আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে পুরো আসনের ভোট বন্ধের ক্ষমতা ফেরত চেয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া প্রস্তাব অনুমোদন করে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) ২০২৫-এর সংশোধনী প্রকাশ করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
গত ৩ নভেম্বরে আরও কিছু পরিবর্তন এবং সংযোজন এনে সংশোধিত আরপিও গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে নির্বাচনী আইনের সব সংস্কারকাজ শেষ হলো বলে জানিয়েছে কমিশন। ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা আইন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান আইন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষণ নীতিমালা, সাংবাদিক নীতিমালাসহ বিভিন্ন বিধি-বিধান সংশোধনের কাজ শেষ করেছে ইসি। নতুন আরপিওর আলোকে দ্রুত দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হবে।
আরপিওর ৯১ নম্বর অনুচ্ছেদে অনিয়মের জন্য কেন্দ্রের ভোট বাতিলের পাশাপাশি প্রয়োজনে পুরো নির্বাচনী এলাকার ফল বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ইসিকে।
উল্লেখ্য, ইসিকে নির্বাচন বাতিল করা সংক্রান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ ধারায়। ৯১ (এ) উপধারায় বলা ছিল, ইসি যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে নির্বাচনে বল প্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন, চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে। পরে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে আরপিওর এই ধারা সংশোধন করে জাতীয় সংসদে পাস হয়। সংশোধনী পাসের কারণে ইসির ক্ষমতা খর্ব হয়।
জোটের প্রার্থীকেও ভোট করতে হবে নিজ দলীয় প্রতীকে
গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধনী খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার পর বিএনপি জোটের প্রতীকসংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ২০ সংশোধন নিয়ে আপত্তি তোলে। বিপরীতে জামায়াত ও এনসিপি সংশোধন বহাল রাখার দাবি জানিয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত জোটবদ্ধ হলেও ভোট করতে হবে স্ব স্ব দলের প্রতীকে—এমন বিধান বহাল রেখেই অধ্যাদেশ জারি হলো। এর ফলে একাধিক নিবন্ধিত দল জোট করে একক প্রার্থী দিলেও বড় দলের প্রতীক কিংবা অন্য দলের প্রতীকে ভোটের সুযোগ থাকছে না।
‘না’ ভোটের চ্যালেঞ্জে একক প্রার্থী
কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ আর থাকছে না। ওই প্রার্থীকে লড়তে হবে ‘না’ ভোটের বিপক্ষে। সংশোধিত আরপিও’র ১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘না’ ভোটের চেয়ে বেশি ভোট পেলে তবেই তিনি নির্বাচিত হতে পারবেন। যদি ‘না’ ভোটের সংখ্যা বেশি হয়, তবে ওই আসনে নতুন তফসিল ঘোষণা করে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটির পদে থাকলে নির্বাচনে না
সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে থাকলেও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পদকে ‘লাভজনক’ পদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে আরপিওতে। ফলে প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পদে থেকে ভোটে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে না।
পলাতক আসামিদের পথ বন্ধ
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ অনুচ্ছেদে নতুন একটি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে আদালত কর্তৃক পলাতক আসামি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
হলফনামায় মিথ্যাচারে শাস্তি হতে পারেও নির্বাচিত হবার পরেও
হলফনামায় দেশে এবং বিদেশে আয়ের উৎস থাকলে তা জানাতে হবে; দাখিল করতে হবে সবশেষ বছরের রিটার্ন। প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য সংক্রান্ত হলফনামায় অসত্য তথ্যের প্রমাণ পেলে ভোটের পরেও ইসির ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে।
নতুন সংশোধনে হলফনামায় মিথ্যাচার বা অসত্য তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে শাস্তি কঠোর করা হয়েছে। আরপিও-র ৯১এফ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কেউ হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে বা সম্পদের তথ্য গোপন করলে নির্বাচন কমিশন সেই প্রার্থীর সদস্যপদ বাতিল করতে পারবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী
নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা আরও শক্তিশালী করতে নতুন আরপিওতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।