leadT1ad

সংসদ ভবনের ফুটপাত

উচ্ছেদে লাগে সময়, দোকান বসে পলকে

সংসদ ভবনের সামনের ফুটপাতে বাহারি দোকান, মানুষের ভিড়। স্ট্রিম ছবি

সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্রান্ত, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। ফুটপাতে শয়ে শয়ে দোকান। বিকেলে জমজমাট কেনাবেচা। বেশির ভাগই খাবার সামগ্রী, মানুষের সমাগমে যেন উৎসব!

সংসদ ভবনের মতো সুরক্ষিত এলাকায় রমরমা অবৈধ ব্যবসা দিনের পর দিন চললেও দেখার কেউ নেই। যেমন অসহায়ত্ব এলাকাটির তদারক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ছাদেকুর রহমানের কণ্ঠে, দুই মাস আগে সব দোকান গুড়িয়ে দিয়েছি। এখন আবার যা, তাই। দোকানিরা কোনো নির্দেশনা মানেন না।

স্ট্রিমকে তিনি আরও বলেন, ভোরে বর্জ্য পরিষ্কারের কর্মীরা দোকানপাট ভেঙে ট্রাকে করে এনেও তাদের থামাতে পারছে না। ২৪ ঘণ্টা তো পাহারা সম্ভব নয়। দোকান ভাঙতে সময় লাগলেও, বসতে দেরি নেই। শিগগির আবার অভিযান চালানো হবে।

কেন এমন হচ্ছে, কার দুর্বলতা

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক লুই আই কানের অনবদ্য শিল্পকর্ম বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন। রাজধানীতে প্রথম আসা যে কেউ এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আগ্রহী। ফলে কমবেশি ভিড় লেগে থাকে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের বিশাল সড়ক ঘেঁষে প্রশস্ত ফুটপাত অনেকের প্রাতঃভ্রমণের সঙ্গী। কিন্তু ফুটপাত এখন বাজার হয়ে গেছে।

সরেজমিন বুধবার বিকেলে পিৎজা, বার্গার, কাবাব, চটপটির অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকান দেখা যায়। দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। উনুনে চড়ছে হাঁসের মাংস, সঙ্গে চালের রুটি। সি-ফিশ, মমো, হালিম, জুস, আইসক্রিম-কি নেই। খেলনা ও গয়নার পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। হাঁক দিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ চা-সিগারেট বিক্রেতা।

সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্রান্ত, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। ফুটপাতে শয়ে শয়ে দোকান। স্ট্রিম ছবি
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্রান্ত, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। ফুটপাতে শয়ে শয়ে দোকান। স্ট্রিম ছবি

৩৫ বছর ধরে এ এলাকায় আইসক্রিম বিক্রি করছেন আলমগীর হোসেন। স্ট্রিমের প্রশ্নে তাঁর সরল উত্তর, যারা অবৈধ দোকান সরাবে, তারাই তো দুই নম্বরিতে যুক্ত। তাদের কারণে কয়েকটি থেকে কয়েকশ দোকান বসেছে। মানুষ হাঁটতে পারে না।

নজরদারির অভাবকে দায়ী করলেও অনেকের ধারণা, ফুটপাত দখলই রাজনৈতিক বাস্তবতা। হরেদরে গজিয়ে ওঠা নেতাদের আয়ের উৎস এসব। বুধবার রাজধানীর মিরপুর থেকে ঘুরতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন স্ট্রিমকে বললেন, পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসি। আগে দোকান কম ছিল, এখন নোংরা হয়ে গেছে। দেখার কেউ নেই। দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে দোকানিরা নেতাদের যোগসূত্র টানেন।

বিরক্ত দর্শনার্থীরা

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হয়। ওইদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের মতো জাতীয় সংসদ ভবনেও ঢল নামে মানুষের। এ ঘটনার পর থেকে সংরক্ষিত সংসদ ভবন এলাকার নিরাপত্তা এখন ঢিলেঢালা। এরই সুযোগে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। দর্শনার্থীরা এসে বিরক্ত হচ্ছেন। অনেকে ফিরে যাচ্ছেন।

সংসদ ভবনের সামনে বসেছে খাবারের দোকান। স্ট্রিম ছবি
সংসদ ভবনের সামনে বসেছে খাবারের দোকান। স্ট্রিম ছবি

স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসে ফিরে যাচ্ছিলেন বেসরকারি কর্মজীবী জোবায়ের হোসেন। স্ট্রিমকে তিনি বললেন, ব্যস্ত জীবনে ফুসরত মেলে কম। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিরিবিলি ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে পা রাখার জায়গা নেই। পুরো মাছের হাট; ফিরে যাচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার বলেন, খুব অবাক লাগে, এখানে ডাল-ভাত ছাড়া সবই বিক্রি হচ্ছে। পরিবেশ বদলে গেছে। আগের মতো জায়গাটি টানে না।

নির্যাতন, চাঁদাবাজি নেই

সংসদ ভবন এলাকায় পাঁচ বছর ধরে জুসের দোকান চালাচ্ছেন রিহাদ হোসেন। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, আগে এমন ছিল না। সরকার পতনের পর সব বদলে গেছে। আগে পুলিশ খুব নির্যাতন করত, নিয়মিত চাঁদা নিতো। এখন এসবের প্যারা নেই।

চিতই পিঠা বিক্রেতা আবদুল হালিম জানান, এক সময় চাঁদা না দিয়ে এখানে ব্যবসা করা সম্ভব ছিল না। এক দিন পুলিশকে টাকা না দিলে উঠিয়ে দিতো। সপ্তাহে এক হাজার ৪০০ টাকা করে দিতে হতো। এখন চাঁদা নেই, ভাড়াও দিতে হয় না। এ কারণে দোকান বাড়ছে।

শের-ই বাংলানগর থানার ওসি ইমাউল হক স্ট্রিমকে জানান, রাষ্ট্রীয় বা বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে নিরাপত্তার জন্য তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। তখন শুধু দোকান উচ্ছেদ নয়, নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করে– এমন সবকিছু নজরে এনে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত