আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যায় অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, প্রমাণ ও আলামত পাওয়া গেছে।
আহমেদ আল আমীন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যায় অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, প্রমাণ ও আলামত পাওয়া গেছে। গণ-অভ্যুত্থান দমনে একদিকে হাসিনা বিভিন্ন কৌশল নিয়েছেন, মোবাইল ফোনে নির্দেশনা দিয়েছেন; অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সেই কথোপকথনই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর ফোনে আড়িপেতে ধারণ করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির যে যন্ত্র ব্যবহার করে এসব করা হয়েছে, হাসিনার সরকারই তা বিদেশ থেকে এনেছে। এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট আমলে বিরোধী দলের সদস্যসহ সরকারবিরোধী অনেকের মোবাইল ফোনের কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। সেই যন্ত্রটি ব্যবহার করেই হাসিনার আন্দোলন দমনের কৌশল আড়িপেতে শুনেছে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। চর্যাপদের কবি ভুসুকুপার মতে, 'আপনা মাঁসে হরিণা বৈরী'। মানে, নিজের মাংসই হরিণের শত্রু। কারণ, মাংস না থাকলে শিকারী হরিণের পিছু নিতো না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসিনা জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে একটি গণ-অভ্যুত্থান দমনের কথা বলেছেন, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। ড্রোন দিয়ে অবস্থান শনাক্ত করে উপর থেকে গুলি করাচ্ছেন, হেলিকপ্টার থেকে। যাকে যেখানে পাওয়া যাবে, সোজা গুলি করবে, এমন নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, রাজাকারদের মতো আন্দোলনকারীদের ফাঁসি দেওয়া হবে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা। এই মামলার ৫৩ নম্বর সাক্ষী তিনি। পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালে তিনি প্রসিকিউশন এবং তদন্ত দলেরও সদস্য। ট্রাইব্যুনালে হাসিনার যেসব ফোনালাপ শোনানো হয়েছে, সেগুলো মামলার ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বলে মনে করছে প্রসিকিউশন।
তানভীর হাসান জোহা সেই কথোপকথনের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে আদালতে জানিয়েছেন, এই কণ্ঠ হাসিনারই। পুরো শুনানি বুধবার ফেসবুকসহ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
আদালতে তিনজনের সঙ্গে হাসিনার চারটি কথোপকথনের রেকর্ড বাজিয়ে শোনানো হয়। হাসিনা গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসএম মাকসুদ কামাল ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তখন তাঁরা আন্দোলন দমনে বিভিন্ন কর্মকৌশল সম্পর্কে কথা বলেন। যেমন—আন্দোলনকারীদের অবস্থান ড্রোনের মাধ্যমে নির্ণয় করে, হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিং/গুলি, লেথাল উইপন ব্যবহার, আন্দোলনকারীদের তালিকা করে পাকড়াও করার তথ্য এসেছে। এছাড়া, রাজাকার আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলা, ছত্রীসেনা নামিয়ে বোম্বিং করা, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা, আগুন লাগানো, জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোসহ আরো অন্যান্য নির্দেশনা দিয়েছেন হাসিনা।
বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা, প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা জানান, এ রকম ৬৯টি কথোপকথন গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর প্রসিকিউশনের হাতে আসে। তদন্তের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জোহা বিটিআরসি, এনটিএমসি, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর থেকে বিভিন্ন অডিও ক্লিপ, ভিডিও ফুটেজ, সিডিআর, আইপিডিআর, সিসি ক্যামেরা ফুটেজসহ ডিজিটাল ফরেনসিক বিষয় সংগ্রহ করেছেন, পরে এর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়।
সেই কণ্ঠস্বর
হাসিনা ১৪ দলের নেতা হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ইনু কল দিলে হাসিনা ফোন রিসিভ করেন। এরপর ইনু সালাম দেন হাসিনাকে। : হ্যালো, জি। জি। স্লামালাইকুম।
হাসিনা সালামের জবাব দিয়ে বলেন, হ্যাঁ। কী হয়েছে?
ইনু বলেন, বলছিলাম না একটা কথা? আমি মনে করি যে, আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে, এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট বাংলাদেশে পাচ্ছি আরকি। খালি ঢাকাতে আপনার রামপুরার দিকে এবং…
হাসিনা এসময় বলেন, না। রামপুরা ক্লিয়ার, শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখন আছে।
ইনু বলেন, শনির আখড়ায় কিছু মোল্লারাই...
হাসিনা তখন জবাব দেন, হ্যাঁ। জানি। না, খালি মোল্লা না, ওইখানে অনেক মাদ্রাসা।
ইনু জানান, মাদ্রাসা আছে ওই...
হাসিনা বলেন, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করতে হচ্ছে আরকি। নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না আর্মিকে। আমরা... নামাচ্ছি।
ইনু তখন বলেন, ও আচ্ছা। এরপর হাসিনা বলেন, না, আমি বলছি ক্যাজুয়াল্টির দরকার নাই, ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো। ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে, তখন দুইপাশ দিয়ে ধরবে। মেসেজটা দিয়ে দিতে পারেন যে, সেনা পাঠানো হচ্ছে, আর হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে। র্যাবের হেলিকপ্টার দিয়ে উপর দিয়ে মারবে।
এ সময় ইনু বলেন, আচ্ছা। উপর দিয়ে সাউন্ড বোম যাবে আরকি। ঠিক আছে, আমি একটা পয়েন্ট আপনাকে একটু নজরে আনার জন্য রিকোয়েস্ট করতেছি যে, কারফিউ ধরেন, দুই/পাঁচ দিন, যা চললো। কিন্তু কারফিউয়ের পরে যাতে আর মিছিল না নামতে পারে, সেজন্য একট হোমওয়ার্ক করতে, করা দরকার; যে রকম আমি উত্তরা, বাড্ডা, গুলশান, যাত্রাবাড়ীতে যারা মিছিল লিড করছে, সেগুলো চিহ্নিত করেছি। ছাত্রদল, বিএনপির ছেলেমেয়েরা, শিবিরের, মানে ধরেন রিজভীকে অ্যারেস্ট করা বা রুহুলকে অ্যারেস্ট করা ইম্পর্টেন্ট না। ইম্পর্টেন্ট হচ্ছে ওইখানে গ্রাউন্ডে, যে মিছিলটা লিড করেছে। আমার কুষ্টিয়া জেলাতে এসপি সেভাবে অলরেডি তালিকা করে ফেলেছে। ওখানে কনে সংঘর্ষ হয়নি, একটা ছররা গুলি শুধু একজনের পায়ে লেগেছে, উনি ম্যানেজ করছে। ম্যানেজ করছে। উনি অলরেডি কম্পিউটারে ছবি দেখে দেখে ছেলেগুলোর তালিকা করতেছে। তা, আমি বললাম যে, ছেলেগুলোকে আজ রাতের ভেতরে পিকআপ করে নাও।
হাসিনা বলেন, হ্যাঁ। শিওর।
ইনু বলেন, যাতে মিছিলটা লিড না করতে পারে। তা, আমি ঢাকা শহরের জন্য বলছি যে, আপনার গোয়েন্দারা নিশ্চয়ই তালিকা করতে পারবে যে উত্তরায় কারা?
হাসিনা এ সময় বলেন, খালি গোয়েন্দারটা না, লোকাল লিডারদেরও করা উচিত।
ইনু উল্লেখ করেন, লোকাল লিডার ওখানে এমপি খসরু চৌধুরী আছে এবং হাসান হাবিব আছে। আমার কালকের যে রিপোর্ট হাসান হাবিব কিন্তু। ও রাগ করে খসরুর উপরে ছেড়ে দিছে যে, এমপি সাহেব মোকাবিলা করুক।
হাসিনা তখন মত দেন, খসরু তো পারবে না, খসরু তো লোকাল না, হাসান তো লোকাল, ওদেরতো লোকজন আছে।
ইনু তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। বলেন, লোকাল না তো রাইট, হাসান হাবিব নামেনি, আর এখানে ওয়াকিলও সামলাতে পারেনি, ও দুই লাইনে পা দিয়ে চলে। তো আমার কথা হচ্ছে যে, একটু লোকাল লিডারদের সাহায্যে তালিকাটা করে নিয়ে, আজকের রাতের ভেতরে সব কাস্টডিতে নিতে পারেন, তাহলে কোন জায়গায় আর মোহাম্মদপুরে একটা পাঁয়তারা ছিলো, কাল আপনি রাত বারোটায় গিয়ে খুব ভালো করেছেন। (নইলে) আজ কিন্তু গণভবন ঘেরাও করতো কিন্তু। মোহাম্মদপুরে ওখান থেকে রেডি হচ্ছিল কাল, মানে এটা, সুতরাং...
হাসিনা বলেন, হ্যাঁ। এটা কয়েকদিন ধরে করতেছে।
ইনু প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন, ডিসিশনটা খুবই কারেক্ট হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
হাসিনা তাকে ইংরেজিতে ধন্যবাদ দেন দুবার। বলেন, আমরা হলো রণক্ষেত্রের সাথী।
ইনু বলেন, রণক্ষেত্রের সাথী। তা আপনি একটু দয়া করে...এই পিকআপটা করতে বলেন…
হাসিনা বলেন, না। এটা বলা আছে, বলতেছি, বলতেছি।
ইনু উল্লেখ করেন, ওটা একটু হোমওয়ার্ক করতে বলেন। করে অ্যারেস্ট করে ফেলতে বলেন আজ। মানে, সবই অ্যারেস্ট করে ফেললে আর মিছিল করার লোক থাকবে না।
হাসিনা বলেন, লিসেন। দাঁড়ান, দাঁড়ান। অ্যারেস্ট করে...
ইনু বলেন, আরেকটা রিকোয়েস্ট আমার, যে ইন্টারনেট আমার মনে হয়, চালু করতে পারেন, এটা আমাদেরই কাজে লাগবে।
হাসিনা এ সময় জবাব দেন, কি যে চালু করবো, সবতো পুড়িয়ে দিয়েছে। ডাটা সেন্টারও পুড়িয়ে দিয়েছেই, পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন ওই নতুন তারতুর কিনে জোড়া লাগাতে হবে।
ইনু বলেন, আমি যে কথাটা বলার চেষ্টা... আমি একাত্তরে (একাত্তর টিভিতে) রাত আটটার সময় যাবো, একা কথা বলবো। আমি বলবো যে, সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীর কোনো বিরোধ নেই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ হচ্ছে নাশকতাকারী বিএনপি-জামায়াতের।
হাসিনা এ সময় ইনুর এ মত গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, না। ওটা তো বলা হয়েছে। ওটা আমি নিজেও বলছি...।
জবাবে ইনু বলেন, এই জিনিসটা প্রোপাগান্ডায় আনতে হবে, যদি ইন্টারনেট থাকে, গণমাধ্যম দিয়ে আমরা পুরো নিউজে ফ্লাড করে দিলাম, (সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের কোনো বিরোধ নেই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ বিএনপি-জামায়াতের)।
হাসিনা তখন বলেন, ইন্টারনেট পাবো কোথায়? ইন্টারনেট পুড়িয়ে দিয়েছে। জীবনে আমি তো আর আনবো না, যদি অন্য সরকার আসে তাহলে আনবে। আমি দিয়েছি ইন্টারনেট, ওরা পোড়াতে থাকুক, ওটা চলতে হবে...
ইনু বলেন, অন্য সরকার, বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ অন্য সরকার আসবে না।
হাসিনা বলেন, আসুক, না আমি আর পারবো না। (আমি ক্ষমতা থেকে) যাচ্ছি এখন।
ইনু অনুরোধ করেন, না। না। যাওয়া দরকার নেই।
তখন হাসিনা বলেন, (ক্ষমতা থেকে যাওয়ার আগে) জামায়াতকে শায়েস্তা করে থুয়ে যেতে হবে।
(ইনুর কথা অস্পষ্ট)
ইনুকে হাসিনা বলেন, আপনার যেখানে যেখানে লোক আছে, তালিকাগুলো আপনারা করান, আমরাও করাচ্ছি।
ইনু বলেন, আপনি এই, জামায়াত-শিবিরের মেরুদণ্ডটা আবার ভেঙে দেন ঢাকা শহরে।
হাসিনা বলেন, একেবারে।
ইনু বলেন, এক্সপোজ হয়েছে আরকি, একটু দেখেন। আর আমি বাদবাকি আমাকে যেটা বলবেন, আমি ইনশাআল্লাহ করবো, কোনো অসুবিধা নেই।
হাসিনা বলেন, না। ওই তালিকাগুলো একটু করিয়ে ফালান। এই ছুতায় যা পারেন, শিবির যে কয়টা আছে, যা আছে সব বের করেন।
ইনু বলেন, বুঝেছি, আমি বুঝেছি। জি। স্লামুয়ালাইকুম, বলে ইনু কথা শেষ করেন।
হাসিনা বলেন, ঠিক আছে। আচ্ছা।
ইনু আবারও বলেন, জি। স্লামুয়ালাইকুম। হাসিনা বলেন, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।
ইনু বললেন, জঙ্গি কার্ড খেলবো
ইনুর সঙ্গে হাসিনার অন্য একটি ফোনালাপের অডিওতে শোনা যায়, হাসিনা তাকে হ্যালো বলছেন। জবাবে ইনু বলেন, হ্যালো। জি, স্লামালাইকুম। আমি ইনু বলছিলাম। হ্যালো।
হাসিনা বলেন, হ্যাঁ। বলেন।
ইনু উল্লেখ করেন, জি। না, আমি একটু পরিস্থিতি অনুযায়ী একটু উদ্বেগের ভেতরে ছিলাম। তো, আমি মনে করি যে, সিদ্ধান্তটা খুব সঠিক হয়েছে আরকি। তো, আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম যে, কারফিউটা একটু কঠোর কারফিউ আরকি (দেওয়া দরকার)। তো, সারা ঢাকা শহরে যদি মাইক নামিয়ে দিতো প্রশাসন থেকে, কারফিউ কি করা উচিত না? তাহলে একটু সুবিধা হতো মনে হয়।
হাসিনা উল্লেখ করেন, আমি হোম মিনিস্টারকে বলছি এখনি, সব জায়গায় মাইকিং করার জন্য। চারজন আহত, জেলায় জেলায় ডিসি অফিস....।
ইনু বলেন, হ্যাঁ। ওইগুলো সব পেয়েছি আমি, ডিসি অফিস, এসপি অফিস, আওয়ামী লীগের বাড়ি, আওয়ামী লীগ অফিস, এগুলোর প্রত্যেকের লিস্ট আমি পেয়েছি... ।
হাসিনা বলেন, আমি এখন ঢাকায় আসবো।
ইনু বলেন, আচ্ছা। তো এখন আমার কথা হচ্ছে যে, কারফিউটা মানে, এমন হবে যে, ঘর থেকে বের হলেই অ্যারেস্ট করবে, গুলি হবে না। (গুলি না করার তথ্য) সেটা আপনার আমার ভেতরে (থাকবে)। গুলি নেই, কিন্তু সেনাবাহিনীর ভাবটা এমন হবে, কঠোর মানে কঠোর একেবারে। তো, সেজন্য...।
হাসিনা বলেন, আজ আমি, সত্যি কথা বলতে কি, বলি আপনাকে। আমি, কমিটি আছে তো, মিটিং করছিলাম, করার আগেই আমি দিয়েছি, তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বসেছিলাম।
ইনু জানান, এ বিষয়টি তিনি দেখেছেন।
হাসিনা বলেন, বললাম যে একটু সিচুয়েশনটা একটু ভালো হচ্ছে। তাহলে আস্তে আস্তে আর্মি, যেসব জেলা শান্ত আছে, ওখান থেকে (প্রত্যাহার করে) উঠিয়ে ফেলো, আর এখানে আস্তে আস্তে অ্যাজ ইয়ুজ্যুয়ালি তুলে ফেলো। এই ডিসিশনটা দিয়ে দিয়েছি।
ইনু বলেন, আচ্ছা।
হাসিনা বলেন, মানুষ একটু ইয়ে থাকুক। ওমা, ওইখানে বসা অবস্থায় শুনলাম যে শুরু হয়ে গেছে।
ইনু বলেন, ওতো টার্গেটেড। উপজেলা লেভেলেরও ইউএনও অফিস ভাঙচুর করছে...
হাসিনা এরপর বলেন, পরিণাম শুনলাম, তখন আমি বললাম যে ঠিক আছে, তোমরা বলো কী করবে, কারফিউটা এগিয়ে দিচ্ছে, আর কি পয়েন্টগুলো যেগুলো ওদের কতগুলো জায়গা, ওরা সিলেক্ট করছে যেখানে হামলা করবে। তার প্রটেকশন দেবে আর র্যাব-পুলিশ টহল দেবে। আর সেনাবাহিনীর অবশিষ্টের মধ্যে, যেখানে যেখানে প্রয়োজন হয়, তোমরা টহল দেবে। যেটা বলছো, ওটা ঠিক, ওই প্রেশারটা থাকতে হবে।
ইনু মত দেন, প্রেশারটা থাকতে হবে, মানে প্রেশারটা থাকতে হবে। আরেকটা হচ্ছে, যেটা কাল আলাপ করছিলাম যে, আপনার পার্টি নেটওয়ার্কে আমাদের পার্টি নেটওয়ার্কে, রেডি করা (দরকার) যে কারফিউ উঠে গেলে, এক লক্ষ লোক ঢাকা দখল করবো আমরা। বসবো।
হাসিনা বলেন, ওরা জেলায় আসবে, আমাদেরও জেলা থেকে লোক আসতে চাচ্ছে, বলেছি ঠিক আছে, আসেন।
ইনু মনে করেন, হ্যাঁ। এটা আনা দরকার। এটা কারেক্ট। তিনি বলেন, আমি কাল বলেছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যে শহীদ মিনার, শাহবাগ চত্ত্বর, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে, প্রেস ক্লাবের সামনে, পল্টনে...।
হাসিনা বলেন, আমাদের নিয়ে নিতে হবে।
জবাবে ইনু বলেন, এটা আমরা নেবো, আমরা বসবো এখানে এবং কারফিউ যেদিন রিলাক্স হবে, সেদিনই মিছিলের নগরী হয়ে যাবে একেবারে। এবং কিছুই না, শান্তি চাই, শান্তি চাই। ছাত্ররা বাড়ি যাও, ফেরত যাও, ফেরত যাও। সন্ত্রাস দমন করো (এসব স্লোগান হবে)।
হাসিনা জানান, তিনি এই স্লোগান স্কুলে দিতে বলেছেন যে, তোমরা ছাত্ররা সব ঘরে ফেরো। গার্ডিয়েনদের বলছেন, এখানে কিন্তু জঙ্গি হামলা হয়েছে।
ইনু বলেন, হ্যাঁ। রাইট, রাইট।
হাসিনা বলেন, না। এটা আমাকে, বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ইয়ে পেয়েছি। তারা এটাকে (গণঅভ্যুত্থানকে) জঙ্গি হামলা হিসেবে কনসিডার, মানে বলতেছে।
ইনু বলেন, হ্যাঁ। (সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে) জঙ্গি হামলাই হয়েছে। এই (জঙ্গি) কার্ডটা খেলবো আমরা এখন।
হাসিনা বলেন, না। (জঙ্গি) কার্ড খেলা না। এটা আমি আগে করিনি। কিন্তু আমাকে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে আমাকে মেসেজটা দিছে যে, এটা জঙ্গি হামলা।
ইনু বলেন, জঙ্গি সন্ত্রাসের মোকাবিলা করছে এখন সরকার। হাসিনা জানান, তারা তাকে এটাই বলছে যে, এটা জঙ্গি হামলা। (এই তথ্য) দিয়ে দিবো পেপারে (মিডিয়াতে)।
ইনু বলেন, আচ্ছা। এটা একটা ব্যাপার, আরেকটা হচ্ছে যে, দুটা ভাগ। একটা হচ্ছে ছাত্রদের (আন্দোলন) কোটা আন্দোলনকারী, একটা হচ্ছে উৎখাতকারী; উৎখাতকারীরা জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলায় চলে গেছে। কোটা সংস্কারকারীদের ব্যাপারে আপনার, আমার সরকারের সমবেদনা আছে। উৎখাতকারীকে আমি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো, কোনো ছাত্র যদি উৎখাতকারীর সঙ্গে জড়িত হয়, সেই দায়িত্ব আমি নেবো না।
হাসিনা বলেন, এটা আপনারা বলেন, এটা আপনারা বলেন না কেন?
ইনু বলেন, আমি তো বলবো।
হাসিনা বলেন, আরে আমি তো (আন্দোলনকারীদের দৃষ্টিতে) শত্রু। আপনারা বললে তখন মনে করবে যে, অন্যান্য অ্যাঙ্গেল থেকে বলা হয়েছে।
ইনু বলেন, আমি তো অবশ্যই বলবো।
হাসিনা এ সময় বলেন, বাকি দেখতেছি না, কমিউনিস্ট পার্টি, তারা এখন শেষ হয়ে গেছে।
ইনু বলেন, তো, দেখি আমি ওদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি, সেলিম; সবার সঙ্গে।
হাসিনা বলেন, কি জানি উনার নাম? সাইফুল হক নাকি?
ইনু জানান, তার নাম সাইফুল। ইনু এরপর বলেন, জোনায়েদ সাকি। জোনায়েদ সাকি, সাইফুল হক। আচ্ছা, আমি জোনায়েদ সাকি, সাইফুল হকের সঙ্গে একটু লিয়াজোঁ করি।
হাসিনা বলেন, তোমরা (সরকারবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে) কোথায় নিচ্ছো দেশটাকে? ওদের মধ্যে যে সমর্থন দিচ্ছো, তা (তাতে) এখন দেখো পুরো জঙ্গি হামলা হচ্ছে।
ইনু বলেন, আরেকটা পয়েন্ট কি খেয়াল করছেন, আপনি যে আনু মুহাম্মদরা স্যরি, শিক্ষকরা যারা সমর্থন দিয়েছে, তারা একটা অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেখানে বলতে চাচ্ছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে হেন-তেন নিয়ে হবে, ছায়া সরকার করবে এবং সংবিধান বাতিল করার জন্য একটা সংবিধান সভা করতে হবে। মানে, সংবিধানই বাতিল করে দেবে। হ্যাঁ, সংবিধান বাতিল চায়। আমি, ভাইকে একটু আগে বলেছি যে, ভাই, এটা খুবই অ্যালার্মিং কথা, যেখানে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি আর ম্যুরাল ভেঙে ফেলতেছে, তার মানে আমার পয়েন্টটা নিতে হবে যে, এদের অ্যাট্যাকটা হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের বেসিক অর্জনের উপরে (বিরুদ্ধে)। সুতরাং, তারা তো খালি সরকার বদল চাচ্ছে না, মানে কোটা আন্দোলন করে কোটা চায়নি। তারা সরকার উৎখাত করতে চাইছে। আর এক দফা আন্দোলনের মানে, তারা হচ্ছে সরকারের মানে, রাষ্ট্রের বেসিক সংবিধান উড়িয়ে দিচ্ছে, (দিতে) চাচ্ছে তারা। তার মানে, এই জায়গায় (এই দৃষ্টিকোণ থেকে এভাবে) পলিটিক্সটা অ্যাট্যাক করতে হবে, আমাকে, দাঁড় করাতে হবে এখন।
হাসিনা বলেন, ওই যে সেভেনটি ফাইভের পর করছিলো।
ইনু বলেন, এক্সাক্টলি। তো, এখন আপনি কি অ্যাডজাস্ট করবেন, এটা ছোটোখাটো পাঁচ, দশ মিনিটের, আরো দুদিন একদিন পরে?
হাসিনা বলেন, আজকের দিনটা যাক, দেখি।
ইনু বলেন, আজকের দিনটা যাক, আমি প্ল্যানগুলো সাজাই। আপনাকে আমি আমার বিবেচনা যেগুলা আছে, দিবোনি আপনাকে। আর আমি বলি যে, কারফিউটা (চলাকালে), বডি ল্যাংগুয়েজে অনেক কঠোর হবে যে, ঘর থেকে বের হলেই অ্যারেস্ট, গুলি না; মানে অ্যারেস্ট করে নিয়ে আসবে। মানে টেলিভিশনে যে শান্তিনিকেতন (শান্তিনগর) থেকে ৩০ জন অ্যারেস্ট হয়েছে, জেলে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জেলে পাঠাবো না, থানায় রাখবো। দশ ঘণ্টা পরে ছেড়ে দেবেন আরকি। বুঝলেন না?
হাসিনা বলেন, বেশ। আচ্ছা।
ইনু বলেন, গরিব মানুষই তো। কিন্তু প্রোপাগান্ডা হবে ঘর থেকে বেরোলেই, মানে গুলি হবে। গুলি শব্দ (মিডিয়ায়) বলবো না, আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কঠোর (একথা বলতে হবে)। কেউ ঘরের বাইরে বেরোবে না। মানে, রিল্যাক্স; কারফিউ না আরকি। আপনার অফিসের মানে, বাসার চারপাশে একটু মানে, এই মানিক মিয়া এভিনিউর এখান থেকে প্রোডাকশন বাড়ান। ইনু আবার বলেন, না। ওটা না। ওরা যে ঢাকা চলো বলছে, গণভবন আক্রমণ করবে; এগুলা বলছে।
হাসিনা বলেন, গণভবন, বঙ্গভবন সব আক্রমণ করবে।
ইনু বলেন, তা ঠিক আছে, আল্লাহ ভরসা। আমি, আমার কথা হচ্ছে যে, আমাদের পরে যে, জনতার ঢাকা এটা প্রমাণ করার জন্য, হোমওয়ার্কটাই আজকের চব্বিশ ঘণ্টায় করে ফেলতে হবে। ওয়ার্ড থেকে দুই হাজার লোক রেডি করতে হবে। এবং জেলাগুলোতেও আমি আমার যত নেটওয়ার্ক আছে, আমি বলছি কারফিউ উঠবে, (কারফিউ প্রত্যাহার হলে) সাথে সাথে মিছিল বের হবে কুষ্টিয়া শহরে তিন হাজার লোকের, পাঁচ হাজার লোকের; রংপুর শহরে, ময়মনসিংহ শহরে। মানে শান্তি চাই, সংঘাত চাই না, শান্তি চাই, শান্তি চাই, ছাত্ররা ঘরে ফেরত যাও। এই মিছিল (দিয়ে) দখল করে নিতে হবে।
হাসিনা বলেন, ঠিক আছে। আপনারা আগে বলেন যে, ছাত্ররা পরে যাও।
ইনু বলেন, আমিও বলতেছি, আমি অবশ্যই বলবো। কিন্তু আপনার পার্টিটাকে একটু চাঙ্গা করেন।
একটাকেও ছাড়বেন না হাসিনা
গত বছরের ১৪ জুলাই রাত ১১টা ২৮ মিনিট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাকসুদ কামালের কথোপকথন হয়। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হাসিনা হ্যালো বললে মাকসুদ বলেন, আপা, স্লামালাইকুম। হাসিনা সালামের জবাব দেন। মাকসুদ কামাল বলেন, প্রত্যেক হল থেকে তো ছেলে-মেয়েরা তালা ভেঙে বের হয়ে গেছে। এখন তারা রাজু ভাস্কর্যে, চার পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ে জমা হয়েছে। মল চত্ত্বরে জমা হয়েছে এবং যে কোনো মুহূর্তে আমার বাসাও অ্যাটাক করতে পারে।
হাসিনা বলেন, তোমার বাসা প্রটেকশনের কথা বলে দিয়েছি।
মাকসুদ বলেন, জি, জি।
হাসিনা বলেন, আগে একবার (ভিসির বাসা প্রটেকশন) করেছে।
মাকসুদ বলেন, ওই রকম একটা প্রস্তুতি, লাঠিসোটা নিয়ে বের হয়েছে।
এ সময় হাসিনা বলেন, লাঠিসোটা নিয়ে বের হলে হবে না, আমি পুলিশ এবং বিডিআর হয়ে বিজিবি আর... বলছি খুব অ্যালার্ট থাকতে এবং তারা রাজাকার হতে চেয়েছে তো, তাদের সবাই রাজাকার। কী আশ্চর্য! কোন দেশে বসবাস করি!
মাকসুদ বলেন, জি, জি। বলতেছে আমরা সবাই রাজাকার।
হাসিনা বলেন, তো, রাজাকারদের তো ফাঁসি দিয়েছি, এবার তোদেরও তাই করবো। একটাও ছাড়বো না, আমি বলে দিয়েছি। এই এতোদিন ধরে আমরা কিন্তু বলিনি, ধৈর্য ধরেছি, তারা আবার বাড়ছে।
মাকসুদ বলেন, বেশি বেড়ে গেছে এবং অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, অতিরিক্ত তো আপা একটু ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাটা আরেকটু বাড়ানো (দরকার), আর আমার বাসার ওখানেও (নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার)।
হাসিনা বলেন, ক্যাম্পাসের (নিরাপত্তার) ব্যবস্থা করছি, সমস্ত ক্যাম্পাসে, বিজিবি, র্যাব এবং পুলিশ, সব রকম ব্যবস্থা হয়েছে। তোমার বাসার ভেতরে লোক রাখতে বলেছি। ভেতরে কিছু রাখা আছে, এতো বাড়াবাড়ি ভালো না।
মাকসুদ বলেন, অসম্ভব এবং বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের ছেলেদের মেরেছে। আরো দুই একটা হলে একই কাজ করেছে। ছাত্রলীগের ছেলেপেলে সাদ্দাম, ইনান, শয়ন-ওরা আমার বাসায় ছিলো সন্ধ্যা থেকে। আমি খবর পাচ্ছিলাম, ওদের আমি ডেকে নিয়ে এসেছি, ওরাও এসেছে। ওদের সাথে বসে ওদের হলে হলে যেন ছাত্রলীগকে সংঘবদ্ধ রাখে এবং ঢাকা উত্তর, দক্ষিণকে যেন খবর দেয়। এগুলো করতে করতেই হাজার হাজার ছেলেমেয়ে একত্র হয়ে গেছে।
হাসিনা এ সময় জবাব দেন, কোন দেশে বাস করি আমরা! এদের বাড়তে বাড়তে তো, রাজাকারদের কী অবস্থা হয়েছে দেখিসনি, সবগুলোকে ফাঁসি দিয়েছি, এবার তোদেরও ছাড়বো না।
মাকসুদ বলেন, হ্যাঁ। এবার এই (গণঅভ্যুত্থান) ঝামেলাটা যাক, এরপরে আমিও নিজে ধরে ধরে যারা এই অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, মেইন যারা আছে, এদের বহিষ্কার করবো ইউনিভার্সিটি থেকে।
হাসিনা বলেন, সবগুলোকে বের করে দিতে হবে, আমি বলে দিচ্ছি আজ, সহ্য করার পরে অ্যারেস্ট করবে, ধরে নেবে এবং যা অ্যাকশন নেওয়ার নেবে। কারণ, ইংল্যান্ডে এ রকম ছাত্ররাজনীতির জন্য মাঠে নামলো, কতগুলো মেরে ফেলে দিলো না?
মাকসুদ বলেন, জি, জি।
হাসিনা তখন বলেন, ওই (ধরনের) অ্যাকশন না নেওয়া ছাড়া (তারও) উপায় নেই। আমরা এতো বেশি সহনশীলতা দেখাই, (তাই) আজ এতো দূর পর্যন্ত (আন্দোলন) এসেছে।
মাকসুদ বলেন, এটা তো, আমরাও তো সহনশীলতা, আমি ছাত্রলীগকে বলেছি যে, তোমরা কোন ধরনের ইয়ে করতে যেও না; যেহেতু আদালতের বিষয়, আদালত নিষ্পত্তি করবে।
হাসিনা বলেন, না। এ আদালত হবে না, (আন্দোলনকারীরা) আবার ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।
মাকসুদ বলেন, আবার রাষ্ট্রপতিকে কেউ এ রকম বলে যে, ২৪ ঘন্টার (সময় দিয়ে) রাষ্ট্রপতিকে কেউ আল্টিমেটাম দেয় একটা দেশে?
হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছে, বেয়াদবির একটা সীমা থাকে।
মাকসুদ বলেন, আপা। আমি আপনাকে যদি অন্য কোন খারাপের দিকে (পরিস্থিতি) যায়, আমি আবার একটু জানাবো। কিন্তু রাতের বেলা জানাবো না, হয়তোবা আধা ঘন্টা এক ঘন্টার মধ্যে হলে জানাবো।
হাসিনা বলেন, (রাতে জানালেও) কোনো অসুবিধা নেই, আমি আমি সবসময়ই ফ্রি।
মাকসুদ কামাল এ সময় তিনবার জি বলেন। এরপর তিনি স্লামালাইকুম বলে কথা শেষ করেন।
লেথাল উইপন ব্যবহারের ওপেন নির্দেশনা
হাসিনা তার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে তাপসের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন। তাতে দেখা যায়, তাপস ফোন করার পর হাসিনা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলছেন। জবাবে তাপস ফুফু হাসিনাকে সালাম দেন। হাসিনা সালামের জবাব দেন। তিনি বলেন, বলো, বাবা। তুমি নরমাল ফোনে কল দাও, ইন্টারনেটের অবস্থা ভালো না।
তাপস বলেন, নরমাল ফোনেই (কল দিয়েছি), নরমাল ফোনেই।
হাসিনা বলেন, আচ্ছা। বলো বাবা।
তাপস বলেন, জি। সন্ত্রাসীরা তো বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় বিভিন্ন সময় ঘুরতেছে, এখন কোথায় কী আক্রমণ করে বলা যাচ্ছে না তো।
হাসিনা বলেন, না, করতেছে। আমরা ওদের আবার ব্যবস্থা নিচ্ছি আমি, আর আবাহনী ক্লাবে কি আগুন দিচ্ছে।
তাপস বলেন, ওরা মনে হয় সচিবালয়ে তো আক্রমণ করছে, আবাহনী ক্লাবেও।
হাসিনা জানতে চান, কোথায়?
তাপস বলেন, সচিবালয়ে তো আক্রমণ করেছে, আপনি জানেন না?
হাসিনা বলেন, না।
তাপস বলেন, হ্যাঁ। স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী তো ওখানে আছে, সচিবালয়ে কয়েকবার ওরা আক্রমণ করেছে। ওরা তো রাতে যদি আবার কোথাও কোথাও বিভিন্ন সংবেদনশীল বাসাবাড়িতে আক্রমণ করে, তাহলে তো ইয়ে হবে।
হাসিনা বলেন, রাতের বেলা সব ভিজিলেন্স থাকবে এবং এই এতদিন তো, আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। একটু আস্তে আস্তে অনেক জায়গায় গ্যাদারিং ক্লিয়ার হচ্ছে।
তাপস বলেন, ওরা মনে হচ্ছে না ইয়ে করবে, রাতে মনে হয় ওদের আরো অনেক কিছু পরিকল্পনা আছে মনে হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো আমাকে তাই বললো, আভাস দিলো। এবং আপনাকেও মনে হয় বলেছে কিছু যে, রাতে যদি সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ না ইয়ে করে করবেন নাকি?
হাসিনা জানতে চান, কি করবো?
তাপস ইতস্তত করে বলেন, মানে সেনাবাহিনী দেবেন?
হাসিনা বলেন, বাবা। একটু চিন্তা করে কথা কইও।
তাপস বলেন, জি।
হাসিনা বলেন, এটাই তাদের আকাঙ্খা।
তাপস বলেন, বুঝতেছি আমি টেকনিকেলি এটা বুঝতেছি। কিন্তু ওরা মনে হয়, ওই পথে নেওয়ার জন্য ইয়ে করছে।
হাসিনা বলেন, দরকার নেই, ওটা দরকার নেই; আমি সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি, ওরা রেডি থাকবে ঠিক আছে, এখনতো আমরা অন্য ইয়ে করতেছি। ড্রোন দিয়ে ছবি নিচ্ছি আর হেলিকপ্টারে ইয়ে হচ্ছে, মানে কয়েক জায়গায়।
তাপস বলেন, তাহলে ওই কিছু ছবি দেখে পাকড়াও করা যায় না রাতের মধ্যে?
হাসিনা বলেন, সবগুলোকে অ্যারেস্ট করতে বলেছি রাত্রে।
তাপস বলেন, হ্যাঁ। পাকড়াও, পাকড়াও করলে ওদেরকে।
হাসিনা তখন বলেন, না। ওটা বলা হয়ে গেছে, ওটা নিয়ে র্যাব, ডিজিএফআই; সবাইকে বলা হয়েছে যে, যেখান থেকে যে কয়টা পারবে ধরে ফেলো,
তাপস বলেন, জি।
হাসিনা বলেন, ওটা বলা আছে, আর যেখানে গ্যাদারিং দেখবে, সেখানে ওই উপর থেকে, এখন উপর থেকে করাচ্ছি, অলরেডি শুরু হয়েছে কয়েকটা জায়গায়।
তাপস বলেন, জি।
হাসিনা বলেন, হয়ে গেছে।
তাপস বলেন, জি, জি। মোহাম্মদপুর থানার দিকে মনে হয় ওরা যাচ্ছে একটা, আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললো।
হাসিনা জিজ্ঞেস করেন, মোহাম্মদপুর থানার দিকে?
তাপস বলেন, হ্যাঁ।
হাসিনা বলেন, ওখানে পাঠিয়ে দিক র্যাবকে।
তাপস বলেন, জি। তাহলে আপনার নির্দেশনা লাগবে, উনি এখনও মানে।
হাসিনা বলেন, আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি এখন। এখন লেথাল উইপন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে।
তাপস বলেন, জি। হাসিনা আবার বলেন, ওটা বলা আছে আমি এতদিন বাধা দিয়ে রেখেছিলাম। ওই যে স্টুডেন্টরা ছিল, ওদের সেফটির কথা চিন্তা করে, তারপর তো ওই।
তাপস বলেন, না। রাতে রাতে স্টুডেন্ট না, রাতে হলো ওরা সন্ত্রাসী।
হাসিনা বলেন, না কি করছে তোমার, ওই যে আমাদের রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের একটা বাচ্চা ছেলে, তার শিক্ষক তাকে ডেকে নিয়ে এসেছে, (সেই) শিক্ষক নাকি আবার শিবির করতো, ওরা জানে না। তারপর সেই ছেলেটা মারা গেছে, তার মাত্র বুকে একটা গুলি, অথচ পুলিশ কিন্তু কোনো রিভলবার ব্যবহার করেনি।
এ রকম ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। তাপস বলেন, জি। আপনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ইয়ে করেন। হাসিনা বলেন, সব জায়গায় আগুন, বিআরটিএ, বিটিআরসি বন্ধ করে দিছে, পুড়িয়ে দিয়েছে, বিটিভি পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন তো ইন্টারনেট বন্ধ সব পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন চলবে কীভাবে?
তাপস বলেন, জি। এটা ভালো হয়েছে। জি।
হাসিনা বলেন, না। পুড়িয়ে দিয়েছে, মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে, আমি বলেছি যা যা পোড়াতে, ও আমাদের সেতু ভবন পুড়িয়ে দিয়েছে।
তাপস বলেন, জি, ওরা রাতে মনে হয় আরো ব্যাপক আক্রমণ করবে।
হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে।
তাপস বলেন, জি। কারণ এই যে, আমি ফিরলাম, আমি দেখলাম যে রাস্তায় রাস্তায় ওরা বিভিন্ন জায়গায় ইয়ে করতেছে।
এ সময় হাসিনা জানতে চান, কোন কোন জায়গায়?
তাপস উত্তর দেন, বনানীতেও, বনানী-গুলশানে তো সচরাচার করে না, কিন্তু বনানী-গুলশানে ওরা ইয়েতে চলে আসছে।
কোথাও কোথাও ইয়ে করতে পারে মুভমেন্ট আছে সবজায়গায়।
হাসিনা বলেন, ঠিক আছে আমি দেখছি।
তাপস বলেন, ধরপাকড় করতে হবে, সব ধরে ফেলতে হবে রাতের মধ্যে।
হাসিনা বলেন, না, না। ওটা বলে দেওয়া আছে অলরেডি, আর একটু আর একটু রাত গাঢ় হলেই শুরু হবে।
তাপস বলেন, জি। জি। হাসিনা এ সময় অন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। তাপস সালাম দিয়ে কথা শেষ করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যায় অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, প্রমাণ ও আলামত পাওয়া গেছে। গণ-অভ্যুত্থান দমনে একদিকে হাসিনা বিভিন্ন কৌশল নিয়েছেন, মোবাইল ফোনে নির্দেশনা দিয়েছেন; অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সেই কথোপকথনই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর ফোনে আড়িপেতে ধারণ করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির যে যন্ত্র ব্যবহার করে এসব করা হয়েছে, হাসিনার সরকারই তা বিদেশ থেকে এনেছে। এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট আমলে বিরোধী দলের সদস্যসহ সরকারবিরোধী অনেকের মোবাইল ফোনের কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। সেই যন্ত্রটি ব্যবহার করেই হাসিনার আন্দোলন দমনের কৌশল আড়িপেতে শুনেছে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। চর্যাপদের কবি ভুসুকুপার মতে, 'আপনা মাঁসে হরিণা বৈরী'। মানে, নিজের মাংসই হরিণের শত্রু। কারণ, মাংস না থাকলে শিকারী হরিণের পিছু নিতো না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসিনা জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে একটি গণ-অভ্যুত্থান দমনের কথা বলেছেন, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। ড্রোন দিয়ে অবস্থান শনাক্ত করে উপর থেকে গুলি করাচ্ছেন, হেলিকপ্টার থেকে। যাকে যেখানে পাওয়া যাবে, সোজা গুলি করবে, এমন নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, রাজাকারদের মতো আন্দোলনকারীদের ফাঁসি দেওয়া হবে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা। এই মামলার ৫৩ নম্বর সাক্ষী তিনি। পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালে তিনি প্রসিকিউশন এবং তদন্ত দলেরও সদস্য। ট্রাইব্যুনালে হাসিনার যেসব ফোনালাপ শোনানো হয়েছে, সেগুলো মামলার ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বলে মনে করছে প্রসিকিউশন।
তানভীর হাসান জোহা সেই কথোপকথনের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে আদালতে জানিয়েছেন, এই কণ্ঠ হাসিনারই। পুরো শুনানি বুধবার ফেসবুকসহ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
আদালতে তিনজনের সঙ্গে হাসিনার চারটি কথোপকথনের রেকর্ড বাজিয়ে শোনানো হয়। হাসিনা গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসএম মাকসুদ কামাল ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তখন তাঁরা আন্দোলন দমনে বিভিন্ন কর্মকৌশল সম্পর্কে কথা বলেন। যেমন—আন্দোলনকারীদের অবস্থান ড্রোনের মাধ্যমে নির্ণয় করে, হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিং/গুলি, লেথাল উইপন ব্যবহার, আন্দোলনকারীদের তালিকা করে পাকড়াও করার তথ্য এসেছে। এছাড়া, রাজাকার আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলা, ছত্রীসেনা নামিয়ে বোম্বিং করা, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা, আগুন লাগানো, জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোসহ আরো অন্যান্য নির্দেশনা দিয়েছেন হাসিনা।
বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা, প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা জানান, এ রকম ৬৯টি কথোপকথন গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর প্রসিকিউশনের হাতে আসে। তদন্তের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জোহা বিটিআরসি, এনটিএমসি, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর থেকে বিভিন্ন অডিও ক্লিপ, ভিডিও ফুটেজ, সিডিআর, আইপিডিআর, সিসি ক্যামেরা ফুটেজসহ ডিজিটাল ফরেনসিক বিষয় সংগ্রহ করেছেন, পরে এর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়।
সেই কণ্ঠস্বর
হাসিনা ১৪ দলের নেতা হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ইনু কল দিলে হাসিনা ফোন রিসিভ করেন। এরপর ইনু সালাম দেন হাসিনাকে। : হ্যালো, জি। জি। স্লামালাইকুম।
হাসিনা সালামের জবাব দিয়ে বলেন, হ্যাঁ। কী হয়েছে?
ইনু বলেন, বলছিলাম না একটা কথা? আমি মনে করি যে, আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে, এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট বাংলাদেশে পাচ্ছি আরকি। খালি ঢাকাতে আপনার রামপুরার দিকে এবং…
হাসিনা এসময় বলেন, না। রামপুরা ক্লিয়ার, শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখন আছে।
ইনু বলেন, শনির আখড়ায় কিছু মোল্লারাই...
হাসিনা তখন জবাব দেন, হ্যাঁ। জানি। না, খালি মোল্লা না, ওইখানে অনেক মাদ্রাসা।
ইনু জানান, মাদ্রাসা আছে ওই...
হাসিনা বলেন, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করতে হচ্ছে আরকি। নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না আর্মিকে। আমরা... নামাচ্ছি।
ইনু তখন বলেন, ও আচ্ছা। এরপর হাসিনা বলেন, না, আমি বলছি ক্যাজুয়াল্টির দরকার নাই, ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো। ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে, তখন দুইপাশ দিয়ে ধরবে। মেসেজটা দিয়ে দিতে পারেন যে, সেনা পাঠানো হচ্ছে, আর হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে। র্যাবের হেলিকপ্টার দিয়ে উপর দিয়ে মারবে।
এ সময় ইনু বলেন, আচ্ছা। উপর দিয়ে সাউন্ড বোম যাবে আরকি। ঠিক আছে, আমি একটা পয়েন্ট আপনাকে একটু নজরে আনার জন্য রিকোয়েস্ট করতেছি যে, কারফিউ ধরেন, দুই/পাঁচ দিন, যা চললো। কিন্তু কারফিউয়ের পরে যাতে আর মিছিল না নামতে পারে, সেজন্য একট হোমওয়ার্ক করতে, করা দরকার; যে রকম আমি উত্তরা, বাড্ডা, গুলশান, যাত্রাবাড়ীতে যারা মিছিল লিড করছে, সেগুলো চিহ্নিত করেছি। ছাত্রদল, বিএনপির ছেলেমেয়েরা, শিবিরের, মানে ধরেন রিজভীকে অ্যারেস্ট করা বা রুহুলকে অ্যারেস্ট করা ইম্পর্টেন্ট না। ইম্পর্টেন্ট হচ্ছে ওইখানে গ্রাউন্ডে, যে মিছিলটা লিড করেছে। আমার কুষ্টিয়া জেলাতে এসপি সেভাবে অলরেডি তালিকা করে ফেলেছে। ওখানে কনে সংঘর্ষ হয়নি, একটা ছররা গুলি শুধু একজনের পায়ে লেগেছে, উনি ম্যানেজ করছে। ম্যানেজ করছে। উনি অলরেডি কম্পিউটারে ছবি দেখে দেখে ছেলেগুলোর তালিকা করতেছে। তা, আমি বললাম যে, ছেলেগুলোকে আজ রাতের ভেতরে পিকআপ করে নাও।
হাসিনা বলেন, হ্যাঁ। শিওর।
ইনু বলেন, যাতে মিছিলটা লিড না করতে পারে। তা, আমি ঢাকা শহরের জন্য বলছি যে, আপনার গোয়েন্দারা নিশ্চয়ই তালিকা করতে পারবে যে উত্তরায় কারা?
হাসিনা এ সময় বলেন, খালি গোয়েন্দারটা না, লোকাল লিডারদেরও করা উচিত।
ইনু উল্লেখ করেন, লোকাল লিডার ওখানে এমপি খসরু চৌধুরী আছে এবং হাসান হাবিব আছে। আমার কালকের যে রিপোর্ট হাসান হাবিব কিন্তু। ও রাগ করে খসরুর উপরে ছেড়ে দিছে যে, এমপি সাহেব মোকাবিলা করুক।
হাসিনা তখন মত দেন, খসরু তো পারবে না, খসরু তো লোকাল না, হাসান তো লোকাল, ওদেরতো লোকজন আছে।
ইনু তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। বলেন, লোকাল না তো রাইট, হাসান হাবিব নামেনি, আর এখানে ওয়াকিলও সামলাতে পারেনি, ও দুই লাইনে পা দিয়ে চলে। তো আমার কথা হচ্ছে যে, একটু লোকাল লিডারদের সাহায্যে তালিকাটা করে নিয়ে, আজকের রাতের ভেতরে সব কাস্টডিতে নিতে পারেন, তাহলে কোন জায়গায় আর মোহাম্মদপুরে একটা পাঁয়তারা ছিলো, কাল আপনি রাত বারোটায় গিয়ে খুব ভালো করেছেন। (নইলে) আজ কিন্তু গণভবন ঘেরাও করতো কিন্তু। মোহাম্মদপুরে ওখান থেকে রেডি হচ্ছিল কাল, মানে এটা, সুতরাং...
হাসিনা বলেন, হ্যাঁ। এটা কয়েকদিন ধরে করতেছে।
ইনু প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন, ডিসিশনটা খুবই কারেক্ট হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
হাসিনা তাকে ইংরেজিতে ধন্যবাদ দেন দুবার। বলেন, আমরা হলো রণক্ষেত্রের সাথী।
ইনু বলেন, রণক্ষেত্রের সাথী। তা আপনি একটু দয়া করে...এই পিকআপটা করতে বলেন…
হাসিনা বলেন, না। এটা বলা আছে, বলতেছি, বলতেছি।
ইনু উল্লেখ করেন, ওটা একটু হোমওয়ার্ক করতে বলেন। করে অ্যারেস্ট করে ফেলতে বলেন আজ। মানে, সবই অ্যারেস্ট করে ফেললে আর মিছিল করার লোক থাকবে না।
হাসিনা বলেন, লিসেন। দাঁড়ান, দাঁড়ান। অ্যারেস্ট করে...
ইনু বলেন, আরেকটা রিকোয়েস্ট আমার, যে ইন্টারনেট আমার মনে হয়, চালু করতে পারেন, এটা আমাদেরই কাজে লাগবে।
হাসিনা এ সময় জবাব দেন, কি যে চালু করবো, সবতো পুড়িয়ে দিয়েছে। ডাটা সেন্টারও পুড়িয়ে দিয়েছেই, পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন ওই নতুন তারতুর কিনে জোড়া লাগাতে হবে।
ইনু বলেন, আমি যে কথাটা বলার চেষ্টা... আমি একাত্তরে (একাত্তর টিভিতে) রাত আটটার সময় যাবো, একা কথা বলবো। আমি বলবো যে, সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীর কোনো বিরোধ নেই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ হচ্ছে নাশকতাকারী বিএনপি-জামায়াতের।
হাসিনা এ সময় ইনুর এ মত গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, না। ওটা তো বলা হয়েছে। ওটা আমি নিজেও বলছি...।
জবাবে ইনু বলেন, এই জিনিসটা প্রোপাগান্ডায় আনতে হবে, যদি ইন্টারনেট থাকে, গণমাধ্যম দিয়ে আমরা পুরো নিউজে ফ্লাড করে দিলাম, (সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের কোনো বিরোধ নেই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ বিএনপি-জামায়াতের)।
হাসিনা তখন বলেন, ইন্টারনেট পাবো কোথায়? ইন্টারনেট পুড়িয়ে দিয়েছে। জীবনে আমি তো আর আনবো না, যদি অন্য সরকার আসে তাহলে আনবে। আমি দিয়েছি ইন্টারনেট, ওরা পোড়াতে থাকুক, ওটা চলতে হবে...
ইনু বলেন, অন্য সরকার, বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ অন্য সরকার আসবে না।
হাসিনা বলেন, আসুক, না আমি আর পারবো না। (আমি ক্ষমতা থেকে) যাচ্ছি এখন।
ইনু অনুরোধ করেন, না। না। যাওয়া দরকার নেই।
তখন হাসিনা বলেন, (ক্ষমতা থেকে যাওয়ার আগে) জামায়াতকে শায়েস্তা করে থুয়ে যেতে হবে।
(ইনুর কথা অস্পষ্ট)
ইনুকে হাসিনা বলেন, আপনার যেখানে যেখানে লোক আছে, তালিকাগুলো আপনারা করান, আমরাও করাচ্ছি।
ইনু বলেন, আপনি এই, জামায়াত-শিবিরের মেরুদণ্ডটা আবার ভেঙে দেন ঢাকা শহরে।
হাসিনা বলেন, একেবারে।
ইনু বলেন, এক্সপোজ হয়েছে আরকি, একটু দেখেন। আর আমি বাদবাকি আমাকে যেটা বলবেন, আমি ইনশাআল্লাহ করবো, কোনো অসুবিধা নেই।
হাসিনা বলেন, না। ওই তালিকাগুলো একটু করিয়ে ফালান। এই ছুতায় যা পারেন, শিবির যে কয়টা আছে, যা আছে সব বের করেন।
ইনু বলেন, বুঝেছি, আমি বুঝেছি। জি। স্লামুয়ালাইকুম, বলে ইনু কথা শেষ করেন।
হাসিনা বলেন, ঠিক আছে। আচ্ছা।
ইনু আবারও বলেন, জি। স্লামুয়ালাইকুম। হাসিনা বলেন, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।
ইনু বললেন, জঙ্গি কার্ড খেলবো
ইনুর সঙ্গে হাসিনার অন্য একটি ফোনালাপের অডিওতে শোনা যায়, হাসিনা তাকে হ্যালো বলছেন। জবাবে ইনু বলেন, হ্যালো। জি, স্লামালাইকুম। আমি ইনু বলছিলাম। হ্যালো।
হাসিনা বলেন, হ্যাঁ। বলেন।
ইনু উল্লেখ করেন, জি। না, আমি একটু পরিস্থিতি অনুযায়ী একটু উদ্বেগের ভেতরে ছিলাম। তো, আমি মনে করি যে, সিদ্ধান্তটা খুব সঠিক হয়েছে আরকি। তো, আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম যে, কারফিউটা একটু কঠোর কারফিউ আরকি (দেওয়া দরকার)। তো, সারা ঢাকা শহরে যদি মাইক নামিয়ে দিতো প্রশাসন থেকে, কারফিউ কি করা উচিত না? তাহলে একটু সুবিধা হতো মনে হয়।
হাসিনা উল্লেখ করেন, আমি হোম মিনিস্টারকে বলছি এখনি, সব জায়গায় মাইকিং করার জন্য। চারজন আহত, জেলায় জেলায় ডিসি অফিস....।
ইনু বলেন, হ্যাঁ। ওইগুলো সব পেয়েছি আমি, ডিসি অফিস, এসপি অফিস, আওয়ামী লীগের বাড়ি, আওয়ামী লীগ অফিস, এগুলোর প্রত্যেকের লিস্ট আমি পেয়েছি... ।
হাসিনা বলেন, আমি এখন ঢাকায় আসবো।
ইনু বলেন, আচ্ছা। তো এখন আমার কথা হচ্ছে যে, কারফিউটা মানে, এমন হবে যে, ঘর থেকে বের হলেই অ্যারেস্ট করবে, গুলি হবে না। (গুলি না করার তথ্য) সেটা আপনার আমার ভেতরে (থাকবে)। গুলি নেই, কিন্তু সেনাবাহিনীর ভাবটা এমন হবে, কঠোর মানে কঠোর একেবারে। তো, সেজন্য...।
হাসিনা বলেন, আজ আমি, সত্যি কথা বলতে কি, বলি আপনাকে। আমি, কমিটি আছে তো, মিটিং করছিলাম, করার আগেই আমি দিয়েছি, তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বসেছিলাম।
ইনু জানান, এ বিষয়টি তিনি দেখেছেন।
হাসিনা বলেন, বললাম যে একটু সিচুয়েশনটা একটু ভালো হচ্ছে। তাহলে আস্তে আস্তে আর্মি, যেসব জেলা শান্ত আছে, ওখান থেকে (প্রত্যাহার করে) উঠিয়ে ফেলো, আর এখানে আস্তে আস্তে অ্যাজ ইয়ুজ্যুয়ালি তুলে ফেলো। এই ডিসিশনটা দিয়ে দিয়েছি।
ইনু বলেন, আচ্ছা।
হাসিনা বলেন, মানুষ একটু ইয়ে থাকুক। ওমা, ওইখানে বসা অবস্থায় শুনলাম যে শুরু হয়ে গেছে।
ইনু বলেন, ওতো টার্গেটেড। উপজেলা লেভেলেরও ইউএনও অফিস ভাঙচুর করছে...
হাসিনা এরপর বলেন, পরিণাম শুনলাম, তখন আমি বললাম যে ঠিক আছে, তোমরা বলো কী করবে, কারফিউটা এগিয়ে দিচ্ছে, আর কি পয়েন্টগুলো যেগুলো ওদের কতগুলো জায়গা, ওরা সিলেক্ট করছে যেখানে হামলা করবে। তার প্রটেকশন দেবে আর র্যাব-পুলিশ টহল দেবে। আর সেনাবাহিনীর অবশিষ্টের মধ্যে, যেখানে যেখানে প্রয়োজন হয়, তোমরা টহল দেবে। যেটা বলছো, ওটা ঠিক, ওই প্রেশারটা থাকতে হবে।
ইনু মত দেন, প্রেশারটা থাকতে হবে, মানে প্রেশারটা থাকতে হবে। আরেকটা হচ্ছে, যেটা কাল আলাপ করছিলাম যে, আপনার পার্টি নেটওয়ার্কে আমাদের পার্টি নেটওয়ার্কে, রেডি করা (দরকার) যে কারফিউ উঠে গেলে, এক লক্ষ লোক ঢাকা দখল করবো আমরা। বসবো।
হাসিনা বলেন, ওরা জেলায় আসবে, আমাদেরও জেলা থেকে লোক আসতে চাচ্ছে, বলেছি ঠিক আছে, আসেন।
ইনু মনে করেন, হ্যাঁ। এটা আনা দরকার। এটা কারেক্ট। তিনি বলেন, আমি কাল বলেছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যে শহীদ মিনার, শাহবাগ চত্ত্বর, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে, প্রেস ক্লাবের সামনে, পল্টনে...।
হাসিনা বলেন, আমাদের নিয়ে নিতে হবে।
জবাবে ইনু বলেন, এটা আমরা নেবো, আমরা বসবো এখানে এবং কারফিউ যেদিন রিলাক্স হবে, সেদিনই মিছিলের নগরী হয়ে যাবে একেবারে। এবং কিছুই না, শান্তি চাই, শান্তি চাই। ছাত্ররা বাড়ি যাও, ফেরত যাও, ফেরত যাও। সন্ত্রাস দমন করো (এসব স্লোগান হবে)।
হাসিনা জানান, তিনি এই স্লোগান স্কুলে দিতে বলেছেন যে, তোমরা ছাত্ররা সব ঘরে ফেরো। গার্ডিয়েনদের বলছেন, এখানে কিন্তু জঙ্গি হামলা হয়েছে।
ইনু বলেন, হ্যাঁ। রাইট, রাইট।
হাসিনা বলেন, না। এটা আমাকে, বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ইয়ে পেয়েছি। তারা এটাকে (গণঅভ্যুত্থানকে) জঙ্গি হামলা হিসেবে কনসিডার, মানে বলতেছে।
ইনু বলেন, হ্যাঁ। (সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে) জঙ্গি হামলাই হয়েছে। এই (জঙ্গি) কার্ডটা খেলবো আমরা এখন।
হাসিনা বলেন, না। (জঙ্গি) কার্ড খেলা না। এটা আমি আগে করিনি। কিন্তু আমাকে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে আমাকে মেসেজটা দিছে যে, এটা জঙ্গি হামলা।
ইনু বলেন, জঙ্গি সন্ত্রাসের মোকাবিলা করছে এখন সরকার। হাসিনা জানান, তারা তাকে এটাই বলছে যে, এটা জঙ্গি হামলা। (এই তথ্য) দিয়ে দিবো পেপারে (মিডিয়াতে)।
ইনু বলেন, আচ্ছা। এটা একটা ব্যাপার, আরেকটা হচ্ছে যে, দুটা ভাগ। একটা হচ্ছে ছাত্রদের (আন্দোলন) কোটা আন্দোলনকারী, একটা হচ্ছে উৎখাতকারী; উৎখাতকারীরা জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলায় চলে গেছে। কোটা সংস্কারকারীদের ব্যাপারে আপনার, আমার সরকারের সমবেদনা আছে। উৎখাতকারীকে আমি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো, কোনো ছাত্র যদি উৎখাতকারীর সঙ্গে জড়িত হয়, সেই দায়িত্ব আমি নেবো না।
হাসিনা বলেন, এটা আপনারা বলেন, এটা আপনারা বলেন না কেন?
ইনু বলেন, আমি তো বলবো।
হাসিনা বলেন, আরে আমি তো (আন্দোলনকারীদের দৃষ্টিতে) শত্রু। আপনারা বললে তখন মনে করবে যে, অন্যান্য অ্যাঙ্গেল থেকে বলা হয়েছে।
ইনু বলেন, আমি তো অবশ্যই বলবো।
হাসিনা এ সময় বলেন, বাকি দেখতেছি না, কমিউনিস্ট পার্টি, তারা এখন শেষ হয়ে গেছে।
ইনু বলেন, তো, দেখি আমি ওদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি, সেলিম; সবার সঙ্গে।
হাসিনা বলেন, কি জানি উনার নাম? সাইফুল হক নাকি?
ইনু জানান, তার নাম সাইফুল। ইনু এরপর বলেন, জোনায়েদ সাকি। জোনায়েদ সাকি, সাইফুল হক। আচ্ছা, আমি জোনায়েদ সাকি, সাইফুল হকের সঙ্গে একটু লিয়াজোঁ করি।
হাসিনা বলেন, তোমরা (সরকারবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে) কোথায় নিচ্ছো দেশটাকে? ওদের মধ্যে যে সমর্থন দিচ্ছো, তা (তাতে) এখন দেখো পুরো জঙ্গি হামলা হচ্ছে।
ইনু বলেন, আরেকটা পয়েন্ট কি খেয়াল করছেন, আপনি যে আনু মুহাম্মদরা স্যরি, শিক্ষকরা যারা সমর্থন দিয়েছে, তারা একটা অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেখানে বলতে চাচ্ছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে হেন-তেন নিয়ে হবে, ছায়া সরকার করবে এবং সংবিধান বাতিল করার জন্য একটা সংবিধান সভা করতে হবে। মানে, সংবিধানই বাতিল করে দেবে। হ্যাঁ, সংবিধান বাতিল চায়। আমি, ভাইকে একটু আগে বলেছি যে, ভাই, এটা খুবই অ্যালার্মিং কথা, যেখানে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি আর ম্যুরাল ভেঙে ফেলতেছে, তার মানে আমার পয়েন্টটা নিতে হবে যে, এদের অ্যাট্যাকটা হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের বেসিক অর্জনের উপরে (বিরুদ্ধে)। সুতরাং, তারা তো খালি সরকার বদল চাচ্ছে না, মানে কোটা আন্দোলন করে কোটা চায়নি। তারা সরকার উৎখাত করতে চাইছে। আর এক দফা আন্দোলনের মানে, তারা হচ্ছে সরকারের মানে, রাষ্ট্রের বেসিক সংবিধান উড়িয়ে দিচ্ছে, (দিতে) চাচ্ছে তারা। তার মানে, এই জায়গায় (এই দৃষ্টিকোণ থেকে এভাবে) পলিটিক্সটা অ্যাট্যাক করতে হবে, আমাকে, দাঁড় করাতে হবে এখন।
হাসিনা বলেন, ওই যে সেভেনটি ফাইভের পর করছিলো।
ইনু বলেন, এক্সাক্টলি। তো, এখন আপনি কি অ্যাডজাস্ট করবেন, এটা ছোটোখাটো পাঁচ, দশ মিনিটের, আরো দুদিন একদিন পরে?
হাসিনা বলেন, আজকের দিনটা যাক, দেখি।
ইনু বলেন, আজকের দিনটা যাক, আমি প্ল্যানগুলো সাজাই। আপনাকে আমি আমার বিবেচনা যেগুলা আছে, দিবোনি আপনাকে। আর আমি বলি যে, কারফিউটা (চলাকালে), বডি ল্যাংগুয়েজে অনেক কঠোর হবে যে, ঘর থেকে বের হলেই অ্যারেস্ট, গুলি না; মানে অ্যারেস্ট করে নিয়ে আসবে। মানে টেলিভিশনে যে শান্তিনিকেতন (শান্তিনগর) থেকে ৩০ জন অ্যারেস্ট হয়েছে, জেলে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জেলে পাঠাবো না, থানায় রাখবো। দশ ঘণ্টা পরে ছেড়ে দেবেন আরকি। বুঝলেন না?
হাসিনা বলেন, বেশ। আচ্ছা।
ইনু বলেন, গরিব মানুষই তো। কিন্তু প্রোপাগান্ডা হবে ঘর থেকে বেরোলেই, মানে গুলি হবে। গুলি শব্দ (মিডিয়ায়) বলবো না, আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কঠোর (একথা বলতে হবে)। কেউ ঘরের বাইরে বেরোবে না। মানে, রিল্যাক্স; কারফিউ না আরকি। আপনার অফিসের মানে, বাসার চারপাশে একটু মানে, এই মানিক মিয়া এভিনিউর এখান থেকে প্রোডাকশন বাড়ান। ইনু আবার বলেন, না। ওটা না। ওরা যে ঢাকা চলো বলছে, গণভবন আক্রমণ করবে; এগুলা বলছে।
হাসিনা বলেন, গণভবন, বঙ্গভবন সব আক্রমণ করবে।
ইনু বলেন, তা ঠিক আছে, আল্লাহ ভরসা। আমি, আমার কথা হচ্ছে যে, আমাদের পরে যে, জনতার ঢাকা এটা প্রমাণ করার জন্য, হোমওয়ার্কটাই আজকের চব্বিশ ঘণ্টায় করে ফেলতে হবে। ওয়ার্ড থেকে দুই হাজার লোক রেডি করতে হবে। এবং জেলাগুলোতেও আমি আমার যত নেটওয়ার্ক আছে, আমি বলছি কারফিউ উঠবে, (কারফিউ প্রত্যাহার হলে) সাথে সাথে মিছিল বের হবে কুষ্টিয়া শহরে তিন হাজার লোকের, পাঁচ হাজার লোকের; রংপুর শহরে, ময়মনসিংহ শহরে। মানে শান্তি চাই, সংঘাত চাই না, শান্তি চাই, শান্তি চাই, ছাত্ররা ঘরে ফেরত যাও। এই মিছিল (দিয়ে) দখল করে নিতে হবে।
হাসিনা বলেন, ঠিক আছে। আপনারা আগে বলেন যে, ছাত্ররা পরে যাও।
ইনু বলেন, আমিও বলতেছি, আমি অবশ্যই বলবো। কিন্তু আপনার পার্টিটাকে একটু চাঙ্গা করেন।
একটাকেও ছাড়বেন না হাসিনা
গত বছরের ১৪ জুলাই রাত ১১টা ২৮ মিনিট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাকসুদ কামালের কথোপকথন হয়। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হাসিনা হ্যালো বললে মাকসুদ বলেন, আপা, স্লামালাইকুম। হাসিনা সালামের জবাব দেন। মাকসুদ কামাল বলেন, প্রত্যেক হল থেকে তো ছেলে-মেয়েরা তালা ভেঙে বের হয়ে গেছে। এখন তারা রাজু ভাস্কর্যে, চার পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ে জমা হয়েছে। মল চত্ত্বরে জমা হয়েছে এবং যে কোনো মুহূর্তে আমার বাসাও অ্যাটাক করতে পারে।
হাসিনা বলেন, তোমার বাসা প্রটেকশনের কথা বলে দিয়েছি।
মাকসুদ বলেন, জি, জি।
হাসিনা বলেন, আগে একবার (ভিসির বাসা প্রটেকশন) করেছে।
মাকসুদ বলেন, ওই রকম একটা প্রস্তুতি, লাঠিসোটা নিয়ে বের হয়েছে।
এ সময় হাসিনা বলেন, লাঠিসোটা নিয়ে বের হলে হবে না, আমি পুলিশ এবং বিডিআর হয়ে বিজিবি আর... বলছি খুব অ্যালার্ট থাকতে এবং তারা রাজাকার হতে চেয়েছে তো, তাদের সবাই রাজাকার। কী আশ্চর্য! কোন দেশে বসবাস করি!
মাকসুদ বলেন, জি, জি। বলতেছে আমরা সবাই রাজাকার।
হাসিনা বলেন, তো, রাজাকারদের তো ফাঁসি দিয়েছি, এবার তোদেরও তাই করবো। একটাও ছাড়বো না, আমি বলে দিয়েছি। এই এতোদিন ধরে আমরা কিন্তু বলিনি, ধৈর্য ধরেছি, তারা আবার বাড়ছে।
মাকসুদ বলেন, বেশি বেড়ে গেছে এবং অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, অতিরিক্ত তো আপা একটু ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাটা আরেকটু বাড়ানো (দরকার), আর আমার বাসার ওখানেও (নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার)।
হাসিনা বলেন, ক্যাম্পাসের (নিরাপত্তার) ব্যবস্থা করছি, সমস্ত ক্যাম্পাসে, বিজিবি, র্যাব এবং পুলিশ, সব রকম ব্যবস্থা হয়েছে। তোমার বাসার ভেতরে লোক রাখতে বলেছি। ভেতরে কিছু রাখা আছে, এতো বাড়াবাড়ি ভালো না।
মাকসুদ বলেন, অসম্ভব এবং বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের ছেলেদের মেরেছে। আরো দুই একটা হলে একই কাজ করেছে। ছাত্রলীগের ছেলেপেলে সাদ্দাম, ইনান, শয়ন-ওরা আমার বাসায় ছিলো সন্ধ্যা থেকে। আমি খবর পাচ্ছিলাম, ওদের আমি ডেকে নিয়ে এসেছি, ওরাও এসেছে। ওদের সাথে বসে ওদের হলে হলে যেন ছাত্রলীগকে সংঘবদ্ধ রাখে এবং ঢাকা উত্তর, দক্ষিণকে যেন খবর দেয়। এগুলো করতে করতেই হাজার হাজার ছেলেমেয়ে একত্র হয়ে গেছে।
হাসিনা এ সময় জবাব দেন, কোন দেশে বাস করি আমরা! এদের বাড়তে বাড়তে তো, রাজাকারদের কী অবস্থা হয়েছে দেখিসনি, সবগুলোকে ফাঁসি দিয়েছি, এবার তোদেরও ছাড়বো না।
মাকসুদ বলেন, হ্যাঁ। এবার এই (গণঅভ্যুত্থান) ঝামেলাটা যাক, এরপরে আমিও নিজে ধরে ধরে যারা এই অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, মেইন যারা আছে, এদের বহিষ্কার করবো ইউনিভার্সিটি থেকে।
হাসিনা বলেন, সবগুলোকে বের করে দিতে হবে, আমি বলে দিচ্ছি আজ, সহ্য করার পরে অ্যারেস্ট করবে, ধরে নেবে এবং যা অ্যাকশন নেওয়ার নেবে। কারণ, ইংল্যান্ডে এ রকম ছাত্ররাজনীতির জন্য মাঠে নামলো, কতগুলো মেরে ফেলে দিলো না?
মাকসুদ বলেন, জি, জি।
হাসিনা তখন বলেন, ওই (ধরনের) অ্যাকশন না নেওয়া ছাড়া (তারও) উপায় নেই। আমরা এতো বেশি সহনশীলতা দেখাই, (তাই) আজ এতো দূর পর্যন্ত (আন্দোলন) এসেছে।
মাকসুদ বলেন, এটা তো, আমরাও তো সহনশীলতা, আমি ছাত্রলীগকে বলেছি যে, তোমরা কোন ধরনের ইয়ে করতে যেও না; যেহেতু আদালতের বিষয়, আদালত নিষ্পত্তি করবে।
হাসিনা বলেন, না। এ আদালত হবে না, (আন্দোলনকারীরা) আবার ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।
মাকসুদ বলেন, আবার রাষ্ট্রপতিকে কেউ এ রকম বলে যে, ২৪ ঘন্টার (সময় দিয়ে) রাষ্ট্রপতিকে কেউ আল্টিমেটাম দেয় একটা দেশে?
হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছে, বেয়াদবির একটা সীমা থাকে।
মাকসুদ বলেন, আপা। আমি আপনাকে যদি অন্য কোন খারাপের দিকে (পরিস্থিতি) যায়, আমি আবার একটু জানাবো। কিন্তু রাতের বেলা জানাবো না, হয়তোবা আধা ঘন্টা এক ঘন্টার মধ্যে হলে জানাবো।
হাসিনা বলেন, (রাতে জানালেও) কোনো অসুবিধা নেই, আমি আমি সবসময়ই ফ্রি।
মাকসুদ কামাল এ সময় তিনবার জি বলেন। এরপর তিনি স্লামালাইকুম বলে কথা শেষ করেন।
লেথাল উইপন ব্যবহারের ওপেন নির্দেশনা
হাসিনা তার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে তাপসের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন। তাতে দেখা যায়, তাপস ফোন করার পর হাসিনা ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলছেন। জবাবে তাপস ফুফু হাসিনাকে সালাম দেন। হাসিনা সালামের জবাব দেন। তিনি বলেন, বলো, বাবা। তুমি নরমাল ফোনে কল দাও, ইন্টারনেটের অবস্থা ভালো না।
তাপস বলেন, নরমাল ফোনেই (কল দিয়েছি), নরমাল ফোনেই।
হাসিনা বলেন, আচ্ছা। বলো বাবা।
তাপস বলেন, জি। সন্ত্রাসীরা তো বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় বিভিন্ন সময় ঘুরতেছে, এখন কোথায় কী আক্রমণ করে বলা যাচ্ছে না তো।
হাসিনা বলেন, না, করতেছে। আমরা ওদের আবার ব্যবস্থা নিচ্ছি আমি, আর আবাহনী ক্লাবে কি আগুন দিচ্ছে।
তাপস বলেন, ওরা মনে হয় সচিবালয়ে তো আক্রমণ করছে, আবাহনী ক্লাবেও।
হাসিনা জানতে চান, কোথায়?
তাপস বলেন, সচিবালয়ে তো আক্রমণ করেছে, আপনি জানেন না?
হাসিনা বলেন, না।
তাপস বলেন, হ্যাঁ। স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী তো ওখানে আছে, সচিবালয়ে কয়েকবার ওরা আক্রমণ করেছে। ওরা তো রাতে যদি আবার কোথাও কোথাও বিভিন্ন সংবেদনশীল বাসাবাড়িতে আক্রমণ করে, তাহলে তো ইয়ে হবে।
হাসিনা বলেন, রাতের বেলা সব ভিজিলেন্স থাকবে এবং এই এতদিন তো, আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। একটু আস্তে আস্তে অনেক জায়গায় গ্যাদারিং ক্লিয়ার হচ্ছে।
তাপস বলেন, ওরা মনে হচ্ছে না ইয়ে করবে, রাতে মনে হয় ওদের আরো অনেক কিছু পরিকল্পনা আছে মনে হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো আমাকে তাই বললো, আভাস দিলো। এবং আপনাকেও মনে হয় বলেছে কিছু যে, রাতে যদি সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ না ইয়ে করে করবেন নাকি?
হাসিনা জানতে চান, কি করবো?
তাপস ইতস্তত করে বলেন, মানে সেনাবাহিনী দেবেন?
হাসিনা বলেন, বাবা। একটু চিন্তা করে কথা কইও।
তাপস বলেন, জি।
হাসিনা বলেন, এটাই তাদের আকাঙ্খা।
তাপস বলেন, বুঝতেছি আমি টেকনিকেলি এটা বুঝতেছি। কিন্তু ওরা মনে হয়, ওই পথে নেওয়ার জন্য ইয়ে করছে।
হাসিনা বলেন, দরকার নেই, ওটা দরকার নেই; আমি সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি, ওরা রেডি থাকবে ঠিক আছে, এখনতো আমরা অন্য ইয়ে করতেছি। ড্রোন দিয়ে ছবি নিচ্ছি আর হেলিকপ্টারে ইয়ে হচ্ছে, মানে কয়েক জায়গায়।
তাপস বলেন, তাহলে ওই কিছু ছবি দেখে পাকড়াও করা যায় না রাতের মধ্যে?
হাসিনা বলেন, সবগুলোকে অ্যারেস্ট করতে বলেছি রাত্রে।
তাপস বলেন, হ্যাঁ। পাকড়াও, পাকড়াও করলে ওদেরকে।
হাসিনা তখন বলেন, না। ওটা বলা হয়ে গেছে, ওটা নিয়ে র্যাব, ডিজিএফআই; সবাইকে বলা হয়েছে যে, যেখান থেকে যে কয়টা পারবে ধরে ফেলো,
তাপস বলেন, জি।
হাসিনা বলেন, ওটা বলা আছে, আর যেখানে গ্যাদারিং দেখবে, সেখানে ওই উপর থেকে, এখন উপর থেকে করাচ্ছি, অলরেডি শুরু হয়েছে কয়েকটা জায়গায়।
তাপস বলেন, জি।
হাসিনা বলেন, হয়ে গেছে।
তাপস বলেন, জি, জি। মোহাম্মদপুর থানার দিকে মনে হয় ওরা যাচ্ছে একটা, আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললো।
হাসিনা জিজ্ঞেস করেন, মোহাম্মদপুর থানার দিকে?
তাপস বলেন, হ্যাঁ।
হাসিনা বলেন, ওখানে পাঠিয়ে দিক র্যাবকে।
তাপস বলেন, জি। তাহলে আপনার নির্দেশনা লাগবে, উনি এখনও মানে।
হাসিনা বলেন, আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি এখন। এখন লেথাল উইপন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে।
তাপস বলেন, জি। হাসিনা আবার বলেন, ওটা বলা আছে আমি এতদিন বাধা দিয়ে রেখেছিলাম। ওই যে স্টুডেন্টরা ছিল, ওদের সেফটির কথা চিন্তা করে, তারপর তো ওই।
তাপস বলেন, না। রাতে রাতে স্টুডেন্ট না, রাতে হলো ওরা সন্ত্রাসী।
হাসিনা বলেন, না কি করছে তোমার, ওই যে আমাদের রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুলের একটা বাচ্চা ছেলে, তার শিক্ষক তাকে ডেকে নিয়ে এসেছে, (সেই) শিক্ষক নাকি আবার শিবির করতো, ওরা জানে না। তারপর সেই ছেলেটা মারা গেছে, তার মাত্র বুকে একটা গুলি, অথচ পুলিশ কিন্তু কোনো রিভলবার ব্যবহার করেনি।
এ রকম ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। তাপস বলেন, জি। আপনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ইয়ে করেন। হাসিনা বলেন, সব জায়গায় আগুন, বিআরটিএ, বিটিআরসি বন্ধ করে দিছে, পুড়িয়ে দিয়েছে, বিটিভি পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন তো ইন্টারনেট বন্ধ সব পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন চলবে কীভাবে?
তাপস বলেন, জি। এটা ভালো হয়েছে। জি।
হাসিনা বলেন, না। পুড়িয়ে দিয়েছে, মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে, আমি বলেছি যা যা পোড়াতে, ও আমাদের সেতু ভবন পুড়িয়ে দিয়েছে।
তাপস বলেন, জি, ওরা রাতে মনে হয় আরো ব্যাপক আক্রমণ করবে।
হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে।
তাপস বলেন, জি। কারণ এই যে, আমি ফিরলাম, আমি দেখলাম যে রাস্তায় রাস্তায় ওরা বিভিন্ন জায়গায় ইয়ে করতেছে।
এ সময় হাসিনা জানতে চান, কোন কোন জায়গায়?
তাপস উত্তর দেন, বনানীতেও, বনানী-গুলশানে তো সচরাচার করে না, কিন্তু বনানী-গুলশানে ওরা ইয়েতে চলে আসছে।
কোথাও কোথাও ইয়ে করতে পারে মুভমেন্ট আছে সবজায়গায়।
হাসিনা বলেন, ঠিক আছে আমি দেখছি।
তাপস বলেন, ধরপাকড় করতে হবে, সব ধরে ফেলতে হবে রাতের মধ্যে।
হাসিনা বলেন, না, না। ওটা বলে দেওয়া আছে অলরেডি, আর একটু আর একটু রাত গাঢ় হলেই শুরু হবে।
তাপস বলেন, জি। জি। হাসিনা এ সময় অন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। তাপস সালাম দিয়ে কথা শেষ করেন।
উপদেষ্টা জানান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যে লিখিত প্রস্তাব দিতে সাংবাদিক সংগঠন ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
৩ ঘণ্টা আগেসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশাপাশি স্পেনের রাজা ফেলিপ ষষ্ঠ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিগেরু ইশিবা, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগেসহ বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
৪ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতির ইতিহাসের এক সংকটময় সময়ে এ সহায়তা বাংলাদেশকে সঠিক পথে রাখছে। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বব্যাংককে চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকীকরণ ও পুনর্গঠনে সহায়তা করার আহ্বান জানান।
৫ ঘণ্টা আগেভোলার দিঘলদী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইফতারুল হাসান স্বপনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা।
৬ ঘণ্টা আগে