ট্রাইব্যুনালে পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষ্য
স্ট্রিম প্রতিবেদক
জুলাই গণআন্দোলনের সময় পুলিশের এডিসি শাহ আলম মোহাম্মদ আক্তারুল ইসলামের নির্দেশে প্রয়োজন ছাড়াই ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা গুলি করতে না চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন আক্তার।
আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথমবারের মতো জবানবন্দি দিয়েছেন জুলাই গণআন্দোলনের সময় মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপালনকারী পুলিশ কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. আশরাফুল ইসলাম। জবানবন্দিতে তিনি এডিসি আক্তারের ব্যাপারে এই সাক্ষ্য দেন। ট্রাইব্যুনাল-১ এ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে ৩৯তম সাক্ষী হিসেবে তিনি আজ এ জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় পুলিশের এডিসি আক্তারের নির্দেশে প্রয়োজন ছাড়াই সাউন্ড গ্রেনেড, গ্যাস গান ও শর্টগান দিয়ে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। অধস্তন পুলিশ অফিসার ও সদস্যরা গুলি করতে না চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তিনি। ‘তোরা সরকারের বেতন রেশন খাস না? গুলি করবি না কেন? তোদের চাকরি খেয়ে নিবো’ হুমকি দেন এডিসি আক্তার।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ১৯৯৪ সালের ১১ জানুয়ারি পুলিশে যোগ দিই। ২০০২ সালের ১৩ জুলাই থেকে ডিএমপি ঢাকায় যোগদান করে এখনও কর্মরত আছি। ২০১৮ সালে এসআই (সশস্ত্র) হিসেবে পদোন্নতি পাই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট সঙ্গীয় এএসআই মুরাদ, নায়েক জসিম, কনস্টেবল মাহমুদুল, কনস্টেবল মেহেদী, কনস্টেবল নাসিরুল, কনস্টেবল মাহবুবসহ এক প্লাটুন এবং এসআই হেলাল তার ফোর্সসহ এক প্লাটুন অফিসার ও ফোর্স আমাদের নিজ নামে অস্ত্র, গুলি, বুলেট প্রুফ জেকেট ইত্যাদি সরঞ্জামাদিসহ পিওএম পুলিশ লাইন মিরপুর থেকে ভোরে রওনা হই। সকালে জরুরি আইনশৃঙ্খলা ডিউটির জন্য শাহবাগ থানায় যাই। সেখানে জানতে পারি যে সকালে ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান স্যার এবং যুগ্ম পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী শাহবাগ থানায় উপস্থিত হয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের ওইদিন আন্দোলন দমনে গুলি করাসহ অন্যান্য নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।’
সাক্ষী জানান, ওইদিন আন্দোলনকারীদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ছিলো। সকাল ৯টার দিকে উক্ত দুই প্লাটুনসহ ডিএমপি থেকে আসা এক প্লাটুন পুলিশ, ১৩-এপিবিএন থেকে আসা এক প্লাটুন পুলিশ এবং রাজারবাগ থেকে আসা এক প্লাটুন নারী পুলিশসহ মোট পাঁচ প্লাটুন পুলিশ সদস্য এবং রমনা জোনের তৎকালীন এসি ইমরুল, শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মো. আরশাদ হোসেনকে তৎকালীন এডিসি শাহ আলম মোহাম্মদ আক্তারুল ইসলাম আইনশৃঙ্খলা দায়িত্ব নিয়ে ব্রিফ করেন। ব্রিফিং শেষে নারী পুলিশ ও ডিএমপি পুলিশের দুই প্লাটুন ছাড়া ৬০/৬৫ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে এডিসি আক্তার, এসি ইমরুল, ইন্সপেক্টর মো. আরশাদ হোসেনের নেতৃত্বে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ডিউটিতে যান আশরাফুল ইসলাম। সেখানে গিয়ে এসি ইমরুলসহ কয়েকজন কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় এডিসি আক্তারের নির্দেশে কয়েকজন আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করে প্রিজন ভ্যানে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয়। এডিসি আক্তারের নির্দেশে এসি ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদ, আনুমানিক ১৫/২০ জন এপিবিএন সদস্য, ডিএমপির ১০/১৫ জন সদস্যের সঙ্গে সাক্ষী আশরাফুলসহ তার সঙ্গীয় কনস্টেবল পিয়াস, আসিফ, আকাশ, নাসিরুলসহ হেঁটে সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে চানখারপুলে যান। চানখারপুল সংলগ্ন বংশাল ও চকবাজার এলাকা থেকে আসা ছাত্র-জনতা মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে শাহবাগের দিকে যেতে চাইলে এডিসি আক্তারের নির্দেশে কোনো প্রয়োজন ছাড়া সাউন্ড গ্রেনেড, গ্যাস গান ও শর্টগান দিয়ে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এই গুলি করা হয় চানখারপুল মোড়ে। এপিবিএন পুলিশকে দিয়ে শর্টগান ফায়ার করে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হয়।
সাক্ষী বলেন, ‘ওই সময় এডিসি আক্তারুল স্যার বলেন, “তোমাদের যাদের কাছে পিস্তল ও চায়না রাইফেল আছে তারা আন্দোলনকারীদের প্রতি ফায়ার করে তাদের মেরে ফেলো”। তখন আমিসহ আরো কয়েকজন স্যারের এই অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ আদেশ পালন না করলে স্যার আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। তিনি আমাদেরকে হুমকি দিয়ে বলেন, “তোরা সরকারের বেতন রেশন খাস না? গুলি করবি না কেন? তোদের চাকরি খেয়ে নিবো”। তবু আমি আমার পিস্তল দিয়ে ফায়ার করা থেকে বিরত থাকি। এরপর সঙ্গীয় কনস্টেবল মো. নাসিরুল ইসলাম এডিসি আক্তারুল স্যারের সরবরাহ করা অতিরিক্ত গুলি ব্যবহার করে স্যারের নির্দেশে ও দেখানো মতে রাস্তায় বসে চায়না রাইফেলে গুলি লোড করে এবং আন্দোলনকারীদের টার্গেট করে বার বার ফায়ার করতে থাকে। এ সময় এডিসি আক্তারুল ইসলাম স্যার এপিবিএন পুলিশের একজন কনস্টেবলের হাত থেকে চায়না রাইফেল কেড়ে নিয়ে এপিবিএন পুলিশের কনস্টেবল সুজন হোসেনের হাতে দেয়। যার হাত থেকে চায়না রাইফেল কেড়ে নেওয়া হয় সে গুলি করা থেকে বিরত ছিলো। পরে জেনেছি তার নাম অজয়।’
আশরাফুল ইসলাম জবানবন্দিতে আরও বলেন, ‘এরপর কনস্টেবল সুজন হোসেন চানখারপুল মোড়ে কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো শুয়ে, কখনো হাঁটু গেড়ে বসে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করতে থাকে। তাছাড়াও এপিবিএনের কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন তার নামে ইস্যুকৃত চায়না রাইফেল দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করে। আমি দেখতে পাই এই গুলিতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে অন্য আন্দোলনকারীরা তাদের ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর এসি ইমরুল স্যার, ইন্সপেক্টর আরশাদ স্যার এপিবিএনের ৫/৭ জন সদস্য নিয়ে নাজিমুদ্দিন রোডের বিভিন্ন গলিতে গুলি করতে করতে প্রবেশ করলে আমরা চায়না রাইফেলের গুলির শব্দ শুনতে পাই। এরপর শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে শুনতে পেয়ে দুপুরে চানখারপুল এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন এডিসি আক্তারুল স্যারের নির্দেশে টিএসটি মোড় হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে শাহবাগ থানার পিছন দিক দিয়ে থানায় প্রবেশ করি। এডিসি আক্তারুল স্যারের নির্দেশে নিজ নিজ নামে ইস্যুকৃত অস্ত্রগুলো শাহবাগ থানার অস্ত্রাগারে জমা দেই। আমার সঙ্গীয় কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম তার নামে ইস্যুকৃত চায়না রাইফেলের ৪০ রাউন্ড গুলি জমা করলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি—“তুমি চানখারপুলে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার পরেও ৪০ রাউন্ড গুলি কিভাবে জমা করলে?” উত্তরে সে বলে, “এডিসি আক্তারুল স্যার আমাকে অতিরিক্ত গুলি সরবরাহ করেছে।” এরপর পোশাক পাল্টে সিভিল ড্রেস পরে এশার নামাজের পরে শাহবাগ থানার পিছন দিয়ে বের হয়ে হেঁটে ছাত্র-জনতার সাথে মিশে মিরপুর পুলিশ লাইনে রাত ১১টার দিকে পৌঁছাই।’
৩৭ তম সাক্ষী মোহাম্মদ হাসান চট্টগ্রাম কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি জানান, গত বছরের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম টাইগার পাস এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে মুরাদপুর, নতুন ব্রিজ, কক্সবাজারের চকরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। ১৬ জুলাই দুপুরে আমার বহদ্দার হাটের বাসা থেকে আমিসহ ১০ জন বন্ধু আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য মুরাদপুরে যাই। সেখানে বাস থেকে নামার সাথে সাথে যুবলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, শৈবাল দাস সুমন, সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাসিরসহ আরও অনেকে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। নুরুল আজিম রনির হাতে পিস্তল, হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের হাতে শর্টগান ও অন্যান্যদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিলো। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের একটি গ্রুপ ষোল শহরের দিকে চলে যায়, আমরা কয়েকজন মোহাম্মদপুরের একটি গলিতে আটকা পড়ি। আমরা একটা বাসায় আশ্রয় নিই। তখন আনোয়ার নামে একজন আন্দোলনকারীর মাধ্যমে জানতে পারি যে আন্দোলনকারী ফয়সাল আহম্মেদ শান্ত মুরাদপুর এলাকায় আক্রমণকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছে। ফয়সাল আহম্মেদ শান্ত আমার পূর্ব পরিচিত। ওই বাসায় থাকাকালীন মহসীন কলেজের সমন্বয়ক বাপ্পী ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি যে উক্ত সন্ত্রাসীরা ওয়াসিম আকরাম নামের একজন আন্দোলনকারীকে মুরাদপুর রাস্তায় কুপিয়ে এবং ফারুক নামের একজন কাঠমিস্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা সন্ধ্যার দিকে ওই বাসা থেকে বের হয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে যাই। সেদিন রাতেই আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফয়সাল আহম্মেদ শান্ত’র লাশ দেখতে যাই। পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ দেখতে না দিলে আমরা ফিরে আসি।’
সাক্ষী মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘১৮ জুলাই সকালে চট্টগ্রাম নতুন ব্রিজ এলাকায় আমিসহ ৫/৬ জন বন্ধু আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। সেখানে অবস্থান কর্মসূচি ছিলো। সেখানে আনুমানিক দুই হাজার আন্দোলনকারী আন্দোলন করছিল। আমাদের সামনে বাকুলিয়া ও কর্ণফুলী থানার পুলিশ এবং তাদের পিছনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ছিল। পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুঁড়লে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। আমরা কয়েকজন নিকটস্ত একটি ফিলিং স্টেশনের দিকে যাই। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সদস্যরা আমাদের লক্ষ্য করে শর্টগান দিয়ে গুলি করলে আমি পিঠে গুলিবিদ্ধ হই। আমার পিঠে সর্বমোট ১১টি গুলি লেগেছিল। পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। সেখানে ডাক্তাররা আমার শরীর থেকে শর্টগানের ৮টি গুলি বের করে। ৩টি গুলি এখনো আমার শরীরে রয়ে গেছে।’
এ পর্যায়ে সাক্ষী তার পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ক্ষতচিহ্ন ট্রাইব্যুনালকে দেখান। পরে তিনি বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রথমে অ্যাম্বুলেন্সে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যাবার সময় হাসপাতালের গেটে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয়। এরপর আমি একটি রিকশায় করে পার্কভিউ হাসপাতালে যাই। এই হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দায়ী। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দেওয়ার পর আল জাজিরা, বিবিসিসহ বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের উপর লেথাল উইপন ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে। আমি দোষীদের আইনানুগ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
৩৮তম সাক্ষী মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘৫ আগস্ট সকালে আমার বাড়ির পাশে শরীফ মেডিকেলের সামনে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে যাই। ওইদিন কারফিউ ছিলো এবং ছাত্রদের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ছিলো। আমি ১২টার সময় বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে থাকা অবস্থায় জানতে পারি শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছে। এরপর আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে আবার শরীফ মেডিকেলের সামনে আসি। সেখানে গিয়ে দেখি হাজার হাজার লোক বিজয় মিছিল নিয়ে শরীফ মেডিকেলের দিকে আসছে। সেখানে উল্টা দিক থেকে মিছিলকে লক্ষ্য করে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আমিসহ কিছু লোক আমার বাড়িতে আশ্রয় নিই। আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের বাড়ির ছাদে উঠি। কিছু লোক আমার ভগ্নিপতি হাফিজুর রহমান তপনের রিকশা গেরেজে আশ্রয় নেয়। রিকশার গেরেজটি আমার বাড়ির পাশেই। ছাদ থেকে দেখতে পাই কয়েকজন পুলিশ গেরেজ থেকে একজনকে তুলে নিয়ে যায় এবং তাকে আমার বাড়ির সামনের কবরস্থানের কাছে নিয়ে গুলি করে। সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পুলিশ লাশটিকে থানার দিকে নিয়ে যায়। পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ওসি আশরাফ এবং ডিবির এসি ছিল। পরে জানতে পারি, যে গুলি করেছেন তার নাম কনস্টেবল আকরাম। আর যাকে গুলি করেছে তার নাম হৃদয়। পরের দিন সকালে জানতে পারি পুলিশ লাশ নিয়ে পালিয়ে গেছে। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, অন্যান্য মন্ত্রীগণ এবং স্থানীয় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দায়ী। আমি ট্রাইব্যুানের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।’
জুলাই গণআন্দোলনের সময় পুলিশের এডিসি শাহ আলম মোহাম্মদ আক্তারুল ইসলামের নির্দেশে প্রয়োজন ছাড়াই ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা গুলি করতে না চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন আক্তার।
আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথমবারের মতো জবানবন্দি দিয়েছেন জুলাই গণআন্দোলনের সময় মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপালনকারী পুলিশ কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. আশরাফুল ইসলাম। জবানবন্দিতে তিনি এডিসি আক্তারের ব্যাপারে এই সাক্ষ্য দেন। ট্রাইব্যুনাল-১ এ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে ৩৯তম সাক্ষী হিসেবে তিনি আজ এ জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় পুলিশের এডিসি আক্তারের নির্দেশে প্রয়োজন ছাড়াই সাউন্ড গ্রেনেড, গ্যাস গান ও শর্টগান দিয়ে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। অধস্তন পুলিশ অফিসার ও সদস্যরা গুলি করতে না চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তিনি। ‘তোরা সরকারের বেতন রেশন খাস না? গুলি করবি না কেন? তোদের চাকরি খেয়ে নিবো’ হুমকি দেন এডিসি আক্তার।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ১৯৯৪ সালের ১১ জানুয়ারি পুলিশে যোগ দিই। ২০০২ সালের ১৩ জুলাই থেকে ডিএমপি ঢাকায় যোগদান করে এখনও কর্মরত আছি। ২০১৮ সালে এসআই (সশস্ত্র) হিসেবে পদোন্নতি পাই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট সঙ্গীয় এএসআই মুরাদ, নায়েক জসিম, কনস্টেবল মাহমুদুল, কনস্টেবল মেহেদী, কনস্টেবল নাসিরুল, কনস্টেবল মাহবুবসহ এক প্লাটুন এবং এসআই হেলাল তার ফোর্সসহ এক প্লাটুন অফিসার ও ফোর্স আমাদের নিজ নামে অস্ত্র, গুলি, বুলেট প্রুফ জেকেট ইত্যাদি সরঞ্জামাদিসহ পিওএম পুলিশ লাইন মিরপুর থেকে ভোরে রওনা হই। সকালে জরুরি আইনশৃঙ্খলা ডিউটির জন্য শাহবাগ থানায় যাই। সেখানে জানতে পারি যে সকালে ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান স্যার এবং যুগ্ম পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী শাহবাগ থানায় উপস্থিত হয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের ওইদিন আন্দোলন দমনে গুলি করাসহ অন্যান্য নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।’
সাক্ষী জানান, ওইদিন আন্দোলনকারীদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ছিলো। সকাল ৯টার দিকে উক্ত দুই প্লাটুনসহ ডিএমপি থেকে আসা এক প্লাটুন পুলিশ, ১৩-এপিবিএন থেকে আসা এক প্লাটুন পুলিশ এবং রাজারবাগ থেকে আসা এক প্লাটুন নারী পুলিশসহ মোট পাঁচ প্লাটুন পুলিশ সদস্য এবং রমনা জোনের তৎকালীন এসি ইমরুল, শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মো. আরশাদ হোসেনকে তৎকালীন এডিসি শাহ আলম মোহাম্মদ আক্তারুল ইসলাম আইনশৃঙ্খলা দায়িত্ব নিয়ে ব্রিফ করেন। ব্রিফিং শেষে নারী পুলিশ ও ডিএমপি পুলিশের দুই প্লাটুন ছাড়া ৬০/৬৫ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে এডিসি আক্তার, এসি ইমরুল, ইন্সপেক্টর মো. আরশাদ হোসেনের নেতৃত্বে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ডিউটিতে যান আশরাফুল ইসলাম। সেখানে গিয়ে এসি ইমরুলসহ কয়েকজন কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় এডিসি আক্তারের নির্দেশে কয়েকজন আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করে প্রিজন ভ্যানে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয়। এডিসি আক্তারের নির্দেশে এসি ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদ, আনুমানিক ১৫/২০ জন এপিবিএন সদস্য, ডিএমপির ১০/১৫ জন সদস্যের সঙ্গে সাক্ষী আশরাফুলসহ তার সঙ্গীয় কনস্টেবল পিয়াস, আসিফ, আকাশ, নাসিরুলসহ হেঁটে সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে চানখারপুলে যান। চানখারপুল সংলগ্ন বংশাল ও চকবাজার এলাকা থেকে আসা ছাত্র-জনতা মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে শাহবাগের দিকে যেতে চাইলে এডিসি আক্তারের নির্দেশে কোনো প্রয়োজন ছাড়া সাউন্ড গ্রেনেড, গ্যাস গান ও শর্টগান দিয়ে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এই গুলি করা হয় চানখারপুল মোড়ে। এপিবিএন পুলিশকে দিয়ে শর্টগান ফায়ার করে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হয়।
সাক্ষী বলেন, ‘ওই সময় এডিসি আক্তারুল স্যার বলেন, “তোমাদের যাদের কাছে পিস্তল ও চায়না রাইফেল আছে তারা আন্দোলনকারীদের প্রতি ফায়ার করে তাদের মেরে ফেলো”। তখন আমিসহ আরো কয়েকজন স্যারের এই অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ আদেশ পালন না করলে স্যার আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। তিনি আমাদেরকে হুমকি দিয়ে বলেন, “তোরা সরকারের বেতন রেশন খাস না? গুলি করবি না কেন? তোদের চাকরি খেয়ে নিবো”। তবু আমি আমার পিস্তল দিয়ে ফায়ার করা থেকে বিরত থাকি। এরপর সঙ্গীয় কনস্টেবল মো. নাসিরুল ইসলাম এডিসি আক্তারুল স্যারের সরবরাহ করা অতিরিক্ত গুলি ব্যবহার করে স্যারের নির্দেশে ও দেখানো মতে রাস্তায় বসে চায়না রাইফেলে গুলি লোড করে এবং আন্দোলনকারীদের টার্গেট করে বার বার ফায়ার করতে থাকে। এ সময় এডিসি আক্তারুল ইসলাম স্যার এপিবিএন পুলিশের একজন কনস্টেবলের হাত থেকে চায়না রাইফেল কেড়ে নিয়ে এপিবিএন পুলিশের কনস্টেবল সুজন হোসেনের হাতে দেয়। যার হাত থেকে চায়না রাইফেল কেড়ে নেওয়া হয় সে গুলি করা থেকে বিরত ছিলো। পরে জেনেছি তার নাম অজয়।’
আশরাফুল ইসলাম জবানবন্দিতে আরও বলেন, ‘এরপর কনস্টেবল সুজন হোসেন চানখারপুল মোড়ে কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো শুয়ে, কখনো হাঁটু গেড়ে বসে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করতে থাকে। তাছাড়াও এপিবিএনের কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন তার নামে ইস্যুকৃত চায়না রাইফেল দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করে। আমি দেখতে পাই এই গুলিতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে অন্য আন্দোলনকারীরা তাদের ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর এসি ইমরুল স্যার, ইন্সপেক্টর আরশাদ স্যার এপিবিএনের ৫/৭ জন সদস্য নিয়ে নাজিমুদ্দিন রোডের বিভিন্ন গলিতে গুলি করতে করতে প্রবেশ করলে আমরা চায়না রাইফেলের গুলির শব্দ শুনতে পাই। এরপর শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে শুনতে পেয়ে দুপুরে চানখারপুল এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন এডিসি আক্তারুল স্যারের নির্দেশে টিএসটি মোড় হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে শাহবাগ থানার পিছন দিক দিয়ে থানায় প্রবেশ করি। এডিসি আক্তারুল স্যারের নির্দেশে নিজ নিজ নামে ইস্যুকৃত অস্ত্রগুলো শাহবাগ থানার অস্ত্রাগারে জমা দেই। আমার সঙ্গীয় কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম তার নামে ইস্যুকৃত চায়না রাইফেলের ৪০ রাউন্ড গুলি জমা করলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি—“তুমি চানখারপুলে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার পরেও ৪০ রাউন্ড গুলি কিভাবে জমা করলে?” উত্তরে সে বলে, “এডিসি আক্তারুল স্যার আমাকে অতিরিক্ত গুলি সরবরাহ করেছে।” এরপর পোশাক পাল্টে সিভিল ড্রেস পরে এশার নামাজের পরে শাহবাগ থানার পিছন দিয়ে বের হয়ে হেঁটে ছাত্র-জনতার সাথে মিশে মিরপুর পুলিশ লাইনে রাত ১১টার দিকে পৌঁছাই।’
৩৭ তম সাক্ষী মোহাম্মদ হাসান চট্টগ্রাম কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি জানান, গত বছরের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম টাইগার পাস এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে মুরাদপুর, নতুন ব্রিজ, কক্সবাজারের চকরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। ১৬ জুলাই দুপুরে আমার বহদ্দার হাটের বাসা থেকে আমিসহ ১০ জন বন্ধু আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য মুরাদপুরে যাই। সেখানে বাস থেকে নামার সাথে সাথে যুবলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, শৈবাল দাস সুমন, সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাসিরসহ আরও অনেকে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। নুরুল আজিম রনির হাতে পিস্তল, হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের হাতে শর্টগান ও অন্যান্যদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিলো। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের একটি গ্রুপ ষোল শহরের দিকে চলে যায়, আমরা কয়েকজন মোহাম্মদপুরের একটি গলিতে আটকা পড়ি। আমরা একটা বাসায় আশ্রয় নিই। তখন আনোয়ার নামে একজন আন্দোলনকারীর মাধ্যমে জানতে পারি যে আন্দোলনকারী ফয়সাল আহম্মেদ শান্ত মুরাদপুর এলাকায় আক্রমণকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছে। ফয়সাল আহম্মেদ শান্ত আমার পূর্ব পরিচিত। ওই বাসায় থাকাকালীন মহসীন কলেজের সমন্বয়ক বাপ্পী ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি যে উক্ত সন্ত্রাসীরা ওয়াসিম আকরাম নামের একজন আন্দোলনকারীকে মুরাদপুর রাস্তায় কুপিয়ে এবং ফারুক নামের একজন কাঠমিস্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা সন্ধ্যার দিকে ওই বাসা থেকে বের হয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে যাই। সেদিন রাতেই আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফয়সাল আহম্মেদ শান্ত’র লাশ দেখতে যাই। পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ দেখতে না দিলে আমরা ফিরে আসি।’
সাক্ষী মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘১৮ জুলাই সকালে চট্টগ্রাম নতুন ব্রিজ এলাকায় আমিসহ ৫/৬ জন বন্ধু আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। সেখানে অবস্থান কর্মসূচি ছিলো। সেখানে আনুমানিক দুই হাজার আন্দোলনকারী আন্দোলন করছিল। আমাদের সামনে বাকুলিয়া ও কর্ণফুলী থানার পুলিশ এবং তাদের পিছনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ছিল। পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুঁড়লে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। আমরা কয়েকজন নিকটস্ত একটি ফিলিং স্টেশনের দিকে যাই। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সদস্যরা আমাদের লক্ষ্য করে শর্টগান দিয়ে গুলি করলে আমি পিঠে গুলিবিদ্ধ হই। আমার পিঠে সর্বমোট ১১টি গুলি লেগেছিল। পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। সেখানে ডাক্তাররা আমার শরীর থেকে শর্টগানের ৮টি গুলি বের করে। ৩টি গুলি এখনো আমার শরীরে রয়ে গেছে।’
এ পর্যায়ে সাক্ষী তার পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ক্ষতচিহ্ন ট্রাইব্যুনালকে দেখান। পরে তিনি বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রথমে অ্যাম্বুলেন্সে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যাবার সময় হাসপাতালের গেটে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয়। এরপর আমি একটি রিকশায় করে পার্কভিউ হাসপাতালে যাই। এই হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দায়ী। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দেওয়ার পর আল জাজিরা, বিবিসিসহ বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের উপর লেথাল উইপন ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে। আমি দোষীদের আইনানুগ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
৩৮তম সাক্ষী মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘৫ আগস্ট সকালে আমার বাড়ির পাশে শরীফ মেডিকেলের সামনে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে যাই। ওইদিন কারফিউ ছিলো এবং ছাত্রদের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ছিলো। আমি ১২টার সময় বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে থাকা অবস্থায় জানতে পারি শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছে। এরপর আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে আবার শরীফ মেডিকেলের সামনে আসি। সেখানে গিয়ে দেখি হাজার হাজার লোক বিজয় মিছিল নিয়ে শরীফ মেডিকেলের দিকে আসছে। সেখানে উল্টা দিক থেকে মিছিলকে লক্ষ্য করে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আমিসহ কিছু লোক আমার বাড়িতে আশ্রয় নিই। আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের বাড়ির ছাদে উঠি। কিছু লোক আমার ভগ্নিপতি হাফিজুর রহমান তপনের রিকশা গেরেজে আশ্রয় নেয়। রিকশার গেরেজটি আমার বাড়ির পাশেই। ছাদ থেকে দেখতে পাই কয়েকজন পুলিশ গেরেজ থেকে একজনকে তুলে নিয়ে যায় এবং তাকে আমার বাড়ির সামনের কবরস্থানের কাছে নিয়ে গুলি করে। সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পুলিশ লাশটিকে থানার দিকে নিয়ে যায়। পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ওসি আশরাফ এবং ডিবির এসি ছিল। পরে জানতে পারি, যে গুলি করেছেন তার নাম কনস্টেবল আকরাম। আর যাকে গুলি করেছে তার নাম হৃদয়। পরের দিন সকালে জানতে পারি পুলিশ লাশ নিয়ে পালিয়ে গেছে। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, অন্যান্য মন্ত্রীগণ এবং স্থানীয় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দায়ী। আমি ট্রাইব্যুানের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার গতিশীল করতে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারে থাকা মামলাগুলো এই কমিটির আওতার বাইরে থাকবে।
৩ ঘণ্টা আগেদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসে না।
৪ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
৫ ঘণ্টা আগেতদন্ত কর্মকর্তার কাছে বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিন্তক, বুদ্ধিজীবী ও বামপন্থী রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, সেটি গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আবেদন করবে প্রসিকিউশন।
৫ ঘণ্টা আগে