leadT1ad

নীলফামারী: হাসপাতাল থেকে মরদেহ এনে বিক্ষোভ, ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন

স্ট্রিম সংবাদদাতানীলফামারী
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১: ৫১
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ৪১
শ্রমিক নিহতের ঘটনায় দিনভর উত্তপ্ত ছিল উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)। স্ট্রিম ছবি

নীলফামারীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় দিনভর উত্তপ্ত ছিল উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)। নিহত শ্রমিক মো. হাবিব ইসলামের (২১) মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতেই তাঁর দাফন হবে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া সংঘর্ষে আহত সাতজনকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত তিনজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে নিহত হন হাবিব ইসলাম। পরে ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর মরদেহ জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে কক্ষের তালা ভেঙে মরদেহ ইউপিজেডের সামনে নিয়ে এসে বিক্ষোভ করতে থাকেন শ্রমিকরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে।

নিহত হাবিব ইসলাম ইউপিজেডের ভেনচুরা লেদার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেব কাজ করতেন। তিনি ইপিজেড সংলগ্ন নীলফামারী সদরের সংগলশী ইউনিয়নের কাজিরহাটের দুলাল হোসেনের ছেলে।

হাবিব ইসলামের বড় ভাই আশিকুর রহমান (২৪) বলেন, ‘আমার ভাই ইকু ইন্টারন্যাশনাল নিটিং কারখানায় রাতে কাজ করেছে। আন্দোলনে ছিল না সে, কাজ শেষে সকালে ইপিজেড থেকে বের হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন’।

হাবিবের বাবা মো. দুলাল হোসেন বলেন, ‘২০২৩ সালে আমার ছেলে হাবিব এসএসসি পাশ করে ইপিজেডের ওই চাকুরিতে যোগ দেন। সোমবার মাগরিবের সময় খাওয়ার পর ডিউটির জন্য বাড়ি থেকে ইপিজেডে যায়। মঙ্গলবার সকালে তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল, এরই মধ্যে খবর পাই গুলিতে ছেলে মারা গেছে’।

একই কারখানায় রাতে কাজ করেছিলেন সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের ফকিরগঞ্জ বাজারের মিলন ইসলাম (২৫)। তিনি বলেন, ‘সকালে ছুটি হলে হাবিবসহ আমরা একসঙ্গে অনেক শ্রমিক বেরিয়ে আসছিলাম। সামনে অবরোধ থাকায় কারখানার কর্মকর্তারা আমাদের সতর্কতার সঙ্গে বের করে দিচ্ছিল। এরই মধ্যে হাবিব গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয়।’

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ফারহান তানভিরুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল সাড়ে আটটার দিকে হাবিবুর রহমানকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এ ছাড়া আহত সাত জনের মধ্যে তিনজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

দিনভর উত্তেজনা, ধাওয়া-গুলি

ইপিজেডের শ্রমিকরা জানান, নিহতের পর হাবিরের মরদেহ ইপিজেড এলাকা থেকে জেলা হাতপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য সেখানে তাঁর মরদেহ মর্গের কক্ষে তালা দিয়ে রাখা হয়েছিল। দুপুর তিনটার দিকে ১০-১৫ জনের একটি দল বিক্ষোভকারীরা সেই কক্ষের তালা ভেঙে হাবিবের লাশ বের করে আনে। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ ইপিজেড এলাকায় সামনে নীলফামারী-সৈয়দপুর মহাসড়কে রেখে হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। এতে সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়েছে যায়। এদিকে পুলিশ প্রশাসন শ্রমিকদের অবরোধ তুলে নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করেন।

আন্দোলনকারীরা জানান, উত্তরা ইপিজেডে অবস্থিত এভার গ্রিন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ৫১জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এর প্রতিবাদে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে গত দুই দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শ্রমিকরা। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে হঠাৎ করে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে কারখানায় গিয়ে ওই নোটিশ দেখে ইউপিজেডের সামনের সড়কে আন্দোলন শুরু করেন হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ শ্রমিক। এর সঙ্গে ইপিজেড এলাকার আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরাও যুক্ত হন। এর এক পর্যায়ে ইপিজেডের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এদিকে সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় শ্রমিকদের। এ সময় এক শ্রমিক নিহত হলে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তাঁরা। এতে নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুড়লে মো. হাবিব ইসলাম নামের ওই শ্রমিক ঘটনাস্থলে নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন অন্তত ১০ শ্রমিক।

আহতদের মধ্যে সাতজনকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসাধীন শ্রমিকরা হলেন মোমিনুর রহমান (২৫), শাহিন ইসলাম (২৬), নূর আলম (৩০), মোস্তাক আহমেদ (২৫), লিপি আক্তার (২৬), জমিলা খাতুন (৩৫), শামীম হোসেন (৩৫)। তাঁদের মধ্যে গুরুত্বর আহত লিপি আক্তার, শাহিন ইসলাম ও শামীম হোসেনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

কী বলছে প্রশাসন

বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ বলেন, ‘অনুমতি ছাড়াই হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়িতে নিয়ে গেছে পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘আজ দুপুরে আমরা আর্মি, বিজিবি, ইপিজেড এবং এভারগ্রিন কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছি। শ্রমিকদের ২৩ দফা দাবির বিষয়ে পর্যালোচনা করেছি। শ্রমিকদের যে অভিযোগ ছিল সেসব তদন্তে বেপজা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। যৌক্তিক দাবিগুলো ইপিজেড বাস্তবায়ন করবে। আর নিহত হাবিব ইসলামের পরিবারকে আপাতত দুই লাখ টাকা দিয়েছে এভারগ্রিন কর্তৃপক্ষ আহতদেরও ক্ষতিপূরণ দেবে।’

ডিসি নায়িরুজ্জামান আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেখানে দুই প্লাটুন বিজিবি, পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ইপিজেডের কারখানাগুলো চালু করা হবে।’

শ্রমিক ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের নিন্দা

ইপিজেডের শ্রমিক নিহতের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জেলা শ্রমিক ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও সংঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুব আলম টুলু। তাঁরা বলেন, বহুল প্রত্যাশিত কর্মসংস্থানের প্রকল্প উত্তরা ইপিজেড। অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইপিজেডটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। সেই ইপিজেডে প্রশাসনিক দূর্বলতার কারণে শ্রমিকদের দাবিদাওয়াকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না করে বল প্রয়োগ করে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। শ্রমিক হতাহতের নিন্দা জানিয়ে তাঁদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি জানান এই দুই নেতা।

Ad 300x250

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ এক হলো কেন

তারেক রহমানের দেশে ফেরা তাঁর নিজের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঢাবি শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত হচ্ছে স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষক প্যানেল

ক্যাম্পাসে প্রবেশে কড়াকড়ি, পরিচয়পত্র ছাড়া ঢুকতে পারবেন না শিক্ষার্থী-শিক্ষকেরাও

হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র তুলতে জিডি করা লাগবে না

সম্পর্কিত