সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) শীর্ষ আট জনের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, অনুসন্ধান দলের দাখিল করা প্রতিবেদনের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
দুদকের মামলায় আসামিরা হলেন— সিআরআই’র চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, ভাইস-চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ, ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, ট্রাস্টি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (বিপু), প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর আপিল সদস্য রওশন আরা আক্তার, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
দুদক মহাপরিচালক জানান, অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিআরআই সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান না হওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্তরা আয়কর আইনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে আয়কর মওকুফ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এর মাধ্যমে তারা অন্যায়ভাবে লাভবান হয়েছেন এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন।
আক্তার হোসেন বলেন, ‘অবৈধভাবে চাপ প্রয়োগ করে অনুদান গ্রহণের মাধ্যমে সিআরআই-এর হিসাবে ২৩টি কোম্পানির কাছ থেকে ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা গ্রহণ করা হয়।’
দুদকের অনুসন্ধানে সিআরআই’র বিপুল পরিমাণ আর্থিক গরমিলের তথ্য উঠে এসেছে।
দুদক মহাপরিচালক বলেন, “২০১৩-১৪ কর বছর থেকে ২০২৩-২৪ কর বছর পর্যন্ত মোট ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা অবৈধভাবে আয় করা হয়। ওই সময়ে গ্রহণযোগ্য ব্যয় ছিল ২৯ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬ টাকা। সেই হিসাবে সিআরআই হিসাবে জমা থাকার কথা ৭০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা। কিন্তু স্থিতি রয়েছে ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ টাকা। অর্থাৎ, ওই আয়ের মধ্যে ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।”
দুদক আরও জানায়, সিআরআই’র নামে খোলা ২৫টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে মোট ৪৩৯ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮০ টাকা ৫০ পয়সার "সন্দেহজনক লেনদেন" হয়েছে। এছাড়া ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৭৪২ টাকা আয়কর প্রদান না করে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করার অভিযোগও আনা হয়।
দুদক বলছে, এই অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর এবং হস্তান্তরের মাধ্যমে আত্মসাতের অপরাধ অনুসন্ধানকালে প্রমাণিত হয়েছে। এই কারণে ওই আটজন আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।