leadT1ad

খাগড়াছড়িতে এক মাসে ঠান্ডাজনিত রোগে ১২ শিশুর মৃত্যু

খাগড়াছড়িতে গত এক মাসে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সব শিশুই গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিল। জেলা সদর হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের বেশির ভাগই শিশু। হাসপাতালের ১৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ৯০-৯২ জন রোগী। এতে চিকিৎসা কার্যক্রমে চাপ তৈরি হয়েছে।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
খাগড়াছড়ি

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ১২
খাগড়াছড়িতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। স্ট্রিম ছবি

খাগড়াছড়িতে দিন-রাতের দ্রুত তারতম্য ঘটছে তাপমাত্রা। এতে পাহাড়ে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। বিশেষ করে নিউমোনিয়া ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা উদ্‌বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সব শিশুই গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিল বলে জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই শিশু। হাসপাতালের ১৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ৯০-৯২ জন রোগী। এতে চিকিৎসা কার্যক্রমে চাপ তৈরি হয়েছে।

আজ রবিবার (৯ নভেম্বর) সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীরা সিট না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বারান্দায়ও রাখা হয়েছে বেশ কয়েকজন রোগী। অনেক শিশু অক্সিজেন মাস্কে শ্বাস নিচ্ছে। পাশে বসে আছেন উদ্‌বিগ্ন অভিভাবকরা।

দীঘিনালার মুসলিমপাড়া এলাকায় থেকে ছেলে নিয়ে আসা আব্দুল হালিম বলেন, ‘ছেলের বয়স তিন বছর। দুই দিন ধরে জ্বর ও কাশি ছিল। গতকাল রাতের বেলায় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে আনি। এখন মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।’

পানছড়ি থেকে আসা শান্তি চাকমা বলেন, ‘আমার মেয়ের নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে। ডাক্তার বলেছেন, ঠান্ডা বাতাসে না রাখতে রাতে হাসপাতালে সিটও পাচ্ছি না, গরম- ঠান্ডা মিলে মুশকিলে আছি, তাই করিডোরে শুয়ে আছে।’

নিউমোনিয়া ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা উদ্‌বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে খাগড়াছড়িতে। স্ট্রিম ছবি স্ট্রিম ছবি
নিউমোনিয়া ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা উদ্‌বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে খাগড়াছড়িতে। স্ট্রিম ছবি স্ট্রিম ছবি

শুধু খাগড়াছড়ি সদর নয়, জেলার মাটিরাঙা, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সবকয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক শিশু হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছে।

খাগড়াছড়ি জেলার প্রধান আবহাওয়া কার্যালয়ের ইনচার্জ সুগতি চাকমা জানান, গতকাল শনিবার (৮ নভেম্বর) রাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর আজ রবিবার (৯ নভেম্বর) দিনে সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মাসে পাহাড়ে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে তিনি জানান।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী, আজ রবিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা একই সময়ে খাগড়াছড়ির সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কাছাকাছি।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ওমর ফারুক বলেন, ‘ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।’

ঋতুর উপযোগী স্বাস্থ্য দুর্যোগ মোকাবিলার ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার জানিয়ে জনস্বাস্থ্য ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘মূলত ষড়ঋতুর এই দেশে প্রত্যেকটা ঋতুর উপযোগী করে একটি স্বাস্থ্য দুর্যোগ মোকাবিলার ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার। সেই অনুযায়ী মানুষজনকে প্রতিটি ঋতুর শুরুতেই সেই ঋতুতে কি কি অসুখ হতে পারে, সেই ব্যাপারে সচেতন করার জন্য সমস্ত প্রচারমাধ্যমকে ব্যবহার করা দরকার। এর মধ্যদিয়ে মানুষজন ওই ঋতুতে যে রোগগুলো বেশি হয়, তার বিরুদ্ধে সচেতন হবে এবং কি কি করতে হবে, সেই ব্যাপারে নিজেরা ওয়াকিবহাল থাকবে। এটা না করা হলে কিন্তু প্রতিবছরই আমরা এরকম মৃত্যু, অসুস্থতার হার দেখতে থাকব।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত