leadT1ad

সুন্দরগঞ্জ উপসর্গ লুকাচ্ছেন অ্যানথ্র্যাক্স আক্রান্তরা, পশুর তুলনায় ভ্যাকসিন কম

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে অনুযায়ী, সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের ব্যক্তি ১৮ জন। তবে স্থানীয় লোকজনের দাবি করছেন, এই সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গেছে। এ দিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৩টি গরু। তবে গবাদিপশুর মালিকদের দাবি, মৃত গরুর সংখ্যা শতাধিক হবে।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
গাইবান্ধা
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ২৪
গবাদি পশুকে দেওয়া হচ্ছে অ্যানথ্রাক্সের টিকা। স্ট্রিম ছবি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বাড়ছে অ্যানথ্রাক্সের (তড়কা রোগ) উপসর্গবাহী ব্যক্তির সংখ্যা। পশুবাহিত এই রোগের উপসর্গের বিস্তারের তুলনায় নেই সচেতনতা ও চিকিৎসা। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে এর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন মোছা. রোজিনা বেগম নামে এক নারী।

এদিকে গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স মোকাবিলায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম চললেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। প্রায় ৯০ শতাংশ গবাদিপশু এখনো ভ্যাকসিনের বাইরে আছে। এমনকি ৮০ পয়সা মূল্যের প্রতিটি টিকা (ভ্যাকসিন) ২০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন খামারিরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের ব্যক্তি ১৮ জন। তবে স্থানীয় লোকজনের দাবি করছেন, এই সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ১৩টি গরু। তবে গবাদিপশুর মালিকদের দাবি, মৃত গরুর সংখ্যা শতাধিক হবে।

উপসর্গ লুকানো চেষ্টা

উপজেলা ঘুরে জানা গেছে, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গবহন করা ব্যক্তিরা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকদের কাছে। আবার কোনো কোনো চিকিৎসক এই উপসর্গবাহী ব্যক্তির চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বেলকা ইউনিয়নের জহুরুলের মোর এলাকার পল্লী চিকিৎসক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এ পর্যন্ত অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে আসা চারজন ব্যক্তিকে পরামর্শ দিয়েছি। তাদের কেউ সহজে বিষয়টি স্বীকার করেননি। তথ্য পেতে রাগারাগিও করেছি অনেকের সঙ্গে। লজ্জা ও ভয় দুটোই দেখেছি তাঁদের মধ্যে।’

অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মোছা. রোজিনা বেগম উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বাসিন্দা। ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, ‘কারো শরীরে অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ দেখা দিলেও তারা শরম বা ভয়ে গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এ ধরনের উপসর্গ যে ভয়ের কিছু না, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে আরও প্রচার চালানো দরকার।’

চিকিৎসকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে রোজিনা বেগমের ছেলে মো. রইসুল মিয়া বলেন, ‘অসুস্থ মাকে শনিবার (৪ অক্টোবর) সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। আমার মাকে কোনো ডাক্তার বা নার্স ছোঁয়নি। ডাক্তার এসে দূর থেকে ছবি তুলেছেন। ছেলেপেলেদের দিয়ে প্রেসার মাপিয়েছেন। কিন্তু মাকে নাড়ানাড়ি আমরাই করেছি। পরে ফোঁড়া স্যালাইন ও অক্সিজেন দিয়ে রংপুর নিতে বলেন। একজন রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের যে আচরণ হওয়া দরকার সেটি আমরা পাইনি। সম্ভবত তারা এ রোগকে ভয় অথবা ঘৃণা করেছেন।’

রইসুল মিয়ার অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক বলেন, ‘ওই সময়ে মেডিকেল আবাসিক অফিসার ও ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার তাঁর মাকে দেখেছেন। যদি নাই দেখত, তাহলে চিকিৎসা দিল কীভাবে? তাঁর মা মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। বরং তারাই পাত্তা দেননি আমাদের।’

গবাদি পশুর তুলনায় ভ্যাকসিন কম

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সুন্দরগঞ্জে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার গবাদিপশু আছে। এর মধ্যে মাত্র ২৪ হাজারের মতো গবাদি পশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের মাত্র ১০ শতাংশ। খামারি আজাদ মিয়া বলেন, ‘সরকারিভাবে অ্যানথ্রাক্সের ভ্যাকসিনের দাম ৮০ পয়সা করে। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে প্রতিটিতে নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা।’

তবে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এক নারী মারা যাওয়ার পর থেকে জোরেসোরে গবাদিপশুর টিকাদান শুরু হয়েছে বলে জানান বেলকা ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ। জনবল কম হওয়ায় কার্যক্রম কাঙ্ক্ষিতমাত্রায় হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

কেবল সচেতনতাই তড়কা রোগ প্রতিরোধ করতে পারে বলে মন্তব্য করে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউপি ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘সচেতনতামূলক কোনো কার্যকর ভূমিকা এখনো দেখছি না। সচেতনতায় এ পর্যন্ত কোনো মিটিং, আলোচনা বা মাইকিংও শুনিনি। পশু হাসপাতালের কোনো লোককেও আমার ওয়ার্ডে দেখিনি। বা কেউ বললও না যে, আমি পশু হাসপাতাল থেকে এসেছি, আপনি সহযোগিতা করেন।’

গবাদিপশুর টিকাদান সম্পর্কে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দে বলেন, ‘এ পর্যন্ত ২৪ হাজার গবাদিপশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। মজুদ আছে ভ্যাকসিন। আরও এক লাখ ভ্যাকসিন চেয়ে আবেদন করেছি ঊধ খুব দ্রুত সময়ে সেগুলো পাব।’

কোনো কোনো এলাকায় টিকা না পৌঁছানো প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘জনবল কম। তা ছাড়া নির্দেশনা আছে, আক্রান্ত এলাকাগুলোতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেভাবেই কাজ চলছে।’ তিনি জানান, অসুস্থ গরু জবাই করার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত ১৮টি গরুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো এখন সুস্থ আছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত