leadT1ad

অবসরের টাকা পেতে বছরের পর বছর ঘুরছেন শিক্ষকরা

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৩
স্ট্রিম গ্রাফিক

সাতক্ষীরার আশাশুনি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক বজলুর রহমান। ২০১৮ সালে দীর্ঘ কর্মজীবনের ইতি টানেন। অবসরের টাকা পেতে ২০২২ সালের জুনে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডে আবেদন করেন। পরের মাসে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকার জন্যও আবেদন করেছিলেন। তবে দুইটি প্রতিষ্ঠান হয়ে তার কাছে সেই টাকা গত সাড়ে তিন বছরেও আসেনি।

রাজধানীর পলাশীর ব্যানবেইস ভবনে চলছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে ভবনের নিচতলায় বজলুর রহমানের সঙ্গে দেখা। সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন। ষাটোর্ধ্ব বজলুর রহমান জানালেন, এর আগেও কয়েকবার এ ভবনে এসেছেন। তবে তিনি শুধু নতুন নতুন তারিখই পেয়েছেন, অবসরের পাওনা অর্থ আর বুঝে পাননি।

বজলুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘এ বছরের শুরুতে বলেছিল জুন মাসের মধ্যে টাকা পেয়ে যাব। এরপর বললো জুলাই, তারপর আগস্ট। সর্বশেষ ডিসেম্বরের ১০ তারিখে দেওয়ার কথা ছিল। সেই তারিখও পার হয়ে গেছে। এখন আবার বলছে এই মাসেই পাব। ঘরে অসুস্থ ছেলে, পিজি হাসপাতালে (বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসা চলছে। টাকাটা খুব দরকার।’

সারা দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ। এসব শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর কল্যাণ সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে। আর অবসর সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের মাধ্যমে।

অবসর সুবিধা বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন নিয়ে কাজ চলছে। এর পর থেকে যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁরা অপেক্ষমাণ। অবসর সুবিধার জন্য গত ৩০ জুন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৭৭৫টি আবেদন জমা ছিল। বর্তমানে আবেদনের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে।

কল্যাণ ট্রাস্টের ১১ ডিসেম্বরের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ৪৪ হাজার ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করে কল্যাণ সুবিধার অর্থের অপেক্ষায় আছেন। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের আগে যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁরা টাকা পেয়েছেন।

শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধার টাকা ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হাইকোর্টের নির্দেশ আছে। এরপরেও তহবিল সংকট, সার্ভার ডাউনসহ নানা জটিলতায় অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর টাকা পেতে তিন থেকে চার বছর লেগে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে সময় লাগে আরও বেশি।

অবসর সুবিধার জন্য চাকরিকালীন শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ টাকা মাসে কেটে রাখা হয়। কল্যাণ সুবিধার জন্য কাটা হয় মূল বেতনের ৪ শতাংশ। এ ছাড়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ১০০ টাকা (৭০ টাকা অবসরের জন্য ও ৩০ টাকা কল্যাণের জন্য) নেওয়া হচ্ছে। বাকি টাকা সরকার ও চাঁদা জমার সুদ থেকে সমন্বয় করে দেওয়া হয়।

অবসর সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে ৬ শতাংশ হারে টাকা কাটার মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা আদায় হয়। এফডিআরের লভ্যাংশ হয় প্রতি মাসে ৫ কোটি টাকা। বছরে যা ৯৬০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতি বছর গড়ে অবসর সুবিধার জন্য আবেদন জমা পড়ে ১৫ হাজার, যা নিষ্পত্তি করতে বছরে দরকার ১৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বছরে ঘাটতি থাকছে ৫৪০ কোটি টাকা।

অবসর সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত জমা হওয়া আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৭ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। অন্যদিকে, কল্যাণ ট্রাস্টের প্রয়োজন ২ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১২ নভেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার টাকা বরাদ্দের জন্য একটি আধা সরকারিপত্র (ডিও লেটার) পাঠিয়েছেন। এতে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, তহবিল ঘাটতির কারণে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারীকে অবসর ও কল্যাণসুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রাপ্য সুবিধার জন্য বয়োবৃদ্ধ ও গুরুতর অসুস্থ শিক্ষকেরা প্রায়ই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হন। অনেক শিক্ষক প্রাপ্য সুবিধা পাওয়ার আগেই মারা যান। তহবিল সংকটের কারণে শিক্ষকদের প্রাপ্য সুবিধা দেওয়ার ব্যর্থতা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক।

এ বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্যসচিব অধ্যাপক মো. জাফর আহম্মদ স্ট্রিমকে বলেন, এ বছর ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেগুলোর অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। তহবিল ও লোকবল সংকটের পাশাপাশি সফটওয়্যারের সার্ভার ডাউনের মতো সমস্যা আছে। এসবের মধ্য দিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির সেখ স্ট্রিমকে বলেন, তহবিল সংকটসহ নানা সমস্যা আছে। সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমাদের মাসে প্রায় ৭০ কোটি টাকা প্রয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এখন শিক্ষা বোর্ড থেকেও কিছু টাকা আসছে। কয়েক ধাপ পেরিয়ে অর্থ ছাড় হয়, এজন্য অনেক সময় অনুমোদনের পরেও টাকা পেতে সময় লাগে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত