ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার ভালোভাবে হয়েছে, স্বচ্ছ হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে শেখ হাসিনা খালাস পেলে আমি সবচেয়ে খুশি হতাম।’
আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে জুলাই গণহত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আমির হোসেন বলেন, ‘আমি আমার মক্কেলের খালাস চাই। এই চাওয়াটা তো স্বাভাবিক। এটা প্রত্যেকেই চাইবে। আমি তো সবসময় আশা করি আমার মক্কেল (শেখ হাসিনা) খালাস পাবে। এটা আমার আশা, এটা আমার প্রত্যাশা। আমি একজনের জন্য এত এত মাস ধরে মামলা লড়েছি, তা সে যদি খালাস পায়, তা আমার চাইতে বেশি খুশি আর কে হবে।’
শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী বলেন, ‘আমি চেষ্টা করি নাই। চেষ্টা করার কোনো বিধানও নাই। উনারাও আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগের চেষ্টা এবং কোনো রকমের কোনো সহায়তাও করে নাই। প্রচ্ছন্নভাবেও যদি কোনো সহায়তা করতো সেটা আমার জন্য আরও ভালো হতো, কিন্তু সেটা কেউ কিছু করে নাই। আইনগতভাবে বিধানও নাই।’
মামলার অন্যতম আসামি ও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রসঙ্গে আমির হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘উনি আমার মক্কেল না। উনার সম্পর্কে আমার কোনো কথা বলাও ঠিক না। কারণ আমি যাদের পক্ষে মামলা লড়ি, তাদের পক্ষেই আমার বলা উচিত। যারা আমার আসামি না তার পক্ষে আমি কেন বলবো। এটা বলা ঠিক না, এটা সমীচীন না।’
উল্লেখ্য, এই মামলায় প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ সাজা চাইলেও রাজসাক্ষী হওয়ায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেয়। তবে মামুনের পক্ষে আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ তাঁর খালাস চেয়েছেন।
নিজের সাবমিশনের সঙ্গে শেখ হাসিনার গণমাধ্যমের বক্তব্যের মিল এবং প্রসিকিউশনের প্রমাণের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমির হোসেন বলেন, ‘উনারা (প্রসিকিউশন) তো ওনাদের কথা বলবেনই। আমি আমার কথা বলবো। এটাই স্বাভাবিক। বিচার বিবেচনা করবে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল।’
এদিকে, শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কয়েক স্তরের নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ-র্যাব, এপিবিএন-বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে। তৎপর রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও। নিরাপত্তার স্বার্থে রোববার সন্ধ্যার পর থেকেই দোয়েল চত্ত্বর হয়ে শিক্ষাভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। এই মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা এবং ৯ কার্যদিবসে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়।
তিন আসামির বিরুদ্ধে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।