leadT1ad

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটক অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী, অংশ নিতে পারল না বার্ষিক পরীক্ষায়

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
কুমিল্লা

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩২
গ্রেপ্তারের প্রতীকী ছবি। স্ট্রিম গ্রাফিক

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন মিয়া (১৫) তার বার্ষিক পরীক্ষায় বসতে পারেনি। ‘নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী’ সন্দেহে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে শিশু আদালতের মাধ্যমে শিশু কারাগারে পাঠিয়েছে।

ইমরানের বার্ষিক পরীক্ষা গত বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) থেকে শুরু হলেও, ১৭ নভেম্বর রাতে আটক হওয়ায় সে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। তার পরিবার অভিযোগ অস্বীকার করে তাকে নির্দোষ দাবি করেছে। তবে পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের চিওড়া গ্রামের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়ার ছেলে ইমরান । ইসহাক মিয়া জানান, গত ১৭ নভেম্বর (সোমবার) রাত ৩টায় বাসা থেকে তাঁর ছেলেকে নাঙ্গলকোট থানা-পুলিশ আটক করে। পরদিন তাকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ছেলের পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিয়ে থানায় গেলেও কোনো কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ইসহাক মিয়া স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি ওসি সাহেবকে বললাম আমার ছেলেটার ২০ তারিখ থেকে পরীক্ষা। আমার ছেলেটার ব্যাপারে আপনারা কিছু করিয়েন না। রাত ১০টার দিকে পড়া শেষ করে ঘুমাইছে, কী অন্যায় করেছে আমার ছেলেটা? ওসি বললেন, যা বলবেন কোর্টে বলবেন। একনজর দেখারও অনুমতি দেওয়া হয়নি।’

নাঙ্গলকোট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাসির উল্লাহ স্ট্রিমকে বলেন, ‘২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ ধারায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’

ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মজুমদার স্ট্রিমকে বলেন, ‘ইমরান নিয়মিত শিক্ষার্থী। তার রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা আছে—এমন তথ্য আমার কাছে নেই।’

জানা যায়, গত মঙ্গলবার নাঙ্গলকোট থানার উপপরিদর্শক আলমগীর বাদী হয়ে ২৫ জনের নাম-পরিচয়সহ অজ্ঞাতনামা ৫০–৬০ জনকে আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলায় ইমরানকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়। সেদিন বিকেলেই তাকে শিশু আদালতের মাধ্যমে শিশু কারাগারে পাঠানো হয়। এজাহারে ইমরানের পরিচয় ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, নাঙ্গলকোটের ঢালুয়া ইউনিয়নের মনতলী ব্রিজ এলাকায় সম্প্রতি কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার আসামিরা একত্র হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ৫০-৬০ জন সদস্য ঝটিকা মিছিল করে সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়। পুলিশ ওই মিছিল থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্যদের নাম পাওয়া যায়।

স্কুলছাত্র ইমরান ছাত্রলীগে সক্রিয়—এমন কোনো প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক বলেন, ‘ছেলেটির কোনো ছবি বা ভিডিও আমাদের কাছে নেই। তবে সেদিন রাতে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের তথ্যের ভিত্তিতেই ইমরানের পরিচয় নিশ্চিত হয়। তাঁরা জানিয়েছে, ইমরান ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং মিছিলে অংশ নিয়েছে। তাই নিয়ম মেনে তাকে শিশু আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সারা হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, ‘শিশু অধিকার আইন ২০১৩ এর ২৯ ধারা অনুযায়ী শিশু আদালতে হাজিরকৃত কোনো শিশুর মামলা বিকল্প পন্থায় পরিচালিত করা না হলে, শিশু আদালত সংশ্লিষ্ট শিশুকে, অপরাধটি জামিনযোগ্য বা অজামিনযোগ্য যাহই হোক না কেন, জামানতসহ বা জামানত ছাড়াই জামিনে মুক্তি প্রদান করতে পারবে।’

উল্লেখ্য, ইমরানকে ১৭ নভেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করা হলেও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় ১৮ নভেম্বর।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত