leadT1ad

আট সহযোগী ও মাদকদ্রব্যসহ আটক

‘অনলাইন জুয়াড়ি চক্রের হোতা’ সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

‘অনলাইন জুয়াড়ি চক্রের হোতা’ সেলিম প্রধান। স্ট্রিম গ্রাফিক

রাজধানীর বারিধারা থেকে ‘অনলাইন জুয়াড়ি চক্রের হোতা’ নামে পরিচিত সেলিম প্রধানকে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবার তিনি গ্রেপ্তার হলেন ৮ সহযোগী ও মাদকদ্রব্যসহ। গতকাল শনিবার ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান থানা পুলিশের একটি টিম বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনের নেক্সাস কফি প্যালেসে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন— রাফিকুল ইসলাম রাফি, সাদিকুল ইসলাম সুমন, তৌফিকুল ইসলাম, রিফাত হাসান, রবিউল হাসান, মিনহাজুর রহমান তাজবীর, মেহেদী হাসান ও সাইমুম ইসলাম।

পুলিশের গুলশান জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) তারেক মাহমুদ স্ট্রিমকে জানান, নামে ‘নেক্সাস কফি প্যালেস’ হলেও সেলিম প্রধান এখানে মূলত অবৈধ সীসা বার চালাতেন। এ ছাড়া আদালতে করা চেক জালিয়াতির একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তিনি। মাদক মামলা আছে গুলশান থানায়। এর বাইরে তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অবৈধ কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যার সবই খতিয়ে দেখা হবে।

মাদকের মামলায় সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেলিম প্রধান যেহেতু একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাই প্রয়োজন সাপেক্ষে পরে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসবো। মো. হাফিজুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), গুলশান থানা

তিনি আরও বলেন, অননুমোদিত সীসা বার পরিচালনায় তার বিরুদ্ধে আরও একটি মাদক মামলা হয়েছে। এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া যাবে, সবই তদন্তের আওতায় আনা হবে। শিগগিরই তাকে আদালতে হাজির করা হবে।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, মাদকের মামলায় সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেলিম প্রধান যেহেতু একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাই প্রয়োজন সাপেক্ষে পরে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসবো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে অবৈধ অনলাইন জুয়াড়ি চক্র গড়ে তোলার পাশাপাশি ক্যাসিনোকাণ্ডের অন্যতম হোতা এই সেলিম প্রধান। ২০১৯ সালে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার সময় হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন। পরে জামিনে বের হয়ে ফের অবৈধ কর্মকাণ্ড শুরু করেন।

তার বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ

দেশে অবৈধ অনলাইন জুয়াড়ি চক্র গড়ে তোলার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, আবাসিক হোটেল ও বিভিন্ন স্পা সেন্টারের আড়ালে মাদকসহ নানাধরণের অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ আছে। অননুমোদিত সিসা বার পরিচালনার পাশাপাশি দেশের অনলাইন ক্যাসিনোর অন্যতম হোতা ছিলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সেলিম প্রধান থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে অনলাইনে ক্যাসিনো কারবারের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তিনি একজন ঋণখেলাপিও বটে। রূপালী ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি। তার বাবার নাম হান্নান প্রধান।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুলেছিলেন তার গোপন ক্যাসিনো। সেসব জায়গায় তিনি অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে ক্যাসিনো খেলায় জুয়াড়িদের উদ্বুদ্ধ করতেন। ক্যাসিনো কারবার থেকে থেকে অর্জিত বিপুল অঙ্কের টাকা তিনি দেশের বাইরে পাচার করেন। কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, র‍্যাব

পুলিশ জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে তার বাসা, গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহসভাপতি পদে ছিলেন। তারও আগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ক্যাশিয়ার ছিলেন। থাইল্যান্ডের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখাানেও তিনি ক্যাসিনো ব্যবসা গড়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্পা ও বিউটি পার্লার যেখানে ভিআইপিদের আসা-যাওয়া রয়েছে, সেগুলোতে নারী সরবরাহের কাজ করতেন সেলিম। সেই মেয়েরা ভিআইপিদের বিনোদন দেয়ার কাজ করতেন। সিলেট থেকে অবৈধভাবে পাথর নিষ্কাশনের কাজও করেছেন তারা।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, জুয়া ও মাদক ছাড়াও সেলিম প্রধান রাজশাহীসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় গবাদিপশুর বিভিন্ন খাটালে চাদাবাজি ও মাদক সরবরাহের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। এমনকি সীমান্তে জালটাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার মামলায় চার বছরের কারাদণ্ড পাওয়া সেলিম প্রধান রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পরও তিনি তথ্য গোপন করেছিলেন। পরে যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।

সেলিমের ক্যাসিনো ব্যবসা সম্পর্কে র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুলেছিলেন তার গোপন ক্যাসিনো। সেসব জায়গায় তিনি অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে ক্যাসিনো খেলায় জুয়াড়িদের উদ্বুদ্ধ করতেন। ক্যাসিনো কারবার থেকে থেকে অর্জিত বিপুল অঙ্কের টাকা তিনি দেশের বাইরে পাচার করেন। তার বিরুদ্ধে স্বর্ণপাচার সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত