leadT1ad

নাহিদের এক দফা ঘোষণা, হাসিনা বললেন, গণভবনের দরজা খোলা আছে

৩ আগস্ট, ২০২৪। এদিন বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের তৎকালীন নেতা নাহিদ ইসলাম। তার আগেই সরকার পতনের আন্দোলনে যোগ দিতে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। বাড্ডা থেকে আসা শওকত বলেন, ‘তাকিয়ে তাকিয়ে সন্তানদের মৃত্যু দেখা সম্ভব নয়, তাই আন্দোলনে নেমেছি।’ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রয়েছে এমন অজস্র মানুষের ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত স্মৃতি। সেসব দিনে ফিরে দেখা।

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১১: ২১
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ৪০
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বক্তব্য রাখছেন। ছবি: সংগৃহীত

সারাদিন আকাশ মেঘলা। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যেই রাজধানীর বাড্ডা থেকে পরিবার নিয়ে শহীদ মিনারে এসেছেন শওকত হোসেন। এক হাতে দেশের পতাকা, আরেক হাতে শক্ত করে ছোট মেয়ের হাত ধরে রেখেছেন। কেন এসেছেন, জিজ্ঞেস করতেই জানালেন এই লড়াই কেবল সন্তানদের নয়। অভিভাবকেরাও এর সঙ্গে শামিল হতে চান। তাকিয়ে তাকিয়ে সন্তানদের মৃত্যু দেখা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।

শওকত হোসেনের মতো অনেকেই গত বছরের ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে এসেছিলেন। কেউ এসেছিলেন একা, কেউ এসেছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে, কেউ আবার এসেছিলেন পরিবারের সঙ্গে। সবার মুখেই তখন একটাই দাবি—শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাই।

সেদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এক দফা ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। শহীদ মিনারের বেদিতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে এক দফার দাবিতে এখানে হাজির হয়েছি এবং আমরা বাংলাদেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, সমাজের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এক দফা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এই সরকার কোনোভাবেই আর এক মিনিটও ক্ষমতায় থাকার বৈধতা রাখে না।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শুধু শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করলেই হবে না, এই যে খুন, লুটপাট, দুর্নীতি এই দেশে হয়েছে, তার বিচার হতে হবে…শুধু শেখ হাসিনা নয়, পুরো মন্ত্রিপরিষদ, সরকারের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।’

আন্দোলনকারীরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করতে চান জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘এই যে রেজিম, এই যে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা, এটাকে বিলোপ করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, এমন একটি বন্দোবস্ত তৈরি করতে চাই, যেখানে আর কখনোই কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র, কোনো ধরনের ফ্যাসিজম ফিরে আসবে না।’

শেখ হাসিনা বললেন, গণভবনের দরজা খোলা আছে

সেদিন শেখ হাসিনা গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে তিনি জানান আন্দোলনকারীরা আলোচনায় বসতে চাইলে গণভবনের দরজা খোলা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার সাথে যদি বসতে চায়, তাহলে আমি বসতে রাজি। তারা যদি এখনও আসতে চায়, কথা বলতে চায়, আমি তাদের সাথে কথা বলতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। তাদের দাবির কী কী বাকি আছে আমি এটা শুনতে চাই এবং যেটা আমাদের সাধ্যমতো, সেটা আমি পূরণ করতে চাই। আমি এই সংঘাত চাই না।’

‘নিরীহ’ শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এটাও নির্দেশ দিয়েছি যে এর ভিতরে যারা নিরীহ আছে, তাদের সবাইকে এবং ছাত্র যারা একেবারে খুনের সাথে জড়িত না বা সমস্ত ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে জড়িত না তাদেরকে মুক্তি দেওয়া শুরু করবে এবং সেটা শুরু হয়ে যাচ্ছে।’

এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছেন গণভবনের দরজা খোলা আছে। আমরা আগেই সাধুবাদ জানাই যে তিনি বুঝতে পেরেছেন গণভবনের দরজা খোলা রাখতে হবে এবং তাঁর যাওয়ার সময় হয়েছে।’

অসহযোগ আন্দোলনের ডাক

৪ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। ৩ আগস্ট দুপুর ১২টা নাগাদ নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে নাহিদ ইসলাম এ বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দেন। সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি লেখেন, কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবে না, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবে না, সব ধরনের সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে; কেউ অফিসে যাবে না, মাস শেষে বেতন তুলবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিটেন্স দেশে পাঠাবে না।

নাহিদ ইসলাম আরও আহ্বান জানান, দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, জরুরি ব্যাক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রবিবারে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে, পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবে না।

Ad 300x250

সম্পর্কিত