগ এখন আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচিত।
হাদির সমর্থকরা কী বলছেন
হাদির সমর্থকরা, বিশেষত ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা হামলার জন্য প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী লীগ–সম্পৃক্ত ‘হিটম্যানদের’ দায়ী করছেন। তাদের দাবি, নির্বাচন–পূর্ব সময়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে।
তারা হাদিকে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের ‘ফ্রন্টলাইন ফাইটার’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং মনে করেন, দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড ও ভারতীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের প্রতিশোধ হিসেবেই হামলা করা হয়েছে।
সমর্থকদের দাবি, বিদেশি সম্পৃক্ততা থাকলে তা তদন্তের মাধ্যমে পরিষ্কার হওয়া উচিত। কেউ কেউ অতীতের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার সঙ্গে এর তুলনা টেনে ঐক্যের আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক দলগুলো কী বলছে
হামলার পর রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা ঘটনাটিকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এবং নির্বাচন ব্যাহত করার সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
বিএনপি ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং একে সামগ্রিক অস্থিতিশীলতার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এটি ‘একটি নীলনকশা, যার উদ্দেশ্য সুষ্ঠু নির্বাচন বানচাল করা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করা।’
বিএনপি শনিবার (১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) দেশব্যাপী প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। তাদের দাবি, হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। দলটি মনে করে, নির্বাচনের আগে সহিংসতা বাড়ার মাধ্যমে তাদের শক্তিশালী অবস্থান দুর্বল করার চেষ্টা হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামী
জামায়াত-ই-ইসলামীও হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ঘটনার পূর্ণ তদন্ত দাবি করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত পরিবেশে কর্মী ও নেতাদের ওপর লক্ষ্যভেদী সহিংসতা উদ্বেগজনক। দলটি মনে করে, সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন সংঘর্ষ—বিশেষত বিএনপির সঙ্গে তাদের সমর্থকদের সংঘর্ষ—রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এবি পার্টি
হাদির ওপর গুলির ঘটনায় আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। দলটি বলেছে, তফসিল ঘোষণার পরপরই একজন সম্ভাব্য প্রার্থীর ওপর হামলা দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত নাজুক বলে প্রমাণ করে।
তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টাও পার হয়নি, এর মধ্যেই জুলাই গণআন্দোলনের অন্যতম নেতা ও ঢাকা–৮ আসনের এমপি প্রার্থী হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন—যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।
এবি পার্টি বলছে, রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন করতে সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া কোনো সভ্য দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। হাদীর ওপর হামলা গণতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত। তাদের দাবি, সন্ত্রাসীরা শক্তিশালী মহলের ছায়ায় থাকায় এ ধরনের হামলার সাহস পাচ্ছে।
দলটির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন—তফসিল শুরুর আগেই যদি এমন ঘটে, তবে নির্বাচন কমিশন আদৌ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এনসিপি
ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। এনসিপি একে শুধু একজন ব্যক্তির ওপর হামলা নয়, বরং গণঅভ্যুত্থানের পর পুনরুদ্ধার হওয়া গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ওপর আঘাত হিসেবে দেখেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলার আগেই হাদি প্রকাশ্যে হুমকির কথা জানিয়েছিলেন, কিন্তু সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এনসিপি দাবি করেছে, এর আগেও তাদের কার্যালয়ের সামনে ককটেল হামলা ও প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার পরও সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি—যা দায়িত্বহীনতা ও অদক্ষতার প্রমাণ।
এনসিপি অভিযোগ করেছে, নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত আওয়ামী লীগ জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়ে এসেছে এবং তাদের অবশিষ্ট সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। দলটি সতর্ক করে বলেছে, এই নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর অভিযান না হলে গণতান্ত্রিক উত্তরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
দলটি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে—হামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, অপরাধীদের গ্রেপ্তার, হুমকির উৎস শনাক্তকরণ, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং সব প্রার্থী ও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা কী বলছেন
বাংলাদেশি সব গণমাধ্যম এ ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। সাংবাদিকেরা সাধারণত তিনটি মূল বিষয়ে বিশ্লেষণ করছেন—রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, বিদেশি সম্পৃক্ততার অভিযোগ এবং নির্বাচনী পরিবেশের ওপর প্রভাব।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ঘটনাটিকে গুরুতর হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা উল্লেখ করেছে যে তফসিল ঘোষণার পরপরই এ হামলা হওয়ায় রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তাপের মুখে পড়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে হাদীকে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির কর্মী’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে তাকে চুপ করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
কিছু প্রতিবেদনে হাদীর পূর্বেকার বক্তব্য, বিশেষত ভারতীয় নম্বর থেকে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। সাংবাদিকেরা সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উল্লেখিত বিদেশি অপপ্রচার ও তথ্য-হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেছেন, এ হামলা সেই বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে।
বেশ কয়েকজন সাংবাদিক সতর্ক করে বলেছেন, এমন সহিংসতার ঘটনা বাড়তে থাকলে নির্বাচনী পরিবেশ আরও বিঘ্নিত হতে পারে। অনেক প্রতিবেদক বলেছেন, প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সরকারের জন্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের নির্দেশকে তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক এবং সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া, সবই বাংলাদেশের গভীর রাজনৈতিক বিভাজন, অবিশ্বাস এবং নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনার প্রতিফলন। তদন্তের অগ্রগতি আরও তথ্য উন্মোচন করতে পারে এবং এ ঘটনার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।

ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদীর ওপর গুলির ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
২ মিনিট আগে
জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও দূষণের ত্রি-মাত্রিক বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত ও পর্যাপ্ত অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
৮ মিনিট আগে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদে (জকসু) ২১ পদে ১৫৬ জন ও হল শিক্ষার্থী সংসদে ১৩ পদের বিপরীতে ৩৩ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ৪২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ৩৮ ও হল শিক্ষার্থী সংসদে ৪ জন।
১ ঘণ্টা আগে
‘স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি-বিধিমালা’ প্রণয়ন না করায় সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মীরা। আজ শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে মেট্রোরেল চলার কথা থাকলেও বন্ধ আছে।
২ ঘণ্টা আগে