আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে অপরাধীদের দেখামাত্র গুলি করার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
মাঠ পর্যায়ে টহলরত ডিএমপির একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করলেও তাঁরা কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এরই মধ্যে রায়কে ঘিরে সম্ভাব্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে টহল জোরদার করার পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) রেজাউল করিম বলেন, ‘রায় ঘিরে কোনো অপশক্তি যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য পুলিশকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি দেশজুড়ে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, ঢাকা ছাড়াও ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে ‘দেখামাত্র গুলির’ নির্দেশনা রয়েছে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি সম্পদ ও সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় নাশকতাকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী যদি কাউকে গুলি করে, আক্রমণ করে, বা পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে, তবে তাকে দেখামাত্র হাঁটুর নিচে গুলি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে অপরাধী জীবিত থাকেন।’
পাঁচ দিন আগে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার বেতারে কর্মকর্তাদের একই ধরনের নির্দেশনা দেন। এ খবর প্রকাশিত হলে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
দেশজুড়ে গ্রেপ্তার অভিযান
এদিকে, রায়কে সামনে রেখে দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে। এদের মধ্যে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ৯৮২ জন এবং বাকি ৭১৮ জনকে অন্যান্য অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে সুনামগঞ্জ থেকে ৯০০ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী নগরবাসীর কাছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা চেয়েছেন এবং রাজধানীর হোটেল, মোটেল ও মেসে অপরিচিত কাউকে আশ্রয় না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।