leadT1ad

অধিকারের প্রতিবেদন

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে ৪০ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের লোগো।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গত প্রায় ১৪ মাসে দেশে অন্তত ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। সংগঠনটির সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার(৩০ অক্টোবর) প্রকাশিত ‘অধিকার’-এর জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৫ প্রান্তিকের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পরের দিন থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই ৪০টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। অধিকারের মতে, এই ঘটনাগুলো রাষ্ট্রের মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

পরিসংখ্যান ও সহিংসতার ধরন

অধিকার-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই ৪০টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ২৪ জনকে গুলি করে, ১১ জনকে পিটিয়ে এবং ৫ জনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদনে বিশেষভাবে চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসের পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে তুলে ধরেছে। এই সময়েই ১১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ জন পুলিশের হাতে, ১ জন সেনাবাহিনীর হাতে এবং ৭ জন যৌথবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই ১১ জনের মধ্যে ৬ জনকে গুলিতে, ৩ জনকে নির্যাতনে এবং ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

সুনির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ

পরিসংখ্যানের পাশাপাশি প্রতিবেদনে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ঘটনার উদাহরণও তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, গত ২১ জুলাই ঢাকার মিরপুর-১ নম্বরে যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক যুবদলের তিনজন নেতা-কর্মীর মধ্যে আসিফ শিকদার নামে একজনের মৃত্যু হয়। আসিফের পরিবারের দাবি, তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। একইভাবে, গত ১ আগস্ট ঢাকার খিলগাঁওয়ে নজরুল ইসলাম মোল্লা নামে এক ব্যবসায়ীকে মাদক কারবারের অভিযোগে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ক্যাম্পে নির্যাতনের ফলে তাঁর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া, গত ২ সেপ্টেম্বর নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের বিক্ষোভে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাবিবুর রহমান নামে একজন শ্রমিক নিহত হন।

প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার ফারাক

অধিকার তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি হিসেবে গত ১০ জুলাই ‘নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রটোকল’ (ওপিসিএটি) অনুমোদন করলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নির্যাতনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু থাকা এবং এটি বন্ধে “নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩”-এর বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের ঘটনাগুলো অব্যাহতভাবে ঘটছে।’

অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই ১৪ মাসে অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকার-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ে ৮৮ জন কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৮১ জন নিহত ও ৭,৬৯৮ জন আহত হয়েছেন এবং ৪৫ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। এছাড়া, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অধিকার তাদের প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে—বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং অমানবিক ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা। এর পাশাপাশি র‍্যাবকে বিলুপ্ত করা, ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩’-এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গঠন করা।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত