leadT1ad

হোমনায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৪টি মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন

কুমিল্লার হোমনায় এক যুবকের ফেসবুক পোস্ট কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হলে বুধবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাঁকে জেলহাজতে পাঠানোর পরও উত্তেজিত লোকজন হোমনার চারটি মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় উস্কানি ও ইন্ধনদাতাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নাজির আহমেদ খান।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
কুমিল্লা
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪২
হোমনা উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারটি মাজারে হামলা, ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ লোকজন। স্ট্রিম ছবি

কুমিল্লায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইসলাম নিয়ে ‘কটূক্তির’ অভিযোগে মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারটি মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় কিছু বিক্ষুব্ধ লোকজন জড়িত ছিল বলে জানা গেছে।

ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলার হোমনা উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নাজির আহমেদ খান বলেছেন, ‘মাজারে হামলার ঘটনায় উস্কানি ও ইন্ধনদাতাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

হোমনা উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারটি মাজারে হামলা, ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ লোকজন। স্ট্রিম ছবি
হোমনা উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারটি মাজারে হামলা, ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ লোকজন। স্ট্রিম ছবি

অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের পরও হামলা

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে ‘বেমজা মহসিন’ নামের একটি আইডি থেকে গত বুধবার সকাল ১০টা ৫২মিনিটে ইসলাম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ পোস্ট দেন এক যুবক। এ ঘটনায় স্থানীয় জনতা হোমনা থানার সামনে জড়ো হয়ে মহসিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাদের শান্ত করে। পরে বুধবার দুপুরে ওই যুবককে গ্রেপ্তারও করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা হোমনা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হলে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

এদিকে ফেসবুকে ‘আপত্তিকর’ পোস্ট কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আরও এলাকার বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয় লোকজন। তাঁরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে উপজেলার আসাদপুর গ্রামে কফিল উদ্দিন শাহ মাজার, হাওয়ালি শাহ মাজার, কালাই শাহ মাজার ও আবদু শাহ মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। পরে মাজারগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

উপজেলা ইসলামী ফ্রন্টের সেক্রেটারি সফিক রানা ও ইসলামী যুব সেনার নেতা শরিফুল জানান, গ্রেপ্তার যুবক দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন।

হোমনা উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারটি মাজারে হামলা, ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ লোকজন। স্ট্রিম ছবি
হোমনা উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারটি মাজারে হামলা, ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ লোকজন। স্ট্রিম ছবি

কী বলছে প্রশাসন

মাজারে হামলা-ভাঙচুরের খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুমিল্লার এসপি মো. নাজির আহমেদ খান ও হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষ্যেমালিকা চাকমা।

ঘটনার কারণ উল্লেখ করে ইউএনও ক্ষ্যেমালিকা চাকমা বলেন, ‘বুধবার ধর্ম নিয়ে কটূক্তির কারণে জনতার মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ (বৃহস্পতিবার) বিক্ষুব্ধ জনতা মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছেন।’

অভিযুক্তকে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তাররের পরও মাজারে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে জানিয়ে হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ইসলাম নিয়ে ‘কটূক্তিমূলক পোস্ট’ দেওয়ার অভিযোগে জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যুবককে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তবুও সকালে বিক্ষুব্ধ জনতা মাজারে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।’

কুমিল্লার এসপি মো. নাজির আহমেদ খান বলেন, ‘ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার পর পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু যারা আইন হাতে তুলে নিয়ে মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত