leadT1ad

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে আপিল

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

জুলাই বিপ্লব চলাকালে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি অভিযোগে দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেছে প্রসিকিউশন। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, ওই নির্দিষ্ট অভিযোগেও অপরাধের মাত্রা ও দায় বিবেচনায় আসামির সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য।

আজ সোমবার আপিল বিভাগে আবেদনটি দায়ের করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।

পরে এ প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিংয়ে গাজী এম এইচ তামিম বলেন, ‘গত ১৭ নভেম্বর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম রায় ঘোষণা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাজা পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এর মধ্যে একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও আরেকটিতে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে আমৃত্যু দণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডে পরিণত করতে আমরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আজ আপিল করেছি। এতে আটটি গ্রাউন্ড আনা হয়েছে।’

প্রসিকিউটর বলেন, ‘রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। আমরা এর আগেই আপিল দায়ের করেছি। আপিলের ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। আশা করছি এর মধ্যেই এই আপিলটি নিষ্পত্তি হবে।’

অপরাধের নৃশংসতার গভীরতার তুলনায় এই আমৃত্যু কারাদণ্ড ‘অপরিপক্ক’ বা ‘কম হয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের হেনিয়াস অফেন্সের (ভয়াবহ অপরাধ) ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত। এই আইনে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কারণ তাদের নির্দেশ বা উসকানিতে ১৪০০ এর অধিক মানুষ শহীদ ও ২৫ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।’

গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে একটি অভিযোগে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও অপর একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এর ঠিক ৯ দিন পর গত ২৬ নভেম্বর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। আইন অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংক্ষুব্ধ পক্ষকে আপিল করতে হয়। প্রসিকিউটর তামিম এর আগে জানিয়েছিলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পর্যালোচনার পর রাষ্ট্রপক্ষ মনে করছে, যে অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেটির শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই প্রাথমিক সিদ্ধান্তের আলোকেই আজ এই আপিল দায়ের করা হচ্ছে।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেল রায়ে প্রসিকিউশনের আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগে মোট ছয়টি ঘটনাকে আমলযোগ্য হিসেবে সাব্যস্ত করেন। যে অভিযোগটিতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেখানে তিনটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া এবং একই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে ফোনালাপে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ। আসামিদের এই নির্দেশ এবং অধীনস্থদের নিবৃত না করার ফলশ্রুতিতেই রংপুরে পুলিশ শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করে বলে রায়ে উঠে এসেছে।

অন্যদিকে দ্বিতীয় যে অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন, সেখানেও তিনটি ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জুলাই তৎকালীন ডিএসসিসি মেয়র ফজলে নূর তাপস ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোনালাপের বিষয়টি অন্যতম, যেখানে ড্রোন, হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট চানখারপুলে পুলিশের গুলিতে ছয়জন আন্দোলনকারী নিহত হন এবং একই দিন সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

রায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড ও আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি দেশে থাকা তাদের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত আদেশে বলেছেন, বাজেয়াপ্ত করা এই সম্পদ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যয় করবে সরকার। এছাড়া এ মামলার অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে নমনীয় সাজা হিসেবে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আপিল দায়েরের পর এখন আইনি প্রক্রিয়ায় বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হবে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত