leadT1ad

ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অবমাননার অভিযোগ, শুনানি রোববার

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

ফজলুর রহমান (সংগৃহীত ছবি)

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ও এর বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে আবেদন করেছে প্রসিকিউশন।

আজ বুধবার (২৬ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি হয়। তবে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও একজন সদস্য অনুপস্থিত থাকায় আজ কোনো আদেশ হয়নি। বিষয়টি শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করা হয়েছে।

প্রসিকিউশনের আবেদনে বলা হয়, গত ২৩ নভেম্বর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪-এর একটি টক শোতে অংশ নিয়ে ফজলুর রহমান ট্রাইব্যুনাল ও এর বিচারকদের নিয়ে অসত্য, ভিত্তিহীন ও উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই টক শোতে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি, এই কোর্ট আমি মানি না।’ উপস্থাপক জানতে চান, ‘মিডিয়া কি জানতে পারেনি?’ জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, ‘সবাই জানে, জানবে না কেন? আমার ইউটিউব শোনেন। আমি এই কোর্ট মানি না। এই কোর্টের বিচার আমি মানি না। ইউটিউবে বলছি, টকশোতে বলছি। যদি না বলে থাকি এখন বললে আমার ভুল, আমি মাফ চাবো। প্রতিদিন বলছি, এই বিচার আমি, এই কোর্টের বিচার আমি মানি না।’

এ ছাড়া তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও পক্ষগুলোর মধ্যে যোগসাজশের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘এই কোর্টের গঠন প্রক্রিয়া বলে—এই কোর্টে বিচার হইতে পারে না। এই কোর্টে যারা বিচার করতেছে, আমার ধারণা এদের মধ্যে ভেতরে একটা কথা আছে (ইন্টারনাল অ্যারেঞ্জমেন্ট)।‘

প্রসিকিউশনের দাবি, তাঁর এই বক্তব্য বিচারকদের প্রতি অবমাননাকর এবং বিচারপ্রার্থীদের জন্যও অসম্মানজনক। প্রমাণ হিসেবে টক শোর ৪৯ মিনিটের ভিডিও ও লিখিত অনুলিপি ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে প্রসিকিউশন।

আজকের শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও প্রথম সদস্য (মেম্বার-১) উপস্থিত ছিলেন না। এককভাবে শুনানি গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় সদস্য (মেম্বার-২)। তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি গুরুতর। তাই চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই শুনানি হওয়া উপযুক্ত। এ কারণে আগামী রোববার শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করা হয়েছে।’

শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন, কিন্তু শুধু ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘বেশির ভাগ মন্তব্য নাম-ঠিকানা গোপন রেখে করা হয় বা অনেকে দেশের বাইরে থেকে করেন। সে ক্ষেত্রে হাজার হাজার মামলা করা সম্ভব নয়। কিন্তু একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন প্রকাশ্যে ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন, তখন ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া বিকল্প থাকে না।’

এ সময় প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের ১১(৪) ধারা অনুযায়ী, বিচারক, আদালত বা বিচারপ্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে—এমন যেকোনো বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল। এই ধারায় এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।’

ফজলুর রহমান আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন কি না, জানতে চাইলে তামিম বলেন, ‘রুলস অনুযায়ী নোটিশ দেওয়ার পর তিনি ট্রাইব্যুনালে এসে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাবেন। রায় নিয়ে অসন্তুষ্ট কেউ আপিল করতে পারেন। কিন্তু সরাসরি ‘‘রায় মানি না বা কোর্ট মানি না’’ বলা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে কি না, সেই সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনাল দেবেন।’

প্রসিকিউশন আরও জানায়, ফজলুর রহমান এর আগেও এ ধরনের মন্তব্য করায় নিজ দল থেকে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের মুখে পড়েছিলেন। বারবার কেন তিনি একই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তবে প্রসিকিউশন কেবল ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেই এই আবেদন করেছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত