গেল আগস্টে গণপিটুনিতে নিহত ২৩
মো. ইসতিয়াক
ঘড়িতে তখন রাত প্রায় ১২টা। ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরের সেতুর ওপর দিয়ে বাড়ি ফিরছিল তিন বন্ধু রিহান মাহিন, রাহাত ও মানিক। কক্সবাজার ঘুরে তারা মাত্রই বাসায় ফিরছিল। হঠাৎই চারপাশে শোনা গেল চিৎকার ‘চোর চোর, ধর ধর’। মুহূর্তের মধ্যেই লাঠি হাতে দৌড়ে এলো কয়েকজন যুবক। তিন কিশোরকে আটকানো হলো সেতুর পাশে। গলায় দড়ি বেঁধে রাখা হলো, ভিড় জমে গেল চারপাশে। শুরু হলো নির্দয় প্রহারের দৃশ্য। কেউ মোবাইলে ভিডিও করছে, কেউ গালাগাল দিচ্ছে, কেউ আবার পেটাতে থাকল। ভিড়ের সামনে তিন কিশোর প্রাণভিক্ষা চাইতে চাইতে কেঁদে উঠল, ‘আমরা চোর নই, আমরা শুধু বাড়ি ফিরছি’। কিন্তু কেউ শুনল না। আইন তখন ভিড়ের হাতে। আর সেই আইনের রায়, নৃশংস মৃত্যুদণ্ড। কিছুক্ষণের মধ্যেই লুটিয়ে পড়ল রিহান মাহিন। অন্য দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। পরে জানা গেছে, চোর সন্দেহে ‘মব’ সৃষ্টি করে ওই কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা ও দুজনকে আহত করা হয়েছে।
হৃদয়বিদারক এই ঘটনাই শেষ নয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব বলছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্প্রতি মব সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। কেবল আগস্ট মাসেই অন্তত ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ৪৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২২ জনকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সবশেষ গত শনিবারও (৩০ আগস্ট) নাটোরে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নবীর আলী (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নাটোর সদর উপজেলার নেপালদিঘী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত নবীর আলী রাজশাহী জেলার বাঘা এলাকার বাসিন্দা।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গণপিটুনিতেই তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় প্রথমে সন্দেহ ছড়ানো হয়। পরে ‘মব’ সংগঠিত করে সন্দেহভাজনদের ওপর হামলা চালানো হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক স্তরেই কেউ পুলিশের আগমন পর্যন্ত অপেক্ষা করে না। তবে সবক্ষেত্রে যে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে মব সহিংসতা করা হয়, এমনটি নয়। আইনের প্রয়োগকারী সংস্থার হেজাফতে থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিও মব ভায়োলেন্সের শিকার হয়েছেন—এমন নজিরও আছে। যেমন, জুলাই গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককেও গত ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে শিকার হতে দেখা গেছে ‘উত্তেজিত জনতার’ মারধরের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক দুই ধরনের মবের কথা বলছেন। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘এখানে (মবের) সাধারণত দুইটা প্যাটার্ন পাওয়া যায়। একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, আরেকটা ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা প্রতিশোধ পরায়ণতা থেকে কারো সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য দখলের উদ্দেশ্যে।’
‘বর্তমানে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, এগুলোকে মব নয়, বরং অপরাধ’, বলছেন তৌহিদুল হক। তাঁর মতে, ‘মব যদি পরিকল্পিতভাবে হয়, তখন আসলে সেটাকে মব বলার সুযোগ নেই। এটা আসলে ক্রাইম। আমাদের এখানে যেটা হচ্ছে, এটা আসলে মব না। সেটা এবসুলুটলি ক্রাইম। মবের আকারে হচ্ছে, কিন্তু এটা পরিকল্পিত।’
মবের সংজ্ঞায়নে তিনি বলেন, ‘মবের সঙ্গে আকস্মিক ব্যাপারটি জড়িত। এটা ঘটে যায়। সেটাকেই আমরা মব হিসেবে কাউন্ট করি। কিন্তু এখানে তো বাড়ির ঠিকানা কোথায় সেটা খুঁজে বের করছে, কারা যাবে ঠিক করা হচ্ছে। নিজেরা অরগানাইজড হয়ে তারপর যাচ্ছে। সেটা তো আর মব থাকে না। এটা ফৌজদারি অপরাধ।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে মব সহিংসতায় ৫১ জন মারা যান। অর্থাৎ, প্রতি মাসে ৪ দশমিক ২৫ জন। মবের হাতে মৃত্যুর হার ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্তও কাছাকাছি ছিল। ওই বছরের প্রথম ৭ মাসে ৩২ জন মানুষ মব সহিংসতায় মারা যান। অর্থাৎ, মাসপ্রতি ৪ দশমিক ৫৭ জন।
কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এ হার আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়। ওই বছরের পরের পাঁচ মাসেই মারা যান ৯৬ জন। অর্থাৎ, মাসপ্রতি প্রায় ১৯ দশমিক ২ জন।
সবমিলিয়ে ২০২৪ সালে ১২৮ জন মানুষ নিহত হন তথাকথিত মব ভালোয়েন্সে। যা এর আগের বছরের চেয়ে ৭৭ জন বেশি। আর চলতি ২০২৫ সালে এসে দেখা যায়, প্রথম ৮ মাসেই ১২৬ জন মানুষ নিহত হয়েছেন মব ভালোয়েন্সে। অর্থাৎ, মাসপ্রতি প্রায় ১৫ দশমিক ৭৫ জন। যা কি না ২০২৪ সালের প্রথম ৭ মাসের তুলনায় ৩ দশমিক ৪৫ গুণ হারে বেড়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগস্ট ২০২৫ মাসে গণপিটুনিতে ৩৮টি ঘটনা ঘটেছে। যদিও ঘটনার সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় কমেছে (গত মাসে ৫১টি ঘটনা), কিন্তু নিহতের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ৪৩ জন, যাদের মধ্যে ২২ জনকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এমএসএফ মনে করে, আইনের অবজ্ঞা করে গণপিটুনি ও হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্পূর্ণ ফৌজদারি অপরাধ, যা বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। অপরাধীদের শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে কিছু শৈথিল্য ও কার্যকর ভূমিকার ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশে ক্রাইম রেট বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হল, ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করছে না। সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতার প্রয়োগও আগের তুলনায় এখন কমে এসেছে। এছাড়া দীর্ঘদিনের সরকারি কাঠামোর অভ্যন্তরীণ প্রভাব এবং সংস্থাগুলোর যথাযথ সমন্বয়ের অভাবও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানের আগে এবং পরে মব সহিংসতার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, পূর্বশত্রুতা, চুরি-ডাকাতি, সামাজিক বিবাদ ও স্থানীয় বিরোধ সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আরও উদ্বেগজনকভাবে তুলে ধরেছে।
এমএসএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসেই নিহতদের মধ্যে অভিযোগ অনুযায়ী, ১০ জনকে হত্যা করা ‘চুরির অভিযোগ’ এনে এবং চার জনকে ‘সন্দেহজনক চুরির’ অভিযোগে। এ ছাড়া ‘ডাকাতির অভিযোগে’ তিন জন, পূর্ব শত্রুতার জেরে দুজন, ‘ছিনতাইয়ের অভিযোগে’ দুজন এবং ‘মাদক সংশ্লিষ্টতা’ ও ‘চাঁদাবাজি’র অভিযোগ এনে একজন করে মব সহিংসতায় নিহত হয়েছেন।
বাংলাদেশের সংবিধান নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সংবিধান নিশ্চিত করেছে যে, কেউই তার মৌলিক অধিকার হরণ করার অপরাধে অব্যাহতি পাবে না।
সংবিধানের তৃতীয় ভাগে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী।’
অন্যদিকে, সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণাদায়ক, নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না এবং কাউকে এধরণের আচরণের সম্মুখীন হতে হবে না।’ একই অনুচ্ছেদের ধারা তিন অনুসারে, ‘ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার পাওয়ার অধিকারী।’
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কেও সংবিধান স্পষ্ট। ৩৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে অযথা প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং তাকে মনোনীত আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।’
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, কেউ অপরাধ সংঘটন করলে তাকে অবশ্যই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। ব্যতিক্রমে দণ্ডবিধি ১৮৭ ধারায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
যদি কোনো হামলার ঘটনায় ব্যক্তি মারা যান, দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা প্রমাণিত হলে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা করা যেতে পারে।
গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণিত হলে, এটি দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ২৯৯ ধারায় ‘খুন’ হিসেবে গণ্য হবে। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় মামলা হতে পারে, যেখানে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। এছাড়া আদালত চাইলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানাও দিতে পারে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণার ১০ নম্বর অনুচ্ছেদেও বলা আছে, প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে বিচার পাওয়ার।
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান মনে করেন, মব সহিংসতা রোধে শুধু আইন থাকা যথেষ্ট নয়, সেটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা জরুরি। তিনি বলেন, ‘আইন আছে কি না, তা দেখার আগে দেখা দরকার, তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না। দেশে যখন অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে, তখন মানুষ নিজের হাতে আইন প্রয়োগের প্রবণতা দেখায়।’
প্রশাসনের পদক্ষেপে ঘাটতির কথাও উল্লেখ করে এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, যা মব সহিংসতা সৃষ্টি করা মানুষকে সতর্ক করবে।’
এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ইলিয়াস আহমেদ বলেন, ‘যখন মানুষের মধ্যে দেশের আইনের শাসন এবং তার যথাযথ প্রয়োগে আস্থা থাকে না, তখন কিছু মানুষ নিজের হাতে আইন প্রয়োগ করে। তারা নিজেকে শাসক বা বিচারকের ভূমিকা দেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইনের শাসন যথাযথভাবে কার্যকর না হলে মানুষের আস্থা কমে যায় এবং এ ধরনের সহিংসতা বৃদ্ধি পায়।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক রবিউল ইসলাম মনে করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় যথাযথ সমন্বয় না করলে, প্রশাসনিক পদক্ষেপ সীমিত থেকে যায়। এর ফলে আইন নিজের হাতে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি তৈরি হয়।
গণপিটুনি বা মব সহিংসতার মতো ঘটনায় দ্রুত বিচার অপরিহার্য বলেও মনে করেন আইনের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে স্পিডি ট্রায়াল ট্রাইব্যুনাল থাকলেও কার্যকর প্রয়োগ নেই। অধিকাংশ কেস রেগুলার কোর্টে চলে গেলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয় এবং অপরাধীদের মধ্যে ইমপিউনিটি বা দোষমুক্ত থাকার ধারণা তৈরি হয়। অধ্যাপক রবিউল ইসলাম স্পষ্ট করে বলেন, যথাযথভাবে স্পিডি ট্রায়াল ব্যবস্থার প্রয়োগ হলে এই ধরনের জামিন-টামিন ইস্যুও কমতে পারে।’
গত ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ফুল দিতে গিয়ে রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমান গণপিটুনির শিকার হন। পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলনের এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার হওয়া আজিজুর রহমানকে রোববার (১৭ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এমএ আজহারুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ‘অভিযুক্ত সব ব্যক্তির বিচার দেশের আইন অনুযায়ী হবে এবং আদালতই শেষ সিদ্ধান্ত দেবেন। কারো ওপর আক্রমণ বা শারীরিক লাঞ্ছনাকে বেআইনি ও ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। মব সৃষ্টি করে অশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
১৮ আগস্ট সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২তম সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘মব জাস্টিস কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঢাকাতে মব জাস্টিস কমেছে, তবে আশপাশের দুয়েকটি ঘটনা এখনো ঘটছে। সরকার যতটা সম্ভব, তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।’
ঘড়িতে তখন রাত প্রায় ১২টা। ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরের সেতুর ওপর দিয়ে বাড়ি ফিরছিল তিন বন্ধু রিহান মাহিন, রাহাত ও মানিক। কক্সবাজার ঘুরে তারা মাত্রই বাসায় ফিরছিল। হঠাৎই চারপাশে শোনা গেল চিৎকার ‘চোর চোর, ধর ধর’। মুহূর্তের মধ্যেই লাঠি হাতে দৌড়ে এলো কয়েকজন যুবক। তিন কিশোরকে আটকানো হলো সেতুর পাশে। গলায় দড়ি বেঁধে রাখা হলো, ভিড় জমে গেল চারপাশে। শুরু হলো নির্দয় প্রহারের দৃশ্য। কেউ মোবাইলে ভিডিও করছে, কেউ গালাগাল দিচ্ছে, কেউ আবার পেটাতে থাকল। ভিড়ের সামনে তিন কিশোর প্রাণভিক্ষা চাইতে চাইতে কেঁদে উঠল, ‘আমরা চোর নই, আমরা শুধু বাড়ি ফিরছি’। কিন্তু কেউ শুনল না। আইন তখন ভিড়ের হাতে। আর সেই আইনের রায়, নৃশংস মৃত্যুদণ্ড। কিছুক্ষণের মধ্যেই লুটিয়ে পড়ল রিহান মাহিন। অন্য দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। পরে জানা গেছে, চোর সন্দেহে ‘মব’ সৃষ্টি করে ওই কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা ও দুজনকে আহত করা হয়েছে।
হৃদয়বিদারক এই ঘটনাই শেষ নয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব বলছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্প্রতি মব সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। কেবল আগস্ট মাসেই অন্তত ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ৪৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২২ জনকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সবশেষ গত শনিবারও (৩০ আগস্ট) নাটোরে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নবীর আলী (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নাটোর সদর উপজেলার নেপালদিঘী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত নবীর আলী রাজশাহী জেলার বাঘা এলাকার বাসিন্দা।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গণপিটুনিতেই তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় প্রথমে সন্দেহ ছড়ানো হয়। পরে ‘মব’ সংগঠিত করে সন্দেহভাজনদের ওপর হামলা চালানো হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক স্তরেই কেউ পুলিশের আগমন পর্যন্ত অপেক্ষা করে না। তবে সবক্ষেত্রে যে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে মব সহিংসতা করা হয়, এমনটি নয়। আইনের প্রয়োগকারী সংস্থার হেজাফতে থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিও মব ভায়োলেন্সের শিকার হয়েছেন—এমন নজিরও আছে। যেমন, জুলাই গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককেও গত ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে শিকার হতে দেখা গেছে ‘উত্তেজিত জনতার’ মারধরের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক দুই ধরনের মবের কথা বলছেন। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘এখানে (মবের) সাধারণত দুইটা প্যাটার্ন পাওয়া যায়। একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, আরেকটা ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা প্রতিশোধ পরায়ণতা থেকে কারো সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য দখলের উদ্দেশ্যে।’
‘বর্তমানে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, এগুলোকে মব নয়, বরং অপরাধ’, বলছেন তৌহিদুল হক। তাঁর মতে, ‘মব যদি পরিকল্পিতভাবে হয়, তখন আসলে সেটাকে মব বলার সুযোগ নেই। এটা আসলে ক্রাইম। আমাদের এখানে যেটা হচ্ছে, এটা আসলে মব না। সেটা এবসুলুটলি ক্রাইম। মবের আকারে হচ্ছে, কিন্তু এটা পরিকল্পিত।’
মবের সংজ্ঞায়নে তিনি বলেন, ‘মবের সঙ্গে আকস্মিক ব্যাপারটি জড়িত। এটা ঘটে যায়। সেটাকেই আমরা মব হিসেবে কাউন্ট করি। কিন্তু এখানে তো বাড়ির ঠিকানা কোথায় সেটা খুঁজে বের করছে, কারা যাবে ঠিক করা হচ্ছে। নিজেরা অরগানাইজড হয়ে তারপর যাচ্ছে। সেটা তো আর মব থাকে না। এটা ফৌজদারি অপরাধ।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে মব সহিংসতায় ৫১ জন মারা যান। অর্থাৎ, প্রতি মাসে ৪ দশমিক ২৫ জন। মবের হাতে মৃত্যুর হার ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্তও কাছাকাছি ছিল। ওই বছরের প্রথম ৭ মাসে ৩২ জন মানুষ মব সহিংসতায় মারা যান। অর্থাৎ, মাসপ্রতি ৪ দশমিক ৫৭ জন।
কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এ হার আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়। ওই বছরের পরের পাঁচ মাসেই মারা যান ৯৬ জন। অর্থাৎ, মাসপ্রতি প্রায় ১৯ দশমিক ২ জন।
সবমিলিয়ে ২০২৪ সালে ১২৮ জন মানুষ নিহত হন তথাকথিত মব ভালোয়েন্সে। যা এর আগের বছরের চেয়ে ৭৭ জন বেশি। আর চলতি ২০২৫ সালে এসে দেখা যায়, প্রথম ৮ মাসেই ১২৬ জন মানুষ নিহত হয়েছেন মব ভালোয়েন্সে। অর্থাৎ, মাসপ্রতি প্রায় ১৫ দশমিক ৭৫ জন। যা কি না ২০২৪ সালের প্রথম ৭ মাসের তুলনায় ৩ দশমিক ৪৫ গুণ হারে বেড়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগস্ট ২০২৫ মাসে গণপিটুনিতে ৩৮টি ঘটনা ঘটেছে। যদিও ঘটনার সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় কমেছে (গত মাসে ৫১টি ঘটনা), কিন্তু নিহতের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ৪৩ জন, যাদের মধ্যে ২২ জনকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এমএসএফ মনে করে, আইনের অবজ্ঞা করে গণপিটুনি ও হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্পূর্ণ ফৌজদারি অপরাধ, যা বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। অপরাধীদের শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে কিছু শৈথিল্য ও কার্যকর ভূমিকার ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশে ক্রাইম রেট বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হল, ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করছে না। সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতার প্রয়োগও আগের তুলনায় এখন কমে এসেছে। এছাড়া দীর্ঘদিনের সরকারি কাঠামোর অভ্যন্তরীণ প্রভাব এবং সংস্থাগুলোর যথাযথ সমন্বয়ের অভাবও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানের আগে এবং পরে মব সহিংসতার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, পূর্বশত্রুতা, চুরি-ডাকাতি, সামাজিক বিবাদ ও স্থানীয় বিরোধ সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আরও উদ্বেগজনকভাবে তুলে ধরেছে।
এমএসএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসেই নিহতদের মধ্যে অভিযোগ অনুযায়ী, ১০ জনকে হত্যা করা ‘চুরির অভিযোগ’ এনে এবং চার জনকে ‘সন্দেহজনক চুরির’ অভিযোগে। এ ছাড়া ‘ডাকাতির অভিযোগে’ তিন জন, পূর্ব শত্রুতার জেরে দুজন, ‘ছিনতাইয়ের অভিযোগে’ দুজন এবং ‘মাদক সংশ্লিষ্টতা’ ও ‘চাঁদাবাজি’র অভিযোগ এনে একজন করে মব সহিংসতায় নিহত হয়েছেন।
বাংলাদেশের সংবিধান নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সংবিধান নিশ্চিত করেছে যে, কেউই তার মৌলিক অধিকার হরণ করার অপরাধে অব্যাহতি পাবে না।
সংবিধানের তৃতীয় ভাগে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী।’
অন্যদিকে, সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণাদায়ক, নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না এবং কাউকে এধরণের আচরণের সম্মুখীন হতে হবে না।’ একই অনুচ্ছেদের ধারা তিন অনুসারে, ‘ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার পাওয়ার অধিকারী।’
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কেও সংবিধান স্পষ্ট। ৩৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে অযথা প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং তাকে মনোনীত আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।’
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, কেউ অপরাধ সংঘটন করলে তাকে অবশ্যই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। ব্যতিক্রমে দণ্ডবিধি ১৮৭ ধারায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
যদি কোনো হামলার ঘটনায় ব্যক্তি মারা যান, দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা প্রমাণিত হলে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা করা যেতে পারে।
গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণিত হলে, এটি দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ২৯৯ ধারায় ‘খুন’ হিসেবে গণ্য হবে। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় মামলা হতে পারে, যেখানে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। এছাড়া আদালত চাইলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানাও দিতে পারে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণার ১০ নম্বর অনুচ্ছেদেও বলা আছে, প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে বিচার পাওয়ার।
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান মনে করেন, মব সহিংসতা রোধে শুধু আইন থাকা যথেষ্ট নয়, সেটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা জরুরি। তিনি বলেন, ‘আইন আছে কি না, তা দেখার আগে দেখা দরকার, তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না। দেশে যখন অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে, তখন মানুষ নিজের হাতে আইন প্রয়োগের প্রবণতা দেখায়।’
প্রশাসনের পদক্ষেপে ঘাটতির কথাও উল্লেখ করে এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, যা মব সহিংসতা সৃষ্টি করা মানুষকে সতর্ক করবে।’
এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ইলিয়াস আহমেদ বলেন, ‘যখন মানুষের মধ্যে দেশের আইনের শাসন এবং তার যথাযথ প্রয়োগে আস্থা থাকে না, তখন কিছু মানুষ নিজের হাতে আইন প্রয়োগ করে। তারা নিজেকে শাসক বা বিচারকের ভূমিকা দেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইনের শাসন যথাযথভাবে কার্যকর না হলে মানুষের আস্থা কমে যায় এবং এ ধরনের সহিংসতা বৃদ্ধি পায়।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক রবিউল ইসলাম মনে করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় যথাযথ সমন্বয় না করলে, প্রশাসনিক পদক্ষেপ সীমিত থেকে যায়। এর ফলে আইন নিজের হাতে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি তৈরি হয়।
গণপিটুনি বা মব সহিংসতার মতো ঘটনায় দ্রুত বিচার অপরিহার্য বলেও মনে করেন আইনের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে স্পিডি ট্রায়াল ট্রাইব্যুনাল থাকলেও কার্যকর প্রয়োগ নেই। অধিকাংশ কেস রেগুলার কোর্টে চলে গেলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয় এবং অপরাধীদের মধ্যে ইমপিউনিটি বা দোষমুক্ত থাকার ধারণা তৈরি হয়। অধ্যাপক রবিউল ইসলাম স্পষ্ট করে বলেন, যথাযথভাবে স্পিডি ট্রায়াল ব্যবস্থার প্রয়োগ হলে এই ধরনের জামিন-টামিন ইস্যুও কমতে পারে।’
গত ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ফুল দিতে গিয়ে রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমান গণপিটুনির শিকার হন। পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলনের এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার হওয়া আজিজুর রহমানকে রোববার (১৭ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এমএ আজহারুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ‘অভিযুক্ত সব ব্যক্তির বিচার দেশের আইন অনুযায়ী হবে এবং আদালতই শেষ সিদ্ধান্ত দেবেন। কারো ওপর আক্রমণ বা শারীরিক লাঞ্ছনাকে বেআইনি ও ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। মব সৃষ্টি করে অশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
১৮ আগস্ট সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২তম সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘মব জাস্টিস কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঢাকাতে মব জাস্টিস কমেছে, তবে আশপাশের দুয়েকটি ঘটনা এখনো ঘটছে। সরকার যতটা সম্ভব, তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।’
রূপপুর গ্রিন সিটি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালের ১৯ মে গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত প্রতিবেদনে আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় এবং ভবনে উঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়টি প্রমাণ হয়।
১ ঘণ্টা আগেআসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপের এডমিনকে তলব করেছে কর্তৃপক্ষ।
১ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের এক বক্তব্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা এবং তাঁর ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে আলোচনা তৈরি করেছে। ট্রাভেল ডকুমেন্ট হলো এমন একটি সরকারি নথি, যা কোনো ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করে এবং তাঁকে আন্তর্জাতিকভাবে ভ্রমণ বা অ
২ ঘণ্টা আগেগত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন পাভেল।
৩ ঘণ্টা আগে