leadT1ad

প্রতি তিন পোশাকশ্রমিকের দুইজন বাল্যবিয়ের শিকার

রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় বসবাসরত পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে বাল্যবিয়ে ও অল্প বয়সে মা হওয়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। প্রতি তিনজন নারী পোশাকশ্রমিকের মধ্যে দুজনই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৩
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি)

রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় বসবাসরত পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে বাল্যবিয়ে ও অল্প বয়সে মা হওয়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। প্রতি তিনজন নারী পোশাকশ্রমিকের মধ্যে দুজনই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন। নারী পোশাকশ্রমিকদের ৬৫ শতাংশই ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) ‘পোশাকশিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বি মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহায়তায় অ্যাডসার্চ বাই আইসিডিডিআর,বি ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ মাসব্যাপী এ গবেষণাটি পরিচালনা করে।

ঢাকার কড়াইল ও মিরপুর বস্তি এবং গাজীপুরের টঙ্গী বস্তিতে আইসিডিডিআর,বির আরবান হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভেলেন্সের আওতাধীন এলাকায় এ গবেষণা চালানো হয়। এসব বস্তিতে বসবাসরত ১৫ থেকে ২৭ বছর বয়সী ৭৭৮ জন নারী পোশাকশ্রমিককে জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

গবেষকেরা বলছেন, নারী শ্রমিকদের মধ্যে যাঁরা অন্তত ৯ বছর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং তুলনামূলক বেশি বয়সে বিয়ে করেছেন, তাঁদের কিশোরী বয়সে (১৫-১৯ বছর) গর্ভধারণের ঝুঁকি তুলনামূলক কম। আর যাঁরা সন্তান ধারণের আগেই গর্ভনিরোধক ব্যবহার শুরু করেছিলেন, তাঁদের কিশোরী বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ কম পাওয়া গেছে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, পোশাক কারখানাগুলোতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা সীমিত। জরিপে অংশ নেওয়া শ্রমিকেরা যেসব কারখানায় কাজ করেন, সেগুলোর মধ্যে শুধু ২২ শতাংশ কারখানায় স্যানিটারি প্যাড পাওয়া যায়। মাত্র ১৪ শতাংশ কারখানায় পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী সরবরাহের তথ্য পেয়েছেন গবেষকেরা।

কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার ৫৫%

দেশের প্রথম কোহর্ট এই গবেষণায় দেখা গেছে, তৈরি পোশাক খাতের নারী শ্রমিকদের বড় অংশ অল্প বয়সে বিয়ে ও গর্ভধারণের শিকার হচ্ছেন এবং কর্মক্ষেত্র ও ঘরে নিয়মিত সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছেন।

দুই বছরে দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ শতাংশে। তবে সহিংসতার মাত্রা কমেনি। গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে মানসিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৫৫ শতাংশ নারী (শুরুতে ছিল ৪৮ শতাংশ)। ঘরে স্বামীর সহিংসতাও বেড়েছে, কিন্তু ভুক্তভোগীদের বড় অংশ আনুষ্ঠানিক সাহায্য নেননি।

স্বামীর দ্বারা সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকলে কিশোরী বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায় বলেও জানানো হয়েছে। গবেষকেরা দেখেছেন, স্বামীর সহিংসতা নারীর ক্ষমতায়নকে প্রভাবিত করে। নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বেশি থাকলে মানসিক ও যৌন সহিংসতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। চলাচলে স্বাধীনতা থাকলেও শারীরিক সহিংসতার ঝুঁকি কমে।

পরিস্থিতির পরিবর্তনে সম্মিলিত উদ্যোগের তাগিদ দিয়েছেন গবেষক দলের প্রধান রুচিরা তাবাসসুম নভেদ। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক দিক থেকে তুলনামূলক এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অবস্থা অন্য নারীদের চেয়েও খারাপ। পরিস্থিতি উন্নয়নের নিয়ামকগুলো নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা দরকার।’

গবেষণা ফলাফল প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর যুগ্ম সম্পাদক ফারজানা শারমিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘কর্মীদের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো সহজলভ্য করা এবং এই বিষয়ে তাঁদের জ্ঞান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সরকারি ক্লিনিকগুলোর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট কার্যসময়ের কারণে কর্মরত নারীরা সেবা গ্রহণের সুযোগ পান না, যা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’

ফারজানা শারমিন আরও বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের জন্য “ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্স” কঠিন। গর্ভধারণের ক্ষেত্রে তাঁদের মতামত প্রাধান্য পায় না। সরকারি ক্লিনিকগুলো কর্মঘণ্টায় খোলা থাকে বলে শ্রমিকরা সেবা নিতে পারেন না—এটা ভেবে দেখা দরকার।’

এছাড়া পোশাক কারখানগুলোতে কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি সাধারণ জন্মবিরতিকরণ সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিতের কথা বলেছেন মেরি স্টোপস বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমিন এইচ আহমেদ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত