leadT1ad

মার্কিন স্বীকৃতি পেল গ্লোব বায়োটেকের উদ্ভাবিত ‘বঙ্গভ্যাক্স’

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ০১
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা

গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত করোনা-প্রতিরোধী টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্ব অধিদপ্তর থেকে পেটেন্ট লাভ করেছে। রোববার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় গ্লোব বায়োটেক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্ব (পেটেন্ট) লাভ করেছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করোনা মহামারির ভয়াবহ সময়ে যখন সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত, তখন জাতীয় প্রয়োজনে টিকা, ওষুধ এবং শনাক্তকরণ কিট আবিষ্কারের গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। প্রধান গবেষক ড. কাকন নাগ ও ড. নাজনীন সুলতানার সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ওই গবেষণার অংশ হিসেবে তৈরি করা হয় এমআরএনএ-ভিত্তিক করোনা টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’। এটি বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদনও পায়।

ড. কাকন নাগ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এই প্রথম দেশের ওষুধশিল্প কোনো টিকার জন্য আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব অর্জন করল। এটি গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এক অনন্য মাইলফলক।’

গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক ২০১৫ সাল থেকে জিনভিত্তিক চিকিৎসা ও জটিল রোগের আধুনিক ওষুধ নিয়ে গবেষণা করছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনা মহামারির সময়ই প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেন, যা আজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল।

২০২০ সালে গ্লোব বায়োটেকের উদ্ভাবিত টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’-এর জেনেটিক সংকেত (কোডিং সিকুয়েন্স) যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জৈবতথ্য ভান্ডার (এনসিবিআই)-তে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে গবেষণা প্রকাশিত হয় যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার এবং যুক্তরাষ্ট্রের এলসেভিয়ারের আন্তর্জাতিক সাময়িকী ভ্যাকসিন-এ। একই বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও বঙ্গভ্যাক্সকে তাদের বৈশ্বিক কোভিড টিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

বিশ্বের একমাত্র এক-ডোজের এমআরএনএ টিকা

গ্লোব বায়োটেকের দাবি অনুযায়ী, বঙ্গভ্যাক্স হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র এক-ডোজে কার্যকর এমআরএনএ টিকা, যা বিভিন্ন ধরনের করোনা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দিতে সক্ষম। এতে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব উদ্ভাবিত অণুপ্রযুক্তি (ন্যানোটেকনোলজি) ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি শুধু এমআরএনএ নয়, ডিএনএ, সাবইউনিট, নিষ্ক্রিয় ভাইরাস কিংবা পুনঃসংশ্লেষিত ভাইরাসভিত্তিক টিকা তৈরির পথও উন্মুক্ত করেছে।

গ্লোব বায়োটেক জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত এই পেটেন্টে ৩০টি উদ্ভাবনী দাবি (ইনভেনশন ক্লেইম) অনুমোদন পেয়েছে, যা প্রযুক্তিগতভাবে সম্পূর্ণ নতুন এবং আন্তর্জাতিক মানে স্বীকৃত। প্রতিষ্ঠানটির মতে, এই মেধাস্বত্ব বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক, যা দেশের জনস্বাস্থ্য, ওষুধশিল্প এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

এই পেটেন্টের মাধ্যমে দেশেই কম খরচে নিরাপদ ও কার্যকর টিকা উৎপাদন সম্ভব হবে। এর ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই ধরনের উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সফল পরীক্ষা ও অনুমোদন

গ্লোব বায়োটেক জানায়, বঙ্গভ্যাক্স প্রাণীর (বানর) ওপর সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) টিকাটির মানবদেহে পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে।

প্রধান গবেষক ড. কাকন নাগ বলেন, ‘এটি শুধু একটি টিকার পেটেন্ট নয়, এটি বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এখন সবার অপেক্ষা কবে এটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত হবে।’

কাকন নাগ আরও জানান, এই প্রযুক্তি শুধু করোনা নয়, ভবিষ্যতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অটোইমিউন রোগ, রক্তের অসুখসহ জটিল রোগের আধুনিক চিকিৎসা ও ওষুধ তৈরির পথও সুগম করবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত