leadT1ad

যশোরে ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

নিহত বিপুলের স্ত্রী বললেন, অনাগত সন্তানের পিতা হত্যার বিচার চাই

যশোরে বন্ধুর প্রাক্তন স্ত্রীকে বিয়ে করায় যুবক আশরাফুল ইসলাম বিপুলকে ডেকে নিয়ে হত্যার অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার। অনাগত সন্তানের পিতা হত্যার বিচার চাইছেন তাঁর স্ত্রী।

স্ট্রিম সংবাদদাতাযশোর
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৯: ৫২
যশোরে নিহত স্বামীর জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন। স্ট্রিম ছবি

‘কি হবে পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে? তারা যদি ব্যবস্থা নিতো, তাহলে আমার স্বামীর প্রাণ দিতে হতো না। আমার পেটের সন্তানের কি হবে? আমার কি হবে? আমার অনাগত সন্তানের পিতা হত্যার বিচার চাই।’

যশোর সদর হাসপাতাল চত্বরে শনিবার (১২ জুলাই) রাতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুমাইয়া খাতুন এসব কথা বলছিলেন। ওই দিন সন্ধ্যায় ফোনে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাঁর স্বামী আশরাফুল ইসলাম বিপুলকে (২৬)। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করার কিছু সময় পর তিনি মারা যান। শহরের ষষ্ঠীতলা এলাকায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

বিপুল যশোর শহরতলী শেখহাটি জামরুলতলা এলাকার আখতার হোসেনের ছেলে। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির ডিপো-শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, প্রাক্তন স্ত্রীকে বিয়ে করার প্রতিশোধ নিতেই লোকজন নিয়ে বিপুলকে হত্যা করেছেন বাপ্পী।

পাঁচ-ছয় বছর আগে শহরের ষষ্ঠিতলা এলাকার বাসিন্দা বাপ্পীর সঙ্গে সুমাইয়ার বিয়ে। ওই সংসারে একটি সন্তানও আছে তাঁদের। তবে দেড় বছর আগে বাপ্পীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর বিপুলকে বিয়ে করেন সুমাইয়া। এই সংসারে তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানান। আগে বাপ্পী ও বিপুল বন্ধু ছিলেন।

নিহত আশরাফুল ইসলাম বিপুল। স্ট্রিম ছবি
নিহত আশরাফুল ইসলাম বিপুল। স্ট্রিম ছবি

বিপুলের বাবা আখতার হোসেন জানান, বাপ্পী ও বিপুল দুজনে বন্ধু ছিলেন। তবে বাপ্পী মাদক সেবন ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় তাঁকে তালাক দেন প্রথম স্ত্রী সুমাইয়া। এরপর বিপুলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে তাঁরা বিয়ে করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিপুল ও সুমাইয়াকে হত্যার হুমকি দেন বাপ্পী। বিভিন্ন সময় তাঁদের বাড়ির সামনে ককটেল বিস্ফোরণও ঘটায়। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। শনিবার রাতে কৌশলে ফোন করে ডেকে নিয়ে বিপুলকে কুপিয়ে জখম করে বাপ্পী ও তাঁর সহযোগীরা।

বিপুলের স্ত্রী সুমাইয়া আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘বিপুলের সঙ্গে বিয়ের পর বাপ্পী ও তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন সময়ে আমাকে উক্ত্যক্ত করত। ফোনে আজেবাজে কথা বলত। কয়েক মাস আগে আমার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বোমাও মারে। সেই সময় সে প্রাণে বেঁচে যায়। কয়েকবার থানাতে অভিযোগ দিলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি।’

যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত বলে, বিপুল নিজেও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। সুমাইয়ার আগের সংসারে একটি শিশু সন্তান আছে। তবে পরকিয়ায় জড়িয়ে তাঁকে ভাগিয়ে নিয়ে যান বিপুল। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিস হয়। সেসব বৈঠকে সুমাইয়াকে তাঁর প্রথম স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিপুলকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ শাকিরুল ইসলাম জানান, বিপুলের শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁকে ভর্তি করে ওয়ার্ডে পাঠানোর পর তিনি মারা যান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

ওসি আবুল হাসনাত বলেন, ‘নিহত বিপুলের নামেও থানায় একাধিক মামলা আছে। অভিযুক্ত বাপ্পীর নামেও মামলা রয়েছে। দুজনই সন্ত্রাসী। তাঁদের ধরতে আগে থেকেই পুলিশি তৎপরতা চলছিল। তবে হত্যাকাণ্ডের পর জড়িতদের আটকে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত