২০২৩ সালে ঢাকা উত্তর সিটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৭৩ শতাংশ পথচারী, ২০ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক, ৫ শতাংশ যাত্রী ও ২ শতাংশ সাইকেলচালক। এছাড়া পথচারী, মোটরসাইকেলচালক ও সাইকেলচালক—এই তিন শ্রেণির মানুষ ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন ৯৫ শতাংশ।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন নাজিম উদ্দিন (৫০)। তখন দ্রুতগতির একটি ট্রাক এসে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত হয়ে তিনি একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সামনে এসে পড়েন। ঘটনাটি গেল ৩১ আগস্ট সকালে রাজধানীর মাতুয়াইলের।
নাজিম উদ্দিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সেই অটোরিকশার চালক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, নাজিম উদ্দিন মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। তাঁকে উদ্ধার করে সকাল ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় যাঁরা নিহত হন, তাঁদের ৭৩ শতাংশই নাজিম উদ্দিনের মতো পথচারী। ঢাকা পথচারীদের চলাচলের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, সাম্প্রতিক এক জরিপে তা উঠে এসেছে।
এতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ঢাকা উত্তর সিটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৭৩ শতাংশ পথচারী, ২০ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক, ৫ শতাংশ যাত্রী ও ২ শতাংশ সাইকেলচালক। এছাড়া পথচারী, মোটরসাইকেলচালক ও সাইকেলচালক—এই তিন শ্রেণির মানুষ ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন ৯৫ শতাংশ।
তবে, চট্টগ্রাম শহরের সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন ২০২১-২০২৩ থেকে জানা গেছে, সেখানে এ সময়ে যাঁরা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন, তাঁদের ৫৮ শতাংশই পথচারী। বাকিরা হচ্ছেন—১৭ শতাংশ মোটরসাইকেলচালক, ১০ শতাংশ থ্রি হুইলারযাত্রী, ৮ শতাংশ ফোর হুইলারযাত্রী ও ৭ শতাংশ অযান্ত্রিক যানবাহনের যাত্রী।
বৈশ্বিক সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মার্কিন দাতব্য সংস্থা ব্লুমবার্গ ফিলান্থ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটি (বিআইজিআরএস) কর্মসূচির আওতায় জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট (জেএইচ-আইআইআরইউ), সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) যৌথ উদ্যোগে ‘স্ট্যাটাস সামারি রিপোর্ট ২০২৪’ শিরোনামে এ জরিপটি করা হয়েছে।
২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বরের মধ্যে এই গবেষণাটি হয়েছে। এ সময়ে লোকাল ও কালেক্টর রাস্তায় যানবাহনের মধ্যে প্রতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালিয়েছে ২৪ শতাংশ। এ সময়ে ঢাকা উত্তরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা কমেছে বলে জরিপে দাবি করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে ঢাকা উত্তরে সড়কে প্রাণ হারান ৪৫৬ জন, ২০২২ সালে ৩৩৭ জন ও ২০২৩ সালে সেটা কমে ২৮৩ জন হয়েছে।
পথচারীরাই বেশি নাজুক
সারা বিশ্বেই সড়কে পথচারীরা সবচেয়ে নাজুক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক। গত শনিবার সন্ধ্যায় স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘সেই হিসেবে ঢাকা শহরে পথচারীদের প্রাণহানির এই সংখ্যা ব্যতিক্রম না।’
‘এটা ঢাকা শহরের বর্তমান পরিস্থিতিই না, সব সময়কার। পুরো পৃথিবীতেই সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক বলা হয় পথচারীদের। তাঁদের কোনো শিল্ড কিংবা রক্ষাকবচ নেই। কোনো ছোট গাড়ির সঙ্গেও যদি তাঁদের ধাক্কা লাগে, তাতে গাড়ির মধ্যে যিনি থাকেন, তার কিছু হয় না; কিন্তু যিনি অরক্ষিত, নাজুক ও দুর্বল—তাঁরাই হতাহতের মধ্যে পড়েন। সে হিসেবে, ঢাকা শহরে পথচারীদের প্রাণহানির এই সংখ্যা ব্যতিক্রম না,’ বলেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক এই পরিচালক।
ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘আমি বলব, এই বিশৃঙ্খল শহরের সবচেয়ে নাজুক ও দুর্বল ব্যক্তিটি হচ্ছেন পথচারী। তাঁর জন্য যে নিরাপদ ফুটপাত হওয়ার কথা, সেই জায়গায়ও অসঙ্গতিপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে। এতে বাধ্য হয়ে পথচারীদের সক্রিয় সড়কের মধ্যে চলে আসতে হচ্ছে। কারণ, ফুটপাতকে আমরা ব্যবহার উপযোগী রাখিনি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি তিন মিনিটে অন্তত সাতজন নিহত হচ্ছেন। বৈশ্বিক যানবাহনের ৬০ শতাংশই ব্যবহার করা হয় নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। আর সড়কে প্রাণহানির ৯২ শতাংশই ঘটছে এসব দেশে।
ডব্লিউএইচওর হিসাবে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় রোজ ৮৬ জনের প্রাণহানি ঘটছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অর্থনীতি—সবকিছু মিলিয়ে ঢাকা শহর দ্রুত বাড়ছে। এই শহরের ৩৫ শতাংশ মানুষ বাসে চলাচল করেন, মোটরসাইকেলে পাঁচ শতাংশ ও সাইকেলে এক শতাংশ। এছাড়া হেঁটে যাতায়াত করেন ২৩ শতাংশ। এতে এই আভাসই দেয় যে সড়ক ব্যবহারকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঝুঁকিতে, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে।
বিআইজিআরএসের এই গবেষণায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত গতিতে মোটরযান চালালে সড়ক দুর্ঘটনা ও মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। গড় যানবাহনের গতিতে প্রতি ঘণ্টায় ১ কিলোমিটার বাড়ালে আঘাতজনিত দুর্ঘটনার ঘটনা ৩ শতাংশ এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ঘটনা ৫ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
জরিপে বলা হয়েছে, সব পর্যবেক্ষণাধীন যানবাহনের মধ্যে প্রধান সড়কে অতিরিক্ত গতিতে চলাচলের হার ছিল কম (মাত্র এক শতাংশ)। তবে লোকাল ও কালেক্টর রোডে বৈশ্বিকভাবে সুপারিশকৃত ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিসীমা অনুযায়ী দেখা গেছে, ২৪ শতাংশ গাড়ি এই সীমার বেশি গতিতে চলছিল, যা অনিরাপদ।
তবে, ঢাকা উত্তরে যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং গড় গতি উভয়ই কমে এসেছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে ১৩ শতাংশ গাড়ি বেশি গতিতে চলছিল। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সেটা মাত্র এক শতাংশে নেমে গেছে। এ ছাড়া ঘণ্টায় গাড়ির গড় গতি ৩২ কিলোমিটার থেকে কমে ২৮ কিলোমিটার হয়েছে। যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, রিকশা ও যানজটের কারণে কমে এসেছে সড়কে যানবাহনের চলাচলের গতি।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে লোকাল ও কালেক্টর রোডে ৫৫ শতাংশ গাড়ি ঘণ্টায় ৩০ কিমির বেশি গতিতে চলাচল করলেও ২০২৪ সালের নভেম্বরে এটি কমে ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া, প্রধান সড়কে ঘণ্টায় ৫০ কিমির বেশি গতিতে চলাচলরত গাড়ির হার ২০২১ সালের ৫ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।
ঢাকা শহরে ৫১ শতাংশ মোটরসাইকেল নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে চলে বলে জরিপে বলা হয়েছে। জেএইচ-আইআইআরইউর গবেষক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া বলেন, ‘বৈশ্বিক সুপারিশকৃত ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতি বিবেচনায় তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা উত্তরের লোকাল ও কালেক্টর রোডে ২৪ শতাংশ যানবাহন নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করছে। এ ছাড়া, বিআরটিএর ২০২৪ সালে জারিকৃত মোটরযানের গতিসীমা–সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সব ধরনের যানবাহন ও রাস্তা বিবেচনায় ২৩ শতাংশ যানবাহন নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে চলে।’
‘যানবাহনের ধরন অনুযায়ী হিসেবে দেখা গেছে, ৫১ শতাংশ মোটরসাইকেল নির্ধারিত গতিসীমার চাইতে বেশি গতিতে চলে। লোকাল এবং কালেক্টর রোডে নির্ধারিত গতিসীমার তুলনায় ২৯ শতাংশ যানবাহন বেশি গতিতে চলে। এ ছাড়া কর্মদিবসের তুলনায় ছুটির দিনে গতিসীমা অতিক্রম করার হার কিছুটা বেশি (কর্মদিবসে ২২ শতাংশ, ছুটির দিনে ২৬ শতাংশ),’ বলেন তিনি।
সিআইপিআরবির পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের মে মাসে মোটরযানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা প্রকাশ করে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে হাইওয়ে ও এক্সপ্রেসওয়ের জন্য যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ঘণ্টায় ৮০ কিমি এবং শহরের সড়কে সর্বোচ্চ ৪০ কিমি নির্ধারণ করা হয়। এতে সড়ক ও যানবাহনের ধরন অনুযায়ী যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে যৌক্তিক গতিসীমা নির্ধারণের কর্তৃত্ব দেওয়া হয় এবং হাইওয়ে ও এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের ধরন অনুযায়ী স্পিড লিমিট সাইন স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।’
যা আছে মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকায়
মোটরযানের অতিরিক্ত গতি ও বেপরোয়াভাবে চালানোর কারণেই বাংলাদেশে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে বলে ২০২৪ সালে প্রণীত মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, দ্রুতগতির কারণে আঘাতের মাত্রাও হয় বেশি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনার জন্য এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশিকায়, মোটরগাড়ি, জিপ, মাইক্রোবাসের মতো হালকা যান এবং দূরপাল্লার বাস ও মিনিবাসসহ মধ্যম ও ভারী যানের সর্বোচ্চ গতিসীমা এক্সপ্রেসওয়ে ও এ-ক্যাটাগরির জাতীয় মহাসড়কে ৮০ কিলোমিটার, বি-ক্যাটাগরির জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ৭০ কিলোমিটার এবং জেলা সড়কে ৬০ কিলোমিটার।
ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ মালবাহী মোটরযান এবং ট্রেইলরযুক্ত আর্টিকুলেটেড মোটরযানের সর্বোচ্চ গতিসীমা এক্সপ্রেসওয়ে ও এ-ক্যাটাগরির জাতীয় মহাসড়কে ৫০ কিমি, বি-ক্যাটাগরির জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ৪৫ কিমি এবং জেলা সড়কে ৪০ কিমি রাখা হয়েছে।
শহরের ক্ষেত্রে সব ধরনের যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা সদরের মধ্যে কমপক্ষে ৬ লেনবিশিষ্ট রাস্তার প্রস্থ ১০.৩ মিটার, পাশে ফুটপাত ও রাস্তা পারাপারে ব্যবস্থা বিদ্যমান এমন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক, অভ্যন্তরীণ সড়ক এবং উপজেলা মহাসড়ক (রাস্তার প্রস্থ ৭.৩ থেকে ১১ মিটার) মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাস ইত্যাদি হালকা যান এবং দূরপাল্লার বাস ও মিনিবাস ইত্যাদি মধ্যম ও ভারী যানের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৪০ কিমি। এসব সড়কে ট্রাক, মিনি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ইত্যাদি মালবাহী মোটরযান, ট্রেইলরযুক্ত আর্টিকুলেটেড মোটরযান এবং মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ কিলোমিটার।
এর আগে গেল এপ্রিলে দ্য ব্লুমবার্গ ফিল্যানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটির (বিআইজিআরএস) এক গবেষণায় ঢাকা শহরের সড়ক দুর্ঘটনারোধে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে পথচারীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়, পথচারীদের নিরাপত্তা ও চলাচল সুগম করতে হবে। পথচারীদের নিরাপত্তা উন্নত করতে পারলে পুরো শহরের সড়ক নিরাপত্তায় উন্নতি ঘটবে।
হাঁটার সুষ্ঠু পরিবেশ আছে এমন ফুটপাত, জেব্রা ক্রসিং, স্পিড বাম্প ও পথচারী আশ্রয় দ্বীপও থাকতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পথচারীপ্রবণ এলাকাগুলোতে সরু লেন ও ধীর গতির অঞ্চলও থাকা দরকার বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বেশি মনোযোগ দিতে বলা হয়েছে। এসব অঞ্চলে নির্ধারিত বাস স্টপেজ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গতানুগতিক বাস স্টপেজগুলোর নকশা পরিবর্তন করে আরও সক্ষম ও আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে যাত্রীদের ভ্রমণ করা সহজ হয়।
ঢাকার সড়কে বেশিরভাগ হতাহতের জন্যই দায়ী বাস ও ভারী যানবাহন বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কাজেই এসব যান যেসব ক্ষতি ও ঝুঁকি তৈরি করছে, তা কমিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে গাড়ির গতি কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গাড়িচাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তদন্তে উন্নতি করতে পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যদি গাড়িচাপা দিয়ে একজন মানুষকে হত্যার পর শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলে চালক নিশ্চিত হয়ে যান, তাহলে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা থেকে তাদের বিরত রাখা যাবে না বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।
এ সময়ে মোটসাইকেলকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, তারা যেভাবে বিশৃঙ্খলাভাবে চলাচল করছে, এতে পথচারীরা চমকে যাচ্ছেন। মোটসাইকেলের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটলে পথচারীই মারা যান। আবার অন্য গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগলে মোটরসাইকেল আরোহী মারা যান।
ড. এম শামসুল হক বলেন, ঢাকা শহরে প্রথম থেকেই পথচারী দুর্ঘটনাটা বেশি ছিল। কিন্তু ঢাকা শহরে বর্তমানে যে গাড়ির গতি, তাতে ঢোকাঢুকি প্রতিদিনই হচ্ছে। কিন্তু প্রাণহানি কম হয়। কারণ, যানজটের জন্য গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে। যে কারণে পাশ কাটিয়ে গাড়ি চলে যেতে পারে। গতি কম হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা কম হচ্ছে।
এ সময়ে মোটসাইকেলকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, তারা যেভাবে বিশৃঙ্খলাভাবে চলাচল করছে, এতে পথচারীরা চমকে যাচ্ছেন। মোটসাইকেলের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটলে পথচারীই মারা যান। আবার অন্য গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগলে মোটরসাইকেল আরোহী মারা যান।
বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাকে মনুষ্যসৃষ্ট আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীজুড়ে যেখানে দেখা যায়, গাড়ি ও রাস্তা ভালো। এমনকি চালকও দক্ষ হন। সেসব দেশেও দুর্ঘটনা ঘটে; তাদেরটা দুর্ঘটনা। কিন্তু আমাদেরটা দুর্ঘটনা না, আমরা এটিকে বলে ক্রাশ—মনুষ্য তৈরি দুর্ঘটনা। আর ওদেরটা হচ্ছে দৈব। তবে, দৈব ঘটনায়ও পথচারী বেশি মারা যান। এর মূল কারণ হচ্ছে, পথচারীরা বেশি অরক্ষিত।
এ সময়ে ইজিবাইক ও অটোরিকশাও জ্ঞানহীনভাবে চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, এগুলো হঠাৎ হঠাৎ অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত নেয়। এতে এই ইজিবাইক ও অটোরিকশা বাঁচাতে গিয়ে অন্য গাড়িগুলো যে কসরত করে, তাতেও পথচারীরা মারা যান। এখন ছোট গাড়ির চালকের সংখ্যাও বেড়েছে।
ঢাকায় দুর্ঘটনার সব কারণ দিন দিন বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শামসুল হক বলেন, ছোট গাড়ির চালকদের বেশিরভাগেরই কোনো রোড-সেন্স নেই। তাঁরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে অন্য গাড়ি আচমকা যে মুভমেন্ট করছে, তখন দুর্ঘটনা ঘটছে। যদি গতি থাকত, তাহলে দুর্ঘটনা আরও বাড়ত। রিকশা, স্পিডবেকার ও যানজটের কারণে এই গতিটা কমেছে। কাজেই আমাদের অর্থনীতির ক্ষতির কারণে দুর্ঘটনা কমেছে।
এই গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, অন্য দেশগুলো রাস্তায় গতি বাড়ায়, সিস্টেম তৈরি করে। তখন গতি কোনো ক্ষতি করে না। আমরা বিশৃঙ্খলা রেখে দিয়েছি। যেহেতু বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো কাজ করতে পারি না, সেহেতু দুর্ঘটনা ঘটছে।
মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন নাজিম উদ্দিন (৫০)। তখন দ্রুতগতির একটি ট্রাক এসে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত হয়ে তিনি একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সামনে এসে পড়েন। ঘটনাটি গেল ৩১ আগস্ট সকালে রাজধানীর মাতুয়াইলের।
নাজিম উদ্দিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সেই অটোরিকশার চালক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, নাজিম উদ্দিন মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। তাঁকে উদ্ধার করে সকাল ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় যাঁরা নিহত হন, তাঁদের ৭৩ শতাংশই নাজিম উদ্দিনের মতো পথচারী। ঢাকা পথচারীদের চলাচলের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, সাম্প্রতিক এক জরিপে তা উঠে এসেছে।
এতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ঢাকা উত্তর সিটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৭৩ শতাংশ পথচারী, ২০ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক, ৫ শতাংশ যাত্রী ও ২ শতাংশ সাইকেলচালক। এছাড়া পথচারী, মোটরসাইকেলচালক ও সাইকেলচালক—এই তিন শ্রেণির মানুষ ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন ৯৫ শতাংশ।
তবে, চট্টগ্রাম শহরের সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন ২০২১-২০২৩ থেকে জানা গেছে, সেখানে এ সময়ে যাঁরা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন, তাঁদের ৫৮ শতাংশই পথচারী। বাকিরা হচ্ছেন—১৭ শতাংশ মোটরসাইকেলচালক, ১০ শতাংশ থ্রি হুইলারযাত্রী, ৮ শতাংশ ফোর হুইলারযাত্রী ও ৭ শতাংশ অযান্ত্রিক যানবাহনের যাত্রী।
বৈশ্বিক সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মার্কিন দাতব্য সংস্থা ব্লুমবার্গ ফিলান্থ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটি (বিআইজিআরএস) কর্মসূচির আওতায় জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট (জেএইচ-আইআইআরইউ), সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) যৌথ উদ্যোগে ‘স্ট্যাটাস সামারি রিপোর্ট ২০২৪’ শিরোনামে এ জরিপটি করা হয়েছে।
২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বরের মধ্যে এই গবেষণাটি হয়েছে। এ সময়ে লোকাল ও কালেক্টর রাস্তায় যানবাহনের মধ্যে প্রতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালিয়েছে ২৪ শতাংশ। এ সময়ে ঢাকা উত্তরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা কমেছে বলে জরিপে দাবি করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে ঢাকা উত্তরে সড়কে প্রাণ হারান ৪৫৬ জন, ২০২২ সালে ৩৩৭ জন ও ২০২৩ সালে সেটা কমে ২৮৩ জন হয়েছে।
পথচারীরাই বেশি নাজুক
সারা বিশ্বেই সড়কে পথচারীরা সবচেয়ে নাজুক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক। গত শনিবার সন্ধ্যায় স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘সেই হিসেবে ঢাকা শহরে পথচারীদের প্রাণহানির এই সংখ্যা ব্যতিক্রম না।’
‘এটা ঢাকা শহরের বর্তমান পরিস্থিতিই না, সব সময়কার। পুরো পৃথিবীতেই সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক বলা হয় পথচারীদের। তাঁদের কোনো শিল্ড কিংবা রক্ষাকবচ নেই। কোনো ছোট গাড়ির সঙ্গেও যদি তাঁদের ধাক্কা লাগে, তাতে গাড়ির মধ্যে যিনি থাকেন, তার কিছু হয় না; কিন্তু যিনি অরক্ষিত, নাজুক ও দুর্বল—তাঁরাই হতাহতের মধ্যে পড়েন। সে হিসেবে, ঢাকা শহরে পথচারীদের প্রাণহানির এই সংখ্যা ব্যতিক্রম না,’ বলেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক এই পরিচালক।
ড. এম শামসুল হক বলেন, ‘আমি বলব, এই বিশৃঙ্খল শহরের সবচেয়ে নাজুক ও দুর্বল ব্যক্তিটি হচ্ছেন পথচারী। তাঁর জন্য যে নিরাপদ ফুটপাত হওয়ার কথা, সেই জায়গায়ও অসঙ্গতিপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে। এতে বাধ্য হয়ে পথচারীদের সক্রিয় সড়কের মধ্যে চলে আসতে হচ্ছে। কারণ, ফুটপাতকে আমরা ব্যবহার উপযোগী রাখিনি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি তিন মিনিটে অন্তত সাতজন নিহত হচ্ছেন। বৈশ্বিক যানবাহনের ৬০ শতাংশই ব্যবহার করা হয় নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। আর সড়কে প্রাণহানির ৯২ শতাংশই ঘটছে এসব দেশে।
ডব্লিউএইচওর হিসাবে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় রোজ ৮৬ জনের প্রাণহানি ঘটছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অর্থনীতি—সবকিছু মিলিয়ে ঢাকা শহর দ্রুত বাড়ছে। এই শহরের ৩৫ শতাংশ মানুষ বাসে চলাচল করেন, মোটরসাইকেলে পাঁচ শতাংশ ও সাইকেলে এক শতাংশ। এছাড়া হেঁটে যাতায়াত করেন ২৩ শতাংশ। এতে এই আভাসই দেয় যে সড়ক ব্যবহারকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঝুঁকিতে, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে।
বিআইজিআরএসের এই গবেষণায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত গতিতে মোটরযান চালালে সড়ক দুর্ঘটনা ও মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। গড় যানবাহনের গতিতে প্রতি ঘণ্টায় ১ কিলোমিটার বাড়ালে আঘাতজনিত দুর্ঘটনার ঘটনা ৩ শতাংশ এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ঘটনা ৫ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
জরিপে বলা হয়েছে, সব পর্যবেক্ষণাধীন যানবাহনের মধ্যে প্রধান সড়কে অতিরিক্ত গতিতে চলাচলের হার ছিল কম (মাত্র এক শতাংশ)। তবে লোকাল ও কালেক্টর রোডে বৈশ্বিকভাবে সুপারিশকৃত ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিসীমা অনুযায়ী দেখা গেছে, ২৪ শতাংশ গাড়ি এই সীমার বেশি গতিতে চলছিল, যা অনিরাপদ।
তবে, ঢাকা উত্তরে যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং গড় গতি উভয়ই কমে এসেছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে ১৩ শতাংশ গাড়ি বেশি গতিতে চলছিল। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সেটা মাত্র এক শতাংশে নেমে গেছে। এ ছাড়া ঘণ্টায় গাড়ির গড় গতি ৩২ কিলোমিটার থেকে কমে ২৮ কিলোমিটার হয়েছে। যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, রিকশা ও যানজটের কারণে কমে এসেছে সড়কে যানবাহনের চলাচলের গতি।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে লোকাল ও কালেক্টর রোডে ৫৫ শতাংশ গাড়ি ঘণ্টায় ৩০ কিমির বেশি গতিতে চলাচল করলেও ২০২৪ সালের নভেম্বরে এটি কমে ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া, প্রধান সড়কে ঘণ্টায় ৫০ কিমির বেশি গতিতে চলাচলরত গাড়ির হার ২০২১ সালের ৫ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।
ঢাকা শহরে ৫১ শতাংশ মোটরসাইকেল নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে চলে বলে জরিপে বলা হয়েছে। জেএইচ-আইআইআরইউর গবেষক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া বলেন, ‘বৈশ্বিক সুপারিশকৃত ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতি বিবেচনায় তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা উত্তরের লোকাল ও কালেক্টর রোডে ২৪ শতাংশ যানবাহন নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করছে। এ ছাড়া, বিআরটিএর ২০২৪ সালে জারিকৃত মোটরযানের গতিসীমা–সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সব ধরনের যানবাহন ও রাস্তা বিবেচনায় ২৩ শতাংশ যানবাহন নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে চলে।’
‘যানবাহনের ধরন অনুযায়ী হিসেবে দেখা গেছে, ৫১ শতাংশ মোটরসাইকেল নির্ধারিত গতিসীমার চাইতে বেশি গতিতে চলে। লোকাল এবং কালেক্টর রোডে নির্ধারিত গতিসীমার তুলনায় ২৯ শতাংশ যানবাহন বেশি গতিতে চলে। এ ছাড়া কর্মদিবসের তুলনায় ছুটির দিনে গতিসীমা অতিক্রম করার হার কিছুটা বেশি (কর্মদিবসে ২২ শতাংশ, ছুটির দিনে ২৬ শতাংশ),’ বলেন তিনি।
সিআইপিআরবির পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের মে মাসে মোটরযানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা প্রকাশ করে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে হাইওয়ে ও এক্সপ্রেসওয়ের জন্য যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ঘণ্টায় ৮০ কিমি এবং শহরের সড়কে সর্বোচ্চ ৪০ কিমি নির্ধারণ করা হয়। এতে সড়ক ও যানবাহনের ধরন অনুযায়ী যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে যৌক্তিক গতিসীমা নির্ধারণের কর্তৃত্ব দেওয়া হয় এবং হাইওয়ে ও এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের ধরন অনুযায়ী স্পিড লিমিট সাইন স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।’
যা আছে মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকায়
মোটরযানের অতিরিক্ত গতি ও বেপরোয়াভাবে চালানোর কারণেই বাংলাদেশে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে বলে ২০২৪ সালে প্রণীত মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, দ্রুতগতির কারণে আঘাতের মাত্রাও হয় বেশি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনার জন্য এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশিকায়, মোটরগাড়ি, জিপ, মাইক্রোবাসের মতো হালকা যান এবং দূরপাল্লার বাস ও মিনিবাসসহ মধ্যম ও ভারী যানের সর্বোচ্চ গতিসীমা এক্সপ্রেসওয়ে ও এ-ক্যাটাগরির জাতীয় মহাসড়কে ৮০ কিলোমিটার, বি-ক্যাটাগরির জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ৭০ কিলোমিটার এবং জেলা সড়কে ৬০ কিলোমিটার।
ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ মালবাহী মোটরযান এবং ট্রেইলরযুক্ত আর্টিকুলেটেড মোটরযানের সর্বোচ্চ গতিসীমা এক্সপ্রেসওয়ে ও এ-ক্যাটাগরির জাতীয় মহাসড়কে ৫০ কিমি, বি-ক্যাটাগরির জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ৪৫ কিমি এবং জেলা সড়কে ৪০ কিমি রাখা হয়েছে।
শহরের ক্ষেত্রে সব ধরনের যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা সদরের মধ্যে কমপক্ষে ৬ লেনবিশিষ্ট রাস্তার প্রস্থ ১০.৩ মিটার, পাশে ফুটপাত ও রাস্তা পারাপারে ব্যবস্থা বিদ্যমান এমন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক, অভ্যন্তরীণ সড়ক এবং উপজেলা মহাসড়ক (রাস্তার প্রস্থ ৭.৩ থেকে ১১ মিটার) মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাস ইত্যাদি হালকা যান এবং দূরপাল্লার বাস ও মিনিবাস ইত্যাদি মধ্যম ও ভারী যানের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৪০ কিমি। এসব সড়কে ট্রাক, মিনি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ইত্যাদি মালবাহী মোটরযান, ট্রেইলরযুক্ত আর্টিকুলেটেড মোটরযান এবং মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ কিলোমিটার।
এর আগে গেল এপ্রিলে দ্য ব্লুমবার্গ ফিল্যানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটির (বিআইজিআরএস) এক গবেষণায় ঢাকা শহরের সড়ক দুর্ঘটনারোধে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে পথচারীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়, পথচারীদের নিরাপত্তা ও চলাচল সুগম করতে হবে। পথচারীদের নিরাপত্তা উন্নত করতে পারলে পুরো শহরের সড়ক নিরাপত্তায় উন্নতি ঘটবে।
হাঁটার সুষ্ঠু পরিবেশ আছে এমন ফুটপাত, জেব্রা ক্রসিং, স্পিড বাম্প ও পথচারী আশ্রয় দ্বীপও থাকতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পথচারীপ্রবণ এলাকাগুলোতে সরু লেন ও ধীর গতির অঞ্চলও থাকা দরকার বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বেশি মনোযোগ দিতে বলা হয়েছে। এসব অঞ্চলে নির্ধারিত বাস স্টপেজ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গতানুগতিক বাস স্টপেজগুলোর নকশা পরিবর্তন করে আরও সক্ষম ও আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে যাত্রীদের ভ্রমণ করা সহজ হয়।
ঢাকার সড়কে বেশিরভাগ হতাহতের জন্যই দায়ী বাস ও ভারী যানবাহন বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কাজেই এসব যান যেসব ক্ষতি ও ঝুঁকি তৈরি করছে, তা কমিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে গাড়ির গতি কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গাড়িচাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তদন্তে উন্নতি করতে পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যদি গাড়িচাপা দিয়ে একজন মানুষকে হত্যার পর শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলে চালক নিশ্চিত হয়ে যান, তাহলে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা থেকে তাদের বিরত রাখা যাবে না বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।
এ সময়ে মোটসাইকেলকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, তারা যেভাবে বিশৃঙ্খলাভাবে চলাচল করছে, এতে পথচারীরা চমকে যাচ্ছেন। মোটসাইকেলের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটলে পথচারীই মারা যান। আবার অন্য গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগলে মোটরসাইকেল আরোহী মারা যান।
ড. এম শামসুল হক বলেন, ঢাকা শহরে প্রথম থেকেই পথচারী দুর্ঘটনাটা বেশি ছিল। কিন্তু ঢাকা শহরে বর্তমানে যে গাড়ির গতি, তাতে ঢোকাঢুকি প্রতিদিনই হচ্ছে। কিন্তু প্রাণহানি কম হয়। কারণ, যানজটের জন্য গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে। যে কারণে পাশ কাটিয়ে গাড়ি চলে যেতে পারে। গতি কম হওয়ার কারণে দুর্ঘটনা কম হচ্ছে।
এ সময়ে মোটসাইকেলকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, তারা যেভাবে বিশৃঙ্খলাভাবে চলাচল করছে, এতে পথচারীরা চমকে যাচ্ছেন। মোটসাইকেলের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটলে পথচারীই মারা যান। আবার অন্য গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগলে মোটরসাইকেল আরোহী মারা যান।
বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাকে মনুষ্যসৃষ্ট আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীজুড়ে যেখানে দেখা যায়, গাড়ি ও রাস্তা ভালো। এমনকি চালকও দক্ষ হন। সেসব দেশেও দুর্ঘটনা ঘটে; তাদেরটা দুর্ঘটনা। কিন্তু আমাদেরটা দুর্ঘটনা না, আমরা এটিকে বলে ক্রাশ—মনুষ্য তৈরি দুর্ঘটনা। আর ওদেরটা হচ্ছে দৈব। তবে, দৈব ঘটনায়ও পথচারী বেশি মারা যান। এর মূল কারণ হচ্ছে, পথচারীরা বেশি অরক্ষিত।
এ সময়ে ইজিবাইক ও অটোরিকশাও জ্ঞানহীনভাবে চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, এগুলো হঠাৎ হঠাৎ অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত নেয়। এতে এই ইজিবাইক ও অটোরিকশা বাঁচাতে গিয়ে অন্য গাড়িগুলো যে কসরত করে, তাতেও পথচারীরা মারা যান। এখন ছোট গাড়ির চালকের সংখ্যাও বেড়েছে।
ঢাকায় দুর্ঘটনার সব কারণ দিন দিন বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শামসুল হক বলেন, ছোট গাড়ির চালকদের বেশিরভাগেরই কোনো রোড-সেন্স নেই। তাঁরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে অন্য গাড়ি আচমকা যে মুভমেন্ট করছে, তখন দুর্ঘটনা ঘটছে। যদি গতি থাকত, তাহলে দুর্ঘটনা আরও বাড়ত। রিকশা, স্পিডবেকার ও যানজটের কারণে এই গতিটা কমেছে। কাজেই আমাদের অর্থনীতির ক্ষতির কারণে দুর্ঘটনা কমেছে।
এই গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, অন্য দেশগুলো রাস্তায় গতি বাড়ায়, সিস্টেম তৈরি করে। তখন গতি কোনো ক্ষতি করে না। আমরা বিশৃঙ্খলা রেখে দিয়েছি। যেহেতু বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো কাজ করতে পারি না, সেহেতু দুর্ঘটনা ঘটছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ইলিশের ডিম ছাড়া ও প্রজননের জন্য এ বছর ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২২ মিনিট আগেখাগড়াছড়িতে এক কিশোরী ধর্ষণকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনায় তিনজন নিহত, বহু মানুষ আহত এবং অনেক বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানিয়েছে।
৩৯ মিনিট আগেআগামী নভেম্বর মাস থেকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য তালিকায় আরও পাঁচটি পণ্য যুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। পণ্যগুলো হল— চা, লবণ, ডিটারজেন্ট ও দুই ধরনের সাবান।
১ ঘণ্টা আগেসড়কে মোটরযানের কর পরিশোধে চালু হয়েছে ই-ট্যাক্স টোকেন। মোটরযানের মালিক ও চালকরা এখন থেকে মোবাইল ফোনে কিউআর কোড সম্বলিত ই-ট্যাক্স টোকেন দেখিয়ে চলাচল করতে পারবেন। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সহকারী সচিব মো. জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে