leadT1ad

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ

অ্যানথ্রাক্সের ৮০ পয়সার টিকা পেতে গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
গাইবান্ধা
সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় দেওয়া হচ্ছে ভ্যাকসিনের টিকা। স্ট্রিম ছবি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গবাদিপশুর তড়কা রোগ বা অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আর ৮০ পয়সা মূল্যের এই টিকা ২০ থেকে ৩০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, টাকার অংকে এটি অনেক কম মনে হলেও উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ পশুকে ভ্যাকসিন দিতে পশুমালিকদের প্রায় অর্ধকোটি টাকা চলে যাবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের পকেটে। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, টিকার মূল্য ৮০ পয়সা হলেও অন্যান্য খরচসহ ১০ টাকা করে নিতে বলা হয়েছে। এর বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিভাগীয় নগরী রংপুর জেলার পীরগাছা ঘেঁষে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। অ্যানথ্রাক্সে সংক্রমিত হয়ে এখন পর্যন্ত পীরগাছায় মারা গেছেন দুজন এবং আক্রান্ত আছেন সাত জন ব্যক্তি। আর এই রোগের জীবাণু মানুষের মধ্যে ছড়ায় অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস থেকে। পীরগাছা উপজেলা ঘেঁষা সুন্দরগঞ্জেও এখন পর্যন্ত শতাধিক গরু মারা গেছে। প্রতিনিয়ত জবাই করা হচ্ছে আক্রান্ত গরু। আর এসব গরুর মাংস কেটে অসুস্থ আছেন প্রায় অর্ধশত লোক। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। জরুরি এক বৈঠকে গবাদিপশুগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই থেকে চলছে অ্যানথ্রাক্স রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন। এতে বিভিন্ন কৌশল ও হয়রানির ভয়ভীতি দেখিয়ে ৮০ পয়সার ভ্যাকসিন নেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

অভিযোগকারীরা বলছেন, ২০ টাকা অনেক কম মনে হলেও সব পশু হিসাবে প্রায় অর্ধ কোটির অধিক টাকা লুটে নেবেন ভ্যাকসিন কার্যক্রমে জড়িতরা। আর একজন ব্যক্তির একাধিক পশু রয়েছে। সেকারণে হিসাবটি আর ২০ টাকায় থাকছে না। উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ফলগাছা গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর মো. সজিব মিয়া (২৪) স্ট্রিমকে জানান, তাঁর চারটা গরু এবং দুটা বকরি আছে। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দুজন লোক এসে তাঁর পশুগুলোকে টিকা দিয়ে গেছেন। এজন্য প্রতি পশুর জন্য ২০ টাকা করে দাবি করেছেন টিকাকর্মীরা।

তিনি বলেন, ‘দুজন লোক এসে বললো ইনজেকশন নেন। আমি বললাম কতো করি। তখন বললেন ২০ টাকা করি দেন। আমি বললাম কম করি নেন। তখন বললেন ২০ টাকা করিই দিতে হবে। পানি সম্পদ (প্রাণিসম্পদ) অফিসে গেলে আরও বেশি লাগবে। তখন আর আমাদের খুঁজি পাবেন না। পরে ভোগান্তির ভয়ে টাকা দিয়েই ভ্যাকসিন নিয়ে নিছি।’ দুটি ছাগলের জন্য ৫ টাকা করে মোট ১০ টাকা এবং চারটি গরুর জন্য ২০ করে মোট ৮০ টাকা নিয়েছেন বলেও জানান সজিব মিয়া।

টকই গ্রামের ভ্যানচালক মো. ফুল মিয়া (৫২) বলেন, ‘এটে (এখানে) তো সবাই বসি আছি। ওমরা (তাঁরা) মোটর সাইকোল নিয়া আসিয়া কয় ভ্যাকসিন নেও গরুর। কনু বলে কতো করি নেন। তকন কয় বিশ টেকা করি নেই। দশ টেকা করি দিবার চাইনো। তাক কয়, না। বাজারোত ফুরি আইনো ম্যালা গরু, বিশ টেকা করি ওমরা সবাই দিছে। পরে ২০ ট্যাকা দিয়া একটা গরুর টিকা নিছোম।’

পশুমালিক পরিচয়ে এ বিষয়ে কথা হয় ভ্যাকসিনেটর চন্দন কুমার রায়ের সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘পশু প্রতি ২০ টাকা করে নিচ্ছি। আর এই টাকা আমাদের অফিসে জমা দিতে হয়।’

পরে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে গরুর প্রতিটি টিকার দাম ৮০ পয়সা বলে স্বীকার করেন। তবে আনুষাঙ্গিক কিছু খরচ থাকায় ১০ টাকা করে নিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

টিকা দিতে কেউ ১০ টাকার বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো গবাদিপশুর মালিককে ভয় দেখিয়ে তো নয়ই, বরং কেউ টাকা দিতে অক্ষম হলেও তাকে বিনামূল্যেই ভ্যাকসিন দেওয়ায় নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রতি কত টাকা নেওয়া যাবে বিষয়টি প্রাণিসম্পদ ভালো বলতে পারবে। তবে আমি যতটুকু জানি তাতে টিকা প্রতি ১০ টাকা করে নিচ্ছেন তারা। তবে এটা তাদের সিদ্ধান্ত, এখানে আমাদের বলার কিছু নেই।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জে প্রায় আড়াই লাখ গবাদিপশু আছে। এরমধ্যে ভ্যাকসিন পাবে প্রায় ২ লাখ। এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন এসেছে ২৬ হাজার ৪০০, দেওয়া হয়েছে ২২ হাজার। বাকিটা দিয়ে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান আছে। ৫০ হাজার ভ্যাকসিন চেয়ে নতুন করে আবেদনও পাঠানো হয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত