leadT1ad

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলা

গ্রেপ্তার পাঁচজন কারাগারে, রিমান্ড শুনানি বৃহস্পতিবার

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গঙ্গাচড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে তোলা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান তাঁদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

স্ট্রিম সংবাদদাতারংপুর
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৯: ৪৪
গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গঙ্গাচড়া আমলী আদালতে তোলা হয়। স্ট্রিম ছবি

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের (হিন্দুপল্লি) বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাঁদের রিমান্ড শুনানির দিন আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ধার্য করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গঙ্গাচড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে তোলা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান তাঁদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে আদালতের বিচারক কৃষ্ণ কমল রায় তাঁদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে পার্শ্ববর্তী জেলা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেন জেলা পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী রবীন্দ্রনাথ রায় (৫৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে এই দিন সকালে গঙ্গাচড়া মডেল থানার মামলা করেন।

মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সিংগেরগাড়ি মাঝাপাড়া গ্রামের মো. ইয়াছিন আলী (২৫), একই উপজেলার মাগুড়া শ্রীপাড়ার স্বাধীন মিয়া (২৮), দক্ষিণ চাদখানা মায়াপাড়ার আশরাফুল ইসলাম (২৮), উত্তর সিংগেরগাড়ি পাঠানপাড়ার এস এম আতিকুর রহমান খান আতিক (২৮) ও দক্ষিণ সিংগেরগাড়ি চওড়াপাড়ার সাদ্দাম হোসেন সেলিম (২২)। ঘটনার দিন ওই সব এলাকা থেকে একদল লোক এসে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা চালায়।

চলতি সপ্তাহের রবিবার (২৭ জুলাই) মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কূটক্তির অভিযোগে জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাদপুর ছয়আনি এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ ঘটনার দুদিন পর মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) মামলা করেন ভুক্তভোগী রবীন্দ্রনাথ রায়।

কোর্ট ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বলেন, ছয়আনি হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনায় মামলার পর জেলা পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর অভিযানে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছে। আজ (বুধবার) বিকেলে তাঁদের আদালতে তুলে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া থানার ওসি আল এমরান। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গঙ্গাচড়া আমলী আদালতের বিচারক কৃষ্ণ কমল রায় তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) তাদের রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২৬ জুলাই) ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তির করে পোস্ট দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে আলদাদপুর ছয়আনি গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী এক কিশোরের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে লোকজন জড়ো হলে রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করে পুলিশ। তবে রাত ১০টার দিকে তার এক স্বজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা।

এদিকে পর দিন রবিবার পার্শ্ববর্তী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সিংগেরগাড়ি পারেরহাট, বাংলাবাজার, মাগুড়া এবং গংগাচড়া থানা এলাকার খলেয়া ও বেতগাড়ীসহ অন্যান্য এলাকার লোকজন লাঠিসোটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছয়আনির সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হিন্দুপল্লির ১২টি বসতবাড়ির ২২টি পরিবারের নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল, পানির পাম্পসহ প্রায় ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকার জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া বসতবাড়ির ব্যাপক ভাঙচুর করায় প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। তবে মঙ্গলবার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বাড়িঘর মেরামত শুরু করে উপজেলা প্রশাসন।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ১৫ বান্ডিল টিন ও ৩০ বস্তা শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০টি মাটির চুলা ও চারটি টিউবওয়েল মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে। তাদের ঘরবাড়িগুলো মেরামত করতে যা কিছু লাগবে, তা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত