ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণ এবং লক্ষ্মীপুরের একটি নির্বাচন কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশন জানিয়েছে, এই ঘটনাগুলো সত্ত্বেও তাদের মূল লক্ষ্য অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের দিকেই নিবদ্ধ রয়েছে এবং তারা সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
ঘটনাগুলোর পরপরই নির্বাচন কমিশন দেশের সব উপজেলা নির্বাচন অফিসকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ইসি জানিয়েছে, শুক্রবার থেকেই তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং উভয় ঘটনার বিষয়েই পুলিশ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ইসি আরও সতর্ক করে বলেছে, কেউ যদি নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করে, নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করে বা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটায়, তাহলে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলেই দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
পল্টনে শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাসউদ বলেন, ‘কমিশন এই মুহূর্তে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা আমাদের সব উপজেলা নির্বাচন অফিসকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছি। এই নির্দিষ্ট ঘটনাটি তদন্তাধীন এবং তদন্ত শেষ হলে কারা জড়িত ছিল, তা স্পষ্ট হবে।’
আব্দুর রহমানেল মাসউদ আরও বলেন, এই ঘটনাটি তফসিল ঘোষণার পরপরই ঘটেছে ও শরিফ ওসমান হাদি একজন সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়ায় এটি নির্বাচনী পরিবেশ বা প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা হতে পারে, এমন ধারণা অনেকের মনে আসা স্বাভাবিক। এ বিষয়ে এখনই কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে চায় না ইসি।
কমিশনার বলেন, ‘আমরা চাই তদন্ত সম্পন্ন হোক। একবার পরিষ্কার হয়ে গেলে কারা জড়িত ছিল এবং তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল, তখনই কমিশন প্রতিক্রিয়া জানাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনো মন্তব্য থেকে বিরত থাকছি।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আব্দুর রহমানেল মাসউদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে এটুকুই বলা যায়, একটি ঘটনা ঘটেছে এবং এই পর্যায়ে এটিকে আমরা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছি।’
লক্ষ্মীপুরের নির্বাচন অফিসে অগ্নিকাণ্ডটিও বিচ্ছিন্ন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘এই মুহূর্তে এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে? আমাদের পুরো মনোযোগ এখন নির্বাচন পরিচালনার দিকে। সরকার অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।’
প্রধান উপদেষ্টা, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে ইসি রাহমানেল মাসউদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, সরকার আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। তারা নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।’
তফসিল ঘোষণার পর আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে আসে কি না—এ প্রশ্নের উত্তরে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তত্ত্বাবধান বলতে এটা বোঝায় না যে তারা তাদের নিজস্ব দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করবে না। একটি ঘটনা ঘটেছে এবং পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। তত্ত্বাবধান মানে এই নয় যে, প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের অনুমতি নিতে হবে।’
এদিকে, শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় গতকাল থেকেই পুলিশের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি জানান, বিষয়টি পুলিশ দেখছে এবং গতকাল দুপুর থেকেই এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আলোচনা চলছে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তিনি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর এভাকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে লক্ষ্মীপুরে জেলা নির্বাচন অফিসে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে অফিসের নিচতলার গোডাউনে সংরক্ষিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে।