leadT1ad

শিবিরের প্যানেলে সর্ব মিত্র চাকমা: ‘জাত-বিরোধী কর্মকাণ্ড’ বলছেন পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ৪৬
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ২০: ০৬
শিবিরের প্যানেলে সর্ব মিত্র চাকমা: ‘জাত-বিরোধী কর্মকাণ্ড’ বলছেন পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করছেন সর্ব মিত্র চাকমা। এই প্যানেল থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য পাহাড়ি ছাত্র সংগঠন ও প্রার্থীরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। তারা মনে করছেন, সর্ব মিত্র চাকমার এই পদক্ষেপ ‘আদিবাসী স্বার্থের’ পরিপন্থী।

‘পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ’-এর প্রত্যাখ্যান

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমা বলেন, 'পিসিপি সবসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। যে ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী না এবং আদিবাসী বিরোধী কর্মকাণ্ড চালায় আমরা সবসময় তার বিপক্ষে। আদিবাসী স্বার্থ পরিপন্থী সেই গোষ্ঠীর সাথে সর্ব মিত্র চাকমা আঁতাত করেছে। সাংগঠনিকভাবে আমরা মনে করি সেটি আদিবাসীদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। এবং আমরা তার জাত বিরোধী কর্মকাণ্ডকে ঘৃণাভরে প্রত‍্যাখ‍্যান করেছি।’

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার’-এর অবস্থান

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সর্ব মিত্র চাকমা তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এই প্যানেলে যুক্ত হয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার সবসময় জুম্ম তথা আদিবাসীদের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

এটা একধরনের আদর্শিক লড়াই, তো সে জায়গা থেকে আসলে লড়াইটা আমদের আসলে সকলের একসাথে থেকে করা উচিত। সেখান থেকে সরে সে (সর্ব মিত্র) এমন একটি প্যানেলে গিয়েছে, যে প্যানেলটি সবসময় আসলে নারী বিবর্জিত এবং আমাদের মতো জাতিগোষ্ঠীদের অস্বীকার করে। অনেকটা আমাদের ‘উপজাতি’ এবং আমাদেরকে নিজ দেশে রোহিঙ্গা বানানোর চেষ্টা করে। রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদপ্রার্থী, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল, ডাকসু

ডাকসুতে অন্যান্য পাহাড়ি প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া

‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন সুর্মী চাকমা। সর্ব মিত্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে তাঁর জাতিগোষ্ঠী তাঁকে কীভাবে গ্রহণ করবে, এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সুর্মী স্ট্রিমকে বলেন, ‘হয়তো কমিউনিটি থেকে তাঁকে আগে যেভাবে ট্রিট করত, এখন সেভাবে আর করবে না—এমন একটা প্রোবাবিলিটি তো আছেই।’

তার প্রতি বিরাগভাজন হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সুর্মী বলেন, ‘কারণ তাঁদের (ছাত্রশিবির) সঙ্গে আমাদের আগের কিছু ঘটনা আছে। যেখানে দেখা গেছে আমাদের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের…এই আদিবাসী শব্দটি এনসিটিবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল এবং সেখানে আমাদের প্রায় ১৭ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এসব কারণেই আসলে আমাদের জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা তাঁর এই সিদ্ধান্ত পছন্দ করেনি।’

আদিবাসীদের আদর্শিক জায়গার সঙ্গে সর্ব মিত্র সাংঘর্ষিক অবস্থান নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদপ্রার্থী। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘যে প্যানেলে সর্ব মিত্র চাকমা গিয়েছেন, সেটি আদর্শিকভাবে নারীদের সম্মান করে না এবং সব সময় আদিবাসীদের অস্বীকার করে।’

স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির (হামলায় অভিযুক্ত সংগঠন) সঙ্গে ছাত্রশিবিরের একটা যোগসূত্র আছে, এই কথাটি একটা উড়ন্ত খবর আমি বলব। কারণ আজকে এক বছর পরে আপনারা কি প্রমাণ করতে পেরেছেন তাঁদের সঙ্গে যোগসূত্র আছে? অবশ্যই না। সর্ব মিত্র চাকমা, ডাকসু সদস্য পদপ্রার্থী, ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট

রুপাইয়া স্ট্রিমকে বলেন, ‘এটা একধরনের আদর্শিক লড়াই, তো সে জায়গা থেকে আসলে লড়াইটা আমদের আসলে সকলের একসাথে থেকে করা উচিত। সেখান থেকে সরে সে (সর্ব মিত্র) এমন একটি প্যানেলে গিয়েছে, যে প্যানেলটি সবসময় আসলে নারী বিবর্জিত এবং আমাদের মতো জাতিগোষ্ঠীদের অস্বীকার করে। অনেকটা আমাদের ‘উপজাতি’ এবং আমাদেরকে নিজ দেশে রোহিঙ্গা বানানোর চেষ্টা করে।’

‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল থেকে সদস্যপদে নির্বাচন করছেন হেমা চাকমা। তাঁর মতে, নির্বাচনে জেতার জন্য নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়।

সর্ব মিত্রের ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচনের বিষয়ে হেমা স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় যে, নৈতিকতার বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুদিন ক্ষমতায় থাকার জন্য যদি আপনি এরকম ফালতু স্টান্টবাজি করেন, তাহলে সেটা আমার কাছে কখনো যৌক্তিক মনে হয় না।’

আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেই জায়গা থেকে কমিউনিটি থেকে তারা আমাকে ভুল বুঝবে, এটা খুব স্বাভাবিক এবং সেটা আমাকে মেনে নিতেই হবে। খুব স্বাভাবিক। কিন্তু আমার সঙ্গে আমার যারা শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন, এখন পর্যন্ত আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। সর্ব মিত্র চাকমা, ডাকসু সদস্য পদপ্রার্থী, ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট

হেমা আরও বলেন, ‘ডাকসুতে হয়তো আমি হারব কিংবা জিতব। কিন্তু এটার জন্য আমি ভুলভাল স্ট্যান্ড নিয়ে দাঁড়াব—এটা কখনো আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয় নাই। আমাদের কমিউনিটির মানুষ যারা আছে, তাদের সাপোর্ট আমাদের প্রতি থাকতে হবে। বিশেষ করে আমরা যদি নিজেরাই নিজেদেরকে ওউন না করতে পারি, তাহলে তো আসলে হইল না।’

ছাত্রশিবিরের অবস্থান দেশবিরোধী মন্তব্য করে হেমা বলেন, ‘এটা তো শুধু আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য না। আপনারা জানেন, বাংলাদেশের শুরু থেকে শিবিরের রাজনৈতিক স্ট্যান্ড বাংলাদেশের বিপক্ষেই ছিল। যে রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ বাংলাদেশের বিপক্ষেই থাকে, তাহলে সেটা নিয়ে যদি আপনি স্টান্টবাজি করেন, তাহলে সেটা ভুল।’

‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ ও ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ ছাড়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকেও একজন আদিবাসী শিক্ষার্থী এবার ডাকসু নির্বাচন করছেন। প্যানেলটি থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে লড়বেন চিম চিম্যা চাকমা। সর্ব মিত্রের বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

হয়তো কমিউনিটি থেকে তাঁকে আগে যেভাবে ট্রিট করত, এখন সেভাবে আর করবে না—এমন একটা প্রোবাবিলিটি তো আছেই।’ সুর্মী চাকমা, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদপ্রার্থী, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল, ডাকসু

সর্ব মিত্র কী বলছেন

ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সর্ব মিত্র স্ট্রিমকে জানান, তিনি কোনো মতাদর্শের ভিত্তিতে নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করার কথা চিন্তা করে এই প্যানেলে যোগ দিয়েছেন।

সর্ব মিত্র বলেন, ‘আমি তো আসলে মতাদর্শের ভিত্তিতে এখানে যাইনি। আমি শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য যাঁদের সঙ্গে বেশি কাজ করতে পারব, ইজি ফিট করব—আমি তাঁদের সঙ্গে গেছি। কথা এই জায়গায়।’

এনসিটিবি ভবনের সামনে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ছাত্রশিবির জড়িত ছিল—এমন অভিযোগের জবাবে সর্ব মিত্র জানান, সেই হামলার পর সাদিক কায়েম (শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী) তাঁর কাছে ফোন দিয়ে আহত শিক্ষার্থী, রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যার খোঁজ নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘তাদের দ্বারা অ্যাটাক হয়ে আবার যে খবর নিবে, সেই বিষয়টা তো অবশ্যই খুব ইয়ে হবে তাই না? স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির (হামলায় অভিযুক্ত সংগঠন) সঙ্গে ছাত্রশিবিরের একটা যোগসূত্র আছে, এই কথাটি একটা উড়ন্ত খবর আমি বলব। কারণ আজকে এক বছর পরে আপনারা কি প্রমাণ করতে পেরেছেন তাঁদের সঙ্গে যোগসূত্র আছে? অবশ্যই না।’

সর্ব মিত্র বলেন, ‘আপনার বারবার আমার কমিউনিটির কথা বলছেন, কিন্তু আমি নিজেকে চিন্তা করছি আট-দশটা স্টুডেন্টের মত করে। তো সেই জায়গা থেকে আমি যাদের সঙ্গে স্টুডেন্টদের জন্য কাজ করতে পারব, আমি তাঁদের সঙ্গে গেছি। কে চাকমা, কে বাঙালি—এভাবে ভেদাভেদ করে আমি গড়ে উঠিনি। এখন পর্যন্ত আমার মেন্টালিটি এরকম না। ভবিষ্যতেও থাকবে না। কিন্তু আমার কমিউনিটির প্রতি আমার টান অনেক বেশি করেই থাকবে এবং এখন পর্যন্ত আছে।’

নিজ সম্প্রদায় ভুল বুঝবে এমন বাস্তবতা মেনে নিয়ে সর্ব মিত্র বলছেন, ‘দেখুন আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেই জায়গা থেকে কমিউনিটি থেকে তারা আমাকে ভুল বুঝবে, এটা খুব স্বাভাবিক এবং সেটা আমাকে মেনে নিতেই হবে। খুব স্বাভাবিক। কিন্তু আমার সঙ্গে আমার যারা শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন, এখন পর্যন্ত আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন—এমন অনেক মানুষের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছে। তো সেই জায়গা থেকে আমি তাদের যথেষ্ট আশা ভরসা রাখতে বলছি এবং সময় সাপেক্ষে আমি কতটা কাজ করি, কীভাবে কাজ করি, কী বলছি সেটার ওপর ভরসা রাখতে বলছি। তো সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি, তাঁরা আমার ওপর একটু হয় তো নিরাশ। তবে আশাভঙ্গ হয়নি। আমরা আবার একসঙ্গে মিলিত হব।’

Ad 300x250

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কি দীর্ঘ হওয়ার পথে

দেশের সব ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

সিজারের সময় পেটে এক ফুট গজ রেখেই সেলাই, সাত মাস পর অপসারণ

ডিপ্লোমা বনাম বিএসসি: প্রমোশন ও পদমর্যাদা নিয়ে উত্তাল প্রকৌশল খাত

ইসির ঘোষিত নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মিশ্র প্রতিক্রিয়া

সম্পর্কিত