আবদুল্লাহ কাফি
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা কলিম জাম্বু। হত্যা মামলায় ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয়েছেন। থানার তথ্য বলছে, এর পর থেকেই চৌদ্দ শিকে বন্দি তিনি। তবে সম্প্রতি একটি সংঘর্ষের ঘটনায় তাঁকে আরেক মামলায় আসামি করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেন, জেল থেকে বের হয়ে একটা মানুষ মারামারি করে আবার ঢুকে গেলো। এটা কীভাবে সম্ভব? পুলিশের ভাষ্য, ‘তথ্যগত ভুল থেকে এমন হয়ে থাকতে পারে’। আর আইনজীবীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য ও মাদকের ছায়ায় ঘেরা এই ক্যাম্পে নিরপরাধ মানুষও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট জেনেভা ক্যাম্পে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হওয়া এই সংঘর্ষে মারা যান শাহ আলম নামে এক যুবক। ঘটনার সময় সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে ব্যাঘাত ঘটানো হয়। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় জেলে থাকা কলিম জাম্বুকে আসামি করেছে পুলিশ।
জেলে থাকা আসামি কীভাবে এজাহারভুক্ত (এফআইআর) হলেন এ ব্যাপারে জানতে চায় স্ট্রিম। যোগাযোগ করা হলে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘জেলে আছে এমন কোনো ব্যক্তিকে এজাহারভুক্ত আসামি করার কোনো বিধান নেই। তবে কলিম জাম্বুর কোনো শত্রু এই তথ্য দিয়ে থাকতে পারেন।’
মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলাম। মামলাটা কিছুদিন আগে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন কলিম জাম্বুর ফ্যামিলির কেউ যদি উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে ডিবিতে যায়, তাহলে এজাহার থেকে তাঁর নাম কেটে দেওয়া হবে।’
কলিম জাম্বুকে আসামি করে ওই মামলাটি দায়ের করা হয় ১২ আগস্ট। পুলিশের করা ওই মামলার কপি স্ট্রিমের হাতে এসেছে। মামলার এজাহারে ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ আসামি করা হয়েছে মোট ২০০ জনকে। সে আসামিদের ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কারাগারে থাকা বা মৃত ব্যক্তিদের এজাহারভুক্ত আসামি করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া স্ট্রিমকে বলেন, ‘এটা পুরোনো প্র্যাকটিস। আওয়ামী লীগের আমলে আমি নিজেই এমন ঘটনার সাক্ষী যে, মৃত ব্যক্তিকেও মামলার আসামি করা হয়েছিল। পুলিশের ট্রেনিংয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি, মানসিকতারও পরিবর্তন হয়নি। প্রায় পুরোনো নিয়মেই চলছে তাঁদের কাজ। এগুলো সুনির্দিষ্টভাবে আইনব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখানোর মতো ব্যাপার।’
এই আইনজীবীর মতে, ‘জেলে থাকা ব্যক্তি বা মৃত ব্যক্তিকে মামলার আসামি করলে মামলার বেইজটা দুর্বল হয়ে যায়। এতে আইনি প্রসেসের প্রতি মানুষের বিশ্বাস উঠে যায়। কারণ আমাদের জুডিশিয়াল সিস্টেমটা এমনিতেই নড়বড়ে। এসব ঘটনা বন্ধ করতে বাহিনীগুলোর মৌলিক পরিবর্তন দরকার।’
বাংলাদেশে যাদের ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ বলা হয়— তাদের বেশিরভাগই আসলে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন ভারতের বিহার থেকে। এদের একটি অংশ বাস করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে শরণার্থী শিবিরে—যা ‘জেনেভা ক্যাম্প’ বা ‘বিহারি ক্যাম্প’ নামে পরিচিত। কয়েক দশক ধরে শরণার্থী হিসেবে থাকার পর, ২০০৮ সালে তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তবে, ‘বিহারি’ তকমাটি এখনো রয়ে গেছে এবং ইচ্ছামত এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের আইনি সহায়তা, পুনর্বাসন, শিক্ষা ও ভূমি অধিকার নিয়ে কাজ করে ‘কাউন্সিল অব মাইনরিটি’। সংস্থাটির ২০২০ সালে করা এক জরিপ অনুযায়ী, ক্যাম্পটিতে বাস করে ৫ হাজার ৭৭০টি পরিবার। এসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। তবে, ক্যাম্পবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে সেখানে অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ বাস করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পের বিপুল সংখ্যক এই বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করেন। ক্যাম্পের ভেতরের ভাঙা রাস্তা, ছোট রুমের বাসায় নিয়মিত ভুগছেন তাঁরা। অধিকাংশ বাসিন্দার রুটি রুজির ব্যবস্থা হয় ক্যাম্পের ভেতরেই। এর মধ্যে আছেন কসাই, নরসুন্দর (নাপিত), মোটর সাইকেল মেকানিক, ড্রাইভার, হোটেল ব্যবসায়ী, রাঁধুনি, দোকানি, চা বিক্রেতাসহ নানা পেশার মানুষ। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে আছে মাদক-ব্যবসার অভিযোগও।
পুলিশ, ক্যাম্পবাসী এবং বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেনেভা ক্যাম্পের অন্তত ৩ হাজার মানুষ মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। কিছু ক্যাম্পবাসীর দাবি, এই সংখ্যাটি ৫ হাজারের কাছাকাছি। ফলে, জেনেভা ক্যাম্পে গড়ে উঠেছে মাদকের খোলা বাজার। সেই বাজার ঘিরে চলছে সংঘর্ষ, মারামারি, খুন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেনেভা ক্যাম্পে যারা মাদক ব্যবসা করেন, তাঁদের রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ১৫টি গ্যাং বা গ্রুপ। মাদকের ব্যবসা এবং আধিপত্য বিস্তারের নেশায় কখনো দ্বন্দ্ব শেষ হয় না এসব গ্যাংয়ের। সে দ্বন্দ্বের জেরেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে গত ১০ আগস্ট। সেদিন ভূঁইয়া সোহেল ওরফে বুনিয়া সোহেল এবং পিচ্চি রাজা গ্রুপের মধ্যে দিনভর হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বুনিয়া সোহেলের শক্তিশালী বিরোধী হলো সেলিম ওরফে চুয়া সেলিম গ্রুপ। পিচ্চি রাজা গ্রুপ চুয়া সেলিম গ্রুপের সঙ্গে জড়িত।
ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ১০ তারিখে সংঘর্ষের সূচনা হয় ৭ আগস্ট রাতে। সেই রাতে চুয়া সেলিমের আস্তানার সামনে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ককটেল বিস্ফোরণে দুজন আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বুনিয়া সোহেল নিজেই ঘটনাস্থলে ককটেল ফাটিয়ে চলে যান। এরপর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ও সহিংসতা শুরু হয়।
মাদক নির্মূল করতে জেনেভা ক্যাম্পে নিয়মিত অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যৌথবাহিনীও চালায় কার্যক্রম। র্যাব-২ এর দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত জেনেভা ক্যাম্পে ২০ থেকে ৩০টি অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি।
তবে ক্যাম্পবাসীর অভিযোগ, এসব অভিযান শুরু হওয়ার আগেই তথ্য পেয়ে যায় মাদক কারবারিরা। এতে মাদক ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন মামলার আসামিরা পালিয়ে যায়। এরপর নিশানা করা হয় সাধারণ মানুষকে।
গত ৪ অক্টোবর রাতে জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। অভিযানে ১৭ জনকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন আবিদ হোসেন। জেনেভা ক্যাম্পে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন তিনি।
আবিদের স্ত্রী খুশবু স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার স্বামী মোবাইলের দোকানে কাজ করেন। তিনি মাদকের সঙ্গে জড়িত না। দিন এনে দিনে খাওয়া ভালো মানুষ। সেদিন রাত ১১টার সময় দোকান থেকে এসে খাওয়া-দাওয়া করে সিগারেট খেতে বের হয়েছেন গলির মাথায়। তখন র্যাব আর সেনাবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়।’
খুশবু আরও বলেন, ‘আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে দুই কেজি গাঁজার মামলা দিয়েছে। কিন্তু আমার স্বামী কোনোদিনও এসবের মধ্যে যান নাই। উনারা অভিযানে এসে আসল আসামিদের ধরতে পারে না। আমাদের মতো নিরীহ লোকদের তুলে নিয়ে আসামি বানায়ে দেয়।’
৪ অক্টোবর রাতে আটক হন মোহাম্মদ লতিফ নামের আরও একজন। পেশায় তিনি কসাই, মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারে তাঁর মাংসের দোকান। অভিযানের রাতে ১১টার দিকে ক্যাম্পে ফেরেন লতিফ। রক্তমাখা শরীরে গলিতে বের হলে তাঁকেও উঠিয়ে নিয়ে যায় প্রশাসন। পর তাঁকে ২০০ গ্রাম গাঁজার মামলা দেওয়া হয়। এসব অভিযোগ করেছেন লতিফের ছেলে সুজন।
স্ট্রিমকে সুজন বলেন, ‘সেদিন আব্বু কাজ থেকে ফিরে পাশের গলির ফার্মেসিতে ওষুধ আনতে যায়। তাঁর শরীরে তখনো রক্ত মাখা ছিল। এমন অবস্থায় যৌথবাহিনী তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আব্বু কোনোদিন মাদক ব্যবসার আশপাশে যাননি। অথচ তাঁকে দেওয়া হয়েছে ২০০ গ্রাম গাঁজার মামলা।‘
এ বিষয়ে র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) খান আসিফ তপু স্ট্রিমকে বলেন, ‘অভিযানের তথ্য ফাঁস হয়, এই ধরনের বিষয় আমাদের কানেও আসছে। জেনেভা ক্যাম্পের অবকাঠামোগত বিষয়গুলো এমন, ওইখানে এন্ট্রি-এক্সিট খুব একটা সহজ বিষয় না। ফলে একটা এন্ট্রি পয়েন্ট দিয়ে ঢোকার পরেই যে আমি কাউকে হিট করবো, বিষয়টা কিন্তু এমন না। ঢুকে তার টার্গেট পজিশনে যেতে যেতে টার্গেট ইজিলি বুঝতে পারে। কারণ তাদের স্পটার থাকে।’
তবে নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। খান আসিফ তপু বলেন, ‘র্যাব কর্তৃক নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তারের কোনো সুযোগ নাই। কারণ আমরা পিসিপিআর যাচাই করেই গ্রেপ্তার করি। তাঁদের পজিশন থেকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করি। আমরা আমাদের দিক থেকে একদম পরিষ্কার। আমরা যাদের গ্রেপ্তার করি, তাঁদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে। নিরীহ লোক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আর ধরে ফেললাম বিষয়টা এমন না।’
প্রিভিয়াস কনভিকশন অ্যান্ড প্রিভিয়াস রেকর্ড বা পূর্ববর্তী দণ্ড ও রেকর্ডের পরিসংখ্যান সংক্ষেপে পিসিপিআর নামে পরিচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, কাউকে গ্রেপ্তারের সময় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তাঁর পিসিপিআর যাচাই করা হয়। তবে ভুক্তভোগীদের দাবি, কোনো একটি মামলায় একবার গ্রেপ্তার হলেই পরে সেই তথ্যের ভিত্তিতে বারবার হয়রানি করা হয়।
২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা ইয়ামিন (ছদ্মনাম)। এই যুবক স্থানীয় বাজারে মাছ কাঁটার কাজ করেন। ইয়ামিনের ভাষ্য, ‘আমার একমাত্র অপরাধ ছিল বাইক চালিয়ে তাঁদের (অভিযানিক দলের) পথ অতিক্রম করা। কোনো কারণ ছাড়াই তাঁরা আমাকে তুলে নিয়ে যায় এবং পরে একটি অস্ত্র মামলা দেয়। আমি এক মাস ২৬ দিন জেলে থাকার পর মুক্তি পেয়েছি।’
ইয়ামিন স্ট্রিমকে আরও বলেন, ‘সেখানেই ঘটনা শেষ হয়নি। এখনো অভিযান হলে আমাকে পালিয়ে থাকতে হয়। যেহেতু আমার নামে একটি মামলা আছে, পুলিশ প্রথমে আমাকেই খোঁজে। কারণ তাঁরা যদি আমাকে খুঁজে পায়, কোনো কথা না শুনেই আমাকে আবার গ্রেপ্তার করে একটি নতুন মামলা দায়ের করে দিবে। ফলে দিন রাত আতঙ্কে থাকতে হয়।’
জেনেভা ক্যাম্পের আরও অন্তত ১০ জন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, প্রায়ই সাধারণ লোকদের আটক করে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। নিরপরাধ মানুষদের জেল খাটতে বাধ্য করা হয়।
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ সনু স্ট্রিমকে বলেন, ‘আইন যদি নিজের গতিতে চলে, অনেক ভালো কথা। আমরা আইনকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। কিন্তু একটু যাচাই-বাছাই করতে হবে। কে মাদকের সঙ্গে লিপ্ত? কে সন্ত্রাস? কে মার্ডার করতাছে? যাকে-তাকে নিয়ে গিয়ে যদি মামলা দিয়ে দেন, তাহলে মানুষ আইনের ওপর আস্থা হারাবে।’
‘আসামিরা তো কখনো বলে না যে তারা অপরাধী। তারা তো স্বীকার করবে না। আমাদের তদন্তে যদি কেউ নির্দোষ হয়, তাকে আমরা ছেড়ে দেই। কোনো অসুবিধা তো নাই।’ কাজী মো. রফিকুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), মোহাম্মদপুর থানা
সনু আরও বলেন, ‘আইনকে তো শ্রদ্ধা করে মানুষ, কিন্তু আইনের দিকে যদি আস্থা হারায়ে যায়, তাহলে কেমনে কি হবে? আইনের ওপর আস্থা রেখে সবাইকে কাজ করতে হয়। কিন্তু ভালো লোককে যদি নিয়ে যায়, তাহলে মানুষের ভেতরে একটা ঘৃণা জন্মাবে, পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে মামলা দিয়ে দেয়। পুলিশ তাদেরই ধরুক যারা ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত।’
ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ নাদিম স্ট্রিমকে বলেন, ‘১০-১৫ বছর আগে অভিযান চালিয়ে জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিরপরাধ যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, আজ পর্যন্ত তাদের অনেকে ভুগতেছে। এই ভোগান্তি কবে শেষ হবে, সেটাও তারা জানে না। তাই এই ভোগান্তি থেকে সবার আগে মুক্তি দরকার।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মো. রফিকুল আহমেদ স্ট্রিমকে বলে, ‘এটা সত্য না। আমরা অভিযান চালিয়ে আসামি ধরে আনি, আনার পরে যাচাই-বাছাই করি। আটক ব্যক্তির অতীত ইতিহাস দেখি, তার পিসিপিআর কী, আগে মামলা আছে কিনা বা কী ঘটনা ঘটল। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই।’
রফিকুল আহমেদ আরও বলেন, ‘আসামিরা তো কখনো বলে না যে তারা অপরাধী। তারা তো স্বীকার করবে না। আমাদের তদন্তে যদি কেউ নির্দোষ হয়, তাকে আমরা ছেড়ে দেই। কোনো অসুবিধা তো নাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া স্ট্রিমকে বলেন, ‘যদি শুধু ক্যাম্পের অধিবাসী হওয়ার কারণে কোনো প্রমাণ ছাড়াই মানুষকে হয়রানি করা হয়, তাহলে এটা তাদের আইনগত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।’
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরও বলেন, ‘সংবিধানে ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের অধীনে আইনি সুরক্ষা অধিকার ক্যাম্পের বাসিন্দাদের জন্য ততটাই প্রযোজ্য যতটা বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকের জন্য। যাকে-তাকে তুলে নিয়ে পরে মামলা দেওয়ার মাধ্যমে স্পেসিফিক আইনি অধিকার ভঙ্গ হচ্ছে। এটা নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষের জায়গা থেকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন।’
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার মতে, যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের কারণে গ্রেপ্তার করার এখতিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আছে। তবে অভিযানে গিয়ে হাতে-নাতে যদি কিছু পাওয়া না যায়, পরবর্তী সময়ে তাদের মিথ্যা মামলা দেওয়ার এখতিয়ার কারোরই নেই।
‘স্পেসিফিক তথ্য ছাড়া গণহারে হয়রানি বা টার্গেট করা অগ্রহণযোগ্য। যদি কারও বিরুদ্ধে তথ্য পাওয়া যায় এবং হাতে-নাতে মাদকসহ ধরা পড়ে, সেক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক আছে। একই নিয়ম এবং আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত’, বলেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
২০২৪ সালের ১ নভেম্বর। রাত আড়াইটার দিকে সংঘর্ষে জড়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা। সে রাতে বোমা বিস্ফোরণে মারা যান মোহাম্মদ রাজ। তাঁর মৃত্যুতে মামলা দায়ের করেন খালাতো বোন মোসা. পলি। সে মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন মো. কাদির। আরেকজন কাদিরের ভাই। এই দুই ভাই ব্যবসা করেন। জেনেভা ক্যাম্পের গজনবী রোডে তাঁদের সিএনজি মেরামত এবং পার্টস বিক্রির দোকান।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই ভাইকে আসামি করতে বাধ্য করে একটি চক্র। যে চক্রের ব্যাপারে জানেন না তাঁরা।
এ বিষয়ে স্ট্রিমকে কাদির বলেন, ‘ঘটনার রাতে ক্যাম্প থেকে আমি যখন বাসায় যাই, তখন প্রায় সাড়ে ১২টা বাজে। ঘটনাটা ঘটে রাত ২টার পরে। ওই ঘটনার বিষয়ে আমি কোনো কিছু জানতাম না। পরেরদিন বিকালে দোকানে আসার পরে শুনতে পারলাম, এখানে নাকি একটা মার্ডার হইছে। তারপর ৪ নভেম্বর রাতে আমার ফোনে একটা কল আসে। আমার পরিচিত একজন ফোন করে জানান, আপনার নামে মামলা হইছে।’
কাদির আরও বলেন, ‘মামলার জামিন হওয়ার পরে আমি বাদিকে বলছি, আপনি আমাকে চিনেন? বাদি বললো, “না, আমি আপনাকে চিনি না।” আমার নামে কেন মামলা দেওয়া হইছে প্রশ্ন করলে বাদী বলে, আমাকে একটা লিস্ট ধরাই দেওয়া হইছে। আমি তো পড়াশোনা জানি না, মূর্খ মানুষ। থানায় যাইয়া আমি লিস্ট দিছি, লিস্ট অনুযায়ী মামলা হইছে।’
এ ঘটনার পর বাদির সঙ্গে আপসও করেছেন কাদির। তাঁদের সে আপসনামার স্ট্যাম্পের কপি এসেছে স্ট্রিমের হাতে। আপসনামায় মামলার বাদি পলি লিখেছেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে মামলায় তাঁদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আমরা উভয়পক্ষের আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শে ও মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি করে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার লক্ষ্যে মীমাংসার সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম।’
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মাংস প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা সমিতির (বাক্ষুমাপ্রবিস) সদস্য মো. ইসরাফিল। জেনেভা ক্যাম্পে তাঁর মাংসের ব্যবসা। পেশায় তিনি কসাই। তবে, সম্প্রতি একটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রচার করা হয়, তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি জিডি করেছেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে স্ট্রিমকে ইসরাফিল বলেন, ‘আমার দাদা ছিল এই এলাকার নাম করা কসাই। আমার বাবাও কসাই ছিলেন। বংশগতভাবে আমিও কসাই হয়েছি। কিন্তু এখন কিছু লোক ছড়াচ্ছে, আমি নাকি মাদক ব্যবসায়ী। তবে, আমি কোনোদিন এসবে যাইনি। নিজের একটা পান-সিগারেটও খাই না। এ বিষয়ে আমি জিডি করেছি।’
শুধু ইসরাফিল একা নন। এমন ঘটনার শিকার হয়েছে আরও অনেকে। তাঁরা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, এসব করা হয় মূলত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে। যেন তারা অভিযানে এসে নিরপরাধ মানুষদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
জেনেভা ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা তরুণ জিয়া উদ্দিন। মাদক ব্যবসা বন্ধসহ নানা অনিয়ম নিয়ে তিনি সোচ্চার থাকেন। ফলে তাকেও নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। স্ট্রিমকে জিয়া বলেন, ‘মাদকের কারণে জেনেভা ক্যাম্পে নিরীহ মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়। এসব নিয়ে কথা বলায় আমার বিরুদ্ধেও অপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে আমাকে মাদক ব্যবসায়ী, তাদের সাহায্যকারী বলা হচ্ছে।’
জিয়া আরও বলেন, ‘আমি ছাত্র মানুষ। পড়াশোনা করি। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না। তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলায় নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছি। এ সব থেকে প্রতিকার পেতে থানায় জিডি করেছি।’
জেনেভা ক্যাম্পে এখন ভয়, বিভ্রান্তি আর বঞ্চনার ঘন ছায়া। মাদকবিরোধী অভিযান যত ঘন হয়, সাধারণ মানুষের উদ্বেগও তত বাড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তারা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছে। কিন্তু ক্যাম্পের মানুষ বলছেন—‘অপরাধীদের ধরুন, নিরপরাধদের নয়।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা কলিম জাম্বু। হত্যা মামলায় ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয়েছেন। থানার তথ্য বলছে, এর পর থেকেই চৌদ্দ শিকে বন্দি তিনি। তবে সম্প্রতি একটি সংঘর্ষের ঘটনায় তাঁকে আরেক মামলায় আসামি করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেন, জেল থেকে বের হয়ে একটা মানুষ মারামারি করে আবার ঢুকে গেলো। এটা কীভাবে সম্ভব? পুলিশের ভাষ্য, ‘তথ্যগত ভুল থেকে এমন হয়ে থাকতে পারে’। আর আইনজীবীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য ও মাদকের ছায়ায় ঘেরা এই ক্যাম্পে নিরপরাধ মানুষও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট জেনেভা ক্যাম্পে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হওয়া এই সংঘর্ষে মারা যান শাহ আলম নামে এক যুবক। ঘটনার সময় সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে ব্যাঘাত ঘটানো হয়। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় জেলে থাকা কলিম জাম্বুকে আসামি করেছে পুলিশ।
জেলে থাকা আসামি কীভাবে এজাহারভুক্ত (এফআইআর) হলেন এ ব্যাপারে জানতে চায় স্ট্রিম। যোগাযোগ করা হলে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘জেলে আছে এমন কোনো ব্যক্তিকে এজাহারভুক্ত আসামি করার কোনো বিধান নেই। তবে কলিম জাম্বুর কোনো শত্রু এই তথ্য দিয়ে থাকতে পারেন।’
মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলাম। মামলাটা কিছুদিন আগে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন কলিম জাম্বুর ফ্যামিলির কেউ যদি উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে ডিবিতে যায়, তাহলে এজাহার থেকে তাঁর নাম কেটে দেওয়া হবে।’
কলিম জাম্বুকে আসামি করে ওই মামলাটি দায়ের করা হয় ১২ আগস্ট। পুলিশের করা ওই মামলার কপি স্ট্রিমের হাতে এসেছে। মামলার এজাহারে ৫০ জনের নাম উল্লেখসহ আসামি করা হয়েছে মোট ২০০ জনকে। সে আসামিদের ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কারাগারে থাকা বা মৃত ব্যক্তিদের এজাহারভুক্ত আসামি করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া স্ট্রিমকে বলেন, ‘এটা পুরোনো প্র্যাকটিস। আওয়ামী লীগের আমলে আমি নিজেই এমন ঘটনার সাক্ষী যে, মৃত ব্যক্তিকেও মামলার আসামি করা হয়েছিল। পুলিশের ট্রেনিংয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি, মানসিকতারও পরিবর্তন হয়নি। প্রায় পুরোনো নিয়মেই চলছে তাঁদের কাজ। এগুলো সুনির্দিষ্টভাবে আইনব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখানোর মতো ব্যাপার।’
এই আইনজীবীর মতে, ‘জেলে থাকা ব্যক্তি বা মৃত ব্যক্তিকে মামলার আসামি করলে মামলার বেইজটা দুর্বল হয়ে যায়। এতে আইনি প্রসেসের প্রতি মানুষের বিশ্বাস উঠে যায়। কারণ আমাদের জুডিশিয়াল সিস্টেমটা এমনিতেই নড়বড়ে। এসব ঘটনা বন্ধ করতে বাহিনীগুলোর মৌলিক পরিবর্তন দরকার।’
বাংলাদেশে যাদের ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ বলা হয়— তাদের বেশিরভাগই আসলে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন ভারতের বিহার থেকে। এদের একটি অংশ বাস করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে শরণার্থী শিবিরে—যা ‘জেনেভা ক্যাম্প’ বা ‘বিহারি ক্যাম্প’ নামে পরিচিত। কয়েক দশক ধরে শরণার্থী হিসেবে থাকার পর, ২০০৮ সালে তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। তবে, ‘বিহারি’ তকমাটি এখনো রয়ে গেছে এবং ইচ্ছামত এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের আইনি সহায়তা, পুনর্বাসন, শিক্ষা ও ভূমি অধিকার নিয়ে কাজ করে ‘কাউন্সিল অব মাইনরিটি’। সংস্থাটির ২০২০ সালে করা এক জরিপ অনুযায়ী, ক্যাম্পটিতে বাস করে ৫ হাজার ৭৭০টি পরিবার। এসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। তবে, ক্যাম্পবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে সেখানে অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ বাস করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পের বিপুল সংখ্যক এই বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করেন। ক্যাম্পের ভেতরের ভাঙা রাস্তা, ছোট রুমের বাসায় নিয়মিত ভুগছেন তাঁরা। অধিকাংশ বাসিন্দার রুটি রুজির ব্যবস্থা হয় ক্যাম্পের ভেতরেই। এর মধ্যে আছেন কসাই, নরসুন্দর (নাপিত), মোটর সাইকেল মেকানিক, ড্রাইভার, হোটেল ব্যবসায়ী, রাঁধুনি, দোকানি, চা বিক্রেতাসহ নানা পেশার মানুষ। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে আছে মাদক-ব্যবসার অভিযোগও।
পুলিশ, ক্যাম্পবাসী এবং বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেনেভা ক্যাম্পের অন্তত ৩ হাজার মানুষ মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। কিছু ক্যাম্পবাসীর দাবি, এই সংখ্যাটি ৫ হাজারের কাছাকাছি। ফলে, জেনেভা ক্যাম্পে গড়ে উঠেছে মাদকের খোলা বাজার। সেই বাজার ঘিরে চলছে সংঘর্ষ, মারামারি, খুন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেনেভা ক্যাম্পে যারা মাদক ব্যবসা করেন, তাঁদের রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ১৫টি গ্যাং বা গ্রুপ। মাদকের ব্যবসা এবং আধিপত্য বিস্তারের নেশায় কখনো দ্বন্দ্ব শেষ হয় না এসব গ্যাংয়ের। সে দ্বন্দ্বের জেরেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে গত ১০ আগস্ট। সেদিন ভূঁইয়া সোহেল ওরফে বুনিয়া সোহেল এবং পিচ্চি রাজা গ্রুপের মধ্যে দিনভর হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বুনিয়া সোহেলের শক্তিশালী বিরোধী হলো সেলিম ওরফে চুয়া সেলিম গ্রুপ। পিচ্চি রাজা গ্রুপ চুয়া সেলিম গ্রুপের সঙ্গে জড়িত।
ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ১০ তারিখে সংঘর্ষের সূচনা হয় ৭ আগস্ট রাতে। সেই রাতে চুয়া সেলিমের আস্তানার সামনে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ককটেল বিস্ফোরণে দুজন আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বুনিয়া সোহেল নিজেই ঘটনাস্থলে ককটেল ফাটিয়ে চলে যান। এরপর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ও সহিংসতা শুরু হয়।
মাদক নির্মূল করতে জেনেভা ক্যাম্পে নিয়মিত অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যৌথবাহিনীও চালায় কার্যক্রম। র্যাব-২ এর দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত জেনেভা ক্যাম্পে ২০ থেকে ৩০টি অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি।
তবে ক্যাম্পবাসীর অভিযোগ, এসব অভিযান শুরু হওয়ার আগেই তথ্য পেয়ে যায় মাদক কারবারিরা। এতে মাদক ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন মামলার আসামিরা পালিয়ে যায়। এরপর নিশানা করা হয় সাধারণ মানুষকে।
গত ৪ অক্টোবর রাতে জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। অভিযানে ১৭ জনকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন আবিদ হোসেন। জেনেভা ক্যাম্পে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন তিনি।
আবিদের স্ত্রী খুশবু স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার স্বামী মোবাইলের দোকানে কাজ করেন। তিনি মাদকের সঙ্গে জড়িত না। দিন এনে দিনে খাওয়া ভালো মানুষ। সেদিন রাত ১১টার সময় দোকান থেকে এসে খাওয়া-দাওয়া করে সিগারেট খেতে বের হয়েছেন গলির মাথায়। তখন র্যাব আর সেনাবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়।’
খুশবু আরও বলেন, ‘আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে দুই কেজি গাঁজার মামলা দিয়েছে। কিন্তু আমার স্বামী কোনোদিনও এসবের মধ্যে যান নাই। উনারা অভিযানে এসে আসল আসামিদের ধরতে পারে না। আমাদের মতো নিরীহ লোকদের তুলে নিয়ে আসামি বানায়ে দেয়।’
৪ অক্টোবর রাতে আটক হন মোহাম্মদ লতিফ নামের আরও একজন। পেশায় তিনি কসাই, মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারে তাঁর মাংসের দোকান। অভিযানের রাতে ১১টার দিকে ক্যাম্পে ফেরেন লতিফ। রক্তমাখা শরীরে গলিতে বের হলে তাঁকেও উঠিয়ে নিয়ে যায় প্রশাসন। পর তাঁকে ২০০ গ্রাম গাঁজার মামলা দেওয়া হয়। এসব অভিযোগ করেছেন লতিফের ছেলে সুজন।
স্ট্রিমকে সুজন বলেন, ‘সেদিন আব্বু কাজ থেকে ফিরে পাশের গলির ফার্মেসিতে ওষুধ আনতে যায়। তাঁর শরীরে তখনো রক্ত মাখা ছিল। এমন অবস্থায় যৌথবাহিনী তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আব্বু কোনোদিন মাদক ব্যবসার আশপাশে যাননি। অথচ তাঁকে দেওয়া হয়েছে ২০০ গ্রাম গাঁজার মামলা।‘
এ বিষয়ে র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) খান আসিফ তপু স্ট্রিমকে বলেন, ‘অভিযানের তথ্য ফাঁস হয়, এই ধরনের বিষয় আমাদের কানেও আসছে। জেনেভা ক্যাম্পের অবকাঠামোগত বিষয়গুলো এমন, ওইখানে এন্ট্রি-এক্সিট খুব একটা সহজ বিষয় না। ফলে একটা এন্ট্রি পয়েন্ট দিয়ে ঢোকার পরেই যে আমি কাউকে হিট করবো, বিষয়টা কিন্তু এমন না। ঢুকে তার টার্গেট পজিশনে যেতে যেতে টার্গেট ইজিলি বুঝতে পারে। কারণ তাদের স্পটার থাকে।’
তবে নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। খান আসিফ তপু বলেন, ‘র্যাব কর্তৃক নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তারের কোনো সুযোগ নাই। কারণ আমরা পিসিপিআর যাচাই করেই গ্রেপ্তার করি। তাঁদের পজিশন থেকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করি। আমরা আমাদের দিক থেকে একদম পরিষ্কার। আমরা যাদের গ্রেপ্তার করি, তাঁদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে। নিরীহ লোক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আর ধরে ফেললাম বিষয়টা এমন না।’
প্রিভিয়াস কনভিকশন অ্যান্ড প্রিভিয়াস রেকর্ড বা পূর্ববর্তী দণ্ড ও রেকর্ডের পরিসংখ্যান সংক্ষেপে পিসিপিআর নামে পরিচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, কাউকে গ্রেপ্তারের সময় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তাঁর পিসিপিআর যাচাই করা হয়। তবে ভুক্তভোগীদের দাবি, কোনো একটি মামলায় একবার গ্রেপ্তার হলেই পরে সেই তথ্যের ভিত্তিতে বারবার হয়রানি করা হয়।
২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা ইয়ামিন (ছদ্মনাম)। এই যুবক স্থানীয় বাজারে মাছ কাঁটার কাজ করেন। ইয়ামিনের ভাষ্য, ‘আমার একমাত্র অপরাধ ছিল বাইক চালিয়ে তাঁদের (অভিযানিক দলের) পথ অতিক্রম করা। কোনো কারণ ছাড়াই তাঁরা আমাকে তুলে নিয়ে যায় এবং পরে একটি অস্ত্র মামলা দেয়। আমি এক মাস ২৬ দিন জেলে থাকার পর মুক্তি পেয়েছি।’
ইয়ামিন স্ট্রিমকে আরও বলেন, ‘সেখানেই ঘটনা শেষ হয়নি। এখনো অভিযান হলে আমাকে পালিয়ে থাকতে হয়। যেহেতু আমার নামে একটি মামলা আছে, পুলিশ প্রথমে আমাকেই খোঁজে। কারণ তাঁরা যদি আমাকে খুঁজে পায়, কোনো কথা না শুনেই আমাকে আবার গ্রেপ্তার করে একটি নতুন মামলা দায়ের করে দিবে। ফলে দিন রাত আতঙ্কে থাকতে হয়।’
জেনেভা ক্যাম্পের আরও অন্তত ১০ জন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, প্রায়ই সাধারণ লোকদের আটক করে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। নিরপরাধ মানুষদের জেল খাটতে বাধ্য করা হয়।
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ সনু স্ট্রিমকে বলেন, ‘আইন যদি নিজের গতিতে চলে, অনেক ভালো কথা। আমরা আইনকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। কিন্তু একটু যাচাই-বাছাই করতে হবে। কে মাদকের সঙ্গে লিপ্ত? কে সন্ত্রাস? কে মার্ডার করতাছে? যাকে-তাকে নিয়ে গিয়ে যদি মামলা দিয়ে দেন, তাহলে মানুষ আইনের ওপর আস্থা হারাবে।’
‘আসামিরা তো কখনো বলে না যে তারা অপরাধী। তারা তো স্বীকার করবে না। আমাদের তদন্তে যদি কেউ নির্দোষ হয়, তাকে আমরা ছেড়ে দেই। কোনো অসুবিধা তো নাই।’ কাজী মো. রফিকুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), মোহাম্মদপুর থানা
সনু আরও বলেন, ‘আইনকে তো শ্রদ্ধা করে মানুষ, কিন্তু আইনের দিকে যদি আস্থা হারায়ে যায়, তাহলে কেমনে কি হবে? আইনের ওপর আস্থা রেখে সবাইকে কাজ করতে হয়। কিন্তু ভালো লোককে যদি নিয়ে যায়, তাহলে মানুষের ভেতরে একটা ঘৃণা জন্মাবে, পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে মামলা দিয়ে দেয়। পুলিশ তাদেরই ধরুক যারা ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত।’
ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ নাদিম স্ট্রিমকে বলেন, ‘১০-১৫ বছর আগে অভিযান চালিয়ে জেনেভা ক্যাম্প থেকে নিরপরাধ যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, আজ পর্যন্ত তাদের অনেকে ভুগতেছে। এই ভোগান্তি কবে শেষ হবে, সেটাও তারা জানে না। তাই এই ভোগান্তি থেকে সবার আগে মুক্তি দরকার।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মো. রফিকুল আহমেদ স্ট্রিমকে বলে, ‘এটা সত্য না। আমরা অভিযান চালিয়ে আসামি ধরে আনি, আনার পরে যাচাই-বাছাই করি। আটক ব্যক্তির অতীত ইতিহাস দেখি, তার পিসিপিআর কী, আগে মামলা আছে কিনা বা কী ঘটনা ঘটল। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই।’
রফিকুল আহমেদ আরও বলেন, ‘আসামিরা তো কখনো বলে না যে তারা অপরাধী। তারা তো স্বীকার করবে না। আমাদের তদন্তে যদি কেউ নির্দোষ হয়, তাকে আমরা ছেড়ে দেই। কোনো অসুবিধা তো নাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া স্ট্রিমকে বলেন, ‘যদি শুধু ক্যাম্পের অধিবাসী হওয়ার কারণে কোনো প্রমাণ ছাড়াই মানুষকে হয়রানি করা হয়, তাহলে এটা তাদের আইনগত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।’
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরও বলেন, ‘সংবিধানে ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের অধীনে আইনি সুরক্ষা অধিকার ক্যাম্পের বাসিন্দাদের জন্য ততটাই প্রযোজ্য যতটা বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকের জন্য। যাকে-তাকে তুলে নিয়ে পরে মামলা দেওয়ার মাধ্যমে স্পেসিফিক আইনি অধিকার ভঙ্গ হচ্ছে। এটা নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষের জায়গা থেকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন।’
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার মতে, যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের কারণে গ্রেপ্তার করার এখতিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আছে। তবে অভিযানে গিয়ে হাতে-নাতে যদি কিছু পাওয়া না যায়, পরবর্তী সময়ে তাদের মিথ্যা মামলা দেওয়ার এখতিয়ার কারোরই নেই।
‘স্পেসিফিক তথ্য ছাড়া গণহারে হয়রানি বা টার্গেট করা অগ্রহণযোগ্য। যদি কারও বিরুদ্ধে তথ্য পাওয়া যায় এবং হাতে-নাতে মাদকসহ ধরা পড়ে, সেক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক আছে। একই নিয়ম এবং আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত’, বলেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
২০২৪ সালের ১ নভেম্বর। রাত আড়াইটার দিকে সংঘর্ষে জড়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা। সে রাতে বোমা বিস্ফোরণে মারা যান মোহাম্মদ রাজ। তাঁর মৃত্যুতে মামলা দায়ের করেন খালাতো বোন মোসা. পলি। সে মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন মো. কাদির। আরেকজন কাদিরের ভাই। এই দুই ভাই ব্যবসা করেন। জেনেভা ক্যাম্পের গজনবী রোডে তাঁদের সিএনজি মেরামত এবং পার্টস বিক্রির দোকান।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই ভাইকে আসামি করতে বাধ্য করে একটি চক্র। যে চক্রের ব্যাপারে জানেন না তাঁরা।
এ বিষয়ে স্ট্রিমকে কাদির বলেন, ‘ঘটনার রাতে ক্যাম্প থেকে আমি যখন বাসায় যাই, তখন প্রায় সাড়ে ১২টা বাজে। ঘটনাটা ঘটে রাত ২টার পরে। ওই ঘটনার বিষয়ে আমি কোনো কিছু জানতাম না। পরেরদিন বিকালে দোকানে আসার পরে শুনতে পারলাম, এখানে নাকি একটা মার্ডার হইছে। তারপর ৪ নভেম্বর রাতে আমার ফোনে একটা কল আসে। আমার পরিচিত একজন ফোন করে জানান, আপনার নামে মামলা হইছে।’
কাদির আরও বলেন, ‘মামলার জামিন হওয়ার পরে আমি বাদিকে বলছি, আপনি আমাকে চিনেন? বাদি বললো, “না, আমি আপনাকে চিনি না।” আমার নামে কেন মামলা দেওয়া হইছে প্রশ্ন করলে বাদী বলে, আমাকে একটা লিস্ট ধরাই দেওয়া হইছে। আমি তো পড়াশোনা জানি না, মূর্খ মানুষ। থানায় যাইয়া আমি লিস্ট দিছি, লিস্ট অনুযায়ী মামলা হইছে।’
এ ঘটনার পর বাদির সঙ্গে আপসও করেছেন কাদির। তাঁদের সে আপসনামার স্ট্যাম্পের কপি এসেছে স্ট্রিমের হাতে। আপসনামায় মামলার বাদি পলি লিখেছেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে মামলায় তাঁদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আমরা উভয়পক্ষের আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শে ও মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি করে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার লক্ষ্যে মীমাংসার সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম।’
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মাংস প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা সমিতির (বাক্ষুমাপ্রবিস) সদস্য মো. ইসরাফিল। জেনেভা ক্যাম্পে তাঁর মাংসের ব্যবসা। পেশায় তিনি কসাই। তবে, সম্প্রতি একটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রচার করা হয়, তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি জিডি করেছেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে স্ট্রিমকে ইসরাফিল বলেন, ‘আমার দাদা ছিল এই এলাকার নাম করা কসাই। আমার বাবাও কসাই ছিলেন। বংশগতভাবে আমিও কসাই হয়েছি। কিন্তু এখন কিছু লোক ছড়াচ্ছে, আমি নাকি মাদক ব্যবসায়ী। তবে, আমি কোনোদিন এসবে যাইনি। নিজের একটা পান-সিগারেটও খাই না। এ বিষয়ে আমি জিডি করেছি।’
শুধু ইসরাফিল একা নন। এমন ঘটনার শিকার হয়েছে আরও অনেকে। তাঁরা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, এসব করা হয় মূলত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে। যেন তারা অভিযানে এসে নিরপরাধ মানুষদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
জেনেভা ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা তরুণ জিয়া উদ্দিন। মাদক ব্যবসা বন্ধসহ নানা অনিয়ম নিয়ে তিনি সোচ্চার থাকেন। ফলে তাকেও নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। স্ট্রিমকে জিয়া বলেন, ‘মাদকের কারণে জেনেভা ক্যাম্পে নিরীহ মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়। এসব নিয়ে কথা বলায় আমার বিরুদ্ধেও অপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে আমাকে মাদক ব্যবসায়ী, তাদের সাহায্যকারী বলা হচ্ছে।’
জিয়া আরও বলেন, ‘আমি ছাত্র মানুষ। পড়াশোনা করি। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না। তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলায় নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছি। এ সব থেকে প্রতিকার পেতে থানায় জিডি করেছি।’
জেনেভা ক্যাম্পে এখন ভয়, বিভ্রান্তি আর বঞ্চনার ঘন ছায়া। মাদকবিরোধী অভিযান যত ঘন হয়, সাধারণ মানুষের উদ্বেগও তত বাড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তারা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছে। কিন্তু ক্যাম্পের মানুষ বলছেন—‘অপরাধীদের ধরুন, নিরপরাধদের নয়।’
ডাক বিভাগের বেদখল সম্পদ পুনরুদ্ধার করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
২ মিনিট আগেএবার মৌচাকের ফরচুন শপিং মলের দ্বিতীয় তলার শম্পা জুয়েলার্স নামে এক দোকান থেকে ৫০০ ভরি সোনা চুরির অভিযোগ উঠেছে।
১ ঘণ্টা আগেগাজাগামী মানবিক সহায়তা বহনকারী ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)-এর নৌবহর থেকে আটক বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ জাহাজে থাকা সব অধিকারকর্মীকে আটক করে ইসরায়েলের কেৎজিয়েত কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেজুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের গণভোটের বিষয়ে একমত হলেও ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি ‘প্যাকেজ’ প্রস্তাব করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
৩ ঘণ্টা আগে