leadT1ad

টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার ও সাজা প্রশ্নে দুদকের জবাব

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১২
টিউলিপ সিদ্দিক। সংগৃহীত ছবি

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনার ভাগনি ও শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার ও দণ্ড নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উদ্বেগ ও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই বিষয়ে ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার এবং সাজা সম্পর্কে সাম্প্রতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উত্থাপিত উদ্বেগের বিষয়ে তথ্যের স্পষ্ট যাছাই-বাছাই প্রয়োজন। তাই দুদক একটি স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে টিউলিপের বিরুদ্ধে দাখিল করা সব প্রসিকিউশন (অভিযোগপত্র ও এভিডেন্স) উপাদান আমরা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছি।

মামলার নথিপত্র অনুযায়ী দেখা যায়, প্রতিটি অভিযোগই মূলত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের সন্তান-স্বজনদের নামে রাজধানীর মূল্যবান সরকারি প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। আর একটি চলমান মামলায় দেখা যায়, শেখ হাসিনা যখন সরকারপ্রধান তখন টিউলিপ নিজেও একটি অতিরিক্ত প্লট বরাদ্দ পান।

তিনটি মামলার মধ্যে প্রথম মামলার বিচার শেষ হয়েছে। এতে টিউলিপকে মা এবং ভাইবোনদের জন্য জমি পেতে তাঁর খালাকে প্রভাবিত করার জন্য দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিশেষ মামলা নম্বর–১৮/২০২৫-এ প্রসিকিউশন অভিযোগ করেছে, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে টিউলিপ নিজের পরিবারের জন্য প্লট পেতে তাঁর খালাকে প্রভাবিত, প্ররোচিত এবং তাঁর পদের অপব্যবহার করতে প্ররোচিত করেছিলেন।

দুদকের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় মোট ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন শপথ নিয়ে আদালতে বলেন, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর প্রভাব ব্যবহার করে পরিবারের নামে এসব প্লট বরাদ্দ নিশ্চিত করেন। টিউলিপ সিদ্দিক, তাঁর মা ও ভাইবোনদের নামে এসব প্লট বরাদ্দের পরিস্থিতিগত প্রমাণও ইঙ্গিত দেয় যে, অবৈধভাবে সরকারি জমি দখলের প্রক্রিয়ায় তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। এই কর্মকাণ্ড দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(ক), ২০১, ২১৭, ২১৮, ৪০৯ ও ৪২০ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারার অধীনে অপরাধমূলক সহায়তার শামিল।

ওই পরিস্থিতিতে প্রমাণে দেখা যায়, টিউলিপ সিদ্দিক নিজেও একটি মূল্যবান প্লট গ্রহণ করেন—যার পুরোনো নম্বর ছিল CWN (A)-27, পরে পরিবর্তন হয়ে প্লট নং–০৫, ব্লক NE(A), গুলশান, ফ্ল্যাট B/201, বাড়ি নং ৫ এ ও ৫বি (বর্তমানে ১১৫ ও ১১বি), সড়ক নং–৭১, গুলশান-২, ঢাকা। বিচারিক প্রমাণ অনুযায়ী, তিনি তাঁর খালার ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব সম্পদ অর্জন করেন।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এসব জমি কোনো দূরবর্তী গ্রাম বা সাধারণ এলাকার নয় বরং ঢাকার অন্যতম অভিজাত ও ব্যয়সাপেক্ষ গুলশান এলাকায় অবস্থিত। জনঘনত্ব কমানো ও আবাসন সংকট নিরসনে এসব সরকারি প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে তা প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে বণ্টন করা হয়, যা পারিবারিক সম্পদ বৃদ্ধির পথ সুগম করে।

এছাড়া, টিউলিপের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একাধিক সম্পত্তির সম্পৃক্ততার তথ্যও পাওয়া গেছে, যা অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে ক্রয় করা হয়। এতে একটি গুরুতর প্রশ্ন ওঠে: রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা একজন ব্যক্তি কীভাবে লন্ডন ও ঢাকার মতো বিশ্বের দুই ব্যয়বহুল শহরে একাধিক সম্পত্তি কেনার অর্থ জোগাড় করেন? আমরা এ প্রশ্নের উত্তর জানতে আগ্রহী ছিলাম, কিন্তু দুঃখজনকভাবে টিউলিপ সিদ্দিক অনুপস্থিত অবস্থায় বিচার সম্পন্ন হয়।

দুদক বলছে—টিউলিপ যে দাবি করেছেন, তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি তা সঠিক নয়। তাঁকে আদালতে হাজির হয়ে নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি স্বেচ্ছায় আদালতে উপস্থিত হননি, এমনকি কোনো আইনজীবীর মাধ্যমেও আত্মপক্ষ সমর্থন করেননি।

সার্বিকভাবে প্রাপ্ত সব তথ্য ও প্রমাণ বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয়, টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে সংঘটিত দুর্নীতির ঘটনায় সহায়তাকারী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জড়িত ছিলেন।

এই তথ্য ও পরিস্থিতির আলোকে, এই ধারণার কোনো ভিত্তি নেই যে তিনি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বা তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে তিনি নির্দোষ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত