চাঁপাইনবাবগঞ্জে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে এক হাজার টাকায় চারটি থ্রিপিস বিক্রির নামে ‘প্রতারণার’ অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, অতিরঞ্জিত বিজ্ঞাপন দিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে শহরের শান্তিমোড় সংলগ্ন দিবানিশি ক্লিনিকের সামনে নতুন গড়ে তোলা ‘উত্তরবঙ্গ বাটিক হাউস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শোরুমটির উদ্বোধন উপলক্ষে এক হাজার টাকায় চারটি থ্রিপিস দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হাজারো নারীকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখে এই প্রতারণা করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী নারী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টায় উত্তরবঙ্গ বাটিক হাউসের চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা উদ্বোধনের কথা ছিল। উদ্বোধন উপলক্ষে ১ হাজার টাকায় চারটি থ্রিপিস বিক্রির প্রচারণা ব্যাপকভাবে চালানো হয়। এই অফারের খবর জেনে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো নারী সকাল ৭টা থেকেই উত্তরবঙ্গ বাটিক হাউসের সামনে ভিড় করেন। এতে সড়কে সৃষ্টি হয় যানজট। সকাল ১০টায় উদ্বোধনের কথা থাকলেও দুপুর ২টা পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি চলতে থাকে।
নারীদের এমন উপস্থিতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশের কয়েকটি দল। একাধিকবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। নারীদের বারবার জানানো হয়, থ্রিপিস বিক্রি হবে না; তবু তারা বেলা ৩টা পর্যন্ত শোরুমের সামনেই অবস্থান নেন।
এদিকে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১০টায় আসার কথা থাকলেও কয়েকজন ইউটিউবার ও টিকটকারকে সঙ্গে নিয়ে দুপুর ১২টায় শোরুম উদ্বোধন করতে আসেন জনপ্রিয় কমেডিয়ান ও মডেল আবু হেনা রনি। তিনি কয়েক দফা নারীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও তাতে কাজ হয়নি। দুপুর ২টা পর্যন্ত শোরুম উদ্বোধন করতে পারেননি তিনি।
নারীদের এমন উপস্থিতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশের কয়েকটি দল। স্ট্রিম ছবিশিবগঞ্জ থেকে থ্রিপিস কিনতে আসা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার মেয়ে একটি বিজ্ঞাপন দেখে। সেখানে বলা হয়, উদ্বোধন উপলক্ষে এক হাজার টাকায় চারটি থ্রিপিস বিক্রি করা হবে। তাই সকাল ৮টার আগেই শোরুমের সামনে হাজির হই। তখন ২০ থেকে ২৫ জন নারী ছিল। কিন্তু ১০টা বাজতে বাজতেই সেখানে কয়েক হাজার নারী অবস্থান নেয়। দুপুর পর্যন্ত শোরুমের সামনে অপেক্ষায় থাকলেও তালা খোলেনি।’
নাচোল থেকে আসা কলেজছাত্রী সুমাইয়া খাতুন বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিছু টিকটকারের কারণেই আজকের এই অবস্থা। এই অফারটিকে তারা এমনভাবে প্রচার করেছে যে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বয়সী নারী ছুটে এসেছেন। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কিছু কিনতে পারিনি। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এমন অবস্থার মধ্যেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং আমাদেরই বারবার শোরুমের সামনে থেকে সরিয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা সাগর আহমেদ বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগেই শোরুমের আশপাশে নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি হয়। এতে সড়কে যান চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়। আমরা শুনেছি, তারা ৩০০ জনকে অফারটি দেবে। কিন্তু সেখানে হাজির হয়েছিল কয়েক হাজার নারী। ১২টার পর তারা অফারটি বন্ধ বলে ঘোষণা দিলে কিছু নারী চলে গেলেও কয়েকশো নারী শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন।’
তবে ‘প্রতারণার অভিযোগ’ অস্বীকার করেছেন উত্তরবঙ্গ বাটিক হাউসের স্বত্বাধিকারী আব্দুল বারী। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘৩০০ জনের জন্য আমাদের অফারটি ছিল। যেহেতু উপস্থিতি অনেক বেশি, তাই শোরুম খোলা যায়নি। এমন অতিরিক্ত উপস্থিতির ঘটনা আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত।’
আব্দুল বারী দাবি করেন, শোরুম উদ্বোধনের নিরাপত্তা বিষয়ে পুলিশকে আগাম অবহিত করা হয়েছিল। তবে তা অস্বীকার করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আগে থেকে জানা ছিল না। বিভিন্ন মাধ্যমে ঘটনাস্থলে উত্তেজনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।’