leadT1ad

বেঁচে যাওয়া জুমজুম শোনে, তাঁকে নিতে আসা মা রজনী ইসলাম মারা গেছে

রজনী ইসলামর ছোট ছেলে এস এম রোহান ও মেয়ে জুমজুম ইসলাম মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়েন। তব ছেলে রোহান সোমবার স্কুলে যায়নি। মেয়েকে আনতে গিয়ে স্কুল কম্পাউন্ডে দাঁড়িয়ে থাকার সময় আছড়ে পড়া বিমানের খণ্ডাংশ লাগে তাঁর মাথায় লাগে।

স্ট্রিম সংবাদদাতাকুষ্টিয়া
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ২০: ০১
রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জুমজুম ইসলাম ও তার মা রজনী ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

‘দুর্ঘটনার সময় শ্রেণিকক্ষেই ছিলাম। বিকট শব্দ শুনে এক বান্ধবীর সঙ্গে ক্যান্টিনে অবস্থান নিই। সেখান দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা অবস্থান করি আমরা। পরে আমার বাবার পরিচিত একজন লোক এসে আমাকে নিয়ে যান। পরে সন্ধ্যায় শুনতে পাই আমার আম্মু মারা গেছেন।’

এভাবেই মায়ের মৃত্যুর ঘটনা বলছিল রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জুমজুম ইসলাম। সোমবার (২১ জুলাই) তাকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে নিহত হন তার মা রজনী ইসলাম। তাদের গ্রামের কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সাদিপুর গ্রামে। সেখানকার ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলামের স্ত্রী-সন্তান তারা।

রজনী ইসলামের লাশ মঙ্গলবার বাড়ি পৌঁছালে ভিড় করে গ্রামের অনেকেই। স্ট্রিম ছবি
রজনী ইসলামের লাশ মঙ্গলবার বাড়ি পৌঁছালে ভিড় করে গ্রামের অনেকেই। স্ট্রিম ছবি

মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়নের নিজ গ্রামের কবরস্থানে রজনী ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৫টার দিকে তার মরদেহ পৌঁছে কল্যাণপুরে। সঙ্গে আসেন রজনীর স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাঁর জানাজা ও দাফনে অংশ নেন।

রজনীর স্বামী জহুরুল ইসলাম জানান, সোমবার ব্যবসায়িক কাজে চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। দুপুরের কিছু সময় পর তাঁকে মোবাইল ফোনে জানানো হয়, মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার কথা। তৎক্ষণাৎ তিনি ঢাকায় চলে আসেন। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজাখুঁজির পর সিএমএইচ হাসপাতালে সন্ধান পান তার স্ত্রীর মরদেহের।

রজনী ইসলামের জানাজায় স্থানীয়দের সঙ্গে অংশ নেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতারাও। স্ট্রিম ছবি
রজনী ইসলামের জানাজায় স্থানীয়দের সঙ্গে অংশ নেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতারাও। স্ট্রিম ছবি

রজনী ইসলাম ও জহুরুল ইসলাম দম্পতির তিন সন্তান নিয়ে ২০ বছর ধরেই রাজধানীতে বাস করছেন। তাঁদের বড় ছেলে এস এম রুবাই চলতি এইচএসসি পরীক্ষয় অংশ নিচ্ছেন। ছোট ছেলে এস এম রোহান মাইলস্টোন স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরে। তবে সোমবার সে স্কুলে যায়নি।

অন্যান্য দিনের মতো রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে আনতে গিয়েছিলেন রজনী ইসলাম। স্কুল ছুটির মিনিট দশেক আগে মেয়ের অপেক্ষায় স্কুল কম্পাউন্ডেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। এ সময় হঠাৎ সেনাবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান স্কুল ভবনে আছড়ে পড়ে। এতে বিধ্বস্ত বিমানের খণ্ডিত অংশ রজনী ইসলামের মাথায় আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হলে রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান।

বিমান দুর্ঘটনায় রজনী ইসলাম প্রাণ হারালেও বেঁচে যায় মেয়ে জুমজুম ইসলাম। সেদিনের বিভীষিকাময় ঘটনায় শারীরিক আঘাত না লাগলেও, প্রচন্ড মানসিক প্রভাব পড়েছে তার ওপর। চোখের সামনেই দেখেছে সেই ভয়াল বিমান দুর্ঘটনার বিভীষিকাময় দৃশ্য।

জুমজুম ইসলাম জানায়, যখন বিমানটি স্কুল ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে, তখন সে শ্রেণিকক্ষেই পড়ছিল। এ সময় প্রথম বিকট শব্দ হয়, পরে কালো ধোঁয়ায় নিমজ্জিত হয়ে ওঠে গোটা শ্রেণিকক্ষ। চোখও জ্বলতে শুরু করে। একজন লোক এসে বিদ্যালয়ে বিমান পড়ার কথা জানায়।

রজনীর পরিবারকে সমবেদনা জানাতে এসেছিলেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী। মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, ‘এমন মৃত্যু সবাইকে নাড়া দিয়েছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত