প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে সাত রাজনৈতিক দল ও হেফাজতে ইসলাম নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, এই পরিস্থিতি আগামী নির্বাচনের পরিবেশকে অনিশ্চিত করে তুলছে।

একই সময়ে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ও সহিংসতা রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশন নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল পাঁচটায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষে যমুনার বাইরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান নেতারা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো হলো—নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় গণফ্রন্ট। প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টার বৈঠকে দেশের সমসাময়িক পরিস্থিতি, নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলাসহ রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর বৈঠকটি শেষ হয়।

বৈঠকের পর গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, কোনও ভয়, চাপ প্রতিকূল পরিস্থিতি ছাড়াই নির্বাচন আয়োজনে পরামর্শ চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এই সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনা ও পুনর্গঠন যথার্থ হয়নি। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। নুরুল হক নুরের বিষয়টিও আজ আলোচনায় এসেছে।

এসময়ে তারা সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কমিটি নির্বাচনের আগেই কাজ করবে যেনো নির্বাচনের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

তিনি বলেন, আমরা আরও প্রস্তাব করেছি যেনো এই নির্বাচনের নাম সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন রাখা হয়। এতে পাঁচ বছরের জন্য একটি নির্বাচিত সরকারও পাওয়া যাবে। আবার সংবিধান সংস্কারের জন্য জনগণের সমর্থনও আসবে।

এসময়ে তিনি জানান, বিচার এবং সংস্কার নিয়েও এসময়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ নোট অব ডিসেন্টের ফয়সালা করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকের ব্রিফিংয়ে বৈঠকের আলোচিত বিষয়গুলো তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যে কমিটি করার কথা বলেছে—নির্বাচনের জন্য সমন্বয় কমিটি বা রাজনীতি পরিষদ করার কথা বলেছে, আমরা নোট নিয়েছি।

এদিকে দেশে বর্তমানে দুটি সরকার পাশাপাশি অবস্থান করছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

রাশেদ খান বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেছি—যারা বর্তমানে প্রশাসনে আছেন, বিভিন্ন দপ্তরে আছেন, বাহিনীর প্রধানরা তারা কি আপনার সরকারকে সহযোগিতা করছেন?

তিনি আরও বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখছি, তারা আপনাদের সহযোগিতা করছে না। সে কারণে আমাদের মনে হচ্ছে, দেশে এখন দুটি সরকার পাশাপাশি চলছে। একটি আপনারা (ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার), আরেকটি অদৃশ্য সরকার। এটি আমরা স্পষ্টভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ বলেন, তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই দুরাবস্থা ভোটের নিরাপত্তা অনিশ্চিত করেছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ভেঙ্গে পড়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে তা রীতিমত আতঙ্কজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মিডিয়াকে যা বলেছেন তা ভীতিকর। তিনি জিওসি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথা বলেও সময়মতো আইন ও শৃঙ্খলাবাহিনীর সাড়া পায় নাই। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে নির্বাচনের সময়ে সারাদেশের তিনশ আসনে হাজার হাজার কেন্দ্রের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে; সেই প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে।

এসময় তিনি পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নে গণভোটের আয়োজন করার কথাও বলা হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে এই সরকার সক্ষম হবে এমন আস্থা এখনও আসেনি।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, সরকারের কাজে দৃঢ়তা ও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে কর্তৃত্বের ঘাটতিও আছে। সরকারের দৃঢ়তা স্পষ্ট না হলে নির্বাচনের শঙ্কা কাটবে না। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করার পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে অভিজ্ঞদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথাও বলেছি।