leadT1ad

তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি, শিশুদের রোগ বাড়ছে

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এক সপ্তাহ ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে ১৩ থেকে ১৪ ডিগ্রির ঘরে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারির পুরোটা সময় ধরে তাপমাত্রা নেমে আসে এক অংকের ঘরে। তীব্র শীতের কারণ তেঁতুলিয়ায় লাখো মানুষের নদীকেন্দ্রিক জীবিকা ব্যাহত হচ্ছে। ঠান্ডাজনিত রোগের শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। জেলার হাসপাতালগুলোতে অনেক বেড়েছে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বলছে, ডিসেম্বরের প্রথম দিকে পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
পঞ্চগড়

তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা সড়কের তিরনই হাট এলাকায় শীতে জবুথবু সাইকেল আরোহীরা। স্ট্রিম ছবি

দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দ্রুত কমতে শুরু করেছ তাপমাত্রা। সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সঙ্গে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্যও কমে আসছে। আজ রবিবার (২৩ নভেম্বর) জেলার তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এর আগে শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। সন্ধ্যা ছয়টায় সেখানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এক সপ্তাহ ধরে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে ১৩ থেকে ১৪ ডিগ্রির ঘরে। একই সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। চলতি সপ্তাহ এই তাপমাত্রার পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্র। বিশেষ করে বছরের ডিসেম্বর ও জানুয়ারির পুরোটা সময় ধরে তাপমাত্রা নেমে আসে এক অঙ্কের ঘরে।

জেলা সদর ও তেঁতুলিয়ার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, পঞ্চগড়সহ দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে মূলত কার্তিকের শুরু থেকেই শীতের আগমন হয়। মাসের শেষ থেকে শীত জেঁকে বসে। কিন্তু এবার অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে গিয়ে অধিক শীত অনুভূত হচ্ছে।

পঞ্চগড়ে দেরিতে শীত আসা সম্পর্কে পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা মো. মোস্তক আহম্মেদ বলছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঋতু বৈচিত্র্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এর প্রভাবেই শীতের সময়ের কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় শীতের দেখা মিলছে না। পরবর্তী বছরগুলোতে এই প্রভাব আরও বেশি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

পরিবেশবিদ সাবেক অধ্যক্ষ মো. সফিকুল ইসলাম জানান, পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর নাব্য সংকট এই জেলার পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এর প্রভাব প্রকৃতিকে বিরূপ করে তুলেছে।

পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের বারান্দায়ও চিকিৎসা নিচ্ছে শীতজনিত রোগীরা। স্ট্রিম ছবি
পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের বারান্দায়ও চিকিৎসা নিচ্ছে শীতজনিত রোগীরা। স্ট্রিম ছবি

শীতজনিত রোগাক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধরা

পঞ্চগড়ে দিনভর রোদের দাপট থাকলেও রাতে তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে বেশ নিচে। দিনে গরম, রাতে ঠান্ডার প্রভাবে জেলার অধিকাংশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। জেলার সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই এই সময়টাতে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

চলতি সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মো. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিনশ রোগী বহির্বিভাগে আসছে। তাদের মধ্যে ২০-২৫ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। বাকিদের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

শীতের মধ্যেই মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করতে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। স্ট্রিম ছবি
শীতের মধ্যেই মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করতে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। স্ট্রিম ছবি

তীব্র শীতে সংকুচিত জীবিকা

তেঁতুলিয়ায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা চলে নদী কেন্দ্র করে। সীমান্তবর্তী নদনদী থেকে পাথর-বালু আহরণ করেন তাঁরা। কিন্তু শীতের প্রভাব তাঁরা পানিতে নেমে পাথর-বালু ঠিক মতো সংগ্রহ করতে পারছেন না।

স্থানীয়রা জানান, তীব্র শীতে পঞ্চগড়ে অভাবী মানুষের অবস্থা কঠিন হয়ে পড়ে। কর্মজীবী মানুষরা হয়ে পড়েন বেকার। অতিরিক্ত শীতে মৌসুমি ফসল, বোরো বীজতলাও হয় ক্ষতিগ্রস্ত। ঘন কুয়াশায় সড়কে বাড়ে দুর্ঘটনা।

তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের ঝাড়ুয়াপাড়া গ্রামের পাথর শ্রমিক হাসিবুল ইসলাম, বরকত আলী, আবু হেনাসহ কয়েকজন বলেন, তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জনের দল নিয়ে সারা দিন মহানন্দা নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করে সংসার চালান। শীত এলে নদীর ঠান্ডা পানিতে নেমে পাথর সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে কাজ হারিয়ে অভাব অনটনে পড়তে হয় তাঁদের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জীতেন্দ্র নাথ রায় জানান, ডিসেম্বরের প্রথম দিকে পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

শীতের প্রস্তুতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসক কাজি সায়েমুজ্জামান বলেন, ‘পঞ্চগড় একটি শীত সহিষ্ণু জেলা। তারপরও প্রতি বছর তীব্র শীতে এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকায় টান পড়ে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি রেখেছি।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত