leadT1ad

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত: আইএসপিআর

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি বহর। ফাইল ছবি

সুদানের আবেই অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আটজন।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, জাতিসংঘের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালালে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ এখনো চলছে।

এর আগে চলতি বছরের ২৯ মে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আইএসপিআর জানিয়েছিল, শুরু থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ শান্তিরক্ষী জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর ১৩১, নৌবাহিনীর চার, বিমানবাহিনীর ছয় ও পুলিশের ২৪ জন। আহত হয়েছেন ২৭২ জন।

এদিকে, বাংলাদেশ আর্মির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও একই তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত আক্রমণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মোট ১৪ শান্তিরক্ষী হতাহত হয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ছয় শান্তিরক্ষী নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন।

ওই এলাকায় পরিস্থিতি এখনো অস্থিতিশীল এবং সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে। আহত শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও উদ্ধার কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যপ্রাপ্তি সাপেক্ষে যথাসময়ে জানানো হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই পোস্টে।

২০২২ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন– ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেই (UNISFA)– তে বাংলাদেশের একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সুদানের কোরদোফান এলাকায় জাতিসংঘের ভবনে হামলা হয়েছে। এই হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। দেশটির সরকার এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। সরকারের এক বিবৃতিতে হামলার জন্য সরকারবিরোধী আধা-সামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে দায়ী করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ড্রোন দিয়ে জাতিসংঘের ওই ভবনে হামলা চালানো হয়েছে।

সুদান ও দক্ষিণ সুদান যৌথভাবে আবেই অঞ্চল পরিচালনা করে। উভয়ে মালিকানা দাবি করে আসছে আবেইর। দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার পর ২০১১ সাল থেকে দীর্ঘদিনেও এই বিরোধের সমাধান হয়নি।

আবেই অঞ্চলকে তেলসমৃদ্ধ বলা হয়। তবে ২০০৯ সালে নেদারল্যান্ডের হেগের স্থায়ী সালিশি আদালতের রায়ের পর অধিকাংশ তেলক্ষেত্র এখন আবেইর সীমানার বাইরে পড়েছে। এখানে তেল উৎপাদন হয়। কিন্তু মূল সমস্যা অর্থনৈতিক নয় বরং জাতিগত দ্বন্দ্বের।

বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গত প্রায় চার দশক বাংলাদেশ দায়িত্ব পালন করে আসছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা ও পুলিশ সদস্য মোতায়েনের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় দেশের মধ্যেও অন্যতম বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে প্রথমে ছিল নেপাল। এ সময় মিশনে নেপালের মোট শান্তিরক্ষী ছিল ৬০১ নারীসহ পাঁচ হাজার ৩৫০ জন। বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪৭ নারীসহ পাঁচ হাজার ২৩০ শান্তিরক্ষী নিয়ে তৃতীয়। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ৬৬০ নারীসহ পাঁচ হাজার ২৩৭ শান্তিরক্ষী নিয়ে রুয়ান্ডা।

১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশ নেওয়া শুরু। এরপর গত ৩৭ বছরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের এক গর্বিত অংশীদারে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী এই মিশনে দায়িত্ব পালন করছে ১৯৯৩ সাল থেকে। বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা মিশনে অংশ নিচ্ছেন ১৯৮৯ সাল থেকে। ওই বছর নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয়।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আইএসপিআর আরও জানিয়েছিল, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪৩ দেশ ও স্থানে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। এসব মিশনে মোট দুই লাখ ৫৫৮ শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে নারী শান্তিরক্ষী তিন হাজার ৬৪৫ জন। সেনাবাহিনী থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন এক লাখ ৬২ হাজার ৩৫ জন। বর্তমানে জাতিসংঘের ১০টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পাঁচ হাজার ৬১৯ শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে ৯টি মিশনে সেনাবাহিনীর সদস্য রয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার।

Ad 300x250

সম্পর্কিত