leadT1ad

নিখোঁজের ৫৫ দিনেও খোঁজ নেই তিন মাদ্রাসাছাত্রীর, হোটেল সিলগালা

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
ঠাকুরগাঁও

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ২২
নিখোঁজ তিন ছাত্রী। ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

ঠাকুরগাঁওয়ে তিন মাদ্রাসাছাত্রীর নিখোঁজের ঘটনায় রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ৫৫ দিন পার হলেও তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজের দিন রাতেই তারা ঠাকুরগাঁও শহরের রোড এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছিল। তবে ভোর হওয়ার আগেই হোটেল ত্যাগ করে চলে যায়। এরপর থেকেই তাদের আর খোঁজ মেলেনি।

গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ওই আবাসিক হোটেলে অভিযান চালায় প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশালিন তুরাগের নেতৃত্বে অভিযানে নিয়মিত নিবন্ধন নবায়ন না করা এবং নানা অনিয়মের অভিযোগে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও হোটেলটি সিলগালা করা হয়।

ছাত্রী নিখোঁজের ঘটনায় (৯ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তবে নিখোঁজের প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। মা–বাবার আহাজারি থামছে না। তারা প্রতিনিয়ত লিফলেট হাতে নিয়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন। তবুও মেলেনি কোনো সান্ত্বনা বা নিশ্চিত খবর।

নিখোঁজ ছাত্রীরা হলো, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মুরালিপুর গ্রামের শাহজালালের মেয়ে জুঁই (১৪), একই উপজেলার গণকপয়নর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তামান্না (১৬) এবং ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গোবিন্দনগর এলাকার বাসিন্দা রবিউলের মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা (১৩)। তারা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর মাদ্রাসা পাড়া এলাকার ‘আয়শা সিদ্দিকা বালিকা মাদ্রাসা’র ছাত্রী।

নিখোঁজ মেয়েদের সন্ধানে পোস্টার। স্ট্রিম ছবি
নিখোঁজ মেয়েদের সন্ধানে পোস্টার। স্ট্রিম ছবি

মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে সর্বশেষ মাদ্রাসায় দেখা যায় ওই তিন ছাত্রীকে। ভোর ৫টার সময় তাদের ডাকতে গেলে তারা রুমে ছিল না। পরে মাদ্রাসার দোতলার বারান্দায় ঝুলন্ত অবস্থায় বাঁধা মশারি দেখে কর্তৃপক্ষ ধারণা করে, তারা পালিয়ে গেছে।

শহরের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, নিখোঁজ তিন ছাত্রী রাত ১টার দিকে একটি রিকশা করে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ডে যায়। পরে রিকশা বদলে তারা রেলস্টেশনে পৌঁছায়। তবে সেদিন রাতে কোনো ট্রেন না থাকায় তারা রোড আবাসিক হোটেলে ভোর ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে। এরপর হোটেল ম্যানেজারের সাহায্যে স্টেশনে গিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার রোড অটোস্ট্যান্ডে ফিরে আসে এবং ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জের উদ্দেশে একটি অটোরিকশায় রওনা হয়। তারপর থেকেই তারা নিখোঁজ।

হোটেল রেজিস্টার খাতায় ওই তিন ছাত্রীর নাম-ঠিকানা কোনোভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। শুধু তাদেরই নয়, অতিথিদের নাম-ঠিকানা রেজিস্টারে না লেখার অভিযোগ রয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

রোড আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার আসাদুজ্জামান ইমন বলেন, ‘রাত ২টার দিকে তিনজন মেয়ে এসে বলেন, তারা কিছুক্ষণ থাকবেন এবং ভোরে চলে যাবেন। পরে আমি তাদের ব্যাগ গাড়িতে তুলে দিই।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে হোটেলের মালিক রাকিব হাসান বলেন, ‘লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু এখনো পাইনি।’ তবে হোটেল ম্যানেজমেন্টের গাফিলতি থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।

আয়শা সিদ্দিকা বালিকা মাদ্রাসা। স্ট্রিম ছবি
আয়শা সিদ্দিকা বালিকা মাদ্রাসা। স্ট্রিম ছবি

নিখোঁজদের পরিবার জানায়, তারা থানায় গিয়েছেন, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। পুলিশের কাছ থেকে শুধু ‘তদন্ত চলছে’—এমন জবাবই মিলছে। এক অভিভাবক বলেন, ‘৫৫ দিনেও মেয়েদের খোঁজ না মেলায় আমরা হতাশ। আমাদের মেয়েরা কী করছে, কেমন আছে, আল্লাহই জানেন। আমরা শুধু আমাদের সন্তানদের ফেরত চাই।’

নিখোঁজ তামান্নার মা আখলিমা বেগম বলেন, ‘মাদ্রাসায় অনেক শিক্ষার্থী থাকলেও সেখানে কোনো নিরাপত্তা প্রহরী নেই। ভবনের বারান্দায় গ্রিল না থাকায় সহজেই কেউ ভেতরে বা বাইরে যেতে পারে। আমরা মেয়েদের ওদের ভরসায় মাদ্রাসায় রেখেছিলাম।’

নিখোঁজ আয়শার বোন লাবনী বলেন, ‘আমরা জেনেছি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মারধর করত। আমার বোন নিখোঁজ হওয়ার কয়েক দিন আগে আমাদের এসব জানিয়েছিল এবং সেখান থেকে নিয়ে আসতে বলেছিল। আমরা না আনার কারণেই আজ এই পরিণতি।’

নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার দায় স্বীকার করে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারিনি এত দ্রুত এমন কিছু ঘটতে পারে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছিলাম। তবে নির্যাতনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তিন শিক্ষার্থী নিখোঁজের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। প্রশাসনের কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো গাফিলতি নেই।’

জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, ‘নিখোঁজের পরপরই পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাদের খুঁজে বের করতে। আশা করছি দ্রুতই তারা পরিবারের কাছে ফিরবে।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত