leadT1ad

কোটি টাকা আত্মসাৎ

‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ সংশ্লিষ্টদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ১০
হাইকোর্ট ভবন। ছবি: সংগৃহীত

শত কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া অনলাইন এভিয়েশন প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট লিমিটেড’-এর পরিচালক ও অংশীদারদের সব আর্থিক হিসাব (ব্যাংক, মোবাইল ও পেমেন্ট গেটওয়ে) জব্দের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতের অনুমতি ছাড়া ফ্লাইট এক্সপার্ট লিমিটেডের সব পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও চাওয়া হয়েছে রিটে।

গতকাল সোমবার (৪ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পাভেল মিয়া। গত শনিবার (২ আগস্ট) দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ‘শত কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে ফ্লাইট এক্সপার্ট!’ শিরোনামের প্রতিবেদনও এই রিটের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী পাভেল মিয়া স্ট্রিমকে জানান, ‘প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের সুরক্ষায় ও অর্থ উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তাই আমরা হাইকোর্টের কাছে আবেদন করেছি যেন সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের আর্থিক লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয় এবং বিদেশে পলায়নের পথ রুদ্ধ করা হয়।’

পাভেল মিয়া আরও জানান, বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী সপ্তাহেই রিটের শুনানি হতে পারে।

রিটে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি ও ডিআইজি (ইমিগ্রেশন), ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, বিএসইসি চেয়ারম্যান ও আটাব সভাপতিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

‘অফিস বন্ধ, ওয়েবসাইট গায়েব’

গত শনিবার দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন ফ্লাইট বুকিং প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ হঠাৎই কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ঢাকার কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। ওয়েবসাইট ও অনলাইন মাধ্যমগুলো কাজ করছে না। এতে অসংখ্য ট্রাভেল এজেন্সি ও সাধারণ গ্রাহক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটির সেলস ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, ১ আগস্ট রাতেই প্রতিষ্ঠানটির মালিক দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তিনি মতিঝিল থানায় যাচ্ছেন।

সিইওর পাল্টা অভিযোগ ও আত্মপক্ষ সমর্থন

ফ্লাইট এক্সপার্টের অভ্যন্তরীণ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠানো এক বার্তায় প্রতিষ্ঠানটির সিইও সালমান দাবি করেন, তার তিন সহকর্মী—সাঈদ, হোসাইন ও সাকিব তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তারা ৩১ জুলাই একটি মিটিংয়ে পরিকল্পিতভাবে সব দায় তার (সালমানের) ওপর চাপিয়ে দেন ও ২ আগস্ট সকালেই কোম্পানির টাকা তুলে নেন।

সালমান বলেন, ‘তারা আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই একতরফা দোষারোপ করেছে। আমি শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সেজন্য আমি ছুটি নিয়েছি। এই পরিস্থিতি তৈরি হোক, তা কখনোই চাইনি।’

তবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার সহকর্মীরাও। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে ও এই অর্থের সিংহভাগ বিনিয়োগকারীদের ফেরত দেওয়ার কোনো উদ্যোগ না নিয়েই মালিকপক্ষ গা ঢাকা দিয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ

ফ্লাইট এক্সপার্টের সঙ্গে চুক্তিতে থাকা কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা লাখ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম। এখন অফিস নেই, কেউ ফোন ধরে না। বুঝতে পারছি না কীভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠব।

২০১৭ সালের মার্চে ফ্লাইট এক্সপার্ট লিমিটেড যাত্রা শুরু করে। অনলাইনে দেশি-বিদেশি ফ্লাইট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন, ভিসা প্রসেসিং ও ট্যুর প্যাকেজের মতো সেবা দিয়ে তারা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিশেষ করে কোভিড পরবর্তী ভ্রমণ চাহিদা বৃদ্ধির সময়ে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত