leadT1ad

সাঁওতালদের ওপর আবারও হামলার অভিযোগ সেই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

স্ট্রিম প্রতিবেদকগাইবান্ধা
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১১: ০০
জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গাইবান্ধায় সাঁওতালদের ওপর হামলা। স্ট্রিম ছবি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নে সাঁওতালদের জমি সংক্রান্ত বিরোধে আবারও সাঁওতালদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে।

এর আগে জমি সংক্রন্ত বিরোধে গত ৩ জানুয়ারি আদিবাসী পল্লীর ফিলিমোনা হাসদা (৫৫) নামের এক সাঁওতাল নারীকে মারধর করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা রফিকুল । ওই সময় ফিলোমোনা হাসদার বাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগও ওঠে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

সেই ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেন। ওই মামলায় এখন জামিনে আছেন রফিকুল চেয়ারম্যান।

স্থানীয় সাঁওতালদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ অগাস্ট সাঁওতালরা একটি বিরোধপূর্ণ জমিতে ধান রোপন করতে গেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে সাঁওতালদের ওপর হামলা করেন রফিকুল। এই ঘটনায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন হামলায় আহত শ্যামবালা হেমব্রম।

হামলায় আহত হয়ে বর্তমানে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় চিকিসাধীন রয়েছেন শ্যামবালা হেমব্রম (৪৫), তাঁর নাতি জয়ন্ত হাসদা (১৯) এবং মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন শ্যামবালা হেমব্রমের ছেলে বিশ্বনাথ সরেন (২৫)।

শ্যামবালা বলেন, ‘আমার বাবা হোপনা হেমব্রম ও তার বড় ভাই নদো হেমব্রমের তিন একরের বেশি জমি জাল দলিল করে ভোগদখল করে আসছে রফিকুল চেয়ারম্যানের বাবা হেকিম মন্ডল ও তার ছেলেরা।’

শ্যামবালা জানান, এই বিষয়ে তাাঁরা গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কোর্টে মামলা করেছিলেন। পরে ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর আদালতে প্রমাণিত হয়ে যে, দুই একর জমি রফিকুল ও তার ভাইয়েরা জাল দলিলের মাধ্যমে ভোগ দখল করে আসছেন।

শ্যামলালা বলেন, আদালতে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর থেকে এই জমিতে আমরা ধান চাষের চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই বছর বোরো ধান চাষ করতে গেলে আমাদের সেচ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

শ্যামবালা অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ১৫ অগাস্ট বিকেলে আমরা এই জমিতে ধান রোপন করতে গেলে রফিকুল চেয়ারম্যান, তার ভাই শফিকুল ইসলাম ও মেজবাউল ইসলাম দলবল নিয়ে এসে আমাদের ধান রোপনে বাধা দেয়। এক সময় তারা আমাদের লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। হামলায় আমার বড় ছেলে বিশ্বনাথ সরেন মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে এখন রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি আছে। হামলার সময় তারা আমার শাড়ি-কাপড় ছিড়ে শ্লীলতাহানী করেন।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও রফিকুল ইসলামের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই মেজবাউল ইসলাম বলেন, ‘এই জমি আমার বাবা হাকিম মন্ডল ৩৫ বছর আগে হোপনা হেমব্রমের কাছ থেকে নিয়ে নেন। সেই থেকে আমরা চাষবাদ করে খাচ্ছি। এই জমির মালিকানা সংক্রান্ত সমস্ত বৈধ কাগজ পত্র আমাদের রয়েছে। কোর্টে আমরা সেগুলো সাবমিট করেছি।’

মেজবাউল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৫ তারিখ হঠাৎ আমার শুনতে পাই সাঁওতালরা আমাদের জমিতে ধান রোপন করছে। তখন আমরা তিন ভাই (রফিকুল, শফিকুল ও মেজবাউল) তাদের বাঁধা দিতে যাই। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি। পরে হাতাহাতি-ধস্তাধস্তি হয়েছে। এই সময় আমার মেজো ভাই শফিকুল ইসলাম মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।’

এই ঘটনায় পুলিশ মামলা নিয়েছে কি না, জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় সাঁওতালরা থানায় একটি অভিযোগপত্র দিয়েছে। বিষয়টি তদন্তে করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত